ক্ষমতায় এসেই 'তুঘলকি' যাদব! কেন মধ্যপ্রদেশে নিষিদ্ধ হল মাছ-মাংস-ডিম বিক্রি?
Mohan Yadav, Madhya Pradesh: মধ্যপ্রদেশে খোলাবাজারে নিষিদ্ধ করা হল মাছ-মাংস-ডিম বিক্রি। বন্ধ হল লাউড স্পিকার ব্যবহার।
মধ্যপ্রদেশে কাঙ্খিত জয় ছিনিয়ে এনেছে বিজেপি। আঠেরো বছরের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানকে সরিয়ে মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে বসেছেন মোহন যাদব। আর রাজ্যের দায়িত্ব পেয়েই রাজ্যে তুঘলকি নিয়ম চালু করে দিলেন তিনি। মধ্যপ্রদেশ জুড়ে জারি হল একগুচ্ছ নয়া নির্দেশিকা। রাজ্যে খোলাবাজারে নিষিদ্ধ করা হল মাছ-মাংস-ডিম বিক্রি। বন্ধ হল লাউড স্পিকার ব্যবহার।
খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। স্কুল পড়ুয়াদের মিড ডে মিলের মেনুতে ডিম বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন শিবরাজ সিং সরকার। ২০১৫ সাল নাগাদ রাজ্যে অঙ্গনওয়াড়ি খাবারে ডিম বিতরণ বন্ধ করেন তিনি। সে নিয়ে বেশ বিতর্কও হয়েছিল রাজ্য জুড়ে। নতুন মুখ্য়মন্ত্রী মোহন যাদবও যে সেই পথেরই পথিক, তা মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি। বুধবার মুখ্যমন্ত্রী পদের দায়িত্ব নেন যাদব। এর পরেই মন্ত্রিসভার বৈঠকে একগুচ্ছ নতুন ঘোষণার কথা বলেন তিনি। খাদ্য নিরাপত্তা বিধি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলে রাজ্যে খোলা বাজারে মাছ-মাংস বিক্রির ব্যাপারে কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন তিনি। সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ১৫ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় আছে রাজ্যে মাছ-মাংসের খোলা বাজার বিক্রেতাদের কাছে। তার পরে আর কোনও রকম অন্যথা বরদাস্ত করবে না সরকার।
আরও পড়ুন: শিবরাজকে ছেঁটে মোহনের হাতেই মধ্যপ্রদেশের ভার! নেপথ্যে বিজেপির ঠিক কোন অঙ্ক?
একই সঙ্গে লাউডস্পিকার ব্য়বহার নিয়েও কড়া পদক্ষেপের কথা জানিয়েছে নয়া বিজেপি সরকার। বছর খানেক আগেই ধর্মীয় স্থানে লাউড স্পিকার বাজানোকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে উঠেছিল কর্ণাটক। তাপ এসে পড়েছিল মধ্যপ্রদেশেও। এবার ক্ষমতায় এসেই সে বিষয়টি নিয়েও কড়া পদক্ষেপ করলেন নতুন মুখ্য়মন্ত্রী মোহন যাদব। ধর্মীয় স্থানে লাউডস্পিকার বাজানো থেকে শুরু করে ডিজে ব্যবহারের মতো বিষয়গুলির দিকে নজর দেওয়া হয়েছে। শব্দের মাত্রা যাতে কোনও ভাবেই নির্ধারিত মানদণ্ড পেরিয়ে যেতে না পারে, তার জন্য প্রতিটি জেলায় ফ্লাইং স্কোয়াড গড়ার কথাও বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
