২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নাম প্রত্যাহার, কেন বিজেপির হয়ে ভোটে দাঁড়াচ্ছেন না পবন সিং?
Lok Sabha Election 2024 BJP Candidate List: শনিবারই প্রথম দফার প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছিল বিজেপি। সেই তালিকায় অন্যতম ছিল বিজেপি প্রার্থী পবন সিং। তবে বেশিক্ষণ গেল না, নিজেই লোকসভা ভোটে প্রার্থী হওয়া থেকে সরে দাঁড়ালেন...
আগামী লোকসভা ভোটে বিজেপির তরফ থেকে প্রার্থী হচ্ছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। স্বাভাবিক ভাবেই ভোটের মুখে যথেষ্ট বড় চমক এই ঘটনা। অন্যদিকে আসানসোলে মুখ পুড়ছে বঙ্গ বিজেপির। আসানসোলে প্রার্থী হচ্ছেন না পবন সিং। নাম ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ঘটল সেই ঘটনা। নিজের এক্স হ্যান্ডেলে ভোজপুরী গায়ক পবন সিং নিজেই জানিয়েছেন সরে আসার কথা। এমনকী সেই পোস্টটি তিনি ট্যাগ করেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডাকেও।
শনিবারই প্রথম দফার প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছিল বিজেপি। সেই তালিকায় অন্যতম ছিল বিজেপি প্রার্থী পবন সিং। তবে বেশিক্ষণ গেল না, নিজেই লোকসভা ভোটে প্রার্থী হওয়া থেকে সরে দাঁড়ালেন পবন। কিন্তু কেন? ব্যক্তিগত সমস্যা না দলীয় নির্দেশ, কেন সরে এলেন ভোজপুরি 'ললিপপ' গায়ক পবন। কোনও কোনও সূত্র বলছে, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশেই নাকি এই ঘোষণা করেছেন তিনি। জানা গিয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে মহিলা অবমাননার। সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে তার পোস্ট করা মিউজিক ভিডিওগুলিও যথেষ্ট আপত্তিকর বলেও অভিযোগ কয়েছে। বিভিন্ন সময়ে এই ভিডিও ঘিরে কম বিতর্কও হয়নি।
আরও পড়ুন: বিজেপির প্রার্থী হবেন কারা? গভীর রাতের বৈঠকে যা ঠিক করলেন মোদি-শাহ
পবনের নাম ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই আসানসোল বিজেপির মধ্যে শোরগোল পড়ে যায় বলেই গুঞ্জন। এমনকী বিভাজনও তৈরি হয়। বহিরাগত’-এর তত্ত্ব তুলে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের আপত্তি, পবন বিহার থেকে বাংলায় এসে লড়ছেন। শুধু সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টেই নয়, ব্যক্তিগত জীবনেও এই তারকার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের একাধিক অভিযোগ রয়েছে। আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চলছে ভোজপুরি এই সুপারস্টারের। তাঁর বিরুদ্ধে মানসিক ও শারীরিক অত্যাচারের অভিযোগ এনেছেন তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী জ্যোতি সিং। পবনের প্রথম স্ত্রীয়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়েও বিভিন্ন রকম চর্চা রয়েছে। আত্মঘাতী হয়েছিলেন তাঁর প্রথম স্ত্রী। লোকসভার মতো গুরুতর নির্বাচনে পবনকে প্রার্থী করা নিয়ে খুব একটা খুশি ছিল না আসানসোলের গেরুয়া শিবির। আর সেই সব অভিযোদ আসার পরেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে পবন সিংকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেওয়া বলে শোনা যাচ্ছে।
রবিবার এক্স হ্যান্ডেলে পবন লেখেন, “আমি ভারতীয় জনতা পার্টির শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। দল আমাকে বিশ্বাস করেছিল এবং আসানসোল থেকে প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করেছিল, কিন্তু কিছু কারণে, আমি আসানসোল থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারব না।” রাজনীতিক মহলের একাংশের দাবি, পবন সিংয়ের নাম ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই আসানসোলের বিজেপি প্রার্থীকে নিয়ে তুমুল আলোচনা! বিশিষ্টজন থেকে রাজ্যের শাসকদল, সকলেই ‘ললিপপ’ গায়কের নিন্দায় সরব। অভিযোগ, বাংলার মহিলাদের নিয়ে ‘যৌন উদ্দীপক’, নারী ‘বিদ্বেষী’ গান গেয়েছেন তিনি। এবার আসানসোলের বিজেপি প্রার্থী বদলের দাবি ওঠে দলেরই অন্দরে। দ্রুত ওই আসনে অন্য কাউকে প্রার্থী করার দাবি জানান তথাগত রায়। লেখেন, “বিজেপি তো আর তৃণমূলের মতো একজন মহিলার খামখেয়ালিপনা দিয়ে প্রার্থী বাছাই করে না। বরং নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে সমীক্ষা করে প্রার্থী বাছাই করে। তবে সমীক্ষকরা ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। আসানসোলের জন্য নতুন করে ভাবা দরকার।”
প্রথম থেকেই পবন সিংকে প্রার্থী করা নিয়ে নানা তির্যক মন্তব্য করেছে তৃণমূল। সম্প্রতি সে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পাল্টা আক্রমণ করেছিলেন বিজেপির অমিত মালব্যও। তবে তার কিছুক্ষণের মধ্যেই সামনে এল পবনের ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা। পবন সিংয়ের সিদ্ধান্তকে বাংলার মানুষের জয় হিসাবে ব্যাখ্যা করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন, রাজ্যবাসীর প্রবল ‘জনগর্জনে’র জন্যই সরে দাঁড়াতে বাধ্য হলেন পবন। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের প্রতিক্রিয়া হল, "প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলায় এলেন এবং নারীশক্তি ও নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে অনেক বক্তৃতা দিয়ে গেলেন। তারপর তিনি এমন একজনকে টিকিট দিলেন, যিনি বাংলার নারীদের অপমান করেছেন। এটাই হল ‘মোদির গ্যারান্টি’ – যদি আপনি বাংলার এবং মহিলাদের বিরুদ্ধে কথা বলেন, তাহলেই বিজেপি আপনাকে টিকিট দেবে।" পবন সিংয়ের মিউডিক ভিডিওর নিন্দা করেছেন শত্রুঘ্ন সিনহা এবং মলয় ঘটক- দুই তৃণমূল নেতাই।
আরও পড়ুন: ‘মোদি জমানায় ২৫ কোটি দেশবাসী দারিদ্রমুক্ত’! তবে রেশন কাকে দিচ্ছে বিজেপি সরকার?
প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নাম তুলে নেওয়ার ঘটনা যে রাজ্যবিজেপির পক্ষে বেশ অস্বস্তিকর, তা অস্বীকার করার জো নেই। অনেকেই বলছেন, একজন প্রার্থীর নাম ঘোষণা হওয়ার ১৮ ঘণ্টার মধ্যেই তিনি নির্বাচনে দাঁড়াবেন না বলে ঘোষণা করে দেওয়ার বিষয়টা মোটেও স্বাভাবিক নয়। বিশেষত ওই প্রার্থী যে লড়াইয়ে উৎসাহী ছিলেন, তা তাঁর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় স্পষ্ট ছিল। সেখান থেকে আচমকা নাম তুলে নেওয়ার নেপথ্যে বিজেপি নেতৃত্বের হাত রয়েছে বলেই মনে করছে অভিজ্ঞরা।