বাংলাদেশে পাঠান! ৫২ বছর পর হিন্দি সিনেমাকে আদৌ মেনে নেবে মুজিবের বাংলা?

Pathaan in Bangladesh: বাংলাদেশের মানুষদের একাংশের চিরকালই বিশ্বাস, হিন্দি সিনেমার কারণে বাংলাদেশের নিজস্ব চলচ্চিত্রের বাজার ক্ষতির মুখে পড়বে।

ভারতকে পাঠান দেখিয়ে দিয়েছে কেন এই তৃতীয় বিশ্বে শাহরুখ খানই শেষ সুপারস্টার। চার বছর পরে বড় পর্দায় ফিরেছিলেন শাহরুখ। পাঠান দেখতে হলে উপচে পড়েছিল প্রায় অর্ধেক ভারতবর্ষ! তারপর ওটিটিতেও মুক্তি পেয়েছে জন-দীপিকা আর শাহরুখের পাঠান। এবার ভারতের ব্লকবাস্টার পদ্মা পেরিয়ে চলল পড়শি বাংলাদেশে। ৫২ বছর পরে হিন্দি সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে বাংলাদেশে। ইদেই মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল পাঠানের। তবে নানা কূটনৈতিক জটিলতার কারণে তা আটকে যায়। ১২ মে, ৫২ বছরের খরা কাটিয়ে বাংলাদেশে মুক্তি পেল ‘পাঠান’।

কেন এত বছর পর হিন্দি সিনেমার জন্য দরজা খুলে দিল বাংলাদেশ সরকার? এত দিন ভারতীয় হিন্দি ছবি মুক্তির ক্ষেত্রে আপত্তি ছিল বাংলাদেশ সরকারের। এর আগে বাংলাদেশে তিনটি হিন্দি সিনেমা মুক্তি পেয়েছিল ঠিকই। তবে ২০১৫ সাল থেকে হিন্দি সিনেমার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা কঠিন হয়। এবার বাংলাদেশে হিন্দির ছবির সেই দরজা খুলে দিল পাঠান। যশরাজ ফিল্মসের আন্তর্জাতিক ডিস্ট্রিবিউশনের সহ সভাপতি নেলসন ডিসুজা জানিয়েছেন, সিনেমা চিরকালই দেশ, সংস্কৃতি এবং জাতিগত দূরত্ব কমিয়েছে। সীমানার বেড়াজাল পার করে মানুষকে মুগ্ধ করেছে। বাংলাদেশে শাহরুখ খানে বড় সংখ্যক ভক্ত রয়েছে। ফলে বাংলাদেশের সিনেমা হলে পাঠান মুক্তির সিদ্ধান্ত দুই রাষ্ট্রের মধ্যেই সংস্কৃতির বন্ধুত্বকে দৃঢ় করবে, এমনটাই বিশ্বাস তাঁর। বাংলাদেশে এই ছবির পরিবেশক অনন্য মামুন জানিয়েছেন, এই প্রথম কোনও ভারতীয় হিন্দি সিনেমা বাংলাদেশের মানুষ হলে গিয়ে দেখার সুযোগ পাচ্ছেন। পাঠানের অগ্রিম টিকিট বিক্রিও বাংলাদেশে সাড়া ফেলেছে। অগ্রিম বুকিংয়েই প্রায় সমস্ত টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছে বাংলাদেশে। ভারতে মুক্তির চার মাস পর ৪১ টির বেশি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে পাঠান।

আরও পড়ুন- ভুলে ভরা সিনেমা! পাঠান দেখতে গিয়ে এই ৩ টি মারাত্মক ভুল কি লক্ষ্য করেছেন?

২০১৫ সালের ২৩ জানুয়ারি ঢাকার সিনেমা হলে সলমান খানের সিনেমা ওয়ান্টেড মুক্তির পর হিন্দি সিনেমার প্রদর্শন বন্ধে রাজপথে নেমেছিলেন শিল্পী ও নির্মাতারা। সেই আন্দোলনের পর থেকে বাংলাদেশের সিনেমা হলে আর কোনও হিন্দি সিনেমা মুক্তি পায়নি। তারপর পাঠান ঝড় উঠল বাংলাদেশে। প্রথম সপ্তাহেই পাঠানের ২০৬টি শো রয়েছে বাংলাদেশে।

হিন্দি সিনেমার ইতিহাসে এখনও অবধি সবচেয়ে বেশি আয় করা সিনেমার তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে পাঠান। ১ হাজার ৫০ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে শাহরুখের ম্যাজিক। অ্যামাজন প্রাইমে মুক্তি পাওয়ার পর শাহরুখ খানের ভক্তদের অনেকেই নানা মাধ্যমে সিনেমাটি দেখে ফেলেছেন। তারপরেও বাংলাদেশে এই সিনেমার অগ্রিম টিকিট বুকিং তাক লাগিয়েছে। দাম বাড়ানোর পরও অগ্রিম টিকিট বিক্রিতে খুব একটা প্রভাব পড়েনি।

সম্মিলিত চলচ্চিত্র পরিষদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১০ এপ্রিল সাফটার আওতায় নতুন করে উপমহাদেশীয় ভাষায় নির্মিত চলচ্চিত্র আমদানির অনুমতি দেয় বাংলাদেশের সরকার। পাঠানের জায়গায় ভারতের পাঠানো হয়েছে ২০১৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত শাকিব খানের সিনেমা পাঙ্কু জামাই। সাফটার আওতায় এই বছর পরীক্ষামূলকভাবে উপমহাদেশীয় ১০টি সিনেমা বাংলাদেশে আনতে পারবেন সেই দেশের সিনেমার ডিস্ট্রিবিউটাররা।

তবে পাঠান মুক্তি নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই বিতর্কও জেগেছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের মানুষদের একাংশের চিরকালই বিশ্বাস, হিন্দি সিনেমার কারণে বাংলাদেশের নিজস্ব চলচ্চিত্রের বাজার ক্ষতির মুখে পড়বে। ‘পাঠান’ মুক্তির দিনটিকে 'কালো দিন' বলেও মনে করছেন অনেকে কারণ এই বাংলাদেশের মানুষই বাংলা ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছে। তাই উর্দু-হিন্দি ভাষার বলিউডি সিনেমা বাংলাদেশের হলে চলতে পারে না। অস্তিত্ব সংকটের প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশের নাগরিকদের একাংশ। অন্য অংশের মতে আবার, পাঠান কিংবা যে কোনও হিন্দি সিনেমা আমদানি করা যেতেই পারে বাংলাদেশে, তবে তা বাংলায় ডাবিং করেই করে দেখানো উচিত। ভারতের তামিল বা মালয়ালম ভাষার সিনেমাও হিন্দি ভাষাভাষিদের জন্য হিন্দিতে ডাবিং করা হয়। তাই পাঠান বাংলাদেশে বাংলা ভাষাতেই মুক্তির দাবি উঠেছিল।

আরও পড়ুন- নক্ষত্রের অবসর নেই, খুচরো জনতার খড়কুটো আজীবন শাহরুখই

শর্ত সাপেক্ষে হিন্দি সিনেমা বাংলাদেশে আমদানির পক্ষে সওয়াল করে চলচ্চিত্র বিষয়ক ১৯ টি সংগঠন। গত ফেব্রুয়ারি মাসেই চলচ্চিত্র পরিষদ এই সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব দেয় সে দেশের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রকে। জানানো হয়, শর্ত সাপেক্ষে হিন্দি সিনেমা বাংলাদেশে আমদানিতে কোনও আপত্তি নেই তাদের। এর আগে বাংলাদেশের হলে হিন্দি সিনেমা প্রদর্শনের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন হয়েছিল এই দাবিতে যে, হিন্দি সিনেমা বাংলাদেশের নিজস্ব সিনেমাকে শেষ করে দেবে। পরে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনায় সিনেমা নির্মাণ শুরু হলেও বিরোধিতা দেখা দেয়। অথচ সিনেমা হলে লাভের মুখ না দেখা মালিকরা চান, হিন্দি সিনেমা দিয়ে আয় বাড়াতে।

এতকাল হলিউডের সিনেমা বাংলাদেশে মুক্তির পেলেও ভারতীয় হিন্দি সিনেমার মুক্তিতে প্রবল আপত্তি ছিল মানুষের। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর গত ৫২ বছরে বাংলাদেশে মাত্র তিনটি হিন্দি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। সলমান খানের ‘ওয়ান্টেড’, শাহরুখ খানের ‘মাই নেম ইজ খান’ আর আমির খানের ‘থ্রি ইডিয়টস’। এই তিনটি সিনেমাও নানা নিষেধ ও বিক্ষোভের মুখে পড়েই মুক্তি পেয়েছিল, মুক্তির পরেও চলেছে তীব্র বিক্ষোভ। অবশেষে, পাঁচটি শর্ত মেনে দুই বছরের জন্য ১৮টি হিন্দি সিনেমা আমদানির অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। তারই প্রেক্ষিতেই প্রথম হিন্দি সিনেমা হিসাবে বাংলাদেশে মুক্তি পাচ্ছে সিদ্ধার্থ আনন্দ পরিচালিত ‘পাঠান’।

More Articles