অপারেশন সিঁদুর: পহেলগাঁওয়ের জবাব পাকিস্তানকে যেভাবে ফেরাল ভারত
Operation Sindoor: মুরিদকেতে, লক্ষ্য ছিল মসজিদ ওয়া মারকাজ তৈবা। এটি লস্করের স্নায়ু কেন্দ্র এবং মতাদর্শিক সদর দফতর। দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের 'সন্ত্রাসের নার্সারি' হিসাবে বিবেচিত হতো এই জায়গাটি।
বুধবার ভোর! পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীর জুড়ে ছড়িয়ে থাকা সন্ত্রাসবাদী শিবিরগুলিতে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর ধারাবাহিক হামলায় ৮০ জনেরও বেশি সন্ত্রাসবাদী নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। দেশের শীর্ষ নিরাপত্তা সূত্র জানাচ্ছে, ভারত পহেলগাঁও হামলার প্রত্যাঘাত করেছে অপারেশন সিঁদুর দিয়ে। অপারেশন সিঁদুর নামের এই আন্তঃসীমান্ত অভিযানে নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন জৈশ-ই-মহম্মদ (জেইএম), লস্কর-ই-তৈবা (এলইটি) এবং হিজবুল মুজাহিদিনের সঙ্গে যুক্ত নয়টি জায়গাকে লক্ষ্য করা হয়েছিল। নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মতে, জৈশ-ই-মহম্মদের শক্ত ঘাঁটি বাহাওয়ালপুর এবং মুরিদকেতে দু'টি বিশাল হামলা চালানো হয়, যাতে সব মিলে আনুমানিক ২৫-৩০ জন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। মুরিদকেতে, লক্ষ্য ছিল মসজিদ ওয়া মারকাজ তৈবা। এটি লস্করের স্নায়ু কেন্দ্র এবং মতাদর্শিক সদর দফতর। দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের 'সন্ত্রাসের নার্সারি' হিসাবে বিবেচিত হতো এই জায়গাটি।
ইন্ডিয়া টুডে-র এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গোয়েন্দা সংস্থাগুলি এখনও মোট হতাহতের সংখ্যা নিশ্চিত না করলেও, প্রাথমিক মূল্যায়নে দেখা গেছে মোট ৮০ থেকে ৯০ জন সন্ত্রাসীকে নিকেশ করা হয়েছে।
পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিহানার জবাব যে পাকিস্তানকে ভারত দেবেই তা স্পষ্ট ছিল আগে থেকেই। ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক প্রকাশিত সংক্ষিপ্ত একটি বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, পাকিস্তানে এবং পাক অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীরে ৯টি জায়গায় জঙ্গি পরিকাঠামো লক্ষ্য করে ‘প্রিসিশন স্ট্রাইক’ করা হয়েছে। সরকারের দাবি, পাকিস্তানের যে সব জায়গায় বসে ভারতে সন্ত্রাসবাদী হানার পরিকল্পনা হয়েছিল এবং নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, সেখানেই ভারত আঘাত করেছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক বিবৃতিতে বলেছে, “আমাদের পদক্ষেপ সুনির্দিষ্ট, পরিমিত এবং অপ্ররোচনামূলক। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কোনও পরিকাঠামোয় আঘাত হানা হয়নি। লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ এবং আঘাত হানার প্রশ্নে ভারত উল্লেখযোগ্য সংযম দেখিয়েছে।”
জানা যাচ্ছে, যেসব জায়গায় ভারত আঘাত হেনেছে তার মধ্যে ছিল লঞ্চ প্যাড, প্রশিক্ষণ শিবির এবং জৈশ-ই-মহম্মদ এবং লস্কর-ই-তৈবা পরিচালিত মৌলবাদ কেন্দ্র। হামলার পর এক বিবৃতিতে, ভারতীয় সেনাবাহিনী X-এ একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে লিখেছে 'ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে'। তবে পাকিস্তান জানিয়েছে যে একটি শিশু সহ আটজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন এই হামলায়। পাকিস্তান এই হামলাকে 'যুদ্ধের স্পষ্ট ইঙ্গিত' হিসাবেই দেখছে।
জৈশ-ই-মহম্মদের সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য স্থানগুলির মধ্যে রয়েছে তেহরা কালানে সরজাল, কোটলিতে মারকাজ আব্বাস এবং মুজাফফরাবাদে সৈয়দনা বিলাল ক্যাম্প। বার্নালায় মারকাজ আহলে হাদিস এবং মুজাফফরাবাদে শাওয়াই নাল্লা ক্যাম্পে – এই দুইটিই লস্কর-ই-তৈবার সঙ্গে যুক্ত - হামলা করা হয়েছে। হিজবুল মুজাহিদিন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র কোটলিতে মাকাজ রাহিল শহিদ এবং শিয়ালকোটে মেহমুনা জয়াতেও হামলা হয়েছে।
নয়টি জায়গার মধ্যে চারটি ছিল পাকিস্তানের ভেতরে, বাকি পাঁচটি ছিল পাক অধিকৃত কাশ্মীরে। কর্মকর্তারা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, কোনও পাকিস্তানি সামরিক শিবিরে হামলা করা হয়নি। যদিও পাকিস্তানি সেনাবাহিনী, আইএসআই এবং স্পেশাল সার্ভিসেস গ্রুপের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদীদের প্রশিক্ষণে সাহায্য করার অভিযোগ রয়েছে।
জানা যাচ্ছে, এই হামলার পর, পাকিস্তানি বাহিনী জম্মু ও কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণ রেখা এবং আন্তর্জাতিক সীমান্ত বরাবর গোলাবর্ষণ শুরু করে। ভারতীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এতে তিনজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। নিরাপত্তা বাহিনীও পাল্টা জবাব দিয়েছে এবং সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে গুলি বিনিময় অব্যাহত রয়েছে। এদিকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর হামলার পরে এক্স-এ প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ লিখেছেন, ‘ভারত মাতা কী জয়!’ ভারতের দূতাবাস জানিয়েছে পাকিস্তানে ভারতের হামলার পরেই ভারতের জাতীয় সুরক্ষা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, আমেরিকার উপদেষ্টা এবং রাষ্ট্রসচিব মার্কো রুবিয়োর সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলবে।