মিশর নয়! ২৫,০০০ বছর ধরে এই পাহাড়ের মধ্যে লুকিয়ে রাখা হয়েছে বিশ্বের প্রাচীনতম পিরামিড?
World’s Oldest Pyramid: যাকে এতকাল পাহাড় ভাবা হতো, তা কয়েক সহস্রাব্দে মানুষের হাতে নির্মিত পিরামিড!
মিশর মানেই রহস্য। যুগ যুগ ধরে মমি, পিরামিড, শিয়াল দেবতা, দুর্বোধ্য সংকেত মিলিয়ে মিশিয়ে মিশর সম্পর্কে এই ধারণা, কৌতূহল হওয়া অস্বাভাবিকও না। তবে আপনি যদি মনে করেন যে মিশর বা দক্ষিণ আমেরিকার প্রাচীন বাসিন্দারাই প্রথম পিরামিড তৈরি করেছিলেন তবে মনে হয় খুব নিশ্চিত হওয়া যাবে না। নতুন এক গবেষণা বলছে প্রাচীনতম মানবসৃষ্ট শঙ্কু আকৃতির স্মৃতিস্তম্ভ অর্থাৎ পিরামিড হয়তো আজ থেকে ২৫,০০০ বছর আগে ইন্দোনেশিয়ায় নির্মিত হয়েছিল। গুনুং পাডাং নামে পরিচিত এই জায়গাটিকে অবশ্য এতকাল পিরামিড বলে জানতেনই না কেউ! সবাই ভাবতেন এ এক পাহাড়। পরে দীর্ঘ দীর্ঘ গবেষণা করে জানা যায়, আসলে যাকে এতকাল পাহাড় ভাবা হতো, তা কয়েক সহস্রাব্দ ধরে মানুষের হাতে নির্মিত পিরামিড!
পশ্চিম জাভা প্রদেশের সিয়ানজুর জেলায় অবস্থিত গুনুং পাডাং আসলে একটি মেগালিথিক কমপ্লেক্স। অসম্ভব সুন্দর দেখতে একটি পাহাড়ের উপরে তা অবস্থিত। ২০১৮ সালে প্রত্নতাত্ত্বিকরা প্রথম জানান, সমগ্র পাহাড়টি কৃত্রিম হতে পারে। গুনুং পাডাং শব্দের অর্থ 'আলোকিত পর্বত'। প্রত্নতত্ত্ববিদরা বলেন, বাইরে যতটুকু পাথুরে কাঠামো দেখা যাচ্ছে, এটি আসলে তার চেয়েও অনেক বেশি এলাকা জুড়ে রয়েছে।
গবেষকরা ২০১১ থেকে ২০১৪ সাল অবধি, তিন বছর ধরে এই জায়গাটির সমীক্ষা করেন। অনেক বিশেষজ্ঞই অবশ্য প্রাথমিকভাবে পিরামিড তত্ত্বে বিশ্বাস করেননি। তবে এখন গবেষকরা তাদের তদন্তের একটি বিশদ বিবরণ প্রকাশ করেছেন, দৃঢ় প্রমাণসহ। বিশ্বের প্রাচীনতম পিরামিড হিসেবে গুনুং পাডাং-কেই মনে করছেন তারা।
এই পাথুরে কাঠামোর জৈব মাটির রেডিওকার্বন ডেটিং করিয়ে হাজার হাজার বছর আগের একাধিক নির্মাণ পর্যায়ের কথা জানা যাচ্ছে। এই পিরামিড নির্মাণের প্রাথমিক পর্যায়টি নাকি শুরু হয় প্যালিওলিথিক যুগে। গবেষণায় গবেষকরা দৃঢ়ভাবে বলছেন গুনুং পাডাং কোনও প্রাকৃতিক পাহাড় নয়, এটি পিরামিডের মতোই এক নির্মাণ।
আরও পড়ুন- দেহ কেটে ৪২ টুকরো! মিশরের রহস্যময় শিয়াল দেবতার সঙ্গে জড়িয়ে আছে যে ভয়াবহ গল্প!
ইলেক্ট্রিক্যাল রেজিস্টিভিটি টোমোগ্রাফি (ইআরটি), গ্রাউন্ড-পেনিট্রেটিং রাডার (জিপিআর) এবং সিসমিক টমোগ্রাফি (এসটি) সহ বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে গবেষকরা পাহাড়ের অভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্যগুলির পাশাপাশি এর নির্মাণের কালানুক্রমিক চিত্র তৈরি করেছেন। সাতটি ভিন্ন পয়েন্টে মূল ড্রিলিং থেকে জানা গেছে, পিরামিডটি হাজার হাজার বছর ধরে চারটি স্বতন্ত্র পর্যায়ে নির্মিত হয়েছিল।
২০ থেকে ৩০ মিটার উচ্চতার অংশটিকে গবেষকরা ইউনিট ৪ বলছেন। পাহাড়ের গভীরে রয়েছে এই অংশ। এই প্রাথমিক পর্যায়টি সম্ভবত প্রাকৃতিক লাভা উদগীরণে ফলে তৈরি। ২৫,০০০ থেকে ১৪,০০০ বছর আগে এই অংশে খোদাই শুরু হয়েছিল।
ইউনিট ৩ হচ্ছে স্তম্ভাকার শিলা দিয়ে গঠিত। খ্রিস্টপূর্বাব্দ ৭৯০০ থেকে ৬১০০ সালের মধ্যে নির্মিত হয়েছিল এই অংশ। আনুমানিক আরও এক হাজার বছর পরে, ৬০০০ থেকে ৫৫০০ খ্রিস্টপূর্বাদে গুনুং পাডাং-এর ইউনিট ২ তৈরি হও শুরু হিয়। তারপর ২০০০ থেকে ১১০০ খ্রিস্টপূর্বাদে চূড়ান্ত অংশ বা ইউনিট ১ তৈরি হয়।
গবেষকদের দলটি এই পাহাড়ের মধ্যে লুকানো গহ্বর বা চেম্বারের প্রমাণও খুঁজে পেয়েছে। তবে আরও গভীর ও বিশদ অন্বেষণ চলছে। গবেষকরা বলছেন, ইচ্ছাকৃতভাবেই সম্ভবত সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে বা এই পাহাড়ের আসল পরিচয় গোপন করে রাখা হয়েছে। ইতিহাস বলে, অত্যাধুনিক নির্মাণ কৌশলগুলি প্রায় ১১,০০০ বছর আগে প্রথম তৈরি হয় যখন কৃষিকাজ শুরু হয়, তার পরপরই। কিন্তু গুনুং পাডাং-এর অসাধারণ খোদাই দেখলে এই তথ্য ভুল মনে হবেই। গুনুং পাডাংয়ের কাজ প্রমাণ করে কৃষিকাজ শুরুর আগেই উন্নত নির্মাণ কৌশল প্রক্রিয়া মানুষের জানা ছিল।