ভোররাতে পাকিস্তানে অপারেশন সিঁদুর! কোন ন'টি ঘাঁটি হামলার জন্য বাছল ভারতীয় সেনা?

Operation Sindoor: প্রতিরক্ষা মন্ত্রক রিপোর্টে লিখেছে, "আমাদের পদক্ষেপ সুনির্দিষ্ট, পরিমিত এবং অপ্ররোচনামূলক। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কোনও পরিকাঠাময় আঘাত হানা হয়নি।"

বুধবার ভোররাতে পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ৯টি স্থানে আঘাত হানল ভারতীয় বিমান বাহিনী। কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিহানার ঠিক ২ সপ্তাহ পর পাকিস্তানের মাটিতে ভারতীয় সেনার হামলা, অপারেশন সিঁদুর। ভারতীয় সেনা এবং ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফ থেকে এক বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত জম্মু কাশ্মীরে ৯টি জায়গায় জঙ্গি পরিকাঠামো লক্ষ্য করে 'প্রিসিশন স্ট্রাইক' করেছে ভারত। যেসব জায়গায় বসে ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদী হানার পরিকল্পনা করা হয়েছিল এবং হামলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, সেখানেই ভারত আঘাত হেনেছে বলে দাবি করেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। মন্ত্রক রিপোর্টে লিখেছে, "আমাদের পদক্ষেপ সুনির্দিষ্ট, পরিমিত এবং অপ্ররোচনামূলক। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কোনও পরিকাঠামোয় আঘাত হানা হয়নি। লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ এবং আঘাত হানার প্রশ্নে ভারত উল্লেখযোগ্য সংযম দেখিয়েছে।" ভারতীয় সেনাবাহিনীর হামলার পর ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং নিজের এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, "ভারত মাতা কি জয়!" মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভারতীয় দূতাবাসও জানিয়েছে, পাকিস্তানে ভারতের হামলার পরেই ভারতের জাতীয় সুরক্ষা উপদেষ্টা অজিত দোভাল, আমেরিকার উপদেষ্টা এবং রাষ্ট্র সচিব মার্কো রুবিওর মধ্যে আলোচনা শুরু হবে।

কোন নয়টি জায়গায় হামলা চালাল ভারতীয় সেনা?

ভারতীয় সেনার তরফে এখনও পর্যন্ত যা জানা গেছে, ভারত পাকিস্তানের নয়টি জায়গাতে আক্রমণ করেছে। এই নয়টি জায়গা বিশেষভাবে জঙ্গি কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত। লস্কর ও জৈশ-ই-মহম্মদের মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গিদের বারংবার এই সমস্ত জায়গায় দেখা গিয়েছে।

১. বাহাওয়ালপুর - এই জায়গাটি ভারত পাকিস্তান সীমান্ত থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে। এই জায়গাটি পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডের মধ্যেই পড়ে। পঞ্জাব প্রদেশে অবস্থিত এই জায়গাটি জঙ্গি সংগঠন জৈশ-ই-মহম্মদের সদর দপ্তর হিসেবে কুখ্যাত। এখানে একটি মসজিদ রয়েছে মারকাজ সুবহান আল্লাহ মসজিদ, যেখান থেকে এই সমস্ত জঙ্গি কার্যকলাপ চালানো হয়। সেই মসজিদটি রাফালের মাধ্যমে ধ্বংস করেছে ভারতীয় বায়ু সেনা।

২. মুরিদকে - ভারত পাকিস্তান সীমান্তের থেকে ৩০ থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই জায়গাটি লস্কর-ই-তৈবার প্রধান ঘাঁটি। ২৬/১১ মুম্বই হামলার পরিকল্পনা এখান থেকেই তৈরি হয়েছিল। এখানকার মারকাজ তৈবা মসজিদে আক্রমণ চালিয়েছে ভারতীয় সেনা। এই মসজিদটিতে এক দীর্ঘ সময় পর্যন্ত অর্থ সাহায্য করেছিলেন ওসামা বিন লাদেন এবং এই মসজিদ থেকেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল মুম্বই হামলার অন্যতম চক্রী আজমল কাসভকে।

