দেখতে এসেছিলেন খোদ বঙ্কিম, ইতিহাস বুকে আজও দাঁড়িয়ে বারুইপুরের রায়চৌধুরীদের দুর্গাপুজো
Durga Puja 2024: রায়চৌধুরী বাড়ির পুজোরও রয়েছে বেশ কিছু নিয়মকানুন। যা আজও মেনে চলেন পরিবারের মানুষ।
দুর্গাপুজো। বাঙালির প্রাণের উৎসব। সেই প্রাণের উৎসবে যেমন বড় বড় পুজো প্যান্ডেলের ভিড় রয়েছে, তেমনই রয়েছে এ রাজ্যের, জেলার বিভিন্ন সাবেক বনেদি বাড়ির পুজোগুলিও। যাদের পুজো ঘিরে জাঁকজমক, নিয়মকানুন আজও দেখার মতোই।
একাকালে ছিল সুবিশাল জমিদারি। শোনা যায়, ব্রিটিশ শাসক লর্ড কর্নওয়ালিসের আমলে জমিদারির পত্তন হয় রায়চৌধুরীদের। দেখতে দেখতে সেই জমিদারবাড়ির বয়স পেরিয়েছে প্রায় ৩০০ বছর। পুজোও কিছু কম পুরনো নয়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরের রায়চৌধুরী বাড়ির পুজো আজও জেলার অন্যতম পুরনো পুজোগুলোর একটি। সেই কবেকার পুজো, এখন জমিদারি না থাকলেও, তিনশো বছরের পুজো আজও অমলিন নিজস্ব জৌলুস নিয়েই।
রায়চৌধুরী বাড়ির পুজোরও রয়েছে বেশ কিছু নিয়মকানুন। যা আজও মেনে চলেন পরিবারের মানুষ। তিনশো বছর ধরে তা পালন হয়ে আসছে আস্থাভরে। দেবীর আগমনে কোনওরকম খামতি রাখার চল নেই এই পুজোয়। সমস্ত রীতিনীতি মেনেই আয়োজন হয় পুজোর। রায়চৌধুরী পরিবারের সদস্য অমিয়কৃষ্ণ রায়চৌধুরী জানালেন, জমিদারি চলে গেলেও নিয়ম রীতি একই আছে। মহালয়ার পরের দিন প্রতিপদ থেকে পুজো শুরু হয় দুর্গাদালানে। তিনজন ব্রাহ্মণ চণ্ডীপাঠ করেন। দু’মন চালের নৈবেদ্য হয়। সপ্তমী থেকে নবমী ছাগ বলি দেওয়ার প্রথা। এরপর আখ ও কুমড়ো বলিও দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: রক্তবর্ণা দেবী, বিশালাকার অসুর! কোচবিহারের বড়দেবীর পুজোর ইতিহাস চমকে দেবে
দশমী ঘিরে দেদার আয়োজন রায়চৌধুরী বাড়ির পুজোয়। পুজোপর্ব সারা হলে চলে বরণপর্ব। দশমীতে পরিবারের মহিলারা সিঁদুর খেলেন। তা দেখতে ভিড় জমে। তারপর ৪০ বাহক কাঁধে করে প্রতিমা নিয়ে যান সদাব্রত ঘাটে। যাওয়ার পথে রুপোর পাখা-চামর দুলিয়ে, ছাতায় ঢেকে দুর্গাকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেসময় রুপোর ঝাড়ু দিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করার প্রথা রয়েছে এই পুজোয়। প্রথা অনুযায়ী, বারুইপুরের রায়চৌধুরী বাড়ির প্রতিমা নিরঞ্জন হলে তবেই এলাকার বাকি প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হবে। এককালে দশমীতে মায়ের বিসর্জনের পর নীলকণ্ঠ পাখি উড়িয়ে দেওয়ার চল ছিল। সেই নীলকণ্ঠ পাখি উড়ে উড়ে কৈলাসে গিয়ে মহাদেবকে দেবীর ফেরার খবর জানিয়ে আসত।
সরকারি ভাবে এই নীলকণ্ঠ পাখি ধরা ও দুর্গা পুজোর বিসর্জনের পরে তা ওড়ানো নিষিদ্ধ হলেও রায়চৌধুরী বাড়িতে সেই প্রথা চলছে আজও। পুরনো বিশ্বাসের উপর ভরসা রেখেই দেবী বিসর্জনের পর বারুইপুরের আদি গঙ্গার সদাব্রত ঘাট থেকে নীলকণ্ঠ পাখি উড়িয়ে আসছেন রায়চৌধুরীরা। সেই রীতি-ঐতিহ্য নষ্ট হয়নি আজও। অমিয়বাবু তেমনটাই জানালেন ।
আরও পড়ুন:সিংহ নয়, কেন উত্তর কলকাতার এই পুজোয় দুর্গা ব্যাঘ্রবাহিনী?
শোনা যায়, বারুইপুরের ম্যাজিস্ট্রেট থাকাকালীন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এ বাড়ির পুজো দেখতে এসেছিলেন। এই পরিবারের রাজবল্লভ রায়চৌধুরী দুর্গার পুজো শুরু করেছিলেন। বারুইপুরের রাসমাঠে আরম্ভ হয় পুজোর। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবার ছোট হয়েছে। পরিবারের অনেক সদস্যই আজ দেশ-বিদেশে থাকেন। তবে যে যেখানেই থাকুন না কেন, দুর্গাপুজোর সময়ে একত্র হন গোটা পরিবার। বারুইপুরের বাসিন্দারাও ভিড় করে আসেন। দর্শনার্থীরা ঠাকুর দর্শন করার পাশাপাশি ভোগ খেতেও জড়ো হন। সব মিলিয়ে এই সাবেকি রায়চৌধুরী বাড়ির দুর্গাপুজো যেন আজও নিজস্ব ঐতিহ্য কাঁধে নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে বারুইপুরের এক অনন্য পুজোর নজির হয়ে।