পাপারাৎজির অত্যাচার আর মিডিয়ার হ‍্যাংলামোই কি রাগিয়ে দিল তৈমুরকে?

পতৌদি পরিবারের সবচেয়ে অল্প বয়সি তৈমুর আলি খানই যে ওই পরিবারের মধ্যে জনপ্রিয়তার শিখরে অবস্থান করেছে, তা যে-কোনও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী ব্যক্তিই বলতে পারবেন। তবে এর নেপথ্যে রয়েছে, তৈমুরকে ঘিরে মিডিয়ার নিয়ত হাহারব। তৈমুর জন্মানোর পর থেকেই সব ধরনের মিডিয়ায় প্রতিদিন নয় নয় করেও দু'-তিনটি খবর তাকে নিয়ে তৈরি হয়েই থাকে। তৈমুর কী খেল, কিংবা কোথায় ঘুরতে গেল, কোন রঙের পোশাকে সাজল, কোন সময় তার বাবা-মায়ের সঙ্গে কেমন আচরণ করল– কোনওকিছুই পাপারাৎজির ক্যামেরা থেকে বাদ পড়ে না। এককথায় বলা চলে, জন্মানোর পর থেকে তৈমুর নয়, বরং ভারতীয় মিডিয়াই যেন তার রোজনামচা লিখতে বসেছে। যদিও তৈমুরকে ঘিরে মিডিয়ার এই বাড়বাড়ন্তে তার বাবা-মা, 'ছোটে নবাব' অর্থাৎ সইফ আলি খান এবং করিনা কাপুর খানের যথেষ্ট মদত আছে বলেই মনে করেন অনেকে। তাঁরা দু'জনে কখনওই তৈমুরকে মিডিয়া থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চাননি। প্রথম থেকেই তৈমুরের সমস্ত বিষয় নিয়ে তাঁরা মিডিয়ার সামনে বেশ খোলামেলাই থেকেছেন। তবে সম্প্রতি একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে মুম্বইয়ের বাসগৃহের উঠোনে তৈমুর এবং তার ভাই জাহাঙ্গির খেলা করছিল। সেই সময় সেখানে আসেন করিনা কাপুর খান। এমন একান্তে কাটানোর সময়গুলিতেও পাপারাৎজির ক্যামেরা তাঁদের পিছন ছাড়ে না। প্রথমে করিনা ছবি তোলা বন্ধ করতে বললেও কাজ হয় না। পরবর্তী সময়, বিরক্ত হয়ে সইফ-পুত্র নিজে মায়ের কথা অনুসরণ করেই চিৎকার করে বলতে থাকে, "বস করো দাদা, বস করো দাদা। বন্‌ধ করো দাদা।" এরপরেই করিনা তার হাত ধরে, তাকে ভিতরে নিয়ে যায়। প্রথমে ইনস্টাগ্রামে এবং পরে গোটা নেট মাধ্যমে এই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরেই তৈমুরের মিডিয়ার সঙ্গে এইরূপ ব্যবহার নিয়ে সমালোচকদের নানা নেতিবাচক বক্তব্য সামনে আসতে থাকে। কেউ কেউ তো আবার তৈমুরের শিক্ষা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন, আবার কেউ কেউ সরাসরি করিনার চরিত্র নিয়ে কুৎসা করতেও ছাড়েননি।       

যাঁরা এই ঘটনার নিন্দা করেছেন, তাঁরা একবারের জন্যও এটা ভেবে দেখছেন না, কেন বাচ্চা ছেলেটি এইরকম আচরণ করল! জন্মানোর পর থেকেই, যে নিজের মুখের সামনে সবসময় হাজার হাজার ফ্ল্যাশ লাইট জ্বলতে দেখেছে, সেই বাচ্চার পক্ষে এইরকম আচরণ করাটা কিছু অস্বাভাবিক নয়। এর আগেও অনেক ক্ষেত্রেই তৈমুরকে 'প্যাপ্স' বা পাপারাৎজিদের বলতে শোনা গেছে তার ছবি না তোলার জন্য। বহুবার সে জোর গলায় তাদের উদ্দেশে বলেছে, "ইউ আর নট আল্যাউড।" অথবা, কখনও বিরক্ত হয়ে সে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে ভেংচি কেটেছে। কিন্তু তৈমুর জন্মানোর পর থেকেই যাঁরা তাঁর রোজনামচা লেখার দায়িত্বভার নিয়ে ফেলেছেন, তাঁরা এখন আর থামবেন কেন?  বছরদেড়েক আগে, ২০২০ সালে, অনুষ্কা শর্মার প্রেগনেন্সির খবর ছড়িয়ে পড়তেই, তৈমুরের ঠাম্মা বলেছিলেন, হয়তো বিরুষ্কা-র সন্তান জন্ম নিলে তৈমুরের ওপর থেকে মিডিয়ার চাপ খানিকটা কমবে। কিন্তু শর্মিলা ঠাকুরের এই আশায় পুরোপুরি জল ঢেলে অনুষ্কা সেই মন্তব্যের উত্তরে বলেছিলেন, তিনি তাঁর সন্তানকে মিডিয়া এবং পাপারাৎজির থেকে পুরোদমে দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করবেন। ভমিকা জন্মগ্রহণের পরে, বিরুষ্কা তাকে নিয়ে নানা মুহূর্তের ছবি অনুগামীদের উপহার দিলেও, প্রতি ছবিতে সজ্ঞানেই সন্তানের মুখ তাঁরা অপ্রকাশিত রেখেছেন। যদিও কয়েকদিন আগে একটি ক্রিকেট ম্যাচে অনুষ্কা এবং ভমিকার একটি ভিডিও সকলের সামনে আসে যেখানে মা অনুষ্কা, ভমিকাকে নিয়ে বিরাট কোহলির জন্য চিয়ার করছিলেন। এই ঘটনার পরেই, ভবিষ্যতে যেন এই ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি না ঘটে, তার বন্দোবস্ত অনুষ্কা কড়া হাতেই করেছেন।       

