বিজ্ঞান থেকে বাণিজ্যে: বাঙালির নিজস্ব সুপারহিরোর আখ্যান 'প্রফুল্ল রসায়নী'

Book Review: যেভাবে ইন্দিরা গোটা বইয়ের পাতায় পাতায় প্রফুল্লের প্রতিটি সত্তাকে চেনাতে চেনাতে গিয়েছেন পাঠককে, তা কার্যত এই বইটিকে করে তুলেছে আস্ত একটি দলিল, সময় ও সমাজের দলিল।

বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মী। তবে বাঙালি যেন কীভাবে সেই আপ্তবাক্যকেই ভুলে পরের দাসত্বকে ধ্যানজ্ঞান বলে মনে করতে লাগল। বাঙালি ব্যবসাবিমুখ, এ কথায় বিন্দুমাত্র ভুল নেই। বাঙালি ছেলেমেয়েরা যত চাকরির পিছনে ছোটে, ব্যবসাকে তেমন গুরুত্ব দেয় না। আর এই কথাটা অত বছর আগেই বুঝেছিলেন বাংলার ক্ষীণকায় এক রসায়নবিদ। বুঝেছিলেন, শিল্প-বাণিজ্য বা ব্যবসায়িক উদ্যোগ ছাড়া যে কোনও দেশ সামনের দিকে এগোতে পারে না। আজ এত বছর পরে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার দিকে তাকালে বিলক্ষণ মালুম হয় যে, কিছুমাত্র ভুল ভাবেননি বাংলার রসায়নের রাজা আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়। সেই প্রফুল্লচন্দ্র সদ্য ফিরেছেন উপন্যাসে। রসায়নেরই এক ছাত্রীর হাত ধরে। 'প্রফুল্ল রসায়নী'— বেরিয়েছে 'মান্দাস' থেকে। দেশের বিস্মৃতপ্রায় এক বিজ্ঞানী, ভারত তো দূরের, বাংলা পর্যন্ত যাঁর কথা তেমন করে মনে রাখেনি। কেন? বাংলা কি তবে যতটা বাণিজ্যবিমুখ ততটাই বিজ্ঞানবিস্মৃত? সাহিত্য, সংস্কৃতি, যাত্রা, পালাগান নিয়ে যতটা মেতে রইল তারা, বিজ্ঞান কেন ততটা জায়গা করে নিতে পারল না সেখানে! সেই সমস্ত প্রশ্নই গোড়া থেকে রাখতে রাখতে এগোন এই উপন্যাসকার ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়।

প্রফুল্লচন্দ্রকে বাংলার অন্যতম উদ্যোগপতি বললেও বোধহয় খুব একটা ভুল হয় না। নিজের ঘাম-রক্ত-জল দিয়ে একদিন যে বেঙ্গল কেমিক্যালকে গড়ে তুলেছিলেন তিনি তিলে তিলে, বাঙালির সেই নিজস্ব রাসায়নিক কারখানা, নিজস্ব ওষুধের প্রতিষ্ঠানকে একদিন ভরসা করতে পেরেছিল গোটা দেশ। শুধু কি ওষুধপত্র, দেশের মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়েছিল উগ্র গন্ধ যুক্ত ঘর মোছার কালো ফিনাইল, নির্ভেজাল ন্যাপথলিনের ধপধপে সাদা গুলি। আরও কত রকমের যে খাঁটি রাসায়নিক জিনিসপত্র, পরাধীন ভারতের খাঁটি স্বদেশি দ্রব্য সব। সে সমস্তই তৈরি এক বাঙালি বিজ্ঞানীর নিজস্ব ফর্মুলায়। নিজের বিন্দু বিন্দু পুঁজি লগ্নি করেছিলেন তিনি এই কারখানার পিছনে। ভেবেছিলেন, বাঙালিকে আর অন্য কারওর মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না কখনও। নিজের হাতে বেঙ্গল কেমিক্যালের কেমিস্টদের শিখিয়েছিলেন সব কৌশল-পদ্ধতি। দেশের শত শত মানুষের রোজগারের পথ এককালে খুলে দিতে পেরেছিলেন প্রফুল্লচন্দ্র। বেঙ্গল কেমিক্যালস ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস (BCPW)-র যাত্রাপথ দীর্ঘ। ভারতের প্রথম ভারী রাসায়নিক শিল্প কারখানা দেশ পেয়েছিল তাঁর হাত ধরেই। এত রক্ত, এত ঘাম যে বেঙ্গল কেমিক্যালের পিছনে, একদিন সেখান থেকেই সরে যেতে হয়েছিল প্রফুল্লচন্দ্রকে। স্বেচ্ছায় বোর্ড অব ডিরেক্টরস থেকে পদত্যাগ করেছিলেন তিনি।

