নতুন না পুরনো, কোন নিয়মে কর দিলে বাঁচবে মোটা টাকা? সহজ হিসেব দেখে নিন এক নিমেষে

Income Tax New Slab: যদি কারও ১৬ লক্ষ টাকা হয় বছরে তাহলে ওই ব্যক্তিকে ৩ থেকে ৬ লক্ষর স্ল্যাবের জন্য ৫ %, ৬ থেকে ৯ লক্ষর জন্য ১০% এই নিয়মে ৩০% পর্যন্ত আয়কর দিতে হবে।

১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩। আগামী অর্থবর্ষের বাজেট পেশ করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। এই বাজেটে সস্তা হয়েছে টিভি, মোবাইল, সাইকেল, ইলেকট্রিক গাড়ি। অন্যদিকে দামি হচ্ছে বিদেশি চিমনি, সোনা প্ল্যাটিনাম এবং সিগারেটের মতো কিছু বস্তু। ৯ রাজ্যের জন্য দেওয়া হয়েছে বিশেষ বরাদ্দ। পশ্চিমবঙ্গের জন্য এসেছে 'মিষ্টি প্রকল্প'। ম্যানগ্রোভ বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী MISHTI অর্থাৎ ম্যানগ্রোভ ইনিশিয়েটিভ ফর শোরলাইন হ্যাবিটাট অ্যান্ড ট্যানজেবল ইনকামস প্রকল্পের ঘোষণা করেছেন। পশ্চিমবঙ্গের মেট্রো খাতেও বাড়ানো হয়েছে বরাদ্দ। সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের খাতে দেওয়া হয়েছে অতিরিক্ত বরাদ্দ। বোটানিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া, ফরাক্কা ব্যারেজ সহ বাংলার একাধিক খাতে বহু কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে চলতি অর্থবছরে।

পশ্চিমবঙ্গের টেগোর কালচারাল কমপ্লেক্সের জন্য ৭.০৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে অর্থমন্ত্রক, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৩১.৩৪ কোটি টাকা। এশিয়াটিক সোসাইটির খাতে দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের খাতে গত বাজেটের তুলনায় ১৪ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দের ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হোমিওপ্যাথির জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ২১.৯৬ কোটি টাকা। ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রোর বরাদ্দ অপরিবর্তিত রাখা হলেও, এই মেট্রো তৈরির জন্য কেন্দ্রীয় সরকার কাজ করবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। পাশাপাশি, স্টার্টআপ কোম্পানিগুলোর জন্যও রয়েছে বিশেষ সুযোগ। বড় এফএমসিজি কোম্পানি এবং বড় কারখানা ভিত্তিক কোম্পানির জন্য বাড়ানো হয়েছে ক্যাপিটাল এক্সপেন্ডিচার। অর্থনীতির উন্নয়নের দিকে জোর দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। 'অমৃতকালের' বাজেটকে ভবিষ্যৎমুখী করে তোলার যাবতীয় চেষ্টা করেছেন অর্থমন্ত্রী।

এই বাজেটের মধ্যে ভবিষ্যতের স্বপ্ন রয়েছে। তবে এই বাজেটকে যে বিষয়টি মধ্যবিত্তের জন্য জনমোহিনী করে তুলেছে, সেটি হলো আয়করের স্ল্যাব। অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, এবার থেকে যাদের আয় ৭ লক্ষ টাকার কম, তাদেরকে আর আয়কর দিতে হবে না। বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে আয়কর ছাড়ের সুবিধা নেওয়ার তাদের আর প্রয়োজন নেই। কিন্তু সেই সঙ্গেই রয়ে গেল একটি ফাঁড়া! আয় ৭ লক্ষ টাকার কম হলে কোনও আয়কর দিতে না হলেও, যদি ৭ লক্ষ টাকার একটু বেশি হয়ে যায়, তাহলে কিন্তু দিতে হবে মোটা টাকার আয়কর।‌ আয়কর স্ল্যাবের এই বিষয়টি নিয়ে অনেকেই চিন্তিত। ‌কিন্তু কেন ৭ লক্ষের থেকে মাত্র ১০০০ টাকা বেশি রোজগার করলেও দিতে হবে মোটা টাকা আয়কর? বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক এ ব্যাপারে।

অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, এবার থেকে আয়করের ক্ষেত্রে দু'টি পৃথক আয়কর কাঠামো ভারতে কাজ করবে। পুরনো কাঠামো অনুযায়ী যেরকম আয়কর আগে দিতেন মানুষ, সেরকম আয়কর এখনও দিতে হবে। পরিবর্তন করা হয়েছে নতুন আয়করের কাঠামোর অধীনে। আপনি যেকোনও একটি আয়কর কাঠামো অনুযায়ী আয়কর জমা দিতে পারেন। নতুন কাঠামোর উপর জোর দেওয়া হলেও, পুরনো কাঠামোকে এখনই তুলে নিতে চাইছে না কেন্দ্রীয় সরকার। নতুন আয়কর কাঠামো অনুযায়ী ট্যাক্স ছাড়ের ঊর্ধ্বসীমা ৩ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে সোজা ৭ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ যদি আপনার করযোগ্য আয় বার্ষিক ৭ লক্ষ টাকার কম হয়, তাহলে আপনাকে কোনও আয়কর দিতে হবে না। কিন্তু নতুন আয়করের নিয়মে রয়েছে এক সমস্যা। এই আয়করের নিয়মের ক্ষেত্রে কিন্তু কোনওরকম ট্যাক্স ছাড়ের সুবিধা মিলবে না। অর্থাৎ, 80C, 80D, 80E ইত্যাদি ধারার অধীনে এতদিন পর্যন্ত যে আয়কর ছাড় আপনারা পেয়ে এসেছেন, সেসবের বালাই নতুন নিয়মে নেই। এখানে আয়করের ক্যালকুলেশন হবে শুধুমাত্র আপনার আয় করা টাকার উপরেই। তাহলে, কত আয়ে কোন কাঠামোতে পাবেন বেশি লাভ? তার হিসাব মেলানোই এখন সাধারণ মানুষের পক্ষে হয়ে উঠেছে বিরাট ঝক্কির কাজ।

পুরনো করকাঠামো অনুযায়ী যদি আপনার আয় ২.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হয় তাহলে কোনও আয়কর দিতে হবে না। যদি বার্ষিক আয় ৫ লক্ষ টাকার কম হয় তাহলেও আপনাকে কোনও আয়কর দিতে হবে না। কিন্তু যদি আপনার করযোগ্য আয় ৫ লক্ষ টাকার উপরে যায় তাহলে ২.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আপনি ছাড় পাবেন। বাকি ২.৫ থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ের উপর ৫% ট্যাক্স আপনাকে দিতে হবে। যদি আপনার আয় ৫ লক্ষ থেকে ১০ লক্ষ টাকার মধ্যে হয়, তাহলে আপনাকে ২.৫ থেকে ৫ লক্ষ টাকার স্ল্যাব অনুযায়ী ৫% কর দিতে হবে। এরপর ৫ লক্ষ টাকার যত বেশি হবে আপনার আয়, তার উপরে ২০% কর দিতে হবে। ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত এই নিয়ম জারি থাকবে এবং ১০ লক্ষ টাকার উপরে যদি আপনার আয় হয় তাহলে আপনাকে আপনার অতিরিক্ত আয়ের উপর ৩০% কর দিতে হবে।

আরও পড়ুন- ৭.৫ শতাংশ সুদ, বাজেটে দেশের মহিলাদের কী দিল মোদি সরকার?

উদাহরণস্বরূপ, ধরে নেওয়া যাক কোনও ব্যক্তির বার্ষিক আয় ১২ লক্ষ টাকা। তাহলে সেই ব্যক্তি ২.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়কর ছাড় পেলেন পুরনো কাঠামো অনুযায়ী। এরপর ২.৫ লক্ষ থেকে ৫ লক্ষ পর্যন্ত আয়ের জন্য তিনি দিলেন ৫% কর, ৫ লক্ষ থেকে ১০ লক্ষ পর্যন্ত আয়ের জন্য তিনি দিলেন ২০% কর এবং ১০-১২ অর্থাৎ বাকি ২ লক্ষের জন্য তিনি দিলেন ৩০% কর। এভাবে হিসাব হতো পুরনো নিয়ম অনুযায়ী। এছাড়াও কিছু ট্যাক্স ছাড়ের বিষয় থাকতো এই নিয়মে।

