প্রাচীন মন্দিরের ভেতরেই দু'হাজার ভেড়ার খুলি, মমি! কোন রহস্যের খোঁজ পেলেন গবেষকরা?
2000 Mummified Ram Head Egypt : একসঙ্গে এতগুলো মাথার খুলি পাওয়া, রহস্যময় তো বটেই; খানিক গা ছমছমেও বটে।
দেখলেই মনে হবে প্রাচীন একটি মন্দির। পর্যটকরা আসছেন, ঘুরে যাচ্ছেন। কিন্তু সেই মন্দিরের ভেতরেই হঠাৎ করে উদ্ধার হল মাথার খুলি! একটা নয়, দুটো নয়, সংখ্যাটা অন্তত দুই হাজার! কী রহস্য লুকিয়ে আছে এখানে? আপাতত এই খুলি আবিস্কারের দিকেই মন দিয়েছেন ঐতিহাসিক ও গবেষকরা। একসঙ্গে এতগুলো মাথার খুলি পাওয়া, রহস্যময় তো বটেই; খানিক গা ছমছমেও বটে।
মিশর বা ইজিপ্ট নিয়ে এমনিই মানুষের মনে উৎসাহ রয়েছে। মিশরীয় সভ্যতার রহস্য, তার স্থাপত্য আর প্রাচীন ঐতিহ্য আজও ইতিহাসপ্রেমী ও পর্যটকদের সেখানে টেনে নিয়ে যায়। ফ্যারাও, স্ফিংক্স,, পিরামিড আর মমি – সব মিলিয়ে বেশ একটা রোমহর্ষক ব্যাপার। সেই মিশরেরই একটি মন্দিরে কাজ করছিলেন গবেষকরা। মিশরের এই অ্যাবাইডস অঞ্চলটি এমনিতেই ঐতিহাসিকভাবে বেশ প্রসিদ্ধ। বেশকিছু বিখ্যাত ফ্যারাওয়ের মন্দির রয়েছে এখানে। প্রাচীন মিশরীয়দের বিশ্বাস, এই ফ্যারাওরা আসলে সরাসরি ভগবানের অংশ। তাই সেই বিশাল মন্দিরগুলিও বেশ দর্শনীয়। সেখানেই রয়েছে দ্বিতীয় রামোসিসের মন্দির।
খ্রিস্টপূর্বাব্দ ১৩০৪ থেকে ১২৩৭, প্রায় সত্তর বছর মিশরের সিংহাসনে রাজত্ব করেছেন দ্বিতীয় রামোসিস। সেই সময়ই তৈরি হয় এই মন্দির। প্রায় ৩২৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দ, অর্থাৎ টলেমি বংশের শাসনকাল পর্যন্ত এই মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণ, ভাঙাগড়ার কাজ চলেছে। উল্লেখ্য, এই টলেমি বংশেরই শাসক ছিলেন ক্লিওপেট্রা। তার প্রমাণও পেয়েছেন গবেষকরা। তবে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ব্যাপার হল এই মাথার খুলি। অন্তত ২০০০ মমিকৃত মাথার খুলি পাওয়া গিয়েছে রামোসিসের এই মন্দিরে। তবে মানুষের নয়, এই খুলিগুলি সবই সেই সময়ের ভেড়াজাতীয় পশুর। কিন্তু যত্ন করে স্রেফ ভেড়ার মাথার খুলি কেন মমি করে রাখা হয়েছে? তাও এত পরিমাণে?
ঐতিহাসিক ও গবেষকদের মতে, কেবল দ্বিতীয় রামোসিস নয়, সমস্ত ফ্যারাওদেরই স্বয়ং ভগবানের রূপ বলে মনে করা হতো প্রাচীন মিশরে। সেই সময়ের পুরোহিতরা এই ধারণা আরও বদ্ধমূল করে মানুষের মনে গেঁথে দেন। এবার দেবতাদের সন্তুষ্ট করার জন্য চাই রক্ত। আজ্ঞে হ্যাঁ, দেবতার উদ্দেশ্যে পশুবলির প্রথা কয়েক হাজার বছর ধরেই চলে আসছে। নরবলিও যে দেওয়া হতো না, তা নয়। তবে এক্ষেত্রে এতগুলো ভেড়ার মাথার খুলি একটা সম্ভাবনাই উস্কে দেয়। গবেষকরা বলছেন, দ্বিতীয় রামোসিসের জন্য তাঁর মন্দিরেই এই পশুদের নিয়ে এসে বলি দেওয়া হতো। তারপর খুলিটি যত্ন করে মমি করে রাখা হতো। তাই বলে ২০০০! এই সংখ্যাটিও অবাক করছে গবেষকদের।
অবশ্য কেবল খুলিই পাওয়া যায়নি। সেইসঙ্গে বেশকিছু মূর্তি, প্যাপিরাসের পুঁথি, প্রাচীন গাছের অংশ, জুতো, চামড়ার জামাকাপড়ও পাওয়া গিয়েছে। সেইসঙ্গে ৪০০০ বছরের পুরনো একটি প্রাসাদের সামান্য ধ্বংসাবশেষও পাওয়া গিয়েছে। যাবতীয় নিদর্শনগুলি নিয়ে এখন গবেষণা করা হবে বলে জানিয়েছে মিশর প্রশাসন। উল্লেখ্য, ইজিপ্টে প্রতিনিয়তই এরকম আবিস্কারের কাজ চলছে। এখনও অনেক রহস্য, অজানা বস্তু লুকিয়ে আছে মাটি আর বালির তলায়। আরও কোন গোপন রহস্য অপেক্ষা করে আছে সেখানে? তারই অপেক্ষায় ঐতিহাসিকরা।

Whatsapp
