পরিণীতি চোপড়ার সঙ্গে গভীর প্রেমে আম আদমি পার্টির নেতা! কে এই রাঘব চাড্ডা?

Parineeti Chopra & Raghav Chadha: পরিণীতি এবং রাঘব লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সে একসঙ্গেই পড়াশোনা করেছেন এবং দীর্ঘদিন ধরেই তাঁরা বন্ধু ছিলেন।

রাজনীতি আর অভিনয়। নির্দ্বিধায় বলা যায়, দেশে ক্রীড়া বাদ দিয়ে সবচেয়ে বেশি তারকা তৈরি হয় এই দুই ক্ষেত্র থেকেই। তাই রাজনীতির মানুষ আর অভিনয় জগতের মানুষের মধ্যে চিরকালই সখ্য, প্রেম। সম্প্রতিই অভিনেত্রী স্বরা ভাস্কর আর সমাজবাদী পার্টির নেতা ফাহাদ আহমেদের প্রেম ও বিয়ে সেই চিরকালের সখ্য ফের প্রমাণ করেছে। সেই রেশ ধরেই হাজির হয়েছে দ্বিতীয় জুটি। বলিউড অভিনেত্রী পরিণীতি চোপড়া এবং আম আদমি পার্টির নেতা রাঘব চাড্ডার প্রেম এগোচ্ছে বিয়ের দিকেই। এতকাল বিষয়টার একেবারেই আঁচ পাওয়া যায়নি, পরিণীতি ব্যস্ত থেকেছেন অভিনয়ে আর রাঘব রাজনীতি ছেড়ে অন্য কিছুতেই মনোনিবেশ করেননি। সম্প্রতি রাঘব চাড্ডার সঙ্গে পরিণীতির ডেটিংয়ের খবর সামনে আসে, দু'জনকে একসঙ্গে দেখা যায় রেস্তোরাঁয়। রাঘবের সহকর্মী সঞ্জীব অরোরা খোলামেলাই পরিণীতি এবং রাঘবকে অভিনন্দনও জানিয়েছেন। বোঝাই যাচ্ছে, প্রচারে আগ্রহ নেই দু'জনেরই তবে প্রেমের শিকড় পৌঁছে গেছে ভালোবাসার জমির বহু গভীরে।

রাঘব চাড্ডা আসলে কে? কীভাবেই বা বলিউডের সঙ্গে জড়ালেন তিনি? নিজের প্রেম নিয়ে কোনওদিনই বিশেষ চর্চিত হননি রাঘব। তবে ইদানীং বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই প্রথম প্রথম এড়িয়ে গিয়েছেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে সাফ জানিয়েছেন, "দয়া করে আমাকে রাজনীতি সম্পর্কে প্রশ্ন করুন, পরিণীতি নয়।" আসলে বিষয়টি সাংবাদিকমহল হালেফিলে জানলেও রাঘব আর পরিণীতির আলাপের বয়স দীর্ঘ। পরিণীতি এবং রাঘব লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সে একসঙ্গেই পড়াশোনা করেছেন এবং দীর্ঘদিন ধরেই তাঁরা বন্ধু ছিলেন। ইন্সটাগ্রামেও একে অপরকে ফলো করেন তাঁরা।

রাঘব চাড্ডা আম আদমি পার্টির সর্বকনিষ্ঠ মুখপাত্র এবং আম আদমি পার্টির জাতীয় কার্যনির্বাহী সদস্য। ২০১৩ সালে আম আদমি পার্টির ইশতেহারের খসড়া তৈরির অন্যতম সদস্য ছিলেন রাঘব। জাতীয় কোষাধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব পালন করার পর, এখন দলের আইনি মামলার ইনচার্জের দায়িত্ব পেয়েছেন রাঘব। আম আদমি পার্টির এই নেতা বিশ্বাস করেন, তিনি রাজনীতিকে বেছে নেননি, রাজনীতিই তাঁকে বেছে নিয়েছে।

আরও পড়ুন- সিএএ বিরোধিতায় গিয়ে প্রেম, রাজনীতি-সিনেমাকে যেভাবে জুড়ল স্বরা ভাস্কর, ফাহাদ আহমেদের বিয়ে

১৯৮৮ সালের ১১ নভেম্বর রাঘবের জন্ম। নতুন দিল্লিতেই তাঁর বেড়ে ওঠা। দিল্লির মডার্ন স্কুল থেকে তার স্কুলের পাঠ চুকিয়ে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন তিনি। এরপর তিনি ভারতের চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস ইনস্টিটিউট থেকে চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সি পাশ করেন। তারপরই লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সে EMBA-এর সার্টিফিকেশন কোর্সের জন্য ভর্তি হন, এখানেই তাঁর আলাপ পরিণীতির সঙ্গে। কর্মজীবনের গোড়ার দিকে ডেলয়েট, শ্যাম মালপানি এবং গ্রান্ট থর্নটন সহ বিভিন্ন অ্যাকাউন্টেন্সি সংস্থার সঙ্গে কাজ করেন রাঘব।

