পানপাতা জোড়া জোড়া: সাদিক হোসেন
Surreal Bengali Prose: জোছনাকে জিজ্ঞেস করতেছে, কে তোর রব? কুতুবুলকে জিজ্ঞেস করতেছে, কে তোর পয়গম্বর? ওরা এধার-ওধার তাকাতি পারতেচে না।
উড়িছে রেণু, তাহার তলে, চকিত ভাদ্র মাস
চমকিত হে, গাঙুরে দেহ, ভাসিছে চন্দ্রহাস
কাটা জিহ্বা, ডাহিনিবিদ্যা, কুটিল ন'জওয়ান
অস্ত্রে সাজিছে, হাহা হিহিহি, গাহিছে মেধাবিসঙ
পর্দার উইপার থেহি মোকে দেখতি কেমন লাগতেচে গো কত্তা? আলুথালু চুল, বুকের বাঁধন নাই, তোবড়ানো কোটর লিয়ে ঘুরতিচি আলো ঝ্যাকম্যাক রাস্তায়? এফোঁড়ওফোঁড় সেলাই দিবার পর বাকি আর কী থাহে? চর্বি, গলা গলা ভাত, চাপচাপ খুন সব তো লুটিয়াপুটিয়া গেল। হাঃ, মুণ্ডুর উপর চক্কর দিসতেচে সবুজ বাতি, লাল বাতি, বাজনদারের ক্যাওড়া লাঠি, গদ্দান অব্দি নিঙরে নিসতেচে এমন হারামখোর মুরিদ। কত্তা গো, কী মুরিদ পুইষেচো বলো দেহি - সে খালি জুলুম করে না, জালেমের সাথে গান গাইতি বলে, ভাত খাতি বলে, হাগদে গেলি লোটা এইগে দিতি বলে!
সেইদিন ফজরের ওয়াক্তে উইঠে দেহি চাঁদ। ক্যাম্বানা নাদুসনুদুস, খোবলানো, তার গায়ে আবার সরু সরু ডাল, ডালে ডালে ঝিলমিল পাতা বাতাসে কাঁপতেচে। রাত্তির বেলা নাচ হইছ্যালো। বদুবাবু মাদ্রাসার চেয়ারম্যান হইছে আবার। এহন টুনিগুলো চমকে উঠতেছে। বদুবাবু বড্ড নাচ নেইচে ছ্যালো তো। কোমরে ব্যথা লিয়ে মজ্জিদে যাসতিছে। পেচ্ছনে তার মাগ ঘুমটা টেইনে নে’ মরদের জন্যি দোয়া মাঙতেছে। বদুবাবু, অ বদুবাবু, মোকে একখান কোরান কিইনে দেবে? তুমার পিরান ঠেইলে বেইরে আসা ভুঁড়ির চাপে লেঙচে লেঙচে য্যাহন দোরের সামনে ঘাপচি মারতোচো, মুই কিন্তু সব বুইজেও, তুমাকে ডিসটাব দিবো না, দুইলে দুইলে পড়তি থাকব - আলহামদু লিল্লা-হি রাব্বিল আ-লামীন। আররাহমা নির রাহীম। মা-লিকি ইয়াওমিদ দীন। ইয়্যা-কা না বুদু অইয়্যা কা নাসরা ইন।
আহ রব, তুমিই মোর জাহানের রব। তুমার গোলামি করতি গে মোর এসপার ওসপার ভেইসে যাক। তুমি মোর মালিক। আইস, মোকে লে চলো তুমার পথে। মোকে নিয়ামত দান করো। তুমি মোর মালিক। মোকে চাবকাও, লাত্থি মারো, চুলের মুট্টি ধইরে ফেইলে দাও গোরোস্থানে।
কিন্তুন মোর পা-র নিচে কব্বরগুলোন সইরে সইরে যাসতেছে যে। ওইহানে মাগী, খানকি, জোয়ান, বাবু সব এক্কাকার। কালামের মাইয়াটা বড়ো ওস্তাগারের পুকুরে গোসল করতি গে ডুইবে গেল। মানুষ ডুইবে গেলি পুকুর সান্নাটা হুই যায়। কাছেমের দলিজে তহন গোলাম কাম কাটতেছে। হালিমার চুল থেইকে উকুন বের করতেচে বছিরের ঝিমা। আলতাফ বলতেছে, কানে বাঁড়া গুঁজে বইসে আছো? জুম্মা জুম্মা কাইটে গেল উনি খালি হাঁড়ির পোঁদে মাটি ঘষতেছে। ভাত দে হারামজাদি, আঁচে কয়লা জ্বেইলে গাবনার পানি গরম কোরতোছো?
