জলের ওপর ভাসছে পাথর! কীভাবে সম্ভব? যে রহস্য লুকিয়ে রয়েছে তামিলনাড়ুর মন্দিরে

Floating stones in two tamilnadu temples : ভাসমান পাথর দেখতে ভিড় তামিলনাড়ুর দুই মন্দিরে, শুধুই কি মিথ নাকি কোনও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও রয়েছে এর পিছনে?

ভক্ত এবং ভক্তি একযোগে থাকলেই ভগবানের বাস পাকা হয়। তাছাড়া ভারতে আজও ধর্ম আঁকড়ে বেছে থাকা মানুষের পাল্লাটা বেশ ভারী। আর তাতে যদি যোগ হয় কোনও পৌরাণিক কাহিনী অথবা অলৌকিক মাহাত্ম্যের বর্ণনা তাহলে তো কোনও কথাই নেই। বিশ্বাসের দৌড়ে স্বর্গে পাড়ি দেওয়াও কিছু অসম্ভব নয়। এই দেশেই রয়েছে এমন একটি জায়গা যেখানকার অলৌকিক পাথরের ক্ষমতা জানলে তাজ্জব হবেন আপনিও।

আস্ত পাথর, রীতিমতো ভারী, তবু কিনা ভাসছে জলের ওপর! এও কি সম্ভব! আপাত দৃষ্টিতে বিষয়টি ভাঁওতা মনে হতে পারে যে কারোর, তবে এমন ঘটনা ঘটে ভারতের তামিনাড়ু প্রদেশে। হিন্দুদের জন্য অন্যতম পবিত্র স্থান বলে পরিচিত তামিলনাড়ুর রামেশ্বরম। হিন্দু পূরণে একে বিখ্যাত চার ধাম তীর্থযাত্রার অন্যতম বলে বর্ণনা করা হয়েছে। পামবান দ্বীপে অবস্থিত এই রামেশ্বরম জড়িয়ে রয়েছে খোদ রামায়ণ মহাকাব্যের সঙ্গে। বিশ্বাস করা হয় যে ভগবান রাম তাঁর স্ত্রী সীতাকে রাবণের হাত থেকে উদ্ধার করার জন্য এখান থেকে শ্রীলঙ্কায় একটি সেতু নির্মাণ করেছিলেন।

আজও রামায়ণের সেই চরিত্র, সেই কাহিনী পরতে পরতে টিকে রয়েছে তামিলনাড়ুর। আর এই শহরেরই সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হল এলাকার দুটি মন্দিরের দুটি ভাসমান পাথর। তবে কি গোটা ঘটনার সবটাই কোনও অলৌকিক কাহিনীর বেড়াজালে আবদ্ধ, যার তল পাওয়া কার্যত অসম্ভব। নাকি এর পিছনেও লুকিয়ে রয়েছে কোনও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা?

আরও পড়ুন - কোনও বিগ্রহ নয় এখানে আরাধ্য হল বিড়াল! জানেন কোথায় রয়েছে এমন আজব মন্দির?

রামানাথপুরম জেলার মান্নার উপসাগরের জলে বাস করে প্রচুর সংখ্যক বিরল প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী। সমুদ্রের এই প্রবাল প্রাচীরগুলি সাগর দ্বারা বেষ্টিত রামেশ্বরম দ্বীপের এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। তাই বলা হয় যে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় বড় কোনও ক্ষয় ক্ষতির হাত থেকেও এগুলিই বাঁচায়। আসলে এখনকার যে ভাসমান পাথরগুলোর কথা বলা হচ্ছে, যা নিয়ে এত রহস্য সেগুলি এই জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর অংশ। জলে ভাসমান এই পাথরগুলি এক ধরনের প্রবাল যা পাইপ প্রবাল নামে পরিচিত।

দেখতে বা ওজনে পাথর মনে হলেও আসলে এগুলো পাথর সদৃশ প্রবাল। তাই এগুলিতে ছোট পাইপের মতো ছিদ্র থাকে। যে ছিদ্রগুলো ভেসে থাকতে সহায়তা করে। বর্তমানে এই পাথর দুটির একটি রামেশ্বরম লেচুমানান থেরথামের কাছে পঞ্চমুখী হনুমান মন্দিরে এবং অন্যটি ধনুশকোডিতে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পুরনো রেলওয়ে স্টেশনের বিপরীতে রাজাকালিয়াম্মান মন্দিরে রাখা রয়েছে। এই দুটি আপাত অলৌকিক পাথরকে ঘিরে পর্যটকদের মধ্যেও উত্তেজনা তুঙ্গে। অগুণতি ভক্তরা এই দুটি মন্দির দেখতে এবং ভাসমান পাথর দেখতে ভিড় করেন প্রতিদিন। এখানেই শেষ নয়, কথিত আছে, যেহেতু এই পাথরগুলো জলে ভেসে থাকতে পারে তাই ভগবান রাম এগুলি দিয়েই নাকি সেতু নির্মাণ করেছিলেন। একে রহস্যের রেশ তার সঙ্গে আবার পৌরাণিক প্রসঙ্গ, ফলে তামিলনাড়ুর অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে এই দুই মন্দির।

More Articles