মুকেশ আম্বানির বাড়ির দিকে কেন আড়নজ‍র রতন টাটার?

Ratan Tata vs Mukesh Ambani: রতন টাটা বনাম মুকেশ আম্বানি! ঠিক কী ঘটেছিল?

ভারতে বিত্তবানদের মধ্যে শ্রদ্ধেয় এবং জনদরদি বলে যারা পরিচিত, তাদের মধ্যে প্রথম সারির নাম রতন টাটা। পেশায় ব্যবসায়ী হলেও তাঁর একটি নেশা হলো মানবকল্যাণ। নেশা না বলে বরং বলা যায় সাধারণ মানুষের উপকার করা তাঁর সাধনা। তাঁর জীবনধারনের রীতি থেকে তাঁর বক্তব্য- সবকিছুই বহু মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে। বেফাঁস মন্তব্য করা তাঁর স্বভাবের সঙ্গে ঠিক খাপ খায় না। সংযম তাঁর চরিত্রর একটা বড় গুণ। মানুষের জীবনধারণের মান উন্নত করার চেষ্টায় মগ্ন এই মানুষটির একটি সাক্ষাৎকার গত দশকে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। সেই আলোড়নের প্রভাব আজও মাঝেমধ্যেই আমরা নেটমাধ্যমে দেখতে পাই।

২০১১ সালে এক বিখ্যাত ইংরেজি দৈনিক রতন টাটার একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছিল। সেই সাক্ষাৎকারে রতন টাটাকে ভারতে অপর এক ধনকুবের মুকেশ আম্বানির ভবিষ্যতের বাসস্থান অ্যান্টিলা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল। সেই প্রশ্নের উত্তরে রতন টাটা বলেছিলেন,

আমি বুঝতে পারি না, মানুষ এমনটা কীভাবে করতে পারে? যাঁরা এই ধরনের বাড়িতে থাকেন, তাঁদের নিজের আশপাশে বসবাসকারী মানুষের আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে অবগত থাকা দরকার এবং সকলের আর্থিক, সামাজিক উন্নতির জন্য চিন্তা করা দরকার। যাঁদের কাছে প্রভূত পরিমাণ অর্থ রয়েছে, তাঁদের উচিত, নিজেদের অর্থের কিছুটা মানবকল্যাণে ব্যয় করা। এইভাবেই সমাজে পরিবর্তন আনা সম্ভব। যদি কারও কাছে প্রভূত অর্থ থাকে এবং সে সমাজের আর্থিক বৈষম্য দূর করার চেষ্টা না করে, শুধু মনেই ভাবে যে, দেশের আর্থিক বৈষম্য আপনা থেকেই দূর হয়ে যাবে, তাহলে তা সকলের দুর্ভাগ্য।

আরও পড়ুন: বদলে যাবে বৃদ্ধাশ্রমের মানে, রতন টাটা বুঝিয়ে দিলেন অন‍্য ধনকুবেরদের থেকে কতটা আলাদা তিনি

এই সাক্ষাৎকার প্রকাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। কিছু মানুষ রতন টাটার এই বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে তাঁর চিন্তাভাবনাকে কুর্নিশ জানিয়েছিল। বহু মানুষ বলেছিল, ভারতের মতো একটি তৃতীয় বিশ্বের দেশের ক্ষেত্রে একটি কথা খাটে, এখানে ধনী আরও ধনী হয়ে চলেছে এবং গরিব আরও গরিব হয়ে চলেছে। রতন টাটার মতো মানুষরাই সেই অবস্থার পরিবর্তন আনতে পারবেন। তাই এমন এক ভারতবাসীর জন্য দেশের মানুষের গর্ব অনুভব করা উচিত। রতন টাটার এই সাক্ষাৎকার আবার সকলে সমর্থনও করেনি। কিছু মানুষ বলেছিলেন যে, রতন টাটা আসলে মুকেশ আম্বানির প্রতি হিংসার বশবর্তী হয়ে এই বক্তব্য করেছেন। আবার কিছু মানুষ বলেছিলেন যে, রতন টাটা নিজে সাধারণ জীবনযাপন করেন, সেটা তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়। তাই ব্যবসা করে উপার্জিত অর্থে কেউ নিজের বাড়ি বানালে তাঁর সমালোচনা করা উচিত নয়। কারণ সেটাও তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়।

এই বিতর্ক দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ার আগেই তা প্রশমিত করতে আসরে নেমেছিল টাটা গোষ্ঠী। টাটা গোষ্ঠীর এক মুখপাত্র বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, ইংরেজি দৈনিকটির প্রকাশ করা রতন টাটার সাক্ষাৎকারে বিভিন্ন অসংগতি রয়েছে। টাটা গোষ্ঠীর শ্রদ্ধেয় চেয়ারম্যান কখনওই কোনও ব্যক্তি অথবা জায়গা উদ্ধৃত করে কোনও বক্তব্য রাখেননি। রতন টাটা কোনও ব্যক্তির ব্যক্তিগত সম্পত্তি নিয়েও কোনও বক্তব্য রাখেননি। 'প্রভূত অর্থ এবং সম্পত্তি' বলতে ভুল তথ্য পেশ করা হয়েছে। তারা দৈনিকটির দফতরে যোগাযোগ করে এই অসংগতিপূর্ণ সাক্ষাৎকার প্রকাশের কারণ অনুসন্ধান করার চেষ্টা করছে।

টাটা গোষ্ঠীর মুখপাত্রর এই বিবৃতির পরে টাটা অথবা আম্বানি, কোনও গোষ্ঠীর তরফেই এই সাক্ষাৎকার সম্পর্কে নতুন কোনও বিবৃতি প্রকাশ করা হয়নি। যদিও সাধারণ মানুষের মনে হয়তো এই একটা সাক্ষাৎকার রং চড়িয়ে সিনেমার রূপ ধরেছিল। সেই সিনেমার নায়ক যেন রতন টাটা। তিনি সাধারণ মানুষের কাছে অনুপ্রেরণার জীবন্ত রূপ। বহু মানুষের উপকার করে তিনি মানুষের কাছে শিল্পপতির থেকে জনদরদি হিসেবে বেশি সম্মান পেয়ে চলেছেন। টাটা গোষ্ঠীর এত বড় ব্যবসা এবং সেই ব্যবসার এত আয় সত্ত্বেও কেন রতন টাটা ভারতের সবথেকে ধনী ব্যক্তি হতে পারেননি, সেই সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য এবং তার বিশ্লেষণ বিনামূল্যে নেটমাধ্যমে পাওয়া যায়। কিন্তু যাকে নিয়ে এত হইচই? ৮৪ বছর পর আজও তিনি মানুষের কল্যাণে বিভিন্ন কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখার চেষ্টা করছেন।

More Articles