হামলায় পাকিস্তানে তেজস্ক্রিয় নির্গমন! আশঙ্কার জবাবে যা জানাল আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা

Pakistan Nuclear Facility: IAEA-এর এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, পাকিস্তানের কোনও পারমাণবিক স্থাপনা থেকে কোনও তেজস্ক্রিয় পদার্থের কোনওরকম নির্গমন ঘটেনি।

অপারেশন সিঁদুর পরবর্তী হামলা ও পাল্টা হামলায় আশঙ্কা ছিল পাক পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডারগুলি ধ্বংস করে ফেলতে পারে ভারত। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকই মনে করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে আগ বাড়িয়ে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে দিল, তার অন্যতম কারণ হচ্ছে পারমাণবিক ভীতি। আশঙ্কা ছিল, পাকিস্তানের পারমাণবিক কাঠামোর কাছে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে ভারত, যার জেরে তেজস্ত্রিয় পদার্থ বেরিয়ে আসতে পারে। যদিও ভারত সেই ধরনের কোনও হামলার কথাই অস্বীকার করেছিল। তবে পারমাণবিক আশঙ্কা থেকে আপাতত বিশ্ববাসীকে নিষ্কৃতি দিয়েছে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA)। এই সংস্থা জানিয়েছে, ভারতের সঙ্গে সংঘাত বৃদ্ধির পর পাকিস্তানের কোনও পারমাণবিক কাঠামো থেকে কোনও তেজস্ক্রিয় পদার্থের নির্গমন ঘটেনি।

দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, IAEA-এর এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, পাকিস্তানের কোনও পারমাণবিক স্থাপনা থেকে কোনও তেজস্ক্রিয় পদার্থের কোনওরকম নির্গমন ঘটেনি। এর আগে, ভারতীয় বিমান বাহিনীও জানিয়েছে যে ভারত পাকিস্তানের কিরানা পাহাড়ে কোনও লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেনি। এই কিরানা পাহাড়েই পাকিস্তানের মূল পারমাণবিক পরিকাঠামোর অবস্থান বলে জানা গেছে।

আরও পড়ুন-কেন ভারতের বিরোধিতা করে পাকিস্তানকে সমর্থন করছে আজারবাইজান, তুরস্ক?

ভিয়েনার পারমাণবিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা IAEA একটি ঘটনা এবং জরুরি কেন্দ্রও পরিচালনা করে। এই কেন্দ্রটিই তেজস্ক্রিয় বিকিরণ সংক্রান্ত কোনও ঘটনা ঘটলে এবং এমন জরুরি অবস্থার প্রতিক্রিয়া জানানোর ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহায়তার সমন্বয়ের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কাজ করে।

পহেলগাঁও হামলার জবাবে ভারত অপারেশন সিঁদুর চালানোর পর পাকিস্তান ভারতে পাল্টা আক্রমণ করে, ভারতও প্রত্যুত্তর দেয়। সেই সামরিক সংঘাতের সময়ই আশঙ্কা করা হয়েছিল যে ভারত পাকিস্তানের পারমাণবিক পরিকাঠামো লক্ষ্য করে আঘাত করেছে। গত ১২ মে, ভারতীয় বিমান বাহিনীর এয়ার মার্শাল এ.কে. ভারতী বলেছিলেন, ভারতীয় বিমান বাহিনী কিরানা পাহাড়ে আঘাত করেনি। “কিরানা পাহাড়ে কিছু পারমাণবিক পরিকাঠামো রয়েছে তা আমাদের জানানোর জন্য আপনাদের (সংবাদমাধ্যম) ধন্যবাদ। আমরা এটা সম্পর্কে জানতাম না। আমরা কিরানা পাহাড়ে আঘাত হানিনি, বলেছিলেন এয়ার মার্শাল।

এর পরদিন, ১৩ মে ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন বিদেশ দফতরের এক সাংবাদিক বৈঠকে প্রধান উপ-মুখপাত্র থমাস পিগটকেও তেজস্ক্রিয় বিকিরণের বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। পিগট জানিয়েছিলেন, এই মুহূর্তে তাঁর কাছে এই সংক্রান্ত কোনও তথ্য নেই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কি 'পারমাণবিক যুদ্ধ' নিয়ে আশঙ্কা করেই যুদ্ধবিরতির পথে হাঁটলেন? এই প্রসঙ্গে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছিলেন, "আপনারা জানেন, ভারতের অবস্থান দৃঢ় যে আমরা পারমাণবিক ব্ল্যাকমেইলের কাছে নতি স্বীকার করব না বা এই আতঙ্কের মাধ্যমে আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদও পরিচালনা করতে দেব না। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনায়, আমরা সতর্ক করে দিয়েছি যে এই ধরনের পরিস্থিতিতে তাদের অংশগ্রহণ তাদের নিজস্ব অঞ্চলে ক্ষতি বাড়াতে পারে।"

আরও পড়ুন-মোদি থাকতে কেন ট্রাম্প তড়িঘড়ি যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে দিলেন?

অপারেশন সিঁদুরের সময় পাকিস্তানের সারগোধার মুশাফ বিমান ঘাঁটিতে ভারত আক্রমণ করেছিল। পাকিস্তানের অন্যতম বৃহত্তম বিমান ঘাঁটি সারগোধা কিরানা পাহাড়ের কাছে অবস্থিত। সারগোধা বিমান ঘাঁটিটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলেও বলা হয় কারণ F-16 যুদ্ধবিমানগুলি এই ঘাঁটি ব্যবহার করে।

পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ দফতরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী ১০ মে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ভারত পাকিস্তান বিমান বাহিনীর তিনটি ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে: নূর খান, মুরিদ এবং শোরকোট। পরবর্তীতে এক্সপ্রেস ট্রিবিউন ১৪ মে আইএসপিআরের এক বিবৃতি উদ্ধৃত করে বলে যে, "রাওয়ালপিন্ডি, গুজরাত, অ্যাটক, গুজরানওয়ালা, লাহোর, শেখুপুরা, নানকানা, ঘোটকি এবং করাচির মালির জেলা সহ একাধিক পাকিস্তানি শহরে ড্রোন শনাক্ত করা হয়েছে"।

নিয়ম অনুসারে, ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারিও ভারত ও পাকিস্তান কূটনৈতিক স্তরে দুই দেশের মধ্যে পারমাণবিক পরিকাঠামো এবং সুযোগ-সুবিধার বিষয়ক তালিকা বিনিময় করেছে। ১৯৮৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর এই বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল এবং ১৯৯১ সালের ২৭ জানুয়ারি কার্যকর হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছে, ভারত ও পাকিস্তান প্রতি বছরের ১ জানুয়ারি এই চুক্তির আওতায় থাকা পারমাণবিক পরিকাঠামো এবং সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে একে অপরকে অবহিত করবে। দুই দেশের মধ্যে টানা ৩৪ বার এই ধরনের তালিকা বিনিময় হয়েছে। প্রথমটি হয়েছিল ১৯৯২ সালের ১ জানুয়ারি। অর্থাৎ দুই দেশই একে অন্যের পারমাণবিক কাঠামো সম্পর্কে ওয়াকিবহাল।

More Articles