গুমনামি বাবা-ই কি আসলে নেতাজি?

১৯৮৫, ২৫ অক্টোবর, উত্তরপ্রদেশের জনপ্রিয় হিন্দি দৈনিক 'নয়ে লোগ'-এ প্রকাশিত হল একটি শিরোনাম - 'ফইজাদাবাদে অজ্ঞাতবাসে থাকা সুভাষচন্দ্র বোস আর নেই?' মুহূর্তের মধ্যেই যেন সারা ভারতে আলোড়ন ফেলে দিল ওই একটি শিরোনাম। দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ল এই সংবাদ। অযোধ্যার ছোট্ট শহর ফইজাবাদ, হঠাৎ করেই হয়ে উঠল সংবাদের উৎসস্থল। এই শহরেই নাকি লোকচক্ষুর অন্তরালে নিজের শেষ জীবনটুকু কাটিয়েছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু!

তবে এই সংবাদের সূত্রপাত মাসখানেক আগে। ১৯৮৫ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর, বিকেল বিকেল নাগাদ ভারতের জাতীয় পতাকায় মুড়ে ফইজাবাদের একটি ছোট্ট বাড়ি থেকে বের করে আনা হলো শশ্রুমন্ডিত, বিরলকেশী এক সাধুর মরদেহ। মাত্র ১৩ জন শবযাত্রী নিয়ে সরযূ নদীর তীরে নিয়ে আসা হলো শবযাত্রা। চিতা ততক্ষণে তৈরি। শুরু হলো ওই সাধুবাবার শেষকৃত্য। মাত্র ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে হিন্দু পুরাণের পবিত্র নদী সরযূর জলে মিলিয়ে গেলেন সেই সাধুবাবা, যাকে স্থানীয়রা ডাকতেন 'গুমনামি বাবা' বলে। কিন্তু গুমনামি বাবা আর নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর যোগসুত্র কি? তার জন্য আগে জানা দরকার কে এই গুমনামি বাবা। 

কে আসলে এই গুমনামি বাবা?

৬০ এর দশকের গোড়ার দিকের কথা। উত্তরপ্রদেশের নৈমিষারণ্য (নেমিসার) এলাকার অযোধ্যা বস্তি এলাকায় হঠাৎ একদিন আবির্ভাব হলো এক সাধুবাবার। গেরুয়া বসন, দীর্ঘদেহী সুপুরুষের মতো চেহারা। নেমিসারে একটি ছোট্ট ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করলেন ওই সাধুবাবা। সাধারণ মানুষের মতো সকলের সাথে কথা বলা, মেলামেশা করা নয়, বরং ওই সাধুবাবা থাকতেন সর্বদা পর্দার আড়ালে। কেউ তার দর্শন পেতনা। একান্তই প্রয়োজন হলে কথা বলতে হতো দরজার বাইরে থেকে অথবা পর্দার পিছন থেকে। বাইরে বের হতে হলেও নিজের মুখ ঢেকে রাখতেন সাদা চাদরে। নিজের নাম নিতেন না। কেউ কোনোদিন জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলতেন, তিনি বহুদিন আগেই মৃত। তার কোন নাম নেই। 

সামান্য কয়েকজন বিশ্বাসভাজন মানুষ ছাড়া কেউ তার দেখা পেতেন না। তার মধ্যে ছিলেন নেতাজির ঘনিষ্ঠ অনুগামী লীলা রায় এবং কয়েকজন বাঙালি বিপ্লবী এবং স্বাধীনতা সংগ্রামী। বাড়ির মালিক গুরুবক্স সিং সোধি বার কয়েক তার পরিচয় জানার জন্য তাঁকে সিভিল আদালতের নোটিশ পাঠালেও তা বিফলে যায়। ৬০ এর দশকে উত্তরপ্রদেশের একাধিক জায়গায় ওই সাধু বাবাকে দেখা গিয়েছিল বলেও শোনা যায়। নেমিসার থেকে শুরু করে অযোধ্যা, ফৈজাবাদ, বাস্তি - একাধিক জায়গায় তাকে দেখা গিয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। কখনো মহাকাল, কখনো মহাদেব, এই সমস্ত বলেই দিতেন পরিচয়। যারা তার সঙ্গে কথা বলতে পারতেন তাদের কাছে তিনি ছিলেন ভগবানজি। আর সিংহভাগ মানুষ যারা তার দেখা পেতেন না, তাদের কাছেই এই ভগবানজি হয়ে উঠলেন 'গুমনামি বাবা'।

