সাংসদ পদ কেড়ে নেওয়ার পর এবার ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ রাহুল গান্ধিকে?

Rahul Gandhi Bungalow: দলের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধি বঢ়রাকে ২০২০ সালের জুলাই মাসে তাঁর সরকারি লোধি এস্টেট বাংলোটি খালি করতে হয়েছিল।

আসন থেকে তো উৎখাত করা হয়েইছে। এবার ভিটে থেকেও উচ্ছেদ! সাংসদ হিসাবে অযোগ্য ঘোষণার পর থেকেই কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধির হাতছাড়া হয়েছে কেরলের ওয়ানাড় লোকসভা কেন্দ্রটি। এবার ২২ এপ্রিলের মধ্যে দিল্লির লুটিয়েন্সে তাঁর সরকারি বাংলো খালি করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সোমবার লোকসভা হাউজিং কমিটি রাহুল গান্ধিকে দেওয়া সরকারি বাংলো খালি করার জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। ২০০৪ সালে লোকসভা সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর রাহুল গান্ধির জন্য ১২, তুঘলক লেনের বাংলোটি বরাদ্দ করা হয়েছিল।

গত সপ্তাহে, লোকসভা সচিবালয় কংগ্রেস নেতা রাহুলকে সাংসদ হিসাবে অযোগ্য ঘোষণা করে। ২০১৯ সালের একটি ফৌজদারি মানহানির মামলায় সুরাটের এক আদালত রাহুলকে দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে। তার জেরেই ২৩ মার্চ থেকে রাহুল গান্ধির সাংসদ পদ খারিজ করে দেওয়া হয় ।

অবিলম্বে জামিন দিয়ে, আদালত প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতিকে উচ্চ আদালতে আপিল করার জন্য ৩০ দিনের সময় দিয়েছে। যদিও এখনও কংগ্রেসের তরফে আদালতে কোনও আপিলই দায়ের করা হয়নি। যদি উচ্চ আদালত তার সাজা স্থগিত না করে তাহলে রাহুল গান্ধি আগামী আট বছরের জন্য কোনও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। অন্যদিকে এই আইনি নিয়ম অনুযায়ী, অযোগ্য ঘোষণার আদেশের তারিখ থেকে, মানে ২৩ মার্চ থেকে এক মাসের মধ্যে সরকারি বাংলো খালি করতে হবে রাহুলকে।

আরও পড়ুন- রাহুল অতীত? এবার দেশে কংগ্রেসের মুখ কি প্রিয়াঙ্কা গান্ধিই?

ওয়ানাড়ে রাহুল গান্ধির কার্যালয় এখন নিস্তব্ধ। কালপেট্টা শহরে অবস্থিত প্রাক্তন এই সাংসদের কার্যালয়ে সব কাজই বন্ধ রয়েছে। রাহুল গান্ধির সাংসদ পদ খারিজ হয়ে যাওয়ার দরুণ তাঁর কার্যালয় জনগণের অভিযোগ বা অনুরোধ গ্রহণ করছে না।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, কংগ্রেসের এই বাংলো খালি করার ঘটনা নতুন নয়। দলের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধি বঢ়রাকে ২০২০ সালের জুলাই মাসে তাঁর সরকারি লোধি এস্টেট বাংলোটি খালি করতে হয়েছিল। প্রিয়াঙ্কা গান্ধির নিরাপত্তা বলয় কমিয়ে দেওয়ার পরে এই বাংলো পাওয়ার যোগ্য ছিলেন না প্রিয়াঙ্কা।

কংগ্রেস বলেছে, রাজনৈতিক ও আইনি পথে রাহুল গান্ধীর দোষী সাব্যস্ত হওয়া এবং অযোগ্য ঘোষণা করার বিরুদ্ধে লড়াই করবে দল। কিন্তু এসবের মাঝে খাঁড়া ঝুলছে অন্যত্র। জনপ্রতিনিধিত্ব আইন, ২০১৫-এর ধারা ১৫১এ অনুসারে, কোনও আসন শূন্য হয়ে গেলে সংসদ ও রাজ্য বিধানসভার শূন্য আসনের উপনির্বাচন হতে হবে ছয় মাসের মধ্যেই। আইনের ধারা ৮(৩) অনুসারে, একজন সাংসদ যখন দোষী সাব্যস্ত হন এবং কমপক্ষে দুই বছরের জন্য সাজাপ্রাপ্ত হন তখনই তাঁকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। ফলে ওয়ানাড় আসনে উপনির্বাচন হতেই হবে। কংগ্রেস কি এই একমাত্র আসনটি ধরে রাখতে পারবে আদৌ?

আরও পড়ুন- “আমার নাম সাভারকর নয়…”, সাংসদ পদ খারিজের পর সাংবাদিক বৈঠক, কী বললেন রাহুল গান্ধী?

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে উত্তর প্রদেশের আমেথি আসন কংগ্রেসের হাতছাড়া হয়। সেবার দু'টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন রাহুল। তাঁর দ্বিতীয় আসন ওয়ানাড় থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। ওই বছরেই, মানে ২০১৯ সালের এপ্রিলে সুরাট পশ্চিমের বিজেপি বিধায়ক এবং গুজরাতের প্রাক্তন মন্ত্রী পূর্ণেশ মোদির দায়ের করা একটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাহুল গান্ধির মন্তব্যের জন্য ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৯ এবং ৫০০-এর অধীনে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। ওয়ানাড়ের লোকসভা সাংসদ ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে কর্ণাটকের কোলারে একটি সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার সময় প্রশ্ন তুলেছিলেন, দেশের সব চোরের পদবি কেন মোদি!

পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনের জন্য আর বাকি মাত্র এক বছর। তা সত্ত্বেও, নির্বাচন কমিশনকে আগামী দিনে ওয়ানাড়ে নতুন করে উপনির্বাচন করতেই হবে কারণ, কোনও আসন ছয় মাসের বেশি খালি রাখা যাবে না। অন্যদিকে, উচ্চতর আদালত রাহুল গান্ধির সাজা বাতিল না করলে তিনি সম্ভবত আট বছরের জন্য আর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। এত কিছু সত্ত্বেও দোষী সাব্যস্ত হওয়ার বিরুদ্ধে কেন এখনও আপিল করেননি রাহুল? রাজনৈতিক সূত্র বলছে, কংগ্রেস এখনও দোষী সাব্যস্ত হওয়ার বিরুদ্ধে আদালতে আপিল দায়ের করতে পারেনি কারণ রাহুলের আইনি দল গুজরাতি ভাষা থেকে এই আদেশের অনুবাদ করছে, যাতে অনেকটা সময় লেগে যাচ্ছে।

More Articles