তবে নতুন আয়করের নিয়মে কিন্তু ট্যাক্স ছাড়ের সর্বাধিক সীমা ৭ লক্ষ টাকা। অর্থাৎ যদি আপনার বার্ষিক আয় ৭ লক্ষ টাকার কম হয়, তাহলে আপনাকে কোনও আয়কর দিতে হবে না। এই আয়করের নিয়মে স্ল্যাব কিন্তু অন্যরকম। এই নতুন আয়কর কাঠামোতে ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আপনাকে কোনও আয়কর দিতে হবে না। তবে যদি আপনার করযোগ্য আয় ৭ লক্ষ টাকার বেশি হয়, তাহলে আপনাকে ৩ থেকে ৬ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ৫% আয়কর দিতে হবে। আয় ৭ লক্ষ টাকার বেশি হলে ৬ থেকে ৯ লক্ষ টাকার ক্লাবের জন্য আপনাকে দিতে হবে ১০% কর। ৯ থেকে ১২ লক্ষের জন্য দিতে হবে ১৫ শতাংশ কর। ১২ থেকে ১৫ লক্ষের জন্য দিতে হবে ২০% কর। সর্বশেষ ১৫ লক্ষর বেশি আয় হলে আপনাকে দিতে হবে ৩০% কর।

অর্থাৎ যদি কারও ১৬ লক্ষ টাকা হয় বছরে তাহলে ওই ব্যক্তিকে ৩ থেকে ৬ লক্ষর স্ল্যাবের জন্য ৫ %, ৬ থেকে ৯ লক্ষর জন্য ১০%, ৯ থেকে ১২ লক্ষের জন্য ১৫ %, ১২ থেকে ১৫ লক্ষের জন্য ২০ %, এবং ১৫ থেকে ১৬ অর্থাৎ বাকি ১ লক্ষের জন্য ৩০% আয়কর দিতে হবে। তিনি কিন্তু ৭ লক্ষ পর্যন্ত ট্যাক্স ছাড় পাবেন না। তিনি ট্যাক্স ছাড় পাবেন ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্তই, যদি তিনি নতুন কর কাঠামো অনুযায়ী ট্যাক্স দেন।

ট্যাক্স ডিডাকশন

ট্যাক্স ডিডাকশনের ক্ষেত্রে কিন্তু পুরনো কর কাঠামোই বেশি সুবিধা জনক হতে চলেছে। যদি আপনার গৃহঋণ নেওয়া থাকে, তাহলে আপনি প্রায় দু' লক্ষ টাকা পর্যন্ত ট্যাক্স ছাড় পেতে পারেন পুরনো কর কাঠামো অনুযায়ী। এছাড়াও 80C ধারা অনুযায়ী ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ট্যাক্স ছাড়ের সুবিধা দিয়ে থাকে আয়কর দপ্তর। 80D ধারা অনুযায়ী ট্যাক্স ছাড় পেতে পারেন আপনি পুরনো কর কাঠামোতে। কিন্তু নতুন কর কাঠামোতে কোনওরকম ট্যাক্স ছাড়ের সুবিধা আপনি পাবেন না। তবে দু'টি কর কাঠামোতেই ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন পাবেন। সেই কারণে, কোনও কোনও ব্যক্তির কাছে পুরনো কর কাঠামো ভালো এবং কারও কারও কাছে নতুন কর কাঠামো আবার সুবিধাজনক। দু'টির মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা করেই দেখা যাক।

১. মনে করা যাক, আপনার বার্ষিক আয় ২,৪০,০০০ টাকা। সেক্ষেত্রে আপনি পুরনো কর কাঠামোতে ৫০,০০০ টাকা স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন পেয়ে গেলেন। তাহলে আপনার করযোগ্য আয় দাঁড়াল ১,৯০,০০০ টাকা। আপনার কোনও অতিরিক্ত বিনিয়োগ করা নেই এবং 80C ও 80D এর মতো ধারা অনুযায়ী আপনি ট্যাক্স ছাড় পাচ্ছেন না। যেহেতু আপনার করযোগ্য আয় ৫ লক্ষ টাকার কম, সেক্ষেত্রে আপনাকে কোনও কর দিতে হলো না। নতুন কর কাঠামোতেও আপনাকে কোনও কর দিতে হবে না। তাই যেকোনও একটি কর কাঠামো অনুযায়ী আপনি কর দিতে পারেন।

২. এবার মনে করা যাক, আপনার আয় ৫,৮০,০০০ টাকা। সে ক্ষেত্রে স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন দিয়ে আপনার কর যোগ্য আয় দাঁড়াবে ৫,৩০,০০০ টাকা। সেক্ষেত্রে যদি আপনি পুরনো কর কাঠামো অনুযায়ী কর দেন, সেখানে আপনাকে অতিরিক্ত কর দিতে হবে। নতুন কর কাঠামো অনুযায়ী যদি আপনি আয়কর দেন তাহলে আপনাকে কিন্তু কোনও কর দিতে হবেনা।

এবারে, যদি আপনার ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত ডিডাকশনের জায়গা থাকে, অর্থাৎ আপনার কোনও জায়গায় অতিরিক্ত বিনিয়োগ করা থাকে এবং আপনি আয়করের 80C ও 80D ধারা অনুযায়ী ছাড় পান, তাহলে আপনাকে পুরনো নিয়মেও কর দিতে হবে না। তাই এখানে যদি আপনার বিনিয়োগ করা থাকে তাহলে যেকোনও একটি কর কাঠামোতে বিনিয়োগ করতে পারেন। তবে যদি বিনিয়োগ করা না থাকে, তাহলে কিন্তু আপনার জন্য নতুন কাঠামো বেশি ভালো। কারণ নতুন কর কাঠামোতে আপনাকে কোনও কর দিতে হচ্ছে না।

৩. এবার মনে করা যাক, আপনার আয় ৮ লক্ষ টাকা। সেক্ষেত্রে স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন পাওয়ার পরে আপনার করযোগ্য আয় দাঁড়াল ৭,৫০,০০০ টাকা। এবার মনে করুন আপনার কাছে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত ডিডাকশন দেওয়ার জায়গা রয়েছে। তাহলে পুরনো কর কাঠামো অনুযায়ী আপনার করযোগ্য আয় হলো ৫,৫০,০০০ টাকা। সেক্ষেত্রে আপনাকে ২২,৫০০ টাকা আয়কর দিতে হবে।

কিন্তু নতুন কর কাঠামোতে, আপনি কোনও রকম অতিরিক্ত ডিডাকশনের জায়গা পেলেন না। ফলে আপনার করযোগ্য আয় সেই ৭,৫০,০০০-এই রয়ে গেল। সেক্ষেত্রে আপনাকে নতুন কর কাঠামো অনুযায়ী কর দিতে হলো ৩০ হাজার টাকা। অর্থাৎ পুরনো কর কাঠামোর থেকে ৭,৫০০ টাকা বেশি। সেক্ষেত্রে কিন্তু আপনার জন্য পুরনো কর কাঠামোই বেশি ভালো।

৪. মনে করা যাক, আপনার আয় ৯,৫০,০০০ টাকা। স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশনের পরে নতুন কর কাঠামো অনুযায়ী আপনার করযোগ্য আয় ৯,০০,০০০ টাকা। সেক্ষেত্রে আপনাকে নতুন কাঠামো অনুযায়ী কর দিতে হলো ৪৫,০০০ টাকা। তবে পুরনো কর কাঠামো অনুযায়ী আপনি পাচ্ছেন কিছু অতিরিক্ত ডিডাকশনের জায়গা। ধরে নেওয়া যাক, আপনি ২ লক্ষ টাকা অতিরিক্ত ডিডাকশন গ্রহণ করলেন। ফলে পুরনো কর কাঠামো অনুযায়ী আপনার করযোগ্য আয় দাঁড়ালো ৭,০০,০০০ টাকা। পুরনো কাঠামোতে আপনাকে সেই জায়গায় কর দিতে হবে ৫২,৫০০ টাকা। এখানে কিন্তু নতুন কর কাঠামো আপনার জন্য ভালো।

৫. এবার ১০ লক্ষের গণ্ডি অতিক্রম করে যদি ১২ লক্ষের দিকে এগোনো যায়, তাহলে ডিডাকশনের পরিমাণ ২,৫০,০০০ টাকায় বেড়ে যেতে পারে। সেই জায়গায় কিন্তু আবার পুরনো কর কাঠামো আপনার জন্য ভালো। যদি আপনার আয় ১০,৫০,০০০ টাকা হয় এবং আপনি ২,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত ডিডাকশন দেন তাহলে আপনাকে ৩৭,৫০০ টাকা আয়কর দিতে হয়। অন্যদিকে নতুন কর কাঠামোতে আপনাকে ৬০ হাজার টাকা কর দিতে হচ্ছে!