যদিও তৈমুরের প্রতি মিডিয়ার এই আচরণ দেখে জাহাঙ্গিরের ক্ষেত্রে প্রথমে খানিকটা হলেও রাখঢাক রেখেছিলেন খান দম্পতি। যেই কারণে সারা আলি খান শুরুর দিকে বেশ কয়েকটি ছবিতে জাহাঙ্গিরের নানা মুহূর্তের ছবি পোস্ট করলেও প্রতি ক্ষেত্রেই মুখমণ্ডলের জায়গায় এডিট করে বিভিন্ন ইমোজির ব্যবহার করেছিলেন। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই পতৌদি পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ নবাবের ছবি সকলের সামনে আসে এবং যথারীতি ক্যামেরাধারী প্যাপ্সদের নিশানায় এখন তৈমুরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শামিল হয়েছে জাহাঙ্গির আলি খান ওরফে ‘জে’-ও।   

আরও পড়ুন: ছোটবেলার ক্রাশ থেকে জীবনসঙ্গী, কেমন ছিল রণবীর-আলিয়ার এই প্রেম?

শুধুমাত্র অনুষ্কা-বিরাট নন, বলিউডের এমন অসংখ্য তারকা রয়েছেন, যাঁরা নিজেদের সন্তানদের ওপর মিডিয়া কিংবা পাপারাৎজির ছায়াটুকুও পড়তে দেননি। এই তালিকায়, প্রথমেই বলা যায় রানি মুখার্জি এবং আদিত্য চোপড়ার মেয়ের কথা। আদিরা চোপড়া জন্মানোর ছ’বছর অবধি, একটি ছবিও কোথাও পোস্ট করেননি রানি এবং আদিত্য। অবশেষে, আদিরার ৬ বছরের জন্মদিনে ‘যশরাজ ফিল্মস’-এর ইনস্টাগ্রাম পেজ থেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছাবার্তা জানিয়ে তার একটি ছবি পোস্ট করা হয়। শাহিদ কাপুর এবং মীরা কাপুর, তাঁদের কন্যাসন্তান, মিশা-র ক্ষেত্রেও প্রথমদিকে বেশ লুকোচুরির আশ্রয় নিয়েছিলেন। একটি ইন্টারভিউতে মীরা স্পষ্টই বলেছিলেন, তিনি চান না শাহিদের জনপ্রিয়তা কোনওভাবেই মিশার শৈশবকে প্রভাবিত করুক। যদিও পরবর্তী সময়ে এই কাপুর দম্পতি নিজেরাই, নিজেদের ইনস্টাগ্রামে তাঁদের সন্তানদের নানা মুহূর্তের ছবি কিংবা ভিডিও শেয়ার করেছেন, তবে অবশ্যই তা বেশ সীমিত মাত্রাতেই।  

এই ইন্টারনেটের যুগে বিশেষত যখন সেলিব্রিটি কিডস-দের ছবি চড়া দামে বিক্রিত পণ্যে পরিণত হয়েছে, যখন ফেসবুক কিংবা ইউটিউব প্ল‍্যাটফর্মে ‘ভাইরাল’ শব্দটি রাজত্ব করে বেড়াচ্ছে, তখন হয়তো সবসময় মিডিয়া কিংবা পাপারাৎজির প্রকোপ থেকে নিজেদের সন্তানদের রক্ষা করা সম্ভব নয়। তবুও বলতে হয়, মিডিয়া হোক কিংবা পাপারাৎজির ক্যামেরাবাহিনী– তারকারা চাইলেই তাঁরা তাঁদের সন্তানদের এই সমস্ত ক্ষেত্র থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারেন।   

 

 

 

More Articles