কেন অপারেশন সিঁদুর নামে পাল্টা আক্রমণ চালাল ভারত?
Operation Sindoor: অপারেশন সিঁদুর নামেই পাল্টা আক্রমণ চালাল ভারত। কোন মহিলাদের উদ্দেশ্যে এই নামকরণ?
সকলের চোখের সামনে খুন করা হয়েছে তাঁদের জীবনসঙ্গীকে। কেউ সদ্যবিবাহিত, মধুচন্দ্রিমা রক্তাক্ত হয়ে গিয়েছে তাঁর। কেউ দীর্ঘদিনের সংসার সামলে ছুটি কাটাতে গেছেন, চোখের সামনে স্বামীকে খুন হয়ে যেতে দেখেছেন জঙ্গিদের হাতে। এই সমস্ত স্বামীহারানো স্ত্রীদের হয়ে যে পহেলগাঁও হামলার বদলা নিল ভারত! 'অপারেশন সিঁদুর' নামটি কাশ্মীরের বৈসরন তৃণভূমিতে সেই মর্মান্তিক ঘটনার প্রেক্ষিতেই নির্বাচিত করেছে ভারত। বিবাহিত হিন্দু মহিলাদের একটি আচারের উপাদানকে শোকের জাতীয় রূপক হিসেবে ব্যবহার করে তাকেই যেন অস্ত্র করে তুলল ভারতীয় সেনা। কেবল এই মহিলাদের ব্যক্তিগত শোক নয়, পহেলগাঁও হামলা এক সম্মিলিত ক্ষোভের ঢেউ তুলেছিল দেশজুড়ে।
অপারেশন সিঁদুর নামেই তাই পাল্টা আক্রমণ চালাল ভারত। কোন মহিলাদের উদ্দেশ্যে এই নামকরণ? সন্ত্রাসী হামলায় স্বামী হারানো সেই মহিলদের ফিরে দেখা যাক:
হিমাংশী নারওয়াল
পহেলগাঁও হামলার পর যার ছবি সেই মুহূর্তে ছড়িয়ে গিয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনিই হিমাংশী। স্বামীর মৃতদেহর পাশে স্তব্ধবাক বসেছিলেন তিনি, ভূস্বর্গের সবুজ গালিচায়। হিমাংশী নারওয়ালের স্বামী ছিলেন হরিয়ানার ২৬ বছর বয়সি ভারতীয় নৌবাহিনীর অফিসার লেফটেন্যান্ট বিনয় নারওয়াল। পহেলগাঁওয়ে মধুচন্দ্রিমায় গিয়ে নিহত হন তিনি। হামলার মাত্র এক সপ্তাহ আগে বিয়ে করেছিলেন তাঁরা, ২০২৫ সালের ১৬ এপ্রিল। স্বামী হারানোর পর প্রথম প্রকাশ্য বক্তব্যে হিমাংশী শান্তির আবেদনই জানান। বলেছিলেন, "কারও প্রতি ঘৃণা থাকা উচিত নয়।"
ঐশণ্য দ্বিবেদী
ঐশণ্য দ্বিবেদী উত্তরপ্রদেশের পর্যটক শুভম দ্বিবেদীর স্ত্রী। এই দম্পতিরও মাত্র দুই মাস আগে বিয়ে হয়েছিল।
শীতল কালাথিয়া
শীতল গুজরাতের সুরাটের ব্যাঙ্ককর্মী শৈলেশ কালাথিয়ার স্ত্রী। স্বামীর জন্মদিন উদযাপন করতে পারিবারিক ছুটিতে কাশ্মীরে যাওয়া। সন্ত্রাসীরা যখন হামলা চালায় তখন শীতল তাঁর স্বামী এবং দুই সন্তানকে নিয়ে বৈসরন তৃণভূমিতেই আরাম করছিলেন।
সোহিনী অধিকারী
পহেলগাঁও হামলায় নিহত কলকাতার আইটি কর্মী বিতান অধিকারীর স্ত্রী। বিতান ও সোহিনী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করতেন। ছুটি কাটাতে ভারতে এসেছিলেন। এই দম্পতি তাঁদের সাড়ে তিন বছরের ছেলে হৃদানকে নিয়ে কাশ্মীর ঘুরতে গিয়েছিলেন। ২২ এপ্রিল বৈসরনের মনোরম তৃণভূমিতে বিতানকে সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে।
কাজলবেন পারমার
কাজলবেনের স্বামী, যতীশভাই পারমার, গুজরাতের ভাবনগরে একটি সেলুন চালাতেন। পরিবারের সঙ্গে কাশ্মীরে গিয়েছিলেন। প্রথমে শ্রীনগরে আধ্যাত্মিক নেতা মোরারি বাপুর রাম কথায় যোগদান করে তারপর পহেলগাঁওয়ে যান। সেখানেই ঘটে করুণ পরিণতি।
প্রগতি জগদালে
প্রগতি জগদালে মহারাষ্ট্রের সন্তোষ জগদালের স্ত্রী। জগদালে পরিবার পুনের বাসিন্দা। স্বামীকে হারিয়ে প্রগতি তাঁর ছোট্ট মেয়ে আশাভরীকে নিয়ে অনিশ্চিত জীবন কাটাচ্ছেন।
শীলা রামচন্দ্রন
কোচির বাসিন্দা শীলা রামচন্দ্রন। জীবনের প্রায় শেষ প্রান্তে গিয়ে হারিয়েছেন জীবনসঙ্গীকে। তাঁর স্বামী, ৬৫ বছরের এন রামচন্দ্রন পহেলগাঁওয়ে নিহত হন। মেয়ে এবং নাতিদের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয় তাঁকে। শরীর অসুস্থ থাকায় শীলা কাশ্মীর সফরে যাননি।
জেনিফার নাথানিয়েল
৫৪ বছর বয়সি জেনিফার নাথানিয়েল মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরের ৫৮ বছর বয়সি এলআইসি শাখা ব্যবস্থাপক সুশীল নাথানিয়েলের স্ত্রী। নাথানিয়েল পরিবারে আছে, জেনিফার, সুশীল, তাদের ৩০ বছরের মেয়ে আকাঙ্খা এবং ২১ বছর বয়সী ছেলে অস্টিন। জেনিফারের জন্মদিন উদযাপনের জন্য কাশ্মীর ভ্রমণে গিয়েছিলেন তাঁরা। সুশীলকে সেখানে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।
জয়া মিশ্র
জয়া মিশ্র ৪২ বছর বয়সি গোয়েন্দা কর্মকর্তা মনীশ রঞ্জন মিশ্রের স্ত্রী। পরিবারকে নিয়েই ছুটি কাটাতে কাশ্মীরে নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা। পহেলগাঁওয়ে স্ত্রী এবং সন্তানদের সামনে সন্ত্রাসবাদীরা নৃশংসভাবে গুলি করে হত্যা করে মনীশকে।