৬. যদি ১৪ লক্ষ টাকা আপনার আয় হয় এবং আপনি ৩ লক্ষ টাকা অতিরিক্ত ডিডাকশন ব্যবহার করেন, তাহলে আপনাকে পুরনো কর কাঠামো অনুযায়ী ১,২৭,৫০০ টাকা কর দিতে হচ্ছে। সেখানে নতুন কর কাঠামোতে আপনাকে দিতে হবে ১,২০,০০০ টাকা আয়কর।

৭. অন্যদিকে যাদের আয় ১৫ লক্ষ টাকার বেশি, মনে করা যাক ১৫,৫০,০০০ টাকা এবং সেই ব্যক্তি যদি ৪ লক্ষ টাকা অতিরিক্ত ডিডাকশন গ্রহণ করতে পারেন, তাহলে ওই ব্যক্তিকে পুরনো কর কাঠামো অনুযায়ী, ১,৪২,৫০০ টাকা আয়কর দিতে হবে। সেখানেই নতুন কর কাঠামোতে সেই ব্যক্তিকে আয় কর দিতে হবে ১,৫০,০০০ টাকা। সেখানে আবার যাদের আয় অনেকটা বেশি তাদের জন্য পুরনো কর কাঠামো ভালো।

তাই যদি কর সঞ্চয়ী প্রকল্প এবং গৃহঋণ আপনার কাছে না থাকে তাহলে নতুন কর কাঠামো আপনার জন্য ভালো। তার কারণ পুরনো আয়কর কাঠামোতে করের বোঝা অনেকটা বেশি। কিন্তু কাদের কোন কর কাঠামোয় আয়কর জমা দেওয়া বেশি সুবিধাজনক হবে? মূলত যারা নতুন চাকরিতে যোগ দিয়েছেন, বা যারা ভালোভাবে টাকা সঞ্চয় করতে পারেন কেবলমাত্র তাদের জন্যই এই নতুন কর কাঠামো বেশি আকর্ষণীয় এবং বেশি লাভজনক। অন্যদিকে, যারা একটু বেশিদিন চাকরি করছেন এবং যারা বিভিন্ন জায়গাতে বিনিয়োগ করে রেখেছেন তাদের জন্য পুরনো কর কাঠামো বেশি লাভজনক।

তবে সবার মনে আরও একটি প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে। ধরে নেওয়া যাক, কোনও ব্যক্তির কর যোগ্য আয় ৭ লক্ষ টাকার একটু কম। তাই কর ছাড়ের সুবিধা নেওয়ার জন্য তিনি সরাসরি নতুন কর কাঠামো অনুযায়ী আয়কর জমা দিলেন। মাস কয়েক পরে আবার হয়তো তার আয়ের পরিমাণ কিছুটা বেড়ে গেল এবং কর যোগ্য আয় ৭ লক্ষ টাকার বেশি হয়ে গেল। সেক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি কি পরের আর্থিক বছরে পুরনো কাঠামোতে ফিরতে পারবেন? সরকার সেই সুবিধা দিয়েছে। কোনও আয়কর দাতা চাইলেই আয়করের পরিমাণ কমানোর জন্য নিজেদের সুবিধামতো বেছে নিতে পারেন পুরনো অথবা নতুন কর কাঠামোকে। একই সঙ্গে, অনেকে মনে করছেন নতুন কর কাঠামো যদি সত্যি বাস্তবায়িত হয় তাহলে সাধারণ বেতনভোগী সমাজের সঞ্চয়ের প্রবণতা কিছুটা হলেও বাড়বে।

তবে হ্যাঁ, নতুন কর কাঠামো চলে এলে কিছুটা হলেও সমস্যা হবে বীমা কোম্পানিগুলির। এতদিন পর্যন্ত 80D ধারা অনুসারে পুরনো কর কাঠামো অনুযায়ী বীমার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ডিডাকশন পেতেন বেতনভোগীরা। যেহেতু নতুন কর কাঠামো চলে এসেছে, তাই যাদের আয় ৭ লক্ষ টাকার কম, তাদের বীমা নেওয়ার প্রবণতা অনেকটাই কমে যাবে। পিপিএফ, স্বাস্থ্যবীমাতে বিনিয়োগ অনেকাংশে ধাক্কা খাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সেক্ষেত্রে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের পরিমাণ কিছুটা হলেও বাড়তে পারে।

