দোলেই দিল্লি যাত্রা অনুব্রতর! আগেও যে নেতাদের বাংলার বাইরে নিয়ে গিয়েছে ইডি-সিবিআই

Anubrata Mondal Delhi ED : এতকিছুর পরেও কাজের কাজটি হল না। আপাতত দিল্লির মাটিই দেখতে চলেছে অনুব্রত পর্বের পরবর্তী অধ্যায়।

নানাভাবে দিল্লি যাত্রা আটকানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। কোর্ট-আদালতের চক্করও কাটা হল বেশ কয়েকবার। তবুও সুরাহা হল না। শেষমেশ দিল্লির দিকেই পা বাড়াতে হল বীরভূমের বেতাজ বাদশা, তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে। দোলের দিনই তাঁকে নিয়ে দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা হলেন ইডির আধিকারিকরা। গরু পাচার মামলায় তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদের জন্যই এই উদ্যোগ বলে আগেভাগেই জানিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। দিল্লির তিহার জেলে রাখা হতে পারে অনুব্রত মণ্ডলকে, এমনটাও জানা যাচ্ছে।

অনুব্রত মণ্ডল, ওরফে বীরভূমের ‘কেষ্ট’। তাঁর নামে বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খায়। তৃণমূলের সামান্য এক জেলা সভাপতি হলেও তাঁর দাপট ছিল সর্বত্র। আর ভোটের আগে কখনও ‘নকুলদানা, গুড়-বাতাসা খাওয়ার’ নিদান, কখনও ‘চড়াম চড়াম’ মন্ত্র – অনুব্রত মানেই ছিল তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমায় ‘বাণী’। সেই অনুব্রতকেই ২০২২-র আগস্ট মাসে গ্রেফতার করা হয়। তারপর দীর্ঘ সময় ধরে চলে নানা টালবাহানা। আসানসোল জেলে এতদিন বেশ ভালোই কাটছিল কেষ্টর। তৃণমূল কংগ্রেস দলও যে তাঁর পাশে আছে, তা ঠারে ঠারে বোঝানো হয়েছিল। কিন্তু এতকিছুর পরেও কাজের কাজটি হল না। আপাতত দিল্লির মাটিই দেখতে চলেছে অনুব্রত পর্বের পরবর্তী অধ্যায়।

আরও পড়ুন : অনুব্রতর ফিসচুলায় রক্ত, মেঝেতেই ঘুমোন পার্থ, কেমন আছেন তৃণমূলের পুরাতনীরা?

হাই-প্রোফাইল, প্রভাবশালী, দাপুটে নেতা বলে কথা! তাই বীরভূমের কেষ্টকে নিয়ে যাওয়ার সময়ও ছিল কড়া পুলিশি পাহারা। ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনীও। জোকা ইএসআই হাসপাতাল ফিট সার্টিফিকেট দেওয়ার পরই তাঁর দিল্লি যাত্রার তোড়জোড় শুরু। তবে অনুব্রত মণ্ডল একমাত্র নেতা নন। বিগত কয়েক বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী থেকেছে। বর্তমান সময়ের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি, গরু পাচার মামলা তো আছেই, সঙ্গে রয়েছে অতীতের চিটফান্ড কাণ্ডের ছোঁয়া। সারদা-রোজ ভ্যালির সঙ্গেই রয়েছে নারদা স্টিং অপারেশন। শাসকদল তৃণমূলের একের পর এক নেতা এবং নেতা-ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা এই জাঁতাকলে পড়েছেন।

প্রতিবারই হয় সিবিআই, অথবা ইডি তদন্ত প্রক্রিয়ার ভার নিয়েছে। এবং প্রয়োজন অনুযায়ী রাজ্যের বাইরেও তদন্তের কার্যকলাপ নিয়ে গিয়েছে। গরু পাচার মামলার সাপেক্ষেই চলে আসবে এরকম একজনের নাম – সায়গল হোসেন। আদতে অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী সায়গল তৃণমূলের উচ্চপদস্থ কোনও নেতা ছিলেন না। কিন্তু ইডি-সিবিআইয়ের দাবি, এই পাচার চক্রে অনুব্রতর কার্যত ডানহাত ছিলেন সায়গল। সেইসূত্রে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গেও লেনদেন হয়ে থাকতে পারে। তাই সায়গল হোসেনকেও গত বছরের অক্টোবরে দিল্লি নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এখন অনুব্রত মণ্ডলকে তাঁর সামনে বসিয়ে জেরা করা হতে পারে বলে জানা যাচ্ছে।

এরপরই চলে আসবে শিক্ষক দুর্নীতি মামলা। এখনও যে কাণ্ড নিয়ে সরগরম জাতীয় রাজ্য রাজনীতি। এখনও ইতিউতি মিলছে টাকার খোঁজ; এক-দু’শো নয়, কোটি কোটি টাকা! কলকাতার বিভিন্ন জায়গায়, বেলঘরিয়া থেকে টালিগঞ্জে টাকার স্তূপের ছবি দেখেছে জনগণ। আর সেই দুর্নীতিতেই গ্রেফতার হয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী, তৃণমূলের মহাসচিব, কার্যত দলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সেইসঙ্গে জেল হেফাজত হয়েছে তাঁর বিশিষ্ট বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়েরও। এখন কলকাতায় থাকলেও, তদন্তের স্বার্থে মাঝখানে ভুবনেশ্বরে নিয়ে যেতে হয়েছিল দুজনকেই। সেখানেও পার্থ-অর্পিতাকে জেরা করা হয়।

আরও পড়ুন : জেলবন্দি, অসহায় পার্থর ভাগ‍্যের চাকা ঘুরছে কোনদিকে

‘প্রভাবশালী’ তত্ত্ব খাড়া করেই রাজ্যের বাইরে জেরা, তদন্তের কাজ চালাতে চায় কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি, এমনটাই মনে করে রাজনৈতিক মহল। তার আরেকটা উদাহরণ দেখা যাবে রোজভ্যালি কাণ্ডে। আর্থিক দুর্নীতি মামলায় ২০১৭ সালে গ্রেফতার করা হয় তৃণমূল সাংসদ, আরেক হাই প্রোফাইল নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তার আগেই গ্রেফতার করা হয় তৎকালীন তৃণমূল নেতা, অভিনেতা, অধুনা প্রয়াত তাপস পালকে। প্রভাবশালী তত্ত্ব খাড়া করে দুজনকেই নিয়ে যাওয়া হয় ভুবনেশ্বরে। সেখানেই জেলে বন্দি থাকেন তাঁরা, জেরাও চলে। পরে অবশ্য মুক্তি পান দুজনেই।

গ্রেফতার করা না হলেও, দিল্লিতে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল তৃণমূল নেতা মুকুল রায়কেও। একের পর এক দুর্নীতি কাণ্ডের সঙ্গে শাসকদলের যোগ অবশ্যই চিন্তার বিষয়। তবে দিল্লি-ভুবনেশ্বরে যাত্রা যে এখনই শেষ হবে না, তা বলাই যায়। শাসকদল তৃণমূলেরও অভিযোগ, সিবিআই-ইডিকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে ভোটের আগে রাজ্য রাজনীতি যে যথেষ্ট উত্তপ্ত, তা বলাই যায়।

More Articles