২০১২ সালে AAP গঠনের পর থেকেই দলের সঙ্গে যুক্ত হন রাঘব চাড্ডা। ২০১১ সালে, রাঘব চাড্ডা ভারতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিদ্রোহে যোগদান করেন। সেই বছর আন্না হাজারের নেতৃত্বে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে AAP প্রতিষ্ঠাতা এবং আহ্বায়ক অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সঙ্গে দেখা করেছিলেন রাঘব। দিল্লি লোকপাল বিলের খসড়া তৈরিতে অংশ নিতে আগ্রহী ছিলেন রাঘব। তারপর থেকে রাঘব দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিভিন্ন কমিটির সদস্য হওয়া থেকে শুরু করে সংবাদ মাধ্যমে বিতর্ক করা- আম আদমি পার্টির 'স্মার্ট' তুর্কি রাঘব দলের বিশ্বস্ত নেতৃত্ব হয়ে উঠেছেন।

২০১৫ সালে যখন দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা সহ জেতে আম আদমি পার্টি, তখন মাত্র ২৬ বছর বয়সে রাঘব চাড্ডা AAP-এর জাতীয় কোষাধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। দিল্লিতে বিভিন্ন বিভাগে আপ সরকার নিযুক্ত নয়জন উপদেষ্টার মধ্যেই ছিলেন রাঘব চাড্ডা। ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার এই নয়টি নিয়োগ বাতিল করে। এখানে রাঘব চাড্ডার এক বিশেষ ভূমিকা শোরগোল ফেলে দেশ জুড়ে! রাঘব তাঁর পরিষেবার জন্য ক্ষতিপূরণ হিসাবে সরকার থেকে প্রাপ্ত আড়াই টাকা ফেরত দিয়েছিলেন।

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে দক্ষিণ দিল্লি আসনের আপ প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন রাঘব। বিজেপির রমেশ বিধুরির কাছে পরাজিত হন তিনি। যদিও সেবার নির্বাচনে আপের সমস্ত প্রার্থীদের মধ্যে রাঘব চাড্ডাই সর্বাধিক ভোট পেয়েছিলেন। ২০২০ সালের দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে, আপ তাঁকে রাজিন্দর নগর কেন্দ্রে প্রার্থী করে। ওই আসন থেকে তিনি জয়ী হয়েছিলেন। মোট ভোটের ৫৭.০৬% ভোটই পান রাঘব। নির্বাচনের পর, তিনি দিল্লি জল বোর্ডের ভাইস-চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন।

৩৩ বছর বয়সে সর্বকনিষ্ঠ সাংসদের রেকর্ড গড়েছেন রাঘব। তিনি রাজ্যসভায় অর্থ সংক্রান্ত সংসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসাবেও নিযুক্ত হন। এই কমিটি তিনটি কেন্দ্রীয় মন্ত্রক এবং নীতি-আয়োগ কর্তৃক প্রণীত আইন ও নীতির তত্ত্বাবধান করে।

অন্যদিকে, বলিউডে পরিণীতি প্রথম পা রাখেন ২০১১ সালে। লেডিস ভার্সেস রিকি বেহল সিনেমা দিয়ে বলিউডে অভিষেক হয় পরিণীতির। তাঁকে শেষ দেখা গিয়েছিল সুরজ বরজাতিয়ার সিনেমা উঁচাই-তে। তাঁর সঙ্গেই অভিনয়ে ছিলেন বোমান ইরানি, অমিতাভ বচ্চন, ড্যানি ডেনজংপা, অনুপম খের এবং সারিকা। ৮০-র দশকের পঞ্জাবি পপস্টার জুটি, অমর সিং চামকিলা এবং অমরজোৎ কৌরের বায়োপিক 'চমকিলা' সিনেমায় আগামীতে দেখা যাবে তাঁকে। ১৯৮৮ সালে মেহসামপুর গ্রামে এই দু'জনকেই হত্যা করা হয়। সিনেমাটির পরিচালনা করেছেন ইমতিয়াজ আলি এবং এতে অভিনয় করবেন দিলজিৎ দোসাঞ্জ। সম্প্রতিই এই সিনেমার শ্যুটিং সেরেছেন পরিণীতি।

More Articles