'মিথ্যা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী'! টাকা দিয়ে চুপ করানো প্রসঙ্গে কী বললেন তিলোত্তমার মা?
Mamata Banerjee on RG Kar: মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তাই ধর্ষিতা চিকিৎসকের মা সরাসরি প্রশ্ন করেছেন, "যদি তাঁর পরিবারে এমন ঘটনা ঘটত, তাহলে তিনি কী বলতেন?”
টাকা দিয়ে মিটমাট করতে চেয়েছিল প্রশাসন। চেয়েছিল ধর্ষণ হয়ে খুন হয়ে যাওয়া তিলোত্তমা আর পাঁচটা হারিয়ে যাওয়া মামলার মতোই নিস্তব্ধ হয়ে যাক। গত ৯ অগাস্ট আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে যে তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়, সেই ধর্ষিতা ও মৃতা ডাক্তারের মা-বাবা এমনই ভয়াবহ অভিযোগ তুলেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে। ঘটনার একমাস পূর্তির দিনে, নবান্নে বৈঠক ডেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। কিন্তু তিলোত্তমার মা বলছেন, মিথ্যাচার করছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
৯ সেপ্টেম্বর নবান্ন থেকে মমতা বলেন, কালকাতা পুলিশ ওই তরুণী চিকিৎসকের বাবা-মাকে ঘুষ দেওয়ার চেষ্টা করেছিল এমনটা মোটেও ঘটেনি। তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে যে যে অভিযোগ উঠেছে, সবটাই 'অপবাদ' বলে উড়িয়ে দিয়েছেন মমতা। কিন্তু ক্ষতিপূরণ দিয়ে মুখ বন্ধের অভিযোগে এখনও অনড় নির্যাতিতার মা। তিলোত্তমার মায়ের অভিযোগ, "মুখ্যমন্ত্রী মিথ্যে বলছেন। তিনি বলেছিলেন যে, আপনারা ক্ষতিপূরণ পাবেন এবং চাইলে তা দিয়ে আপনার মেয়ের স্মৃতিতে কিছু তৈরি করতে পারেন। আমি তখন বলেছিলাম যে আমার মেয়ের বিচার হলে আমি আপনার অফিস এসে ক্ষতিপূরণ নিয়ে যাব।"
নির্যাতিতার মায়ের অভিযোগ, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তিলোত্তমার ধর্ষণ ও হত্যার বিরুদ্ধে সারা রাজ্য জুড়ে যে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চলছে তার কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করছেন। ঘটনার ঠিক একমাসের মাথায় নবান্ন থেকে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট নির্দেশ দিচ্ছেন, "উৎসবে ফিরুন"। আমজনতাকে বিচারের দাবি তুলতে বন্ধ করতে বলে, প্রতিবাদ বন্ধ করতে বলে কেবলই দুর্গাপুজোয় মাতিয়ে সব ভুলিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টাকে 'অমানবিক' বলেই মনে করছেন তিলোত্তমার মা।
আরও পড়ুন- আরজি কর গণ আন্দোলন | কেন ফায়দা তুলতে পারছে না রাম-বাম?
নির্যাতিতার মা বলছেন, "এটা আমার কাছে অত্যন্ত অমানবিক বলেই মনে হয় কারণ আমি একজন মেয়ের মা। আমি আমার সন্তান হারিয়েছি, তাই আমার কাছে এই আবেদন অমানবিকই। সারা দেশের মানুষ যদি উৎসবে ফিরে আসতে চায়, তারা ফিরতে পারে। আমার বাড়িতেও দুর্গাপুজো হতো। আমার মেয়েই শুরু করেছিল বাড়ির পুজো। কিন্তু এখন তো সব অন্ধকার! আমাদের জীবনজুড়ে অন্ধকার। এই সময়ে আমি কীভাবে মানুষকে উৎসব পালন করতে বলব?” মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তাই ধর্ষিতা চিকিৎসকের মা সরাসরি প্রশ্ন করেছেন, "যদি তাঁর পরিবারে এমন ঘটনা ঘটত, তাহলে তিনি কী বলতেন?”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্গাপুজোকে তড়িঘড়ি সামনে আনতে মরিয়া এখন। তিনি এও বলেছেন, “প্রতি রাতে রাস্তায় থাকলে শব্দ দূষণের কারণে বয়স্ক ব্যক্তিরা ঘুমের সমস্যায় ভোগেন। আমরা রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের নিয়ম মেনে কাজ করিনি। এক মাস কেটে গেছে। আমি আপনাদের এবার উত্সবে ফিরে আসতে অনুরোধ করছি এবং দাবি জানাচ্ছি যে সিবিআই যেন তাড়াতাড়ি তদন্ত শেষ করে।”
নির্যাতিতার মা বলেছেন, তাঁর মেয়ের বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত মৃত্যুর প্রতিবাদ চলবে। "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আন্দোলনের কণ্ঠরোধ করতে চান। আমার মেয়েকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে এবং প্রমাণ নষ্ট করা হয়েছে। যতক্ষণ না আমরা ন্যায়বিচার পাব, আমরা রাস্তায় থাকব," স্পষ্ট জানিয়েছেন তিনি। এর আগে, নির্যাতিতার বাবা এবং কাকীমাও অভিযোগ করেছিলেন যে, কলকাতা পুলিশ মামলা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। মুখ বন্ধ রাখার জন্য টাকা দিতে চেয়েছিল।