আলতাফের বউ বেগুনি। আঁচে ফু মারতি মারতি গজরে যাসতেছে। খুন্তির আবাজ করতেছে। ডালে বাকার দে বলতেছে, গিইলে গিইলে মর। মা খাঁকিও তোরে লেবে না।
- মোকে যে লেবার, ঠিক সে লেবে। তোকে চুকতি কাটতি হবে না। এই ব’লে আলতাফ বেইরে গেল কুতুব মিঞার দোকানে। জমির দালালি করে দুই ছাবালের বাপ নাকি মক্কা দেকবে।
আরও পড়ুন- বুবি ও তেঁতুলভূতের গল্প : অমৃতা ভট্টাচার্য
হুদিকে কালামের মাইয়াটাকে য্যাহন তোলা হল, পানিতে পেট ফুইলে ঢোল হই গিছে, মরবার আগে পোয়াতি হই গেছে যেন, কাকে যে পেটে ধইরেছে, আল্লাই জানে। নুরুদ্দিন একাই তাকে মাথায় লিয়ে খুব নাচল। মাইয়ার কোনো হুঁশ নাই। একবার বমি করলি সব্বাই তাইকে থাকল এই বুঝি উইঠে বসবে। ও আল্লা গো… ও মোর জোছনা… একবার তাকা বাপ…ও আল্লা… কালামের সঙ্গে তার বউটাও কাঁদতেছে। নুরুদ্দিন মাথা থেইকে লাশ নেইমে লাশের পাশেই বইসে থাকল। অতো জাহেল মরদ, এহন জিরোচ্চে, হাঁফ কাটতেছে, মেয়ের লাশের ভারে তার গদ্দান মচকে গেচে। ডানদিকে তাকাতি গেলি পুরো মাথাটা ঘুইরে দেখতেছে।
জোছনার কবরের পর সেই কবরের উপর মাটি পড়ল। ফি বছর আগাছা কেটে মাটি ফেলতি হয় তো। যেহানে জোছনার আযাব চলতেছে, ঠিক তার পাশে শুইয়ে আছে কুতুবুলের বাপ। জোছনাকে জিজ্ঞেস করতেছে, কে তোর রব? কুতুবুলকে জিজ্ঞেস করতেছে, কে তোর পয়গম্বর? ওরা এধার-ওধার তাকাতি পারতেচে না। মোর পায়ের তলায় সব কব্বর সইরে যাসতেছে। সক্কলকে এক কথা বলতেছে উনি - কে তর মালিক! কে কী জবাব দিসতেছে তা মুই কী জানি। মুই খালি বুঝতি পারতিছি এহন যেইখেনে দেইড়ে আছি সেইটা গফুরের কবর। মুই খালি জানতি পারতিচি মোর পায়ের তলায় মাখাঁকি সর সর কইরে সইরে যাসতেছে। নজুর জায়গায় পুলটি আসতেছে, পুলটিকে সইরে দে’ সাবেরা বেওয়া উঁকি দিসতেচে, সাবেরা বেওয়াকে গুঁতো মেইরে ঢুইকে পড়তেছে রহমত হাজি, রহমত হাজির মেজো ছেলে, মোস্তাক, রাকিব, হালিমা, গলায় দড়ি বেঁধে ঝুইলে পড়া জামালের মা, রেশনের দোকানের লাইনে গে' হোঁচট খেয়ে পইড়ে এন্তেকাল হইছ্যালো মোক্তারের - মোক্তারের থলিটা ওর লাশের সাথে কেউ ঘরে আনল নি গো।
পা থেইকি কব্বর সইরে গেলি আর কী থাহে? তহন, আল্লা জানে, খোদার কসম খেয়ে বলতিচি মুই উইড়ে যাসতিচি। কত্তাদের গোসল দেখতিচি। ট্যাঁ পাখির ডিম ফোঁটা দেখতিচি। আর মোর শাড়িখানা সিনিমার পর্দার মতো উড়তেছে একটা গাছ থেইকে আরেকটা গাছে। আতা গাছে।