আরও পড়ুন: মান্দাসের হাত ধরে উপন্যাসে ফিরছেন রসায়নের রাজা প্রফুল্লচন্দ্র

আসলে কেবল ওষুধে বা খাবারে যে ভেজাল ঢুকেছিল, তা-ই নয়। ভেজাল ঢুকেছিল সমাজের আত্মাটিতেও। তাই বোধহয় অজানিত, অপাঠিতই রয়ে গেলেন রসায়নের এই মানুষটি। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর বয়সের ব্যবধান প্রায় ছিল না বললেই চলে, তবু রবীন্দ্রনাথকে বাঙালি যতটা জানল, ততটা জানা হল না প্রফুল্লচন্দ্রকে। দেড়শো বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে সেই অশ্রুত, বিস্মৃত বৈজ্ঞানিকের কথাই বলতে বসলেন ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়। মান্দাস প্রকাশনী থেকে সদ্য মুক্তি পেয়েছে তাঁর বই 'প্রফুল্ল রসায়নী'। রসায়নের রাজা প্রফুল্লচন্দ্রের প্রতি এক রসায়নের ছাত্রীর সামান্য শ্রদ্ধার্ঘ! না, শুধু সেটুকুই বোধহয় নয়। সম্ভবত রসায়নের দায় ও বাঙালির কর্তব্যবোধ থেকেই বইখানি লেখার কাজ শুরু করেছিলেন ইন্দিরা। এই প্রথম উপন্যাস আকারে ধরা দিলেন প্রফুল্লচন্দ্র। সেই দিক থেকে এই বইটি ভীষণ রকম জরুরি তো বটেই। তবে যেভাবে ইন্দিরা গোটা বইয়ের পাতায় পাতায় প্রফুল্লের প্রতিটি সত্তাকে যেভাবে চেনাতে চেনাতে গিয়েছেন পাঠককে, তা কার্যত এই বইটিকে করে তুলেছে আস্ত একটি দলিল, সময় ও সমাজের দলিল।

প্রফুল্লচন্দ্রের জন্ম অবিভক্ত বাংলার যশোর জেলার রাড়ুলি গ্রামে। বাড়ির পাশ দিয়ে তিরতির করে বয়ে চলা কপোতাক্ষ নদ, গ্রামের সবুজ, সজীব প্রকৃতি, খোলামেলা জলহাওয়া বরাবর তাড়া করে বেড়াত তাঁকে। হরিশচন্দ্র আর ভুবনমোহিনীর সেজো ছেলেটি ছোট থেকেই যেন একটু বেশি পরিণত। যশোরের বিত্তবান সেরেস্তাদার আনন্দলাল রায়চৌধুরীর 'ভদ্রাসন' বাড়িতে একসময় তেমন অভাব ছিল না। কিন্তু কুসংস্কারের ছায়া ছিল তাতে। সেই অন্ধকারকে নিজের চেষ্টায় সরিয়ে ফেলেছিলেন হরিশচন্দ্র। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় ছিলেন তাঁর বিশেষ সহৃদয় বন্ধু। হিন্দুবাড়ির ছেলে হয়ে মৌলবী সাহেবের কাছে আরবি, ফারসি শিখেছিলেন তিনি। ধর্মাধর্মের উর্ধ্বে উঠে মানবতার শিক্ষা প্রফুল্লের বাবার হাতেই। মায়ের সঙ্গে ছেলেটির বরাবরই ছিল আশ্চর্য এক বন্ধুতার সম্পর্ক। মা শিখিয়েছিলেন কুসংস্কারকে পাত্তা না দিতে। সেই শিক্ষাকে আজীবন ব্রত করেই চলেছিলেন মায়ের আদরের ফুলু।

