অপারেশন সিঁদুর বনাম বুনিয়ান উল মারসুস | আঘাত প্রত্যাঘাতের ধারাবিবরণী
Operation Sindoor Vs Bunyan un Marsoos: ভারতের 'অপারেশন সিদুঁর'-এর বদলা হিসাবে 'অপারেশন বুনিয়ান মারসুস' শুরু করেছে পড়শি পাকিস্তান।
অপারেশন সিঁদুর থামেনি, পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ও সেনাবাহিনীর জনসংযোগ বিভাগের দাবি, ভারত শনিবার ভোররাতে তাদের তিনটি বিমানঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে। পাল্টা জবাবে ভারতের পাঠানকোট, উধমপুরসহ বিভিন্ন সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে পাক সেনা। ভোরবেলা সেখানে কয়েকটি বড় ধরনের বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে। শহরজুড়ে এখন পুরোপুরি ব্ল্যাকআউট চলছে। পাক সেনাবাহিনীর দাবি, ভারত তাদের তিনটি বিমান ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। রাওয়ালপিন্ডি আর ইসলামাবাদেও বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে বলে দাবি করা হয়েছে। তবে এতে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলেই দাবি করেছেন সেই দেশের সেনা মুখপাত্র। তবে পাকিস্তান স্পষ্ট জানিয়েছে, ভারতের 'অপারেশন সিদুঁর'-এর বদলা হিসাবে 'অপারেশন বুনিয়ান মারসুস' শুরু করেছে পড়শি দেশ।
'বুনিয়ান উল মারসুস' বা 'বুনিয়ান উন মারসুস' শব্দের অর্থ 'নেতৃত্বের পোক্ত দেওয়াল'। আল জাজিরার প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, 'বুনিয়ান মারসুস' একটি আরবি বাক্যাংশ যার সরাসরি অনুবাদ করলে দাঁড়ায় 'সীসা দিয়ে প্রস্তুত কাঠামো'। এই শব্দের সঙ্গে ইসলাম ধর্মীয় মতের একটি যোগ রয়েছে। সেখানেও পোক্ত এক দেওয়ালের কথা বলা হয়েছে। সম্ভবত মজবুত প্রতিরক্ষার কথা বোঝাতেই এই অপারেশনের নামকরণ।
অন্যদিকে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে, উত্তর পশ্চিমের বিভিন্ন রাজ্যে সন্দেহভাজন সশস্ত্র ড্রোন দেখা গেছে। পঞ্জাবের ফিরোজপুরে এরকম ড্রোন হানায় কয়েকজন নাগরিক আহত হয়েছেন বলেও জানা গেছে। উত্তর এবং পশ্চিম ভারতের ৩২টি বিমানবন্দর থেকে বেসামরিক বিমান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
OPERATION SINDOOR
— ADG PI - INDIAN ARMY (@adgpi) May 10, 2025
Pakistan’s blatant escalation with drone strikes and other munitions continues along our western borders. In one such incident, today at approximately 5 AM, Multiple enemy armed drones were spotted flying over Khasa Cantt, Amritsar. The hostile drones were… pic.twitter.com/BrfEzrZBuC
পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ দফতরের প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরীর দাবি, ভারত শনিবার ভোররাতে রাওয়ালপিন্ডির নূর খান বিমান ঘাঁটি, শরকোট বিমান ঘাঁটি এবং মুরিদ বিমান ঘাঁটি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার করেছে। তবে তাঁর দাবি, এসব হামলার পরেও পাকিস্তান বিমান বাহিনীর সব সম্পত্তিই নিরাপদে আছে। করাচির ফায়সাল হাইওয়েতে একাধিক বিস্ফোরণের আওয়াজ পাওয়া গেছে। রাওয়ালপিন্ডি ও ইসলামাবাদেও বিস্ফোরণ ঘটেছে যার জেরে সাধারণ নাগরিকদের অকারণে বাড়ি থেকে না বেরোতে এবং বাড়ির আলো নিভিয়ে রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নূর খান বিমান ঘাঁটি মূলত রসদ সরবরাহ এবং জ্বালানি সরবরাহের কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। পঞ্জাব প্রদেশের শরকোটে অবস্থিত পিএএফ ঘাঁটি রফিকি পাকিস্তানের অন্যতম প্রধান যুদ্ধ বিমান ঘাঁটি হিসেবে কাজ করে, যেখানে চিনে তৈরি জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমান, ফ্রান্সের নির্মিত মিরাজ ৫ যুদ্ধবিমান এবং অ্যালুয়েট ৩ হেলিকপ্টার সহ বিভিন্ন যুদ্ধ বিমান রয়েছে।
মুরিদ বিমান ঘাঁটি হল পাকিস্তানের প্রধান মানবহীন বিমান বাহন (UAV) স্থাপনা। এটি প্রায় সম্পূর্ণরূপে ড্রোন যুদ্ধ এবং অভিযানের জন্যই তৈরি। এটি একটি নৌবহর পরিচালনা করে যার মধ্যে রয়েছে নজরদারি অভিযানের জন্য দেশিয়ভাবে তৈরি শাহপার ১, সশস্ত্র হামলার জন্য NESCOM Burraq UAV এবং তুর্কি-নির্মিত Bayraktar ড্রোন। এগুলির ব্যাপক দেখা গেছে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধেও।
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে, শনিবারের মাঝরাতে উত্তরের বারামুলা থেকে গুজরাতের ভুজ পর্যন্ত ২৬টি জায়গায় ড্রোন দেখা গিয়েছে। বেসামরিক ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাতের ছক ছিল পাকিস্তানের, দাবি মন্ত্রকের। ভারতের ৩৬ জায়গায় হামলার চেষ্টা করেছিল পাকিস্তান, যদিও ভারতীয় সেনা সেই চেষ্টা ব্যর্থ করেছে বলেই দাবি করেছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক।
কর্নেল সোফিয়া কুরেশি জানিয়েছেন, ভারতের ৩৬ জায়গায় অন্তত ৩০০ থেকে ৪০০ বার ড্রোন হামলার চেষ্টা করেছিল পাকিস্তান। গোপনে নানা তথ্য সংগ্রহ করার উদ্দেশে ভারতে ড্রোন প্রবেশ করিয়েছিল পাকিস্তান যা মাটিতে নামানো হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, ওই ড্রোনগুলি তুরস্কের। এমনই এক ইউএভি (ড্রোন) দিয়ে ভাটিন্ডার সেনাছাউনিতে হামলার চেষ্টাও করেছিল পাকিস্তান। তবে সফল হয়নি। উল্টে ভারতীয় সেনা পাকিস্তানের চারটি বিমানঘাঁটিতে সশস্ত্র ড্রোন হামলা করেছে।