তৈল শরীরে, জলজ থির, শিহরিত জেনানা
কাঁপিছে নধর, রসাল ওষ্ঠ, কহিতেছে দেবানা
হা হা হাসিছে, হো হো হাসিছে, লুঠেরা নগদে ছা
যতো বা দূরে, ততো আসে না, বিষে মারে আগাছা
মগরিব-বাদ মাঠঘাট সুনসান হই যায়। আন্ধার আন্ধার বেলা। চাদ্দিকে খালি ছাবা পড়তেছে। বাতাস বইলি মোর আকা থেইকি ফেরেস্তারা নেইমে পড়ে। তহন মুই একা। রেলের ঝিলে পানিফল চাষ কইরেছে মাধববাবু। মাধব মাধব ছাবা পইড়েছে পানিফলের কাঁটায়। মুই গামছা লিয়ে ঝিলের ভেতরে ঢুইকে যাই। আবাল ছেকড় মোকে জইড়ে ধরে। মুণ্ডুর উপর কাঁটা কাঁটা ফল। মুটুক পরিচি। চোখখানা টকটকে পাকা করমচা। কালো পানিতে শুইয়ে থাকব, না দেঁইড়ে থাকব, নাকি সাঁতরে পেইরে যাব ঐপার? মোর সাজ দেইকে ডোবায় গা ডুইবে বইসে থাকা মোষরা ঘেবড়ে যায়। সারা শরীলে কাঁটা এতো কেউ কাছ ঘেষতি পারে না। তহন মোক্তবে ছুটি হইছে। ছাবালরা বগলে বিছনা লিয়ে, হাতে আমপাড়া লিয়ে ফিরতেচে। মজ্জিদের মাঠ থেইকি যেন হাসের ডিম, কাছিমের ডিম টুকটুক কইরে গইড়ে নাবতেচে। আইসো, বাপজান, মুই ওদের ডেইকে বলি, পালিফল খাবা? একদম কচি। মুই দাঁত দে’ ছিঁইড়ে দোবো, তুমরা কেমড়ে নেবে। মোর কথা শুইনে ওরা দৌড়ে পালায়। নামাজ শেষ হইগ্যাছিল। মোয়াজ্বিন মজ্জিদের মেঝে ঝাঁট দিসতেচে। মুই পেছন থিইকে বলি, অ জাদু, এদিকে তাকাও এট্টু। যেই বলা অমনি দেখি ঝাড়ন ফেইলে দে ধাঁ।
লাউমাচার নিচে মুণ্ডু থেইকে মুটুকটা খুইলে বইসে থাহি। সাঁঝের জোনাকি আগার ঝোঁপটায় নিইভে যায়। আবার জ্বলে। জামালের বাপ বিড়ি টানতি টানতি পুকুরে বদনা ডোবায়। আধবইসি কদুটা ঝুলে আছে ছাদনা থিকে। সেইটার ডগা সরু। লিকলিকে। মানুষের বাস পেয়ে যেন জেগে উঠতেছে। জেগে উইঠে নাবতেছে। নেবে ঠিক মোর গায়ের উপর উঠতেছে। চোখের উপর চোখ রাখতেছে। চেরা জিভ দিয়ে কী যে দেখতি চাইতেচে! মানুষরা মোকে ডরায়, আর হেই দেকো, সজনের মতোন সরু লতা, বিষ নাই, তবু মোর চোখে চোখ রাইখে ইশারা দিসতেছে। মুই শুয়ে পড়ি। লতা নেতিয়ে যায়। মোর গায়ে আরাম দিতি দিতি গদ্দানের কাছটায় আসে। খপাৎ করি ধরলিই চেঁইচে উঠবে। ত্যাহন মহল্লা অব্দি মুরুব্বিরা ছুটে এইসে দোষ দিবে কাকে - না মোকে। মুই ওকে মোর গদ্দানটা পেঁচাতে দিই। ঠান্ডা শরীলে ধ্বক ধ্বক করে সে। কাঁপে। খালি কাঁপে। কিন্তুন মুই খিলখিল কইরে হেসে উঠতি পারি না। ওকে পোষ মাইনে ঘরে লিয়ে আসব। আইসো, কত্তা, তুমি আইজ থেকি মোর কত্তা, চুনো কত্তা, মোর কোচরে ঢুকে আইসো। কেউ জানতি পারবে না।