 Prafulla Rasayani by Indira Mykhopadhyay Mandas publication book review by Sohini Das

ছোট থেকেই পড়াশোনাই ছিল ছেলেটির প্রাণ। সবসময়ে চোখকান খোলা তার। বয়সের তুলনায় যেন একটু বেশিই স্বপ্রতিভ। ভাগ্যলক্ষ্মী বোধহয় তখনই দৃপ্ত হাতে তার ললাটলিখনখানি লিখে ফেলেছিলেন অলক্ষ্যে বসে। তবে সমস্যা একটাই, শরীর। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়াকালীন ধরা পড়ল রক্তআমাশার মতো কঠিন ব্যাধি। হজমশক্তি গিয়ে ঠেকলো তলানিতে। অজীর্ণ, উদরাময়, অনিদ্রায় ছারখার ছেলেটির দু'টো বছর নষ্ট হল। স্কুলের পড়াশোনা বিঘ্নিত হল। তবে ল্যাটিন শিক্ষা হল বাড়িতে বসেই। মোটামুটি সুস্থ হওয়ার পর ব্রাহ্মপরিচালিত অ্যালবার্ট স্কুলে ভর্তি হলেন প্রফুল্লচন্দ্র। কিন্তু কলকাতায় বসে গ্রামের জন্য মনকেমন করত তাঁর। বাড়ি ফেরার জন্য প্রাণ আনচান করত। বাবা বলতেন, সম্পত্তি কেনা তত কঠিন নয়, যতটা রাখা। রায়চৌধুরী জমিদারবাড়ির সকল প্রতাপ ক্রমশ অবসিত হয়েছিল পরবর্তীকালে। পিতামহ, প্রপিতামহদের আয়ের অনুপাতে তেমন আয় করতে পারেননি হরিশচন্দ্র। বার্ষিক ৬ হাজার টাকা আয়ের ভূসম্পত্তি থাকা সত্ত্বেও চরম অর্থ সংকট থেকে শুরু করে এক এক করে মায়ের স্ত্রীধনে কেনা সম্পত্তি হাতছাড়া হতে দেখেছেন প্রফুল্লচন্দ্র। ছোট্ট ছেলেটা সেদিনই মাকে আশ্বস্ত করে বলেছিল, বড় হয়ে সমস্ত রক্ষা করবেই সে।

সেই রাড়ুলি গ্রাম থেকে কলকাতায় উঠে আসা, হস্টেলে থেকে পড়াশোনা। জমিদারি ঠাঁটঠমক গেলেও বইসর্বস্ব ছেলেটার জন্য সবসময় বড় স্বপ্ন দেখেছিলেন হরিশচন্দ্র। কলকাতায় এনে ছেলেকে ভর্তি করে দিয়েছিলেন পরম বন্ধু বিদ্যাসাগর মহাশয়ের কলেজ মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশনে। নামিদামী সব শিক্ষকদের কাছে পড়ার সুযোগ যেমন আপ্লুত করেছিল হরিশচন্দ্রকে, ঠিক তেমনভাবেই উদ্বেল করেছিল খুদে ফুলুকেও। বরাবর চারপাশের খবরাখবর রেখে চলতেন হরিশচন্দ্র। প্রেসিডেন্সিতে সেসময় রসায়ন বিভাগের প্রধান বিখ্যাত ব্রিটিশ অধ্যাপক আলেকজান্ডার পেডলার। মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশনের রসায়ন ক্লাস হত তখন প্রেসিডেন্সিতেই। ছেলের যে রসায়নের প্রতি বিশেষ ঝোঁক, সে কথা কি আর জানতেন না বাবা। ক্রমে সেই আলেকজান্ডার পেডলারেরই প্রিয় ছাত্র হয়ে উঠল ছেলেটি।