৩. গুলপুর - লাইন অফ কন্ট্রোল পুঞ্চ-রাজৌরি থেকে এই জায়গাটির দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার। এই জায়গাটিতেও একাধিকবার জঙ্গি কার্যকলাপের খবর পাওয়া গিয়েছে।

৪. সাওয়াই - পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের টাংধার সেক্টর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই জায়গাটিতে একটি লস্করের ক্যাম্প রয়েছে। মুজফফরাবাদের এই অঞ্চলটি অনেকদিন ধরেই ভারতের বিরুদ্ধে কার্যকলাপ চালিয়ে আসতে ব্যবহার করেছে পাকিস্তানের জঙ্গিরা। ভারতীয় ভূখণ্ডে হামলা চালানোর পর এই ক্যাম্পেই আশ্রয় নিত পাকিস্তানের জঙ্গিরা। সম্ভাবনা রয়েছে, এই স্থানে ভারতের এই অতর্কিতে আক্রমণের পর মৃত্যু হয়েছে পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডের মূল চক্রীদেরও।

৫. বিলাল ক্যাম্প - এটি ছিল জৈশ-ই-মহম্মদের একটি কুখ্যাত লঞ্চ প্যাড এবং এখান থেকে জঙ্গিদের ভারতে আসার সমস্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। এই জায়গাটি ভারতীয় ভূখণ্ড থেকে খুবই কাছাকাছি। মুজফফরাবাদের এই জায়গাটিও পাকিস্তান ব্যবহার করে জঙ্গি কার্যকলাপ চালানোর জন্য।

৬. কোটলি - ভারত-পাকিস্তান লাইন অফ কন্ট্রোল থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই জায়গাতে জঙ্গিদের লুকিয়ে থাকার নানা প্রমাণ পাওয়া গেছে এর আগেও। এই স্থানে ৫০ জনেরও বেশি জঙ্গি থাকার সম্ভাবনা ছিল। কোটলির মারকাজ আব্বাস এবং মাসকার রাহিল শাহিদ ধ্বংস করেছে ভারতীয় বায়ু সেনা।

৭. বারনালা ক্যাম্প - ভারত পাক সীমান্ত থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই ক্যাম্প জঙ্গিদের লুকিয়ে থাকার পুরনো ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এই ক্যাম্পের মারকাজ আহলে হাদীথের উপরে হামলা চালিয়েছে বায়ু সেনা।

৮. সরজাল ক্যাম্প - ভারত পাকিস্তান সম্বা কাঠুয়া সীমান্ত থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই জায়গাটি জয়েশের ট্রেনিং ক্যাম্প হিসাবে ব্যবহার হতো। সরজালের তেহরা কালানকে মিসাইলের আঘাতে ধ্বংস করেছে ভারতীয় সেনা।

৯. মেহমুনা ক্যাম্প (শিয়ালকোট) - ভারত পাকিস্তান সীমান্ত থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই জায়গাটি হিজবুল মুজাহিদিনের প্রশিক্ষণ শিবির হিসাবে ব্যবহার করা হতো একটা দীর্ঘ সময় ধরে।

অন্যদিকে, এই আক্রমণের পর একেবারেই শান্ত অবস্থায় বসে নেই পাকিস্তান। ভারতের অপারেশন সিঁদুরের পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর শাহবাজ শরিফ বলেছেন, "ভারতের এই আক্রমণ আমদের সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। পাকিস্তান এই যুদ্ধের উপযুক্ত জবাব দেওয়ার অধিকার রাখে। পাকিস্তান তার সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ এবং শত্রুর মোকাবিলা করতে পাকিস্তান বাহিনী প্রস্তুত।" ইতিমধ্যেই পাকিস্তানের তরফ থেকেও শুরু হয়েছে আক্রমণ। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, পুঞ্চ-রাজৌরিতে গোলাবর্ষণ শুরু করেছে পাকিস্তান সেনা। এই হামলায় ৩ জন সাধারণ ভারতীয় কাশ্মীরির মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। পাল্টা জবাব দিচ্ছে ভারতীয় সেনা। তাদের তরফ থেকেও গোলাবর্ষণ শুরু হয়েছে। 

More Articles