ষাটের দশকের পরে তেমন ভাবে ওই সাধুবাবার দেখা না মিললেও ১৯৮২ সালে পুনরায় আবির্ভাব ঘটে গুমনামী বাবার। আর আবির্ভাব আবারও উত্তরপ্রদেশের ফৈজাবাদে। সেখানেই সিংহ পরিবারের একটি ছোট একতলা বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেন গুমনামি বাবা। জানা যায়, মৃত্যু পর্যন্ত নাকি এই বাড়িতেই বসবাস করতেন তিনি।

গুমনামি বাবার অদ্ভুত সংগ্রহ

ওই সাধুটি আচার-আচরণের দিক থেকেও যেমন ছিলেন অদ্ভুত, তেমনি সাধু বাবার সংগ্রহও ছিল বড় অদ্ভুত। প্রায় ২০০০ এর ওপরে আর্টিকেল এবং ২৫টি স্টিলের ট্রাঙ্ক ছিল ওই গুমনামি বাবার সংগ্রহে, যা সাধারণ সাধুবাবা সুলভ তো একেবারেই নয়।

যে সিংহ পরিবারের বাড়িতে গুমনামি বাবা ভাড়া থাকতেন, সেই পরিবারের সদস্য ছিলেন বিজেপি সাংসদ শক্তি সিংহ, যিনি গুমনামি বাবা রহস্য উন্মোচনে প্রধান ভূমিকা নিয়েছিলেন। ১৯৮৫ সালে গুমনামি বাবার মৃত্যুর পর অজ্ঞাতবাসে থাকা ওই গুমনামি বাবার কাহিনি তিনিই সামনে নিয়ে আসেন। শক্তি সিংহ জানাচ্ছেন, তিনি জীবনে কখনো ওই বাবার মুখ দেখতে পাননি। বাবা সবসময় পর্দার আড়ালে থেকেছেন। খুব কম সংখ্যক মানুষের প্রবেশাধিকার ছিল তার ঘরে। তিনি আরো বলছেন, বাবা নাকি একেবারেই একজন সাধুবাবা সুলভ ছিলেন না। তিনি রোলেক্স ঘড়ি পছন্দ করতেন, দামী সিগারেট খেতেন, এমনকী তার কাছে আনকোরা নোট ছিল, মাটন কিমা এবং বাঙালিরর প্রিয় শুক্তো ছিল তার সবথেকে পছন্দের খাবার। তবে, গুমনামি বাবা যে নেতাজি, এই বিষয়টা তিনি যে সম্পূর্ণ সমর্থন করতেন সে রকম নয়। তিনি অবশ্য জানিয়েছেন, নেতাজির পরিবারের সঙ্গে ওই সাধুবাবার বিশেষ যোগাযোগ ছিল।

নেতাজির ভাইঝি ললিতা বসু ওই সাধু বাবার মৃত্যুর পর দাবি করেছিলেন, সাধুবাবা ছিলেন আদতে নেতাজি। ১৯৮৬ সালে তিনি সুভাষচন্দ্র বসু বিচারমঞ্চকে সঙ্গে নিয়ে আদালতের নির্দেশে বাবার ব্যবহৃত জিনিসপত্র দেখতে ফৈজাবাদের সেই বাড়িতেও এসে পৌঁছেছিলেন। ওই সংগ্রহ দেখে তিনি দাবি করেছিলেন, ওই সমস্ত সংগ্রহ তার কাকা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুরই। ১৯৯৯ সালে আদালতের নির্দেশে যখন নেতাজির মৃত্যু রহস্য নিয়ে মুখার্জি কমিশন বসলো, তখনই ফৈজাবাদের ওই বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল ওই ২৫টি ট্রাঙ্ক। কিন্তু সব থেকে বড় প্রশ্ন কী ছিল ওই ট্রাঙ্কে? 

কী ছিল সেই ট্রাঙ্কে?

জেলা ট্রেজারি অফিসাররা বলেন, ওই টিনের বাক্সগুলি খুলে তারা সকলেই রীতিমতো স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলেন। এযাবতকালে যত সাধু বাবার হদিশ এবং দর্শন তারা পেয়েছেন তাদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ছিলেন ওই গুমনামি বাবা। মৃত্যুর আগে বা পরে মানুষটির একটাও ছবি নেই, কিন্তু তাঁর সংগ্রহে ছিল নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর পরিবার এবং নেতাজির ব্যক্তিগত বেশ কিছু ছবি। সবথেকে উল্লেখযোগ্য ছবিটি ছিল নেতাজির পিতা জানকীনাথ বসু এবং মাতা প্রভাবতীর, যেটি ছিল একেবারে বাঁধাই করা। এছাড়াও, সেই ট্রাংক থেকে উদ্ধার হয়েছিল ছোটবেলায় নেতাজির বিভিন্ন মুহূর্তের ছবি। 'হাফ বেন্ট ডাবলিন' ধূমপানের পাইপ থেকে শুরু করে বিদেশি সিগারেট, গোল ফ্রেমের চশমা থেকে রোলেক্স ঘড়ি, বাইনোকুলার, এমনকি একটি টাইপরাইটার এবং একটি ক্যাসেট রেকর্ডার, কি না ছিল গুমনামি বাবার সংগ্রহে। এছাড়াও মিলেছিল সুভাষচন্দ্রের জীবনীমূলক বেশ কিছু বই, এবং বেশ কিছু সংবাদপত্রের কাটিং। এছাড়াও ছিল প্রচুর চিঠিপত্র এবং নথি, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল আজাদ হিন্দ ফৌজ বাহিনীর পরিচিতদের একটি দীর্ঘ তালিকা, যা সাধারণ কোনো সাধুবাবার কাছে কোনভাবেই থাকতে পারে না। এমনকি অনেকে বলেন, ওই সাধু বাবার হাতের লেখার সঙ্গে নাকি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর হাতের লেখার দারুণ মিল ছিল। এই বাক্সের অন্যান্য জিনিসগুলিকে দেখে অনেকে মনে করেছিলেন সাধুবাবা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ভক্ত। তবে আজাদ হিন্দ ফৌজের তালিকাটি সমস্ত হিসাব এলোমেলো করে দেয়। 

আরও পড়ুন-সুভাষ না রাসবিহারী, বাঙালির প্রাণের নায়ক সব্যসাচী আসলে কে!

রহস্য আরও ঘনীভূত হয় একটি চিঠির আবির্ভাবে। আর এই চিঠি লিখেছিলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের দ্বিতীয় প্রধান এম এস গোলওয়াকার। ১৯৭২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর গুমনামি বাবাকে লেখা একটি চিঠিতে গোলওয়াকার সাহেব বলছেন, "আপনার ২৫ আগস্ট থেকে ২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে লেখা চিঠি আমি ৬ সেপ্টেম্বর পেয়েছি। আমি আপনার নির্দেশিত এই তিনটি জায়গা সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজ নিচ্ছি। তবে, আপনি যদি জায়গাগুলোর ব্যাপারে একটু ভালোভাবে উল্লেখ করে দিতেন তাহলে একটু সুবিধা হত।" প্রশ্ন উঠছে, গোলওয়াকারের মত একজন ব্যক্তিত্ব একজন সাধারন সাধুবাবাকে চিঠি লিখবেন কেন? আর চিঠিতে তিনি তাকে পরমপূজ্যপাদ বলে সম্বোধনই বা করলেন কেন? 

নেতাজি ও গুমনামি বাবা 

গুমনামি বাবার কাহিনি আরও নেতাজিকেন্দ্রিক হয়ে ওঠে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানে। কয়েকজন মুষ্টিমেয় মানুষ যারা ওই সাধুবাবার জীবদ্দশায় তাকে দেখতে পেয়েছেন, তারা সকলেই বলেছেন, গুমনামি বাবার সঙ্গে নেতাজির চেহারা এবং মুখের নাকি অদ্ভুত মিল রয়েছে। এমনকি তার অভ্যাস, তার কথা বলার ধরণ, তার খাদ্য রসিকতা সবকিছুই একেবারে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর আদলেই। গুমনামি বাবা কে, তা জানতে নেতাজির ভাইজি ললিতা বসু ১৯৮৬ এর ফেব্রুয়ারি মাসে এবং বিজেপি নেতা শক্তি সিংহ ২০১০ সালে আদালতের কাছে দুটি পিটিশন দাখিল করেন। এলাহাবাদ হাইকোর্টে এই বিষয়ে মামলাও করা হয়। তাদের বক্তব্য ছিল, "গুমনামি বাবার পরিচয় জানতে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করা হোক।"