গিলক্রিস্ট বৃত্তির কথা জানার পর থেকেই বিদেশে পড়তে যাওয়ার পরিকল্পনা করে ফেলেছিলেন প্রফুল্ল। হলও তাই। পরীক্ষা দিয়ে বৃত্তি পেয়ে জাহাজে করে লন্ডনের উদ্দেশে রওনা হল ছেলে। তবে সেখানে থেকে যাওয়ার ভাবনা কোনওদিনই ছিল না তাঁর। তিনি দেশে ফিরবেন, ফিরতে তাঁকে হবেই। এ দেশের ছেলেপুলেদের অনেক কিছু শেখানোর আছে তাঁর। প্রফুল্লচন্দ্রের মতো ক্ষণজন্মাদের জন্ম যে আরও বড়, আরও মহৎ কোনও লক্ষ্যের জন্য। লন্ডনে তাঁর বিশেষ বন্ধু ছিলেন প্রেসিডেন্সি কলেজের সিনিয়র জগদীশ চন্দ্র বসু। এই উপন্যাসের পরতে পরতে সেই সময়কে ছুঁতে ছুঁতে গিয়েছেন লেখিকা। তুলে এনেছেন প্রফুল্লর হাতে লেখা চিঠির মতো প্রামাণ্য দলিল। শুধু যে একজন বিজ্ঞানী, রসায়নবিদ বা উদ্যোগপতি ছিলেন প্রফুল্লচন্দ্র, তা বোধহয় নয়। তিনি যে একজন সুলেখক ছিলেন, ওইসব চিঠির ছত্রে ছত্রে মেলে তার প্রমাণ।

 Prafulla Rasayani by Indira Mykhopadhyay Mandas publication book review by Sohini Das

এ দেশের ভূমিপুত্র যাঁরা, তাঁরা শিক্ষাদীক্ষায় যতই বিদেশিদের সমগোত্রীয় হয়ে উঠুক না কেন, তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার সেই মর্যাদা দিত কোথায়! কাজের ক্ষেত্রে বেতন বৈষম্যই প্রমাণ করে দিত  ইংরেজদের সেই একচোখামি। বিলেতের ডিএসসি, পিএইচডি সত্ত্বেও সেই বঞ্চনার শিকার হতে হয়েছে প্রফুল্লচন্দ্র বা জগদীশ বসুর মতো বিজ্ঞানীকেও। বরাবরই স্পষ্টবাদী প্রফুল্লচন্দ্র। বিলেতে পড়তে গিয়ে ইউনিভার্সিটিতে একটি ইংরেজি প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় 'ইন্ডিয়া- বিফোর অ্যান্ড আফটার মিউটিনি' বিষয়ে জ্বালাময়ী প্রবন্ধ লিখে এসেছিলেন তিনি। সেই প্রফুল্ল যে বেতনবৈষম্য নিয়ে গর্জে উঠবেন, তেমনটাই তো কাঙ্খিত। তবে অচিরেই তিনি বুঝেছিলেন, এ গর্জন নিস্ফল। ফলে খানিকটা সমঝোতা করেই প্রেসিডেন্সি কলেজের রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপকের পদে যোগ দিয়েছিলেন। তবে ভবিষ্য়তে বেঙ্গল কেমিক্যাল প্রতিষ্ঠার তাগিদ বোধহয় তৈরি হয়ে গিয়েছিল তখন থেকেই।

