কোন দৈববলে ৭৩-এও এত ফিট মোদি? যোগ দিবসে ফাঁস সেই রহস্য

Narendra Modi: না, শুধুমাত্র বছরের এই একটা দিনই যে তিনি যোগাসন করেন, তা কিন্তু নয়। নিয়মিত যোগাসনের চর্চা রয়েছে তাঁর। অনেকেই মনে করেন, এই ৭৩ বছরে তাঁর ফিট থাকার গোপন কথা আসলে এই যোগাসন।

তৃতীয় বারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সিনিয়র সিটিজেনশিপের দরজা ঠেলে আরও দশ বছর পার করে ফেলেছেন মোদি। অথচ শরীরে শক্তির খামতি নেই তাঁর। নিন্দুকেরা যাই বলুক না কেন, ফিটনেসের দিক থেকে বলে বলে যে কোনও জোয়ানকে দশ গোল দিতে পারেন তিনি। ভোটের ময়দানে জনসভার পর জনসভা, কখনও তিনি সন্ন্যাসীর মতোই রামমন্দির উদ্বোধনের নিয়মকানুন পালন করছেন, কখনও বা পৌঁছে যাচ্ছেন কন্যাকুমারীতে সাধনা করতে। এরই মধ্যে তিনি আবার পৌঁছে গেলেন সুদূর কাশ্মীরে। যোগ দিলেন শ্রীনগরে ডাল লেকের ধারে শের ই কাশ্মীর আন্তর্জাতিক কনফারেন্স সেন্টারে যোগ দিবসের অনুষ্ঠানে। 

ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ২১ মার্চ দিনটিকে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস হিসেবে পালন করে আসছে বিজেপি। বিজেপির নেতামন্ত্রীরা নানা অনুষ্ঠানে যোগ দেন এ দিনটায়। এ দিন কাশ্মীরের ওই অনুষ্ঠানে অন্যদের সঙ্গে প্রায় ৩০ মিনিট যোগাসন করেন মোদি। কথা বলেন যোগাসনের ইতিবাচক দিকগুলি নিয়ে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যোগাসনের তাৎপর্য ঠিক কতখানি, আলোচনায় উঠে আসে সেই প্রসঙ্গও। যোগ ব্যায়ামের পর্ব সেরে সেলফিও তোলেন মোদি। 

আরও পড়ুন: নিজের কেন্দ্র বারাণসীতেই অপমান! মোদির দিকে চটি ছোড়ার অভিযোগ কি সত্য?

না, শুধুমাত্র বছরের এই একটা দিনই যে তিনি যোগাসন করেন, তা কিন্তু নয়। নিয়মিত যোগাসনের চর্চা রয়েছে তাঁর। অনেকেই মনে করেন, এই ৭৩ বছরে তাঁর ফিট থাকার গোপন কথা আসলে এই যোগাসন। বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে প্রায়শই মোদি নিজেই বলেছেন, ‘‘আমি সব সময় কাজের মধ্যে থাকতে ভালবাসি। আমার ঘুম খুব কম। সারা দিনে আমি সাড়ে তিন ঘণ্টা থেকে চার ঘণ্টার বেশি ঘুমোই না। আমার চিকিৎসক বন্ধুরা যদিও আমায় এই নিয়ে খুব বকাবকি করেন। তবুও আমি এই অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসতে পারছি না। তবে আমার ঘুম খুব গভীর হয়। বিছানায় শোয়ার ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে আমি ঘুমিয়ে পড়ি। সকালে উঠে নিয়মিত যোগব্যায়াম আর প্রাণায়াম করি। এটা আমার বহু দিনের অভ্যাস, আর সেই কারণেই আমি সারা দিন এতটা ফিট থাকি।’’