২০১৬ সালে ২৬ জুন, উত্তরপ্রদেশ সরকার এলাহাবাদ হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বিষ্ণু সহায়ের নেতৃত্বে গঠন করে একটি তদন্ত কমিশন। তদন্তের পর, সেই তদন্ত কমিটি কমিশনে রিপোর্ট পেশ করে, "অধিকাংশ সাক্ষী জানিয়েছেন গুমনামি বাবাই ছিলেন নেতাজি। জনাকয়েক অবশ্য বলেছেন তিনি নেতাজি ছিলেন না।" তবে সহায় কমিশনের বিপরীত মতামত ছিল এর আগে গঠিত মুখার্জি কমিশনের। তাদের তদন্তে উঠে এসেছিল, গুমনামি বাবা ছিলেন নেতাজির একজন ভক্ত, তিনি আদতে নেতাজি ছিলেন না।

সাংবাদিক বীরেন্দ্র কুমার মিশ্রাও পুলিশের কাছে একটি রিপোর্ট দায়ের করেছিলেন, যেখানে তিনি বলেছিলেন ১৯৮৫ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর গুমনামি বাবা মারা যান। এবং তার দুদিন পরে অর্থাৎ ১৮ সেপ্টেম্বর তার সমাধি স্থাপন করা হয়। যদি ১৯৪৫ সালের বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজি না মারা গিয়ে থাকেন, এবং এই গুমনামি বাবাই নেতাজি হন তাহলে মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হবার কথা ৮৮ বছর। তবে খুব অদ্ভুত ভাবে, সেই বিশেষ দিনে কোন মৃত্যুর হদিশ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। না রয়েছে কোনো মৃত্যুর প্রমাণপত্র, না রয়েছে মৃতদেহের কোন ছবি অথবা শেষকৃত্যের কোন ছবি। স্থানীয় সংবাদপত্র 'জনমোর্চা' দাবি করেছিল, 'গুমনামি বাবা নেতাজি নন'। ওই সংবাদপত্রের তৎকালীন সম্পাদক শীতলা সিং নেতাজির এককালীন সহায়ক পবিত্র মোহন রায়ের সঙ্গেও দেখা করেছিলেন কলকাতায় এসে।

রায় তাকে জানান, 'পশ্চিমবঙ্গের শৌলমারী থেকে শুরু করে নাগাল্যান্ডের রাজধানী কোহিমা এমনকি পাঞ্জাব পর্যন্ত আমরা প্রত্যেক সাধুবাবার খোঁজ করেছি নেতাজির ব্যাপারে জানার জন্য। একই ভাবে বাস্তি, ফৈজাবাদ এবং অযোধ্যার মত জায়গাতেও আমরা খোঁজ চালিয়েছি। আমি হলফ করে বলতে পারি, গুমনামি বাবা নেতাজি নন।' উত্তরপ্রদেশ সরকারের তরফ থেকেও নেতাজির গুমনামি বাবা হওয়ার দাবি সম্পূর্ণ উড়িয়ে দেওয়া হয়। এমনকী নেতাজি কন্যা অনিতাও এই দাবিকে ভিত্তিহীন বলেই মনে করেন। তাঁর কথায়, "অর্থহীন তত্ত্ব নিয়ে কখনোই এগোনো উচিত নয়। অনেকে বলে থাকেন তিনি নাকি এখনও জীবিত। এটা সবথেকে ভালো বলতে পারবে না একমাত্র ঈশ্বর। আর যদি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ওই বিমান দুর্ঘটনায় না মারা গিয়ে থাকেন, তাহলে উনি গুমনামি বাবা সাজতে যাবেন কেন? যে দেশের স্বাধীনতার জন্য এত ত্যাগ করলেন, সেই দেশে নিজের নামে ফিরলেন না কেন? পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন না কেন? এটা কি আদৌ হতে পারে? এই সমস্ত অর্থহীন বিতর্ক নিয়ে আমি অত্যন্ত বিরক্ত।"