প্রয়োজনীয় পুষ্টির জন্য প্রোটিন শরীরে একান্ত ভাবে প্রয়োজনীয়। এ কথা সকলেই জানেন। তবে মানেন না। তাই প্রতিবার শিশুর পুষ্টির মতো ব্যপারগুলোর কথা ভাবতে ভুলে যায় সে রাজ্যের সরকার। কিন্তু সমীক্ষা বলছে, মধ্যপ্রদেশের পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে অন্তত ৪২ শতাংশই অপুষ্টির শিকার। সেসব জানা সত্ত্বেও স্কুলে মিডডে মিলে ডিমের মতো সুষম ও সুলভ প্রোটিনের উৎস সরিয়ে নেওয়ার কথা বলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান। বারবার আবেদন করা সত্ত্বেও পাল্টায় না সিদ্ধান্ত।
কংগ্রেস নেতা কমলনাথের জমানায় কিছুদিনের জন্য মধ্যপ্রদেশে ডিমের উপর নিষেধাজ্ঞা উঠেছিল। তবে কংগ্রেস সরকারের সেই সিদ্ধান্তের ব্যাপক সমালোচনা করেছিল বিজেপি। তৎকালীন বিরোধী ও বিজেপি নেতা গোপাল ভার্গব এ-ও বলেন, স্কুলের মিড ডে মিলে ডিম চালু করা নাকি শিশুদের নরখাদকে পরিণত করতে পারে। তিনি জানান, তাঁদের সংস্কৃতি নাকি আমিষ নিষিদ্ধ। ফলে কাউকে ডিম খেতে বাধ্য করা যায় না।
অচিরেই ফুরায় কংগ্রেস জমানা। কমলনাথের হাত থেকে সিংহাসন ছিনিয়ে নেন শিবরাজ। আর ফের মিডডে মিলের মেনু থেকে হাওয়া হয়ে যায় ডিম। নয়া হিন্দুরাষ্ট্র গড়ার মহান দায়িত্বে ব্রতী হয়েছে বিজেপি সরকার। খুব শিগগিরই অযোধ্যায় উদ্বোধন হতে চলেছে রামমন্দির। তার প্রস্তুতি প্রায় সারা। মন্দিরের কাজ যত দ্রুত গতিতে শেষ হয় এদেশে, তত দ্রুত উন্নয়ন হয় না। অপুষ্টিতে ভুগে ভুগে শরীরে একগাদা রোগের জন্ম দেয় মানুষ, শিশু, নারী। এমনটাই দস্তুর।
বিধানসভা ভোটে তিন রাজ্যে ব্যাপক জয় পেয়েছে বিজেপি। তিন রাজ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে নয়া মুখ। তাদের মধ্যে কেউ অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি)-র প্রতিনিধি, কোথাও আবার মুখ্যমন্ত্রীর মুখ ব্রাহ্মন নেতা, কোথাও আবার আদিবাসী ভোটের কথা মাথায় রেখে আদিবাসী নেতাকেই বেছে নিয়েছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
আরও পড়ুন: বালকনাথ নয়, প্রথমবার ভোটে জেতা ভজনলালকেই কেন রাজস্থানে বাছল বিজেপি?
শুধু মধ্যপ্রদেশেই যে ছবিটা এমন তা কিন্তু নয়। পড়শি রাজ্যেও প্রকাশ্যে মাংস বিক্রির বিরোধিতা করেছেন নবনির্বাচিত বিজেপি বিধায়ক। হাওয়ামহব বিধানসভা আসন থেকে জয়ী বিজেপি বিধায়ক বালমুকুন্দ আচার্য ক্ষমতায় এসেই নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রে সমস্ত মাংসের দোকান বন্ধের কথা ঘোষণা করেছেন। নানা ভাষা, নানা মতের দেশ ভারতবর্ষ বরাবরই নানা খাদ্যরুচিরও দেশ। সেই বৈচিত্র্যই এ দেশের সম্পদ। আর সেই বৈচিত্র্যের ঐক্যটাকেই একেবারে ধ্বংস করতে উঠেপড়ে লেগেছে বিজেপি সরকার। মধ্য়প্রদেশ ও রাজস্থান যার জ্বলন্ত প্রমাণ।