ছোট্ট একটা চিপেই স্থায়ী সমাধান মুকুলের! জনেন আসলে কী এই অভিনব চিকিৎসা পদ্ধতি?

Brain chip : মস্তিষ্কের সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য বেছে নেওয়া হচ্ছে চিপ বসানোকেই। জানেন কেন মুকুল রায়ের ক্ষেত্রেও এই পথ নিতে বাধ্য হলেন চিকিৎসকেরা?

তৃণমূল, বিজেপি সব যেন অচিরেই ঘেঁটে যাচ্ছে, ক্যামেরার সামনেই বারবার বেফাঁস মন্তব্য করে ফেলছিলেন তিনি। মুকুল রায়কে নিয়ে যেন জল ঘোলা হওয়া কিছুতেই কাটছিল না। আর সেই ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমে নতুন করে রাজনৈতিক টানাপোড়েন দানা বাঁধছিল। অবশেষে জানা গেল, হেভিওয়েট নেতা মুকুল রায় অসুস্থ। গুরুতর স্নায়ুজনিত রোগে ভুগছেন তিনি দীর্ঘদিন ধরেই। সেই মর্মে অবশ্য চিকিৎসাও চলছিল অনেকদিন ধরেই। অতঃপর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে চিকিৎসার জন্য ই এম বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন মুকুল, তখনই এই সমস্যার পাকাপাকি সমাধানের জন্য মস্তিষ্কে ‘চিপ’ বসানোর পরিকল্পনার কথা মুকুলের পরিবারকে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। তাঁর পরিবারও চিকিৎসকদের কথায় সায় দেওয়ায় মার্চ মাসে অস্ত্রোপচারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। সেই মতো অস্ত্রোপচার করে মস্তিষ্কে ‘চিপ’ বসানো হয় মুকুলের।

সম্প্রতি ফের শিরোনাম দখল করেছেন মুকুল রায়। বাবা নিখোঁজ এই মর্মে থানায় অভিযোগ পর্যন্ত দায়ের করেন মুকুল পুত্র শুভ্রাংশু রায়। তারপর অবশ্য তাঁর গোপনে দিল্লী যাওয়া নিয়েও রীতিমতো সরগরম হয় রাজনৈতিক মহল। কী এবং কেন এই দুই প্রশ্নের উত্তর এখনও অধরা। কিন্তু কী এমন সমস্যা হয়েছিল মুকুল রায়ের? যার জেরে মস্তিষ্কে চিপ বসানোর সিদ্ধান্ত নিতে হল? তাছাড়া এই বিশেষ চিকিৎসা পদ্ধতিই বা আসলে কী?

কিছুদিন আগেই শিরোনামে আসেন এলন মাস্কের ব্রেন চিপ সংক্রান্ত তথ্য। মানুষের মাথার ভিতরে অধিকার কায়েম করবে একটা সামান্য চিপ। জানা যায়, মানুষের খুলির ভিতরে মস্তিষ্কে বিশেষ চিপ বসানোর কাজ করছে এলন মাস্কের সংস্থা নিউরালিঙ্ক। অর্থাৎ শরীরের গতিবিধি এমনকী মস্তিষ্কের গতিবিধির ওপরেও নজরদারি রাখতে সক্ষম হবে এই চিপগুলি।

আরও পড়ুন - ফের কেন গোপনে দিল্লিতে পা রাখলেন মুকুল রায়?

এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট চিপটি থাকবে মাথার ভিতরে আর অপারেটিং সিস্টেম থাকবে বাইরে। ভাবা যায়, কম্পিউটারের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ থাকবে মানুষের মাথার। শুনতে খানিকটা অবাক লাগলেও বিজ্ঞানে কী না হয়! আর তার পিঠে চেপে গল্প কে সত্যি করাও এমন কিছু নয়! মুকুল রায়ের ক্ষেত্রেও মস্তিষ্কের চিকিৎসা পদ্ধতি খানিকটা এরকমই।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, মুকুল রায়ের মাথায় বেশ কিছুদিন যাবৎই জল জমে যাচ্ছিল। সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতিতে সেই জল নিষ্কাশন করা হলেও ফের একই সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। তাই পাকাপাকি সমাধানের জন্য এই অভিনব চিকিৎসা পদ্ধতি বেছে নেন চিকিৎসকেরা। অপারেশন সফল হয়। ফের স্বাভাবিক জীবনে ফেরেন কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়ক মুকুল রায়। প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে তাঁর স্ত্রী মারা যাওয়ার পর থেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন মুকুল রায়। শরীরও কিছুটা ভেঙে পড়ে। সেইসময় থেকেই তাঁর কথায় কিছুটা অসংলগ্নতা লক্ষ্য করা যাচ্ছিল, এমনটাই দাবি তাঁর ঘনিষ্ঠদের।

এই অভিনব চিপ কেন্দ্রিক চিকিৎসা নিয়ে অবশ্য প্রথম থেকে বিতর্কেরও শেষ ছিল না। মানুষের ব্রেনের মধ্যে এটা চালনা করার আগে ট্রায়ালের জন্য ২০১৭ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে এই ডিভাইসের পরীক্ষার জন্য আনা হয় ২২৩টি বাঁদর। তাদের ওপর ব্যবহার করা হয় চিপ। কিন্তু শুরুতেই মারা যায় ১৫টি বাঁদর। তার জেরেই বিতর্কের মুখে পড়তে হয় এই ডিভাইসকে। পাশাপাশি নিউরালিঙ্ক সংস্থার ওপরও জারি করা হয় সাময়িক নিষেধাজ্ঞা। যদিও তারপর ফের গবেষণা জারি থাকে। এবং অবশেষে সাফল্য আসে। বর্তমানে শুধু বিদেশে নয়, ভারতেও এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে আস্থা রাখছেন চিকিৎসকেরা।

More Articles