তবে উত্তরপ্রদেশের সাধারণ মানুষের কাছে গুমনামি বাবা-ই ছিলেন নেতাজি। ফৈজাবাদ অঞ্চলের এক বাসিন্দা রাম কুমার বলছেন, "আমার বাবা বিশ্বাস করতেন, গুমনামি বাবা আসলে নেতাজি। উনি গুমনামি বাবার সমস্ত ইচ্ছা সম্মান করতেন, এবং কখনও তিনি তার সঙ্গে জোর করে দেখা করতে যাননি। সরকার এই সত্যিটাকে স্বীকার না করলেও গুমনামি বাবা আসলেই ছিলেন।"

গুমনামি বাবার মৃত্যু রহস্য ও কিছু উত্তর না জানা প্রশ্ন

৩৭ বছর হয়ে গেলেও গুমনামি বাবার মৃত্যুর রহস্য নিয়ে ধোঁয়াশা এখনো কাটেনি। এই মৃত্যু রহস্য আমাদের সামনে খাড়া করে দেয় একাধিক প্রশ্ন। কেন গুমনামি বাবা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর পরিবারের সদস্যদের ছবি এত যত্ন করে রেখেছেন? তার কাছে আজাদ হিন্দ ফৌজের এত গোপনীয় তথ্য এলই বা কোথা থেকে? গুমনামি বাবার দাঁতের ডিএনএ এবং বসু পরিবারের কিছু সদস্যের রক্তের ডিএনএ পরীক্ষা করা হলেও তেমন কোনো মিল পাওয়া যায়নি। মুখার্জি কমিশন এর এই ডিএনএ রিপোর্ট পরবর্তীতে এলাহাবাদ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি খারিজ কেন করে দিয়েছিলেন? নেতাজির অন্তর্ধানের চার বছর পর কলকাতার গোয়েন্দা অফিসার অনিল ভট্টাচার্য একটি সিক্রেট নোটে একজন সাধুর উল্লেখ করেছিলেন, এই সাধুই কি তাহলে গুমনামি বাবা? গুমনামি বাবার হস্তাক্ষরের সঙ্গে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর হাতের লেখার এত মিল কেন? একজন অজ্ঞাত বোনের কাছ থেকে তিনি নাকি একাধিক বই উপহার পেয়েছিলেন গুমনামি বাবা, কে এই 'বোন'? একজন ভারতীয় সাধু হওয়া সত্বেও তিনি মাংস খেতেন কেন? মুখার্জি কমিশনের প্রধান জাস্টিস মুখার্জি, অফ ক্যামেরা কেন বলেছিলেন, 'তিনি ১০০ শতাংশ শিওর, গুমনামি বাবাই নেতাজি?' কোনো ভক্ত ছিল না তার, কিন্তু তবুও গুমনামি বাবা অর্থসাহায্য পেতেন কার থেকে? আর তার থেকেও বড়ো কথা যদি তিনি নেতাজিই হন তাহলে গুমনামি বাবার ভেকই বা ধরেছিলেন কেন? তিনি কি সমসাময়িক রাজনীতিকে প্রভাবিত করতে চাননি? তিনি যদি ফিরে আসতেন, তাহলে তাকে ভারতের সর্বময় কর্তা করার দাবি উঠতোই। তিনি কি এই সমস্ত থেকে দূরে যেতে চেয়েছিলেন? 

জনমোর্চা সংবাদপত্রের বর্তমান সম্পাদক ডক্টর সুমন গুপ্ত বলেন, 'উত্তরপ্রদেশে এখনো সমসাময়িক বহু মানুষ রয়েছেন যারা এই গুমনামি বাবা মানুষটিকে একবারের জন্যও না দেখলেও কিংবা তার সঙ্গে কথা না বললেও, গুমনামি বাবার উপরে বিশ্বাস রাখতেন। সরকার কোন তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করল তাতে তাদের খুব একটা যায় আসে না। মৃত্যুর ৩৭ বছর পরেও উত্তরপ্রদেশের ফৈজাবাদে এখনো অনেকের মনেই জীবিত রয়েছেন নেতাজি ওরফে 'গুমনামি বাবা'!" 

More Articles