পরিবেশ বাঁচাতে সাইকেল চালাচ্ছেন? সবচেয়ে বেশি মৃত্যুমুখে পড়ছেন আপনিই
Air Pollution and Bicycle: একই রাস্তায় একইসঙ্গে এসি গাড়ি, পথচারী মানুষ এবং বাইসাইক্লিস্টের উপর কতটা বায়ুদূষণের প্রভাব পড়ছে তা জানার জন্য একটি পরীক্ষা করা হয়।
একটা মানুষ, ধরা যাক সে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে দিন আনি-দিন খাইয়ের চাকরি করে। সেই মানুষটি প্রতিনিধিত্ব করে এরকম লাখ লাখ মানুষের যারা, বাস বা অটোর ভাড়া বাঁচানোর জন্য সাইকেল চড়ে। কলকাতার অলিগলি পাকস্থলী দিয়ে তারা কোনওরকমে তাদের গন্তব্যে পৌঁছে যায়। ধোঁয়া আর ধুলোয় তার কষ্ট হয় খুব, কাশি বা কফ এমনকী কানেও আজকাল একটু কম শোনা যাচ্ছে। একটু বেশিক্ষণ সাইকেল চালালেই হাঁফ ধরে তার। কিন্তু তার তো কোনও উপায় নেই। চালাতেই হবে সাইকেল। এর আগে পৃথিবীর বহু শহরে, বহু বিজ্ঞানী বহু গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন যে বায়ুদূষণ আমাদের ফুসফুস, আমাদের হৃৎপিণ্ড এবং সর্বোপরি গোটা শরীরের জন্য ক্ষতিকারক। আমাদের কলকাতাতেও হয়েছে এরকম গবেষণা কিন্তু কখনও সেই মানুষটার জন্য গবেষণা হয়নি যে