বিমান দুর্ঘটনায় পাইলটদের মৃত্যু, মারা যান মালিকও, নেপালের ইয়েতি এয়ারলাইন্স সত্যিই 'অভিশপ্ত'?
Nepal Plane Crash Ang Tshering Sherpa : অদ্ভুতভাবে, ইয়েতি এয়ারলাইন্সের সঙ্গে বারবার জুড়েছে মৃত্যু। কখনও মারা গিয়েছেন পাইলট, কখনও যাত্রী সহ আছড়ে পড়েছে বিমান।
১৫ জানুয়ারির কালো দিনের কথা এখনও ভুলতে পারছে না নেপাল। শুধু নেপাল নয়, প্রতিবেশী ভারতের মানুষের মনেও ভেসে আসছে সেই ভয়ংকর দৃশ্য। নতুন বছরের শুরুতে আনন্দ উদযাপন করতেই ওই বিমানে চেপেছিলেন যাত্রীরা। কিন্তু সেটাই যে তাঁদের শেষ যাত্রা হবে, ছাই হয়ে যেতে হবে একেবারে, সেটা মনে হয় দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি তাঁরা। ৬৮ জন যাত্রী ও চার জন বিমান কর্মী ছিলেন ওখানে। যেভাবে দুর্ঘটনা ঘটেছে, তাতে কারোরই বেঁচে থাকার কথা নয়। গত ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বিধ্বংসী ও ভয়ংকর বিমান দুর্ঘটনার সাক্ষী থাকল এশিয়া।
বলা হচ্ছে, ইয়েতি এয়ারলাইন্সের এই বিমানটি নাকি ১৫ বছরের পুরনো। আগে ভারতের কিংফিসার কোম্পানির অধীনে ছিল এটি। পরে থাইল্যান্ড হয়ে এটি ইয়েতি এয়ারলাইন্সের হাতে আসে। ২০২৩-এর নেপালের পোখরায় বিমান দুর্ঘটনা অবশ্য বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এর আগেও এখানে বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে। অদ্ভুতভাবে, ইয়েতি এয়ারলাইন্সের সঙ্গে বারবার জুড়েছে মৃত্যু। কখনও মারা গিয়েছেন পাইলট, কখনও যাত্রী সহ আছড়ে পড়েছে বিমান। আরও আশ্চর্য ঘটনা হল, ইয়েতি এয়ারলাইন্সের প্রতিষ্ঠাতা আং শিরিং শেরপারও (Ang Tshering Sherpa) মৃত্যু হয় বিমান দুর্ঘটনায়!
আরও পড়ুন : শোনেননি বাবার বারণ, কথা দিয়েছিলেন ‘ফিরে আসব’, নেপাল দুর্ঘটনায় মৃত বিমানসেবিকার পরিবারে হাহাকার
১৯৯৮ সালে আং শিরিং শেরপা তৈরি করেন ইয়েতি এয়ারলাইন্স। এছাড়াও তাঁর আরও একটি বিমান সংস্থা আছে, ‘তারা এয়ার’। ২০০৯ সালে এটি তৈরি হয়। কেবল বিমান পরিষেবাই নয়, নিজের হোটেলও ছিল নেপালের এই শিল্পপতির। ২০১৯ সালে একটি হেলিকপ্টারে করে যাচ্ছিলেন আং শিরিং শেরপা। সঙ্গে ছিলেন হাই প্রোফাইল সব মানুষ। হেলিকপ্টারে ছিলেন নেপালের অসামরিক বিমান পরিষেবা মন্ত্রী, তাঁর সহকারী, ডেপুটি ডিরেক্টর ও ডেপুটি সেক্রেটারি। ভোর ৬ টায় একটি জায়গায় যাচ্ছিলেন তাঁরা। তখন কোনও সমস্যা হয়নি। ফেরার সময় দুপুর দেড়টা নাগাদ তাপরেজুংয়ে একটি পাহাড়ের গায়ে ধাক্কা লেগে ভেঙে পড়ে ওই হেলিকপ্টার। পাইলট সহ ৬ জনই ওই দুর্ঘটনায় মারা যান। সেই দলে ছিলেন আং শিরিং শেরপাও।
২০০৬ সালের জুন মাসে ফের বিমান দুর্ঘটনার সাক্ষী থাকে ইয়েতি এয়ারলাইন্স। এবারও তাদেরই বিমান ভেঙে পড়ে। সেখানেই মারা গিয়েছিলেন বিমানের কো-পাইলট দীপক পোখরেল। প্রাণ গিয়েছিল মোট ১০ জনের। ২০২২ সালে ফের ইয়েতি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ৯৭২-র ইঞ্জিন খারাপ হয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে অবশ্য এয়ারপোর্টে ফিরে আসায় বেঁচে গিয়েছিলেন সবাই। কিন্তু সেই বছরই তারা এয়ারের একটি বিমান ভেঙে পড়ে পাহাড়ি এলাকায়। মারা যান ২২ জন।
আরও পড়ুন : ১৬ বছরের ব্যবধান, স্বামীর মতোই শেষ পরিণতি! নিয়তিই মিলিয়ে দিল নেপালের বিমান দুর্ঘটনার পাইলটকে
২০০৬-র পর ১৬ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। ২০২৩-র জানুয়ারি ফের দেখল আরেকটি ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা। এবারও সেই ইয়েতি এয়ারলাইন্স। অদ্ভুতভাবে, এই বিমানের কো-পাইলট ছিলেন দীপক পোখরেলের স্ত্রী অঞ্জু খাটিওয়াদা। তিনিও এই বিমান দুর্ঘটনাতেই প্রাণ হারালেন। বিমানসেবিকা ওশিন আলে মাগারকে তাঁর বাবা বারবার বলেছিলেন, “যেও না। উৎসবের মরসুমে একটু ঘরে থাকো।” কিন্তু তিনি গিয়েছিলেন। আর ফিরে আসেননি। বারবার ইয়েতি এয়ারলাইন্সের সঙ্গেই কেন এমন দুর্ঘটনা ঘটে? এটা কি তাহলে ‘অভিশপ্ত’? বারবার ঘুরেফিরে এটিই কেন দুর্বিপাকে পড়ে? এখন এটাই প্রশ্ন সবার।