নতুন কর কাঠামো পুরনো কর কাঠামোর তুলনায় অনেক বেশি সহজ। অনেকের ক্ষেত্রে নতুন কর কাঠামো একটু সমস্যা ডেকে আনলেও, সাধারণ মধ্যবিত্তদের কিন্তু নতুন কর কাঠামোতে কোনও ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে না। বরং, যাদের আয় বছরে ৭,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত, তাদের ক্ষেত্রে নতুন কর কাঠামোই ভালো। এই কাঠামোর ভিত্তিতে যা আপনি আয় করেন, তার উপরে আপনাকে কর দিতে হবে। কোনও বিনিয়োগ কিংবা সঞ্চয় দেখিয়ে ছাড় আপনি পাবেন না।

আরও পড়ুন- আয়কর থেকে বিরাট মুক্তি! নির্মলা সীতারমণের এবারের বাজেটে কি বাঁচবে মধ্যবিত্তরা?

পৃথিবীর কোন কোন দেশের ট্যাক্স কাঠামো সহজ?

১. সংযুক্ত আরব আমিরশাহি

পৃথিবীর সবথেকে সহজ পদ্ধতিতে ট্যাক্স নেওয়া হয় সম্ভবত আরবেই। মাত্র ১২ ঘণ্টার মধ্যেই এক বছরের ট্যাক্স ক্যালকুলেশন আপনি করে ফেলতে পারবেন এবং কর দিয়েও দিতে পারবেন। সংযুক্ত আরব আমিরশাহির এই সহজ আয়করের নিয়মের পিছনে আসল কারণ হলো, ফেডারেল আইনের অনুপস্থিতি। সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে তেমনভাবে কোনও ফেডারেল আয়কর আইন নেই। শুধুমাত্র বিদেশি ব্যাঙ্ক এবং তেল কোম্পানির জন্য আয়করের আইন লাগু রয়েছে। এই মুহূর্তে আরবে কোনও ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স গ্রহণ করা হয় না। সেই কারণে, আয়করের আইন আরও বেশি সহজ।

২. কাতার

কাতারে মূলত একটি ট্যাক্স অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সিস্টেম কাজ করে এবং তারাই সারাদেশের আয়কর এবং যেকোনও ধরনের করের ব্যাপারে কাজ করে থাকে। এই ইলেকট্রনিক সিস্টেমের মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই মাত্র ৪১ ঘণ্টার মধ্যে এক বছরের কর হিসেব করতে পারবেন এবং পেমেন্টও করতে পারবেন। এই ধরনের নিয়মের কারণে কাতারে বিশেষ কোনও আয়করের ফেডারেল আইন নেই। তবে হ্যাঁ, অনলাইন ট্যাক্স ফাইল করলেও আপনাকে একটি রিটার্ন সাবমিট করতে হয় কাতারে।

৩. সান মারিনো

পৃথিবীর সবথেকে পুরনো কিছু কনস্টিটিউট রিপাবলিকের মধ্যে একটি হল সান মারিনো। পুরনো রাষ্ট্র হলেও আয়করের ক্ষেত্রে প্রথম থেকেই অনেকটা এগিয়ে রয়েছে এই দেশটি। এখানে বিভিন্ন ধরনের ট্যাক্সেশন লিমিট এবং ক্যাটেগরি রয়েছে। যারা চাকরিজীবী, তাদের জন্য রয়েছে প্রত্যক্ষ করের সুবিধা। অন্যদিকে যারা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত তাদের জন্য রয়েছে অন্য নিয়ম। এই দেশেও তেমন কোনও আয়কর ছাড়ের সুবিধা দেওয়া হয় না। যত টাকা আয় করেন সেই টাকার উপরেই আয়কর লাগু হয়। সেই কারণে ট্যাক্স ক্যালকুলেশনের ক্ষেত্রেও কম সময় লাগে এবং অনেকটাই সহজে আপনি আয়করের হিসেব করতে পারেন। মূলত এরকমই একটি পরিকল্পনার উপরে ভিত্তি করেই ভারতের নতুন আয়কর কাঠামোটিকেও নিয়ে আসা হয়েছে। এবার এটাই দেখার, ভারতের এই নতুন আয়কর কাঠামো সাধারণ মানুষের মধ্যে কতটা জনপ্রিয়তা পায়।

More Articles