আগাম প্রস্তুতি ছাড়া হঠাৎই প্রফেসার শঙ্কুকে নির্মাণ করেন সত্যজিৎ রায়
মানবসভ্যতার ধারাক্রমিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে বোঝা যায় ইংল্যান্ডের বুকে ১৭৬০- ১৮৪০ সালের মধ্যবর্তী সময়কালে শুরু হওয়া ' শিল্পবিপ্লব ' সমগ্র পৃথিবীর ক্ষেত্রে এক বিরাট পরিবর্তন সাধন করেছিল।ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লবের গোড়াপত্তন হলেও পরবর্তী সময়ে তা আমেরিকা, ফ্রান্স,রাশিয়া, জার্মানি ছুঁয়ে ডানা মেলেছিল তৃতীয় বিশ্বেও। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শিল্পবিপ্লবের হাত ধরে যেমন পালটে গিয়েছিল আপামর বিশ্বের অর্থনীতির খোলনলচে তেমনই বদল এসেছিল মানুষের দৈনন্দিন যাপনে।ঠিক একইভাবে শিল্পবিপ্লবের অনিবার্য ফলশ্রুতিকে অগ্রাহ্য করতে পারেনি সাহিত্য - সংস্কৃতির জগৎ।বস্তুতপক্ষে শিল্পবিপ্লব কল্পবিজ্ঞান কাহিনির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেললেও মধ্যযুগ থেকে আধুনিক যুগের পথে মানব সভ্যতার ক্রমউত্তরণই রয়েছে কল্পবিজ্ঞান কাহিনি সৃষ্টির মূলে। কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের এমনই একটি শাখা যা ভবিষ্যতের বৈজ্ঞানিক সম্ভাবনাকে ভিত্তি করেই রচিত হয়।এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই শিল্পবিপ্লবের পরবর্তী সময়ে কল্পবিজ্ঞান রচনার গতি আরও তরান্বিত হয় কারণ এইসময় মানুষ প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে ক্রমশ হয়ে উঠছিল আরও বেশি বিজ্ঞানমনস্ক আবার একইসঙ্গে এইসময় থেকে একদিকে যেমন যন্ত্রসভ্যতার সঠিক মানোন্নয়ন ঘটে অন্যদিকে মানুষের বিজ্ঞানচর্চা ও বিজ্ঞানচেতনার পরিধিও বৃদ্ধি পায়।ফলে সাহিত্য ক্ষেত্রে কল্পবিজ্ঞান চর্চা ধীরে ধীরে তার আধিপত্য বাড়াতে থাকে।
সময়টা ৪৪৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দর আশেপাশে। গ্রিসের এথেন্স শহরে জন্মগ্রহণ করলেন নাট্যকার Aristophanes। তাঁর জীবনের অনেকখানি অংশ রহস্যময়।প্লেটোর লেখা ' সিম্পোজিয়াম ' গ্রন্থ থেকে জানা যায় Aristophanes ছিলেন সক্রেটিসের বন্ধুস্থানীয়।তিনি মোট চুয়াল্লিশটি নাটক রচনা করেন।অনুমান করা হয় এর মধ্যে বেশ কিছু নাটক ছিল কল্পবিজ্ঞান নির্ভর।অর্থাৎ এই অনুমান সঠিক হলে বলতে হয় খ্রিস্টের জন্মের আগেই সাহিত্যের বুকে কল্পবিজ্ঞানের পদচারণার সূত্রপাত ঘটে।
এরপর চলে আসা যাক ১৮২৮ সালে।শিল্পবিপ্লবের ঢেউ তখন ইংল্যান্ড ছাড়িয়ে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে সমগ্র বিশ্বে।ব্যতিক্রম নয় ফ্রান্সও।এমনই এক সময়ে ১৮২৮ সালের ৮ই ফ্রেবরুয়ারি পশ্চিমে ফ্রান্সের নত শহরে জন্মগ্রহণ করেন জুল ভার্ন।আশ্চর্য সুন্দর শহর এই নত।উত্তাল সফেল বিস্ক উপসাগর যেন সর্বক্ষণ চুম্বন এঁকে দিয়ে যাচ্ছে নবযৌবনা নত শহরের ওষ্ঠে।বন্দরশহরের সেই একরত্তি ছেলেটা একদিন যে সমগ্র বিশ্বসাহিত্যের উপর দাপটের সঙ্গে ছড়ি ঘোরাবে তা কি তখন বড়ো কোনো সাহিত্য সমালোচকও ভাবতে পেরেছিলেন?অথচ সেদিনের সেই ছোট্ট ছেলেটার হাত ধরেই একসময় প্রকৃত অর্থে কল্পবিজ্ঞানের জয়যাত্রার সূচনা ঘটে। জুল ভার্নের 'জার্নি টু দ্যা সেন্টার অফ দ্যা আর্থ '. ' ফ্রম দ্যা আর্থ টু দ্যা মুন' অ্যারাউন্ড দ্যা ওয়ার্ল্ড ইন এইটটি ডেইজ ' ' দ্যা মিস্টেরিয়াস আইল্যান্ড ' প্রভৃতি কাহিনিগুলি কল্পবিজ্ঞানের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। উড়োজাহাজ তৈরি যখন মানুষের ভাবনার বাইরে তখনই তিনি রচনা করে ফেলেছেন ' ইনটু দ্যা নাইজার ব্যান্ড।' এমনকী কল্পবিজ্ঞানের ডানায় ভর দিয়ে তিনি ঘুরে এসেছেন চাঁদের বুকে,যার ফলশ্রুতি 'জার্নি টু দ্যা মুন' বইটি।কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যে এই অবদানের জন্য জুল ভার্নকে ' কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের পিতা ' আখ্যা দেওয়া হয়।
পরবর্তী সময়ে জুল ভার্নের ছেড়ে যাওয়া ব্যাটন হাতে তুলে নেন এইচ জি ওয়েলস। তাঁর অমর সৃষ্টি টাইম মেশিন এক লহমায় কল্পবিজ্ঞানের জগতকে বেশ কয়েককদম এগিয়ে দিয়েছিল।এর পরবর্তী সময়ে আইভান ইয়েফ্রেম্ভ, স্তানিসোয়াভ,আর্থার সি ক্লার্ক, পিটার কার্টার,এডওয়ার্ড গ্রিন্ডন প্রমুখরা কল্পবিজ্ঞানের জয়পতাকা বহন করেছেন নানা সময়ে।
আরও পড়ুন-পিকের সঙ্গে বিচ্ছেদ, ২০২৪-এ জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারবেন মমতা?
১৭২ নং ধর্মতলা স্ট্রিট,অর্থাৎ বর্তমানে লেলিন সরণির একটি অফিসে তখন চলত রোজকার আড্ডা।হাজির থাকতেন বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি জগতের দুই দিকপাল,সুভাষ মুখোপাধ্যায় ও সত্যজিৎ রায়।এমনই এক আড্ডার সূত্রে সুভাষ মুখোপাধ্যায় সত্যজিৎ রায়কে প্রস্তাব দেন ' সন্দেশ ' পত্রিকাটি নতুন আঙ্গিকে প্রকাশের।' সন্দেশ ' পত্রিকার সূত্রেই সৃষ্টি হয় বাংলা সাহিত্য জগতের অন্যতম জনপ্রিয় চরিত্র প্রফেসর শঙ্কু।পরবর্তী সময়ে ফেলুদার সঙ্গে শঙ্কু চরিত্রটিও পাঠকমহলে যথেষ্ট সমাদৃত হয়। ১৯৬১ সাল নাগাদ অর্থ্যাৎ ১৩৬৮ বঙ্গাব্দের বৈশাখ মাসে প্রকাশিত হলো ' সন্দেশ ' পত্রিকার প্রথম সংখ্যা। ১৯৬১ সালেই প্রফেসর শঙ্কুর প্রথম আবির্ভাব ' ব্যোমযাত্রীর ডায়েরি' কাহিনীর মধ্য দিয়ে।শঙ্কু একাধারে বিজ্ঞানী আবার তার সঙ্গে অভিযাত্রী,গবেষক,উদ্ভাবক।শঙ্কু প্রায় বাহাত্তরটি আবিষ্কারের আবিষ্কর্তা,শুধু তাই নয় ঊনসত্তরটি ভাষায় শঙ্কু স্বচ্ছন্দ।শঙ্কুর আবিষ্কারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো 'অরনিথন' 'রিমেমব্রেন' ' শ্যাঙ্কোপ্লেন ' খিদে মেটানো বড়ি ' বটিকা ইন্ডিকা' 'আন্যাইনলিন পিস্তল ' ' লুমিনিম্যাক্স ' প্রভৃতি।' স্বপ্নদ্বীপ ' গল্প থেকে জানা যায় মাত্র পাঁচ বছর বয়সে বন্ধু ভুতোর সঙ্গে টিডলি উইংকস খেলতে খেলতে শঙ্কুর বৈজ্ঞানিক প্রতিভার প্রথম প্রকাশ ঘটে -
"সেদিন ভুতোর সঙ্গে খেলতে খেলতে হঠাৎ চাকতি লাফানোর বৈজ্ঞানিক কারণটা মাথায় এসে গেল,আর তার সঙ্গে সঙ্গেই বুঝে ফেললাম, ঠিক কোনখানটায় কতখানি জোরে চাপ দিলে চাকতি বাইরে না পড়ে ঠিক কৌটোর মধ্যে গিয়ে পড়বে।" তেরো বছর বয়সে শঙ্কুর মাথায় প্রথম পাকা চুল দেখা যায় ,সতেরো বছরে টাক পড়তে শুরু করে।একুশ বছরে শঙ্কুর মাথাজোড়া টাক।শঙ্কুর গবেষণাগার গিরিডিতে অবস্থিত।শঙ্কুর সঙ্গে থাকে তার পোষা বিড়াল নিউটন এবং চাকর প্রহ্লাদ। শঙ্কুর প্রতিবেশী অবিনাশবাবুর সঙ্গেও সত্যজিৎ পরিচয় করিয়েছিলেন পাঠকদের।শঙ্কু পৃথিবীবিখ্যাত বৈজ্ঞানিকদের মধ্যে অন্যতম। তিনি ছিলেন স্কটিশচার্চ কলেজের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক। শঙ্কু বারো বছর বয়সে ম্যাট্রিক এবং চোদ্দো বছর বয়সে আই এস সি পরীক্ষায় পাশ করেন। শঙ্কুর সম্পূর্ণ নাম ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু যিনি ব্রাজিলের রাটানটান ইনস্টিটিউট থেকে ডক্টরেট লাভ করেন এবং সুইডিশ অ্যাকাডেমি থেকে অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স সম্মানে ভূষিত হন।
সত্যজিৎ রায়। একাধারে সাহিত্য আবার অন্যদিকে সিনেমা,সংস্কৃতি জগতের দুই ক্ষেত্রকে সামলেছেন দক্ষ হাতে। তাঁর কলম থেকেই বাংলা পাঠক যেমন পেয়েছে ফেলুদা আর শঙ্কুকে আবার তিনিই ক্যামেরার পিছন থেকে তৈরি করেছেন পথের পাঁচালী,অশনি সংকেত,আগন্তুকের মতো কালজয়ী সব সিনেমা। ১৯৬৫ সালের ডিসেম্বর মাসে ' সন্দেশ ' পত্রিকায় ফেলুদা সিরিজের প্রথম গল্প ফেলুদার গোয়েন্দাগিরির প্রথমভাগ প্রকাশিত হয়।' ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি ' প্রকাশের ঠিক তিন বছর আগে ১৯৬১ সালে ' সন্দেশ ' পত্রিকার হাত ধরেই জন্ম নেয় ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু ওরফে প্রফেসর শঙ্কু।
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় চরিত্র ' শঙ্কু ' সৃষ্টির অনুপ্রেরণা কোথায় পেলেন মানিকবাবু? তথ্য বলছে, ' শঙ্কু ' চরিত্রটিকে সৃষ্টি করার কোনো আগাম পরিকল্পনা ছিল না সত্যজিতের। চরিত্রের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া দূরে থাক চরিত্রটির জন্য আলাদা করে কোনো শর্টনোট করেননি মানিকবাবু।তিনি বেশ কয়েকটি সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেছেন তাঁর চল্লিশতম জন্মবার্ষিকীতে যে শঙ্কুর জন্ম, তা ছিল নেহাত লেগপুল করার উদ্দেশ্যে। চরিত্রটি নিয়ে কোনো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাও ছিল না তাঁর।তবে একথাও অনস্বীকার্য সত্যজিতের হাতে শঙ্কুর জন্মের পিছনে তাঁর পূর্বপুরুষ সুকুমার ও উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর যথেষ্ট ভূমিকা ছিল। সুকুমার ও উপেন্দ্রকিশোর উভয়েরই বিজ্ঞানচর্চার অভ্যাস ছিল, তার নজির রয়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে।সম্ভবত এই দুজনের থেকেই বিজ্ঞানচর্চার অভ্যাসটি রপ্ত করেন সত্যজিৎ যার অনিবার্য ফলশ্রুতি শঙ্কু চরিত্রটি।বস্তুতপক্ষে শঙ্কুর পিছনে সুকুমার রায়ের ' হেঁসোরাম হুশিয়ারের ডায়রি ' র যে যথেষ্ট ভূমিকা ছিল তা নিঃসংকোচে বলা যেতে পারে। এরই পাশাপাশি নিধিরাম পাটকেলের ভূমিকার কথা অস্বীকার করা যায় না।শঙ্কুর একটি বিড়াল ছিল যার নাম নিউটন।এই আইডিয়াটিও একপ্রকার নিধিরাম পাটকেলের থেকেই ধার করা।
আগেই বলা হয়েছে সত্যজিৎ একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন শঙ্কু চরিত্রটিকে তিনি কখনোই সিরিয়াস করে তুলতে চাননি।
শঙ্কুর প্রথম দিকের কাহিনিগুলিতে সিরিয়াসনেসের যথেষ্ট অভাব আছে। এক্ষেত্রে ' হেঁসোরাম হুশিয়ার ' এর ভূমিকা সর্বাধিক। সালটা ১৯১২।স্যার আর্থার কোনান ডয়েল লিখে ফেললেন ' দ্যা লাস্ট ওয়ার্ল্ড।' যেখানে চ্যালেঞ্জার নামক চরিত্রটি প্রবল বদমেজাজি।' ব্যোমযাত্রীর ডায়েরি ' নামক কাহিনিতে শঙ্কু আমাদের কাছে ধরা দেন অনেকটা চ্যালেঞ্জারের আদলেই।অর্থ্যাৎ কোনান ডয়েল যে সত্যজিতের লেখায় কোনো একদিন ছাপ ফেলেছিলেন সে কথা বলাই বাহুল্য।আবার দিনলিপি তথা ডায়েরির ফর্মে শঙ্কুর আখ্যানগুলি যেভাবে আমাদের সামনে সেক্ষেত্রে প্রফেসর শঙ্কু চরিত্রটির উপর ' হেঁসোরাম হুশিয়ার ' - এর প্রভাব আরও বেশি করে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
শিল্পবিপ্লব পরবর্তী সময়ে কল্পবিজ্ঞানের উদ্ভব থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত তার পথচলার মধ্য দিয়ে একটি নিরবিচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া সংঘটিত হয়ে চলেছে।সমগ্র প্রক্রিয়াটি বিচার - বিশ্লেষণের পর কল্পবিজ্ঞান রচনার শর্ত হিসেবে বেশ কিছু বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া চলে -
১. কল্পবিজ্ঞানের গল্পে নাটকীয়তা বৃদ্ধির জন্য কিছু অলৌকিক ঘটনার আশ্রয় নেওয়া গেলেও তা যেন মূল বৈজ্ঞানিক থিমকে অস্বীকার না করে।
২. আজ পর্যন্ত যেসব তথ্য বা তত্ত্ব বৈজ্ঞানিক সত্য বলে প্রমাণিত তার থেকে নীচুমানের তথ্য বা তত্ত্বের অবতারণা করা যাবে না।
৩. বিজ্ঞান এখনও পর্যন্ত যা আবিষ্কার করতে পারেনি তেমন তথ্যের অবতারণা করা যেতে পারে,কিন্তু লক্ষ্য রাখতে হবে সেই তথ্য যেন সম্পূর্ণরূপে অবৈজ্ঞানিক না হয়ে যায়।
৪. বিজ্ঞানবিরোধিতাকে কোনো ভাবেই আমল দেওয়া বাঞ্ছনীয় নয়।এমন কোনো তথ্য বা তত্ত্বের অবতারণা করা যাবে না যা মানুষের কুসংস্কার,ধর্মান্ধতা, অলৌকিকতা,বিশ্বাস প্রভৃতিকে সমর্থন করে।
