ইঁদুরের উচ্ছিষ্ট খাবারই প্রসাদ এখানে! কোন রহস্য লুকিয়ে আছে রাজস্থানের এই মন্দিরে
Rajasthan Karni Temple : জানেন কেন খোদ দেবতার আসনে বসিয়ে পুজো করা হয় ইঁদুরদের? কী এমন রহস্য লুকিয়ে আছে রাজস্থানের করনি মাতা মন্দিরের নেপথ্যে?
যেখানে বাড়িতে হঠাৎ একটা ইঁদুর দেখলেও আমাদের কপালে হাত পড়ে, সেখানে একটা দুটো নয়, গোটা মন্দির জুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে হাজার হাজার ইঁদুর। অথচ কেউ কিছুই বলার নেই! এখানেই যেন তাদের নিশ্চিন্ত বাস। কোনও বাহন নয় আসলে এখানে খোদ দেবতার আসনে বসিয়েই পুজো করা হয় ইঁদুরদের। এখানে হাজার হাজার ধূসর বাদামি ইঁদুরের মধ্যে রয়েছে বেশ কিছু সাদা রঙের ইঁদুরও। মনে করা হয়, কেউ যদি মন্দিরে এসে কোনওক্রমে সাদা ইঁদুর চাক্ষুষ করেন তবে তিনি সৌভাগ্যের অধিকারী। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি, ভারতেই রয়েছে এমন আজব মন্দিরের হদিশ। জানেন কোথায়?
রাজস্থানের বিকানের শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটারের পথ। মন্দিরের নাম করনি মাতা মন্দির। পুরাণ মতে, দেবী দূর্গারই এক বিশেষ রূপ হলেন এই করনি মাতা। আমরা জানি, এই বাংলায় দেবী দুর্গার যে পারিবারিক রূপের বন্দনা করা হয় তাতে গণেশের বহন হিসেবে লক্ষ্য করা যায় এই নিরীহ পশুটিকে। যদিও ঠিক কতটা নিরীহ বলা যুক্তিযুক্ত তা যথেষ্ট আলোচনা সাপেক্ষ। গৃহস্থ বাড়িতে ঢুকে নিমেষের মধ্যে যখন সব কেটেকুটে তছনছ করে দেয় তখন আর মোটেই বিশেষ নিরীহ ভাবা যায় না এদের! কিন্তু দেবীর পুজোর সঙ্গে কীভাবে জড়িয়ে গেল এই ছোট্ট পশুটি তার পিছনে রয়েছে অন্য রহস্য।
আরও পড়ুন - জলের ওপর ভাসছে পাথর! কীভাবে সম্ভব? যে রহস্য লুকিয়ে রয়েছে তামিলনাড়ুর মন্দিরে
বাজার চলতি ইঁদুর মারার ওষুধের সঙ্গে বেজায় মন্দার সম্পর্ক এ মন্দিরের। এখানে কোনও ইঁদুরদের ক্ষতি করা হয় না, কারণ এই মন্দিরে ইঁদুরকে দেবতা জ্ঞানে পুজো করা হয়। কথিত আছে, দেবী দুর্গার অপর রূপ করনি মাতার ছেলে লক্ষণ একবার কপিল নদীতে স্নান করতে গিয়ে জলে ডুবে মারা যান। করনি তখন যমরাজের কাছে তাঁর ছেলে প্রাণভিক্ষা চান কিন্তু যমরাজ তার ছেলেকে ফিরিয়ে না দিয়ে নাকি তাঁর সমস্ত সন্তানকে ইঁদুর বানিয়ে দেয়। যদিও এইসমস্ত পুরনো মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা রহস্য নিয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মতভেদ লক্ষ্য করা যায়, রাজস্থানের করনি মাতা মন্দিরও তার ব্যতিক্রম নয়। এ বিষয়ে প্রচলিত ভিন্ন একটি মত হল, বেশ কিছু বছর আগে অনেক সেনা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে প্রাণভয় আশ্রয় নিয়েছিল এই স্থানে। তখন করনি মাতা নাকি তাদেরকে রক্ষা করতে ইঁদুরে পরিণত করে দেয়। সেই থেকেই এখানে ইঁদুরকে কেউ হত্যা করে না বরং খাবার, জল দিয়ে দেবতা জ্ঞানে পুজো করেন।
এই শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে আরও একটি বিশ্বাস প্রোথিত আছে। মনে করা হয় মৃত্যুর পর সকলেই নাকি এই মন্দিরে ইঁদুর রূপে জন্মলাভ করে। বর্তমানে মন্দিরে রয়েছে প্রায় ২০ থেকে ৩০ হাজারের কাছাকাছি ইঁদুর, যাদের মধ্যে অবশ্য কালো ইঁদুরই সংখ্যায় বেশি। তবে অল্প কিছু সাদা ইঁদুরও রয়েছে। এই সাদা ইঁদুরগুলিকে মনে করা হয় অত্যন্ত পবিত্র। এখানেই শেষ নয়, ভক্তির দৌড় যে ঠিক কতটা তার প্রমাণ মেলে প্রচলিত একটি প্রথায়। দুর্ঘটনার ফলে যদি মন্দিরের কোনও ইঁদুর মারা যায়, তাহলে সোনা বা রুপো দিয়ে নতুন ইঁদুর তৈরি করে দেওয়ার রেওয়াজ আছে এখানে।
বাইরে থেকে দেখতে খুবই সুন্দর এই মন্দিরটি। স্থাপত্য এবং অলংকরণ এর দিকে তাকালে রীতিমতো তাক লেগে যায়। প্রতিদিন ভোর চারটের সময় খুলে দেওয়া হয় রাজস্থানের এই বিশেষ মন্দিরের দরজা। সারাদিন এখানে অগণিত ভক্তের ভিড় উপচে পড়েন দরজা বন্ধ হয় সেই রাত দশটায়। দুধ তো বটেই তা ছাড়াও নাড়ু ও মিষ্টি ভোগ হিসেবে খেতে দেওয়া হয় মন্দিরের ইঁদুরদের। এমনকী ইঁদুরের উচ্ছিষ্ট খাবার প্রসাদ হিসেবে পাওয়ার জন্য বিশাল লাইনও পড়ে। বিশ্বাসের জোরে অসম্ভবও সম্ভব হয় নিমেষে।