প্রেমের সাগর মধ্যে উঠিল হিল্লোল
অন্নজল তেজিলেক নাহি শব্দ বোল
তেজিলা শয়ন সুখ বিষম বিয়োগ
তেজিলা কুসুম শয্যা নিদারুণ রোগ
ভাদ্র কাটিয়া যায় পাতার বাহারে৷ মাঝেমধ্যে রোদ্দুর অসহ লাগে৷ মাজা কুয়োর ভেতর যে আন্ধার, তা তেঁতুল বিছের মতো কুয়োর মধ্যেই ঘুরে ঘুরে বেড়ায়৷ ওদিকে আতপ চাল ফুটিছে গাঁয়ে৷ পিপিলিকা পাতার নিচ দিয়ে চলিতে চলিতে যদিবা উপরে তাকায়, দেখে - সবুজ সূর্য দুরমনষ্কে নিজেকে ছড়ায়ে দিতেছে, বুঝিবা, রাধাচূড়া
শিস দাও মালতি বৌ৷ আলতা পা-খানি আরেকবার ঝুলে পড়ুক কোনো মগডাল থেকে৷ তখন মাধব বাবু সাগরেদ নিয়ে হয়তো ফিরিবে ঘরে, হিসেবের বহর তার দুই হাত, কানে পৈতে এঁটে যেই বা তুলেছে লণ্ঠন, মাগো, পতঙ্গ কাঁহা, কিশোরীর পা দুখানি পেন্ডুলামের মতো দুলে দুলে উঠছে৷ সময় কতো হইল? উত্তর দিবা কে? সময় কতো হইল? উত্তর মেলে নাই৷ মাধব বাবু বলেন, ঢোল বাজাও ন'খুঁড়ো৷ জিলিপি বানাও হে৷ আজিকে দুই প্রহর… আজিকে তিন প্রহর চোখের সম্মুখেই উন্মুক্ত হইয়া আপনকে প্রকাশিত করিল - ইহা যদি বিরহ না হয়, বলো খুঁড়ো, মোদের জগৎসংসারে এমন মানুষ ঘড়ি হইয়া গেল কার বিবেচনায়? সাধু, সাধু, আজকে মাধবরাতে বাসর বসিবে অশ্বত্থের নিচে৷
সম্মুখে বহিছে গঙ্গা৷ ঘাটে তার ঢেউ ছলাৎ শব্দে কড়া নাড়ে৷ তারপর খানিক ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ৷ ব্যাঙের আকুতি৷ আবার কড়া নাড়া৷
একটা রূপালি জলের রেখা চলে গিয়েছে সাগরে৷ সেটার আশপাশ দিয়ে পাট বোঝাই নৌকো চলেছে৷ কালো৷ মধ্যে মধ্যে দাঁড়ের গায়ে জলের চকচক৷ ডানদিক হেলে গিয়ে আবার ঝটকায় সোজা হয়ে উঠছে৷ মাঝিটা অবয়ব মাত্র৷ তার চোখমুখ অদৃশ্য৷
হ্যাজাকের আলোয় অশ্বত্থের তলাটা গমগম করে উঠল৷ রঙীন কাগজের তিনকোণা টুকরো দিয়ে সামিয়ানা সাজান হয়েছে৷ বধূর মুখ জোড়া পানপাতায় ঢাকা৷ তাতে হলুদের দাগ৷ খয়ের দিয়ে ঠোট জমকালো৷ কানে দুইটা আমের মুকুল৷ পরনের শাড়িটা শ্যাওলা দিয়ে ঢাকা৷ মাথায় ঢালা হচ্ছে শুদ্ধ ঘি৷
মাধববাবু বাজনদারের সঙ্গে গেয়ে ওঠেন, শোণিত লুলিত মুখ পাষাণ প্রহারে / চন্দ্রিমা উদয় যেন অরুণ আকারে...