অথচ শঙ্কুর গল্প অনেক সময়েই কল্পবিজ্ঞানের শর্তগুলিকে খন্ডন করেছে শঙ্কুর কাহিনিগুলিকে সামগ্রিকভাবে কল্পবিজ্ঞান বিষয়ক বই বলা চলে না। লীলা মজুমদার হুমায়ূন আহমেদের মতো সাহিত্যিকরা শঙ্কু-কাহিনিগুলিকে সায়েন্স ফিকশন বলে মানতে চাননি। তাঁদের মতে শঙ্কুর কাহিনিগুলি আদতে 'সায়েন্স ফ্যান্টাসি।' আবার শঙ্কু সম্পর্কে 'নিউ ইয়র্ক টাইমস' পত্রিকায় জন গ্রস লেখেন - " প্রফেসর শঙ্কু কম আত্মবিশ্বাসী নয় বরং কম মজাদার ও স্বল্পবিকশিত চরিত্র।"
শঙ্কুকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় হাতেগোনা কয়েকটি গল্প ছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিজ্ঞানবোধ প্রতিফলিত হয়নি। এর মূলত দুটি কারণ খুঁজে পাওয়া যায়। সত্যজিৎ পূর্বপুরুষ উপেন্দ্রকিশোর ও সুকুমার রায়ের মতো নিজেকে প্রগাঢ় বিজ্ঞানচর্চায় নিয়োজিত করেননি।এর কারণ বোধহয় সত্যজিতের মুখ্য আগ্রহ ছিল সিনেমায়। আক সত্যজিৎ রায় বিভিন্ন সময় স্বীকার করেছেন শঙ্কু চরিত্রটিকে তিনি তৈরি করেছেন ঠাট্টা বা লেগপুল করার উদ্দেশ্যে।ফলে লেখক নিজেই বোধহয় চাননি শঙ্কু চরিত্রটিকে সিরিয়াস কল্পবিজ্ঞানের চরিত্র করে তুলতে। অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে বিচার - বিশ্লেষণ এবং সমালোচকদের মতামতগুলিকে কাটা - ছেঁড়া করার পর বলা চলে শঙ্কুর বইগুলি আদতে সায়েন্স ফিকশন নয়,সায়েন্স ফ্যান্টাসি।
তথ্যসূত্র :-
সত্যজিৎ রায়,' সাবাস প্রফেসর শঙ্কু '
বিশ্বজিৎ রায়, ' ত্রি.শঙ্কু ' ' আনন্দবাজার পত্রিকা '
মেহেদি হাসান,' সত্যজিৎ রায়ের অমর সৃষ্টি প্রোফেসর ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু ', রোর মিডিয়া
শুভেন্দু দাসমুন্সী, ' শঙ্কুর গল্প শুরুতে কি কল্পবিজ্ঞানের?', প্রহর
অরিত্র সোম, ' প্রচ্ছদ থেকে পোস্টার,সবেতেই তুখোড় সত্যজিৎ;বানিয়েছেন চারটি ইংরেজি ফন্টও', প্রহর
http://www.sachalayatan.com/bipro/17354
সত্যজিৎ রায়।' সাবাস প্রোফেসর শঙ্কু।' আনন্দ পাবলিশার্স।প্রথম প্রকাশ,ডিসেম্বর ১৯৭৪
সুকুমার রায়।' সুকুমার সমগ্র।' সপ্তম সং।কলকাতা, দেজ পাবলিশিং।জানুয়ারি ২০০০
বিশ্বজিৎ রায়।' ত্রি.শঙ্কু।' আনন্দবাজার পত্রিকা।
প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত।' শঙ্কু সম্বন্ধে যা কিছু জানতে চান।' আনন্দবাজার পত্রিকা।
পারমিতা সাহা।' বাবা যেখানে যেখানে যেতে পারেননি শঙ্কুকে সেখানে পাঠিয়েছিলেন।' সাক্ষাৎকার - সন্দীপ রায়।আনন্দবাজার পত্রিকা।
শুভেন্দু দাসমুন্সী।' শঙ্কুর গল্প শুরুতে কি কল্পবিজ্ঞানের?' প্রহর।
অরিত্র সোম।' প্রচ্ছদ থেকে পোস্টার,সবেতেই তুখোড় সত্যজিৎ;বানিয়েছেন চারটি ইংরেজি ফন্টও।' প্রহর।
মেহেদি হাসান।' সত্যজিৎ রায়ের অমর সৃষ্টি প্রোফেসর ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু।' প্রহর।
আনন্দবাজার, প্রথম আলো, বিকাশপিডিয়া