টানা ১৬ বছর না জল, না খাবার! সন্তানের জন্ম দিয়েও বহাল তবিয়তে বেঁচে মহিলা
No Food No Water: না কোনও অনশন বা বিদ্রোহ, কোনওটাই নয়। শুধুমাত্র খেতে ভালো লাগে না বলেই খাবারদাবারের থেকে মুখ ফিরিয়েছেন মুলুওয়ার্ক।
অন্ন, জল যে কোনও জীবের বেঁচে থাকার মৌলিক শর্ত। তবে সেই সব ছকে বাঁধা জীবন যাপনের শর্তকে ফুৎকারে উড়িয়ে একটানা ষোলো বছর অন্নজল ছাড়া বেঁচে রয়েছেন মহিলা। অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন গল্পকথা! ইথিওপিয়ার মেয়ে মুলুওয়ার্ক অ্যামবওয়ের সঙ্গে দেখা হওয়ার আগে অবশ্য তেমনটাই ভাবত গোটা বিশ্ব। কিন্তু ভুল ভাঙল মুলুওয়ার্কের জীবন সামনে আসার পর। মুলুওয়ার্ক নিজেই দাবি করেছেন, টানা ষোলো বছর খাবার, জল কিচ্ছুটি না খেয়ে দিব্যি বহাল তবিয়তে রয়েছেন তিনি।
দেখতে দেখতে বছর ছাব্বিশ। শেষ খাবার তিনি খেয়েছিলেন প্রায় ষোলো বছর আগে। যখন তিনি মাত্র দশ। না কোনও অনশন বা বিদ্রোহ, কোনওটাই নয়। শুধুমাত্র খেতে ভালো লাগে না বলেই খাবারদাবারের থেকে মুখ ফিরিয়েছেন মুলুওয়ার্ক। শেষ খেয়েছিলেন মুসুরডালের স্যুপ। সে কথা আজও মনে আছে তাঁর। তবে নিজে খান না বলে রাঁধেন-বাড়েন না তিনি, তা বললে কিন্তু ভুল হবে। পরিবারের জন্য নিয়মিত রান্নাবান্না করেন মুলুওয়ার্ক। তবে সে সব নিজে খান না কিছুই। এমনকী ছোঁন না এক বিন্দুও জল।
আরও পড়ুন: ঘুমোতে দেয় না যুদ্ধের স্মৃতি, বিরল রোগে দীর্ঘ ৬০ বছর একটানা জেগে ভিয়েতনামের বৃদ্ধ
কীভাবে এতগুলো বছর জল-খাবার ছাড়া বেছে রয়েছেন বছর ছাব্বিশের এই কন্যা, তা যেন বিস্ময় গোটা পৃথিবীর চিকিৎসাবিজ্ঞানের কাছে। ভারত থেকে শুরু করে কাতার, দুবাই— কত দেশের ডাক্তাররাই তো তাঁকে খুঁটিয়ে দেখলেন। পরীক্ষাও করলেন নানাবিধ। তবে খাবার-জল না খেয়ে বহাল তবিয়তে বেঁচে থাকার রহস্যখানা উদ্ঘাটন হল না কিছুতেই। তাঁর শরীরে কোনও অস্বাভাবিকতা খুঁজে পাননি চিকিৎসকেরা। এত বছর ধরে অন্ন-জল গ্রহণ না করা সত্ত্বেও দিব্যি রয়েছে তাঁর শরীর।
সম্প্রতি গিনেস রেকর্ডধারী এক ইউটিউবার গিয়েছিলেন মুলুওয়ার্কের কাছে। সাক্ষাৎকার নেন ছাব্বিশের এই আশ্চর্য কন্যার। তাঁকে মুলুওয়ার্ক জানান, পরিবারের সঙ্গেই বরাবর থেকেছেন তিনি। ছোটবেলায় স্কুলে যাওয়ার আগে মা জিজ্ঞেস করতেন, সে খাবার খেয়েছে কিনা। বিনা সংকোচে সে প্রশ্নের উত্তরে হ্য়াঁ বলে স্কুলে চলে যেতেন মুলুওয়ার্ক। কিন্তু খেতেন না কিছুই। এই ভাবে চলতে চলতে একদিন খাওয়াদাওয়ার সমস্ত ইচ্ছাই হারিয়ে ফেলেন মুলুওয়ার্ক। তার পর থেকে না খেয়েই আছেন। এবং ভালো আছেন।
সবথেকে আশ্চর্যের কথা, না খেয়ে না দেয়েই সুস্থ সবলের সন্তানের জন্ম পর্যন্ত দিয়েছেন মুলুওয়ার্ক। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর তাঁকে চিকিৎসকের নির্দেশে গ্লুকোজ দেওয়া হত শুধু যাতে প্রাকৃতিক শক্তিটুকু শরীরে ধরে রাখা যায়। ব্যাস ওটুকুই। আর কিছু খাওয়াদাওয়া করেননি মুলুওয়ার্ক। তবে সন্তানকে স্তন্যপান করাতে পারেননি তিনি। কারণ তার জন্য তাঁর শরীরে দুধ তৈরি হয়নি একেবারেই। বাইরে থেকে কৃত্রিম দুধ দিয়েই সন্তানকে বড় করতে হয়েছে তাঁকে।
আরও পড়ুন:প্রফেসর শঙ্কুর আবিষ্কার বাস্তব! যেভাবে খিদে না পাওয়ার আশ্চর্য ক্যাপসুল তৈরি করলেন বিজ্ঞানীরা
সেইটুকু রসে বঞ্চিত হয়েও মুলুওয়ার্ক যে অবিশ্বাস্য কাণ্ড করে দেখিয়েছেন, তাতে হতবাক বিশ্বের মেডিক্যাল বিজ্ঞান। একদিন থেকে বড়জোর দু'দিন। অনেক কষ্টে খাবার দাবার না খেয়ে সুস্থ অবস্থায় বেঁচে থাকতে পারবেন স্বাভাবিক মানুষ। তার পরে তাঁর অসুস্থ হয়ে পড়া বাধ্যতামূলক। এমনকী যাঁরা অনশন করেন, তাঁরাও নির্দিষ্ট কিছু খাবার, ওষুধ, ফুড সাপ্লিমেন্ট খেয়েই অনশন করেন। সেখানে মুলুওয়ার্ক যেন পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য। ইতিমধ্যেই তাঁকে নিয়ে গবেষণা শুরু হয়ে গিয়েছে বিজ্ঞানীদের নানা মহলে। কীভাবে খাবার বা জল না খেয়েই বছরের পর বছর ধরে দিব্যি বেঁচেবর্তে রয়েছেন, সন্তানের জন্ম দিয়েছেন, তা নিঃসন্দেহে পৃথিবীর ইতিহাসে আশ্চর্যতম ঘটনা।