মাধববাবু খানেক থামেন৷ মালতি নিজ হাতে মুখমণ্ডল হইতে তম্বুল পত্রখানি সরায়ে সভায়ে দৃষ্টি নিক্ষেপ করিলেন৷ তাহার দৃষ্টিতে আগ্নির বিনিময়ে ছিল যে তুষার, তাহাই আরোপিত হইল৷ মাধববাবু চমক হেতু এই ক্রিয়ার প্রতি আকৃষ্ট হইলেন৷ এবং, অনায়াসে মালতিকে নিজ বাহুমধ্যে বন্দী করিয়া বাজনদারদের কহিলেন ঢোলকের গতি বৃদ্ধি হউক৷ মালতি মুখ লুকায়ে ক্রমশ মাধববাবুর মধ্যে সমাহিত হইতে ছিল৷ ক্রমশ বিগলিত হইতেছিল৷ তাহার ঠোঁট হইতে রঙ ঝরিয়া পড়িতেছিল৷ সহসা সে স্থির, পাথরবৎ, কিন্তু শাড়ির খুঁট ধরিয়া নিজ মনেই হাসিয়া ফেলিল৷ দুলিয়া উঠিল৷ প্রহর কতো হইল - সে জিজ্ঞাসিল৷ ঘড়িতে শঙ্খধ্বনি বাজিতেছিল৷
বিফল লাবণ্য রূপ অনিত্য শরীর
নিষ্ফল সম্পদ যেন পদ্মপত্র নীর
মিত্তিকার গঠন তোমার কলেবর
পুনরপি মিলাইব মিত্তিকা অন্তর
চাদ্দিকে কীসের আবাজ দিসতেচে? বুকের ভিতরেটা খসখস করতেচে। ওদিকে ডিগডিগে লতার বড়ো সখ। সক্কালে তেকিয়ে তেকিয়ে বাসি কাঁথার মধ্যি গন্ধ শোঁকে। মোর গন্ধ কী ওখেনে আছে রে। নেই। এহন আঁচের মধ্যি মুই ঢুইকে যাই। সারা গতরে ছাই মাখলি ধবল। হাঁস যেন। চাঁদমুখী হাঁস। বলো খাবে গো? কদু দে' গোশ খাবে? বড়ো ওস্তাগারের পুকুর থেহি মাছ ধরি নি আসি? জোছনা যহন ডুবল, মাছগুলোন ওর পেটের ভেতরে ঢুইকে, ওকে পোয়াতি করে দে' ছ্যালো। আইজ, মুই তালি যাই, পোয়াতি হয়ে তুমার ডগায় লুটোপুটি খাই? বলো, দুপুরে, কী খেয়ে নাক ডাকবে গো। কল্মির বড়া বাইনে দিই? মুসুর ডালে রসুনের বাকার, তার সাথে সরষের তেলে ছ্যাঁক কইরে মাছ ফেলি দিলিই তো ফিনিস। তুমার চেরা জিভের ভিতরে ক্যাম্বানা কাঁটা গুলোন খালি আছাড়ি পিছাড়ি মেরে হাবুডুবু খাবে, গলায় বিঁধে গেলি মুই আঙুল ঢুইকে টেনে বের করে নোবো। মা-র কাছে আবার শরম কীসের? তুমি মোর নোনো পুতুল, তুমাকে ছুইপে রাখব দেরাজে, কেউ খবর পাবে না।
এই, শোনো, কাঁথা থেইকে বেইরে এসো, এহেনে কেউ নেই, সক্কলে অশ্বত্থতলায় গিছে, তুমি মোর পিছে বইসে থাকো। দেহো দেহি মুই লঙ্কা বাটায় পিঁয়াজ মিশোচ্ছি, ল্যাজায় হলুদ মাখাচ্ছি, তুমি বোসো, ডরাবে না, খালি লতার মতোন নেতিয়ে মোর পিছে পিছে ঘুইরে বেড়াও।
তুমার টুনটুনি মোর মুইঠার ভেতর টুনটুন আবাজ দিবে।
কহ কন্যা কোন্ হেতু নইয়ান সজল।
কেমন দারুণ দুঃখে হইছে বিকল।।
কি শোকে মলিন মুখ আউল চিকুর।
বর্জিত কাজল কেনে খণ্ডিত সিন্দুর।।
দুই দন্তে কাটিয়া সুপুরির প্রহার, যে-বাসা বানাইল মাধব তাহতে নাই আড়াল। পত্রকুটির নয়, না মাটির খোলস, মালতি চমকিত হইয়া দেখিল – শুধুই সে। তাহার স্তন জানালা। উরু খাটিয়া। গ্রীবা রসুইঘর। যোনি দরজা। কচুরি পানার শেকড়ের মতো তাহার অপক্ক যোনিকেশর আসলে তো বালিশের নরম!