অজৈব রসায়নে ডক্টরেট প্রফুল্লচন্দ্রের প্রেসিডেন্সি কলেজের রসায়ন ল্যাবরটরিতে অবিরাম পড়ে থাকার সেসব ঐতিহাসিক দিনগুলি শুরু হল। তদ্দিনে সভ্যতার অনুসঙ্গ 'ভেজাল'। সেই ভেজাল নিয়ে গবেষণার মধ্যে দিয়েই কি বাঙালিকে নিজস্ব খাঁটি রাসায়নিক দ্রব্য পৌঁছে দেওয়ার ভাবনাটি ভেবে ফেলেছিলেন রসায়নের এই রাজা। রাত দিন তিনি পড়ে থাকতেন ওই ল্যাবরটরিতে। অহর্নিশ পরিশ্রমের ফলাফল মিলল ১৮৯৫ সালে। ততদিনে তিনি 'মারকিউরাস নাইট্রাইট' আবিষ্কার করে সারা পৃথিবীতে আলোড়ন ফেলে দিয়েছেন। সারা জীবনে মোট বারোটি যৌগিক লবণ ও পাঁচটি থায়োএস্টার আবিষ্কার করেছেন প্রফুল্লচন্দ্র। তবে নিজের কাছে তিনি যত না বিজ্ঞানের সাধক, তার চেয়ে বেশি দেশসেবক। বিলেতের ডিগ্রি, একের পর এক দুনিয়া কাঁপানো আবিষ্কার কিন্তু তার অস্তিত্বের যে শিকড়, তাঁকে বদলাতে পারেনি কোনওদিন। প্রিয় খদ্দরের কাপড়, ধুতি, প্রয়োজনে কালো কোট— বরাবর সেই সাধাসিধে পোশাক পরতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। অবিন্যস্ত চুল, উদাসীন বেশভূষার এই মানুষটিকেই ইউরোপীয় দুনিয়া ভূষিত করল 'মাস্টার অব নাইট্রেটস' আখ্যায়।

আরও পড়ুন:রক্ত-মাংস-কফ-শ্লেষ্মায় গড়া ফাঁপা সময়ের গল্প: যাহা বলিব সত্য বলিব

দেশি মানেই বাজে জিনিস, পাতে দেওয়ার অযোগ্য। সমাজের এই বধ্যমূল ধারণাটাই বদলানোর ছিল প্রফুল্লের। তবে সেই কর্মযজ্ঞে নেমে প্রতিপদে পদে বাধার মুখে পড়েছিলেন প্রফুল্ল। তবু হার মানেননি। সেই সব পাহাড় ডিঙানোর গল্প অবলীলায় বলতে বলতে যান ইন্দিরা তাঁর উপন্যাসে। প্রফুল্ল বিশ্বাস করতেন, একটা গোটা জাতি শুধুমাত্র কেরানি বা মসিজীবী হয়ে থাকতে পারে না। বাঙালি জাতিকে স্বাবলম্বী হওয়ার ফর্মুলাটুকু কিন্তু সেই সময়েই বাঙালির হাতে তুলে দিয়ে গিয়েছিলেন প্রফুল্ল চন্দ্র রায়। সেই আখ্যান লিখতে লিখতে কখন যে প্রফুল্লের যন্ত্রণাদের বড় নিজস্ব বানিয়ে ফেলেছেন লেখিকা, সেই সালতামামির হিসেব নেই। সেই রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে একের পর এক ঐতিহাসিক ঘটনা এসে দাঁড়িয়েছে রাস্তায়। সেসব গল্পকে দক্ষতার সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছেন লেখক তাঁর আখ্যানের ভিতরে। মোট দশটি পর্বে ভাগ করা এই আখ্যান। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের 'সেই সময়' বা 'প্রথম আলো'-র সঙ্গে মিল খোঁজা সম্ভবত উচিত হবে না এই উপন্যাসের। কারণ গল্পের প্রয়োজনে কোনও অতিরিক্ত চরিত্র বা কাহিনির গলিপথ ধরতে হয় না লেখিকাকে। সত্য এবং শুধুমাত্র সত্যের জোরেই সার্থক হয়ে ওঠে 'প্রফুল্ল রসায়নী'। তবে এ উপন্যাসের শেষে পাঠকের জন্য অপেক্ষা করছে অন্য চমক। উপন্যাসের উপান্তে এমন সত্যের মুখোমুখি হওয়া সম্ভবত অপ্রত্যাশিতই ছিল। তবে সেই চমকটুকুর জন্য 'পরীক্ষা প্রার্থনীয়' বলাটাই বোধহয় সমীচিন।

বই: প্রফুল্ল রসায়নী
লেখক: ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়
প্রকাশনা: মান্দাস
প্রচ্ছদ: সুপ্রসন্ন কুন্ডু
দাম: ৩০০/-

More Articles