নিজের যোগাসনের কথা ভাগ করে নিয়ে দেশবাসীকে যোগাসন চর্চায় মন দেওয়ার অনুরোধও করেছেন মোদি। তাঁর কথায়, সকলের কাছে আমার অনুরোধ, যোগব্যায়ামকে দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গী করে তুলুন। যোগাসন প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, সুস্বাস্থ্যের দাওয়াই হতে পারে যোগাসন।”

 

তা যে মিথ্যা নয়, তার প্রমাণ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজেই। বিশ্ব যোগ দিবসের আগে নিজের এক্স হ্যান্ডেলে রীতিমতো ভিডিও পোস্ট করে যোগাসনের বিভিন্ন উপকারিতার কথা উল্লেখ করেছেন মোদি। কোন কোন আসন রয়েছে সেই তালিকায়? যা নিয়মিত অভ্যাস করে এই তিয়াত্তরেও এতটা মজবুত, এতটা শক্তপোক্ত নরেন্দ্র মোদি? যতদূর জানা গিয়েছে, সেই তালিকায় রয়েছে শশাঙ্কাসন। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা থেকে শুরু করে হজমশক্তি বাড়ানোর মতো একাধিক উপকার করে এই আসনটি। এই আসনটি নিয়ম করে করলে পিঠের ব্যথা থেকেও মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

 

মোদির তালিকায় রয়েছে তড়াসনও। যা নিয়মিত করলে শরীরের ভারসাম্য ঠিক থাকে। ঊরু, হাঁটু ও গোঁড়ালির শক্তি বৃদ্ধি করতেও তড়াসন করা হয়। নিয়মিত সকালে উঠে মোদি সূর্য নমস্কার করেন বলেও জানিয়েছেন ওই ভিডিওতে। ই আসনটি নিয়মিত করলে সারা শরীরের ব্যায়াম হয়। রক্ত সঞ্চালন ভাল থাকে। ফুসফুস থেকে হার্ট, লিভার, কিডনি– সব অঙ্গই ভাল থাকে। ত্বকের স্বাস্থ্য ভাল হয়, মনও ভাল থাকে নিয়মিত সূর্য নমস্কার করলে। অনেক জটিল অসুখের ঝুঁকিও কমে যায়।

আরও পড়ুন: রামমন্দির ফেলে হঠাৎ নালন্দামুখী মোদি! নয়া স্ট্র্যাটেজি বিজেপি 3.O সরকারের?

এ ছাড়াও মোদির তালিকায় রয়েছে নাড়িশোধন প্রাণায়াম। এই প্রাণায়ামটি হৃদ্‌যন্ত্র ও ফুসফুসের খেয়াল রাখতে সাহায্য করে। এই আসন জীবনশক্তি ও একাগ্রতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এই আসনটিকে অনুলোম বিলোম প্রাণায়ামও বলা হয়। মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে এই প্রাণায়াম। পাশাপাশি সেতুবন্ধাসন ব্যায়ামটিও নিয়মিত চর্চা করে থাকেন নরেন্দ্র মোদি। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে রেহাই দেয় এই আসন। এমনকী মানসিক অবসাদ থেকেও দূরে রাখে এই যোগব্যায়ামটি।

মোদি নিজেই জানিয়েছেন, নিয়মিত সকালে এই যোগাসনগুলি ছাড়া দিন শুরু হয় না তাঁর। আর এ সমস্ত অভ্যেসই তাঁকে প্রতি মুহূর্তে পরিশ্রম করার শক্তি জোগায়। ২০২৪ লোকসভা ভোটে জিতে তৃতীয়বার সরকার গড়েছেন নরেন্দ্র মোদি। জওহারলাল নেহরু ছাড়া ভারতবর্ষের আরও কোনও প্রধানমন্ত্রীর এ রেকর্ড নেই। তিয়াত্তরেও মোদির অবিরাম প্রাণশক্তি মাঝেমধ্যে অবাক করে দেয় বিরোধীদেরও। আর তার নেপথ্যের গল্পটা ফাঁস করলেন মোদি আন্তর্জাতিক যোগ দিবসেই।

More Articles