এই সংসার লইয়া অভিভূত হউক মালতি - এমনি আশা জাগিল তাহার মধ্যে। কিন্তু মাধববাবু বড়ো ব্যস্ত মানুষ যে। একবার দরজা ঠেলে ঢুকিয়া নির্ধারিত কাজ শেষ করিয়া পুনরায় বাহিরে চলিয়া যান। তখন বাদাড়ে শৃগাল ডাকিলে সে তৎপর হইয়া ওঠে। দুই স্তনের মাঝে মুখ লুকিয়া দেখে বাহির। জানালার ওপাশ অনিয়ন্ত্রিত। তথা যাযাবর দিবস হাঁটিয়া বেড়ায় বেখেয়ালে। সে যোনির ভেতর হইতে নিজেকে প্রকাশিত করিতে পারে না। হুক্কা হুয়া ডাক শুনিয়া ভাবে - বহিন। হায়, বহিন চাদরে ঢাকিয়া দাও এ-সংসার। আমার যে প্রকাশের আর কিছু বাকি নাই। আমার যে সবই রইল অপ্রকাশিত। পাঠোদ্ধার করো আমাকে। ব্যাখ্যা দাও। আইসো, মোর ঘরে, উরুতে বসিয়া চোখ পাতিয়া ঘুমাও, হায়, বহিন!
আরও পড়ুন- প্রতিশোধ, ঘৃণা ও ভালোবাসার কোন গল্প বলে ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন’?
আন্ধারে পশুর চোখ উজ্জ্বল হইয়া ওঠে। যেন বা মাধববাবুর আঙটি। আনামিকা বালিশের গভীরে ঢুকিয়া অদৃশ্য হইয়া যায়।
তবু, জল ঝরে পড়ে!
পতঙ্গ পড়িল যদি আনল মাঝার।
আনলে দহিব হেন শঙ্কা নাহি তার।।
মরমে ডংশিল মোরে বিরহ-ভুজঙ্গ।
অতিবিষে নির্বিষ হইল মোর অঙ্গ।।
বদুবাবু দিদিমণিদের দেখতি যায় মাদ্রাসায়। ফিইরে আসে কানে আতরের তুলো গুঁইজে। এদিকি ফাঁকফোঁকর পেলি দোরে এইসে খুক খুক কাশে। জানান দিতি চায়। মুই টুনটুনিকে লিয়ে ওনার কাছে গিইলে বলি - এনেচো?
বদুবাবু ইস্কুলের ডিম দে' শোগো হাসি হেইসে বলে - ডিমে তা দিবি ক'বে।
মুই টুনটুনির গায়ে হাত বুলুই। বলি, শান্ত হ বাপ। এ তোর চাচাধোন না। নেহাত মুরুব্বি, ছাগলা মরদ। দিতেছে ডিম, কিন্তুন নজর কুসুমের দিহে।
-মুই বলি, ডুমুর দে' গোশ রাঁধব কাল।
-আসব তা-লি?
-আসতি পারো। কিন্তুন মদুর মা জানতি পারলি?
-তা জানবে ক্যামনে?
-তুমার ডর লাগতেছে না?
-তোকে ডরাইব ক্যান? এহন মুই দিদিমণিদের ছ্যার। চেয়ারে বইসে পেদে দিলিও নাক সিটকাবার হুকুম দিইনি।
-বদুবাবু কাজ মিইটে চইলে যায়। এদিকে টুনটুনিকে মুইঠের মইধ্যে চাইপে রাখতি পারিনে। সে ব্যাটা, হায়, সরু ছাবা ফেইলে পেইলে যেতি চায়।
যাবি কই?
কই যাবি?
মোর পা-র লিচে মাটি নাই। মুই চুল উইড়ে দিলি আন্ধার। সেই আন্ধারে তোর নজর বদ হইয়ে যাবে রে। আয়। তোরে ঢুইকে লিয়ে বাজনদারদের বলি বাজনা বাজাতি। আয়, বাবাসোনা, পানার ছিকড়ের ভেতর মজা দেইখে হালুম হালুম করতি থাকব। লোকে বলবে টুনি জ্বলতেছে। হুক্কাহুয়া।
টুনটুনি মোর কথা শুইনে বেলেল্লা হয়।
শেয়ালখেকো নবাব যেন, ডাক দিসতেছে তো ডাক দিসতেছে।
উদিক থেহি কে যেন বেইরে এলো!
আলতা পা। কিন্তু মাইয়ের কাছটা খোলতাই।

Whatsapp
