মানব পাচারকারী দালালদের স্বর্গরাজ্য! মোদির গুজরাত নিয়ে ভয়াবহ তথ্য ইডির

Gujarat Human Trafficking: গুজরাতের এক পরিবারের চারজন ২০২২ সালের জানুয়ারিতে মার্কিন-কানাডা সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টা করার সময় ঠান্ডায় জমে গিয়ে মারা যান। নিহতদের মধ্যে ১১ এবং ৩ বছরের দু'টি শিশুও ছিল।

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিবাসন নীতি নিয়ে কড়া হতেই, বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসীদের নিজের দেশে নির্বাসিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। তারপরেই বিভিন্ন দেশের মতোই ভারতের অভিবাসীদেরও পাঠানো শুরু হয় এদেশে। দেখা গেছে, অভিবাসীদের অধিকাংশই পঞ্জাব, গুজরাতের বাসিন্দা। এই অভিবাসীরা, জমি জায়গা বিক্রি করে, লক্ষ, কোটি টাকা জোগাড় করে বিভিন্ন এজেন্টদের মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে, 'ডানকি রুট' ব্যবহার করে আমেরিকায় পাড়ি দিয়েছিলেন উন্নত জীবনের আশায়। সদ্য এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) তদন্তে দেখা গেছে গুজরাত ক্রমেই মানব পাচারকারী এই এজেন্টদের আঁতুরঘর হয়ে উঠেছে।

কেন্দ্রীয় তদন্তকারী ওই সংস্থা ইতিমধ্যেই ৪,০০০-৪,৫০০ পাচারকারী এজেন্টদের একটি নেটওয়ার্কের সন্ধান পেয়েছে, যার মধ্যে ২,০০০ জনই গুজরাতের এজেন্ট। এই এজেন্টরা অন্ততপক্ষে কানাডার ১৫০টি কলেজের সঙ্গে জড়িত, যারা এই ভারতীয়দের ভারত থেকে কানাডা হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে প্রবেশ করতে সাহায্য করে।

আরও পড়ুন- নিজের টিকিট নিজে কাটার নির্দেশ! যে দুঃসহ ভোগান্তির মুখে নির্বাসিত ভারতীয়রা

ইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই এজেন্টরা তাঁদের ক্লায়েন্টদের স্টুডেন্ট ভিসায় কানাডার একটি কলেজে ভর্তি করায়। পড়ুয়া হিসেবে নথিপত্র নিয়ে কানাডায় যাওয়ার পর তারা সীমান্ত অতিক্রম করে অবৈধভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন। ইডির তদন্তে আরও জানা গেছে, গুজরাতের প্রায় ২,০০০ এজেন্ট কানাডা হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয়দের পাচারের সঙ্গে এখনও সক্রিয়ভাবে জড়িত এবং কানাডার সিন্ডিকেট সদস্যদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন তারা।

কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা দেখেছে, এই এজেন্ট এবং কানাডার কলেজগুলির মধ্যে ১২,০০০-এরও বেশি আর্থিক লেনদেন হয়েছে। মূলত ২০২১ সালের নভেম্বর ২০২৪ সালের জুলাইয়ের মধ্যেই এই টাকা পয়সার লেনদেন হয়েছে। তিন থেকে চারটি ভারতীয় আর্থিক পরিষেবা সংস্থার মাধ্যমে কানাডার কলেজগুলিতে এই টাকা পাঠানো হয়েছিল। ইডির আধিকারিকরা জানিয়েছেন, কানাডার কলেজগুলিতে যে ফি পাঠানো হয়েছিল, কমিশন কেটে নেওয়ার পরে তা এজেন্টদের অ্যাকাউন্টে ফেরত দেওয়া হয়েছিল। এই কমিশন ছিল জনপ্রতি ৫৫ থেকে ৬০ লক্ষ টাকা! ইডি ইতিমধ্যেই মানব পাচারের র‌্যাকেটের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি আর্থিক তছরুপের মামলাও দায়ের করেছে।

আরও পড়ুন-মোদির নিজ রাজ্য এত উন্নত হলে কেন আমেরিকায় পালাচ্ছেন গুজরাতিরা?

বিষয়টি প্রথম প্রকাশ্যে আসে গুজরাতের এক পরিবারের চারজনের মৃত্যুর ঘটনার পরেই। ওই মৃত্যুর বিষয়ে তদন্ত করতে গিয়েই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার নজরে আসে মানব পাচারের দিকটি। এই চারজন ২০২২ সালের জানুয়ারিতে মার্কিন-কানাডা সীমান্ত অতিক্রম করার চেষ্টার সময় ঠান্ডায় জমে গিয়ে মারা যান। নিহতদের মধ্যে ১১ এবং ৩ বছরের দু'টি শিশুও ছিল।

সমীক্ষা বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীদের মধ্যে গুজরাতিদের সংখ্যাই বেশি। ২০২৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৬৭,৩৯১ জন ভারতীয় অবৈধ অভিবাসীর মধ্যে গুজরাতি ছিলেন ৪১,৩৩০ জন। নরেন্দ্র মোদির নিজ রাজ্য গুজরাত। ‘মডেল স্টেট’ থেকে গুজরাতিরাই কেন পালাচ্ছেন সেই নিয়েও স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। তাহলে নরেন্দ্র মোদির নিজস্ব রাজ্যেই মানুষ কাঙ্খিত জীবন পাচ্ছেন না? আরও ভালো জীবন, চাকরি, উপার্জনের লোভে জীবন বাজি রেখে চলে যাচ্ছেন আমেরিকা, মোদির বন্ধুবর ট্রাম্পের দেশে! উন্নয়নের ঢক্কানিনাদে সাধারণ মানুষের গোঙানি চাপা পড়ে যাচ্ছে না তো গুজরাতে?

More Articles