জলের নিচে জেগে ৬০০ বছরের চিনা শহর! বিজ্ঞানীদের মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছে যে খোঁজ

Atlantis of China: জলের এত নিচে ঠিক যেভাবে অবিকৃত রয়েছে ৬০০ বছরের পুরনো শিচেং শহর, তা দেখে বিস্মিত অভিযাত্রী থেকে ইতিহাসবিদ, সকলেই। আর সে কারণেই অনেকে তাকে প্রাচ্যের অ্যাটলান্টিস বলে থাকেন।

সমুদ্রের নিচে হারিয়ে যাওয়া আস্ত একটা দ্বীপ, গোটা সভ্যতা। এমন গল্প তো প্রায়শই শোনা যায় রূপকথা,পৌরাণিক গল্প কিংবা সিনেমায়। জিব্রাল্টার প্রণালীর পশ্চিমে অবস্থিত অতলান্তিক মহাসাগরের সেই কিংবদন্তি দ্বীপ অ্যাটলান্টিসের কথাও আমাদের অনেকেরই জানা। কিন্তু সেই অ্যাটলান্টিস আদৌ কোনওদিন ছিল, নাকি পুরোটাই কল্পনা, তা নিয়ে অবশ্য অনেক রকম মতভেদ রয়েছে। তবে সেই আটলান্টিস থাকুক ছাই না থাকুক, চিনের ঝেঝিয়াং প্রদেশে সমুদ্রের তলদেশে আজও রয়ে গিয়েছে আস্ত একটি শহর। তবে শুধু রয়ে গিয়েছে বললে ভুল হবে, সযত্ন সংরক্ষিত করা হয়েছে ৬০০ বছর পুরোনো সেই শহরকে।

১৯৫৯ সালে জিনআন জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরির সময় বাঁধের রাস্তা তৈরি করতে গিয়ে বিসর্জন দেওয়া হয়েছিল আস্ত শহরটিকে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রায় ৩ লক্ষ মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল অন্য জায়গায়। আর মানুষের হাতে তৈরি বন্যায় প্লাবিত হয়ে গিয়েছিল গোটা শিচেং শহর। তার পর কয়েক দশক সেই শহরটির কথা ভুলেই গিয়েছিলেন মানুষ। এখনও যে কিয়ানদা হ্রদের ৪০ মিটার গভীরে রয়ে গিয়েছে সেই শহরের অস্তিত্ব, তা জানত না প্রায় কেউই।

আরও পড়ুন: হাতের ইশারায় ঠিক হলো জমির মাপ! যেভাবে চিনাদের বসতি গড়ে উঠল বাংলায়

২০০১ সালে একটি অভিযানে অভিযাত্রীদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে হারিয়ে যাওয়া সেই অ্যাটলান্টিস শিচেং। সরকারের উদ্যোগে প্রাচীন সেই শহরের অবশিষ্টাংশ খুঁজে আনতে শুরু হয় একের পর এক অভিযান। আর তার পর যে ছবি সামনে এসেছে, তাতে কার্যত অবাক চিন-প্রশাসন-সহ গোটা বিশ্ব। জলের নিচে আজও অপরিবর্তিত রয়েছে নানা পাথরের স্থাপত্য, যা তৈরি হয়েছিল ১৩৬৮ থেকে ১৯১২ সালের সময়কালে মিং এবং কিং রাজত্বে তৈরি। সিচেং শহরকে স্থানীয়রা বলেন সিংহের শহর। উশি পাহাড় সংলগ্ন এলাকা হওয়ার কারণেই এমন নাম বলে মনে করা হয়। চিনা ভাষা ম্যান্ডারিনে এই উ শি-র অর্থ পাঁচটি সিংহের পাহাড়। সেখান থেকেই ওই শহরকে বলা হত সিংহের শহর।

২০১১ সালে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের দৌলতে জলের তলার ওই শহরের বেশ কয়েকটি ছবি সামনে আসে। যা মুগ্ধ করেছিল বিশ্বকে। প্রায় এক বর্গকিলোমিটারের অর্ধেক জায়গা জুড়ে বিস্তৃত রয়েছে জলমগ্ন এই শহরটি। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের ওই ছবি থেকে জানা গিয়েছে, মোট পাঁচটি প্রবেশদ্বার ছিল শহরটির। প্রশস্ত রাস্তায় ২৫৬টি খিলান লাগানো পথ ছিল। যেখানে ড্রাগন, ফিনিক্স, সিংহ প্রভৃতি মূর্তি খোদাই করা রয়েছে। এছাড়া পাথরের মধ্যে খোদাই করা একাধিক শিলালিপির খোঁজ মিলেছে জলের অতলে। যার মধ্যে কিছু কাজ ১৭৭ সালের বলে অনুমান করা হচ্ছে।

জলের এত নিচে ঠিক যেভাবে অবিকৃত রয়েছে ৬০০ বছরের পুরনো শিচেং শহর, তা দেখে বিস্মিত অভিযাত্রী থেকে ইতিহাসবিদ, সকলেই। আর সে কারণেই অনেকে তাকে প্রাচ্যের অ্যাটলান্টিস বলে থাকেন। জলের নিচে জেগে থাকা এই যে নগর, তার স্থাপত্য, ছ'শো বছরের ইতিহাস, তা যে ভাবে বেঁচে রয়েছে চিনে, তা এক বিস্ময়। কেউ কেউ মনে করেন, জল আসলে এখানে বর্মের মতো যা বাতাস, বৃষ্টি এবং সূর্যের ক্ষয় থেকে শিচেং শহরকে রক্ষা করেছে, করে চলেছে অবিরত।

আরও পড়ুন:চিনি থেকে সিগারেট! অবাক করবে চিনা বরদের এই আশ্চর্য বরপণ

এই তো ক'দিন আগেই টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ খোঁজার প্রমোদ অভিযানে নেমে গভীর সমুদ্রে পাড়ি দিয়েছিল একটি জাহাজ। তাদের ফেরা হয়নি। জলের নিচে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছিল সেই প্রমোদতরীটি। তবে চিনের এই জলমগ্ন শহরটি কিন্তু ফেরায়নি অভিযাত্রীদের। ইতিহাসবিদদের সামনে খুলে দিয়েছে সম্পূর্ণ এক নতুন ইতিহাসের দরজা। তবে যে কেউ যে চাইলেই সেই শহর দেখে আসতে পারবেন, তা কিন্তু নয়। এই লুকানো বিশ্বের খোঁজ পেতে চাই অতল গভীর জলে সাঁতারের অভিজ্ঞতা। যা সাধারণ পর্যটকদের কাছে মোটেও নিরাপদ নয় বলেই জানাচ্ছেন অভিজ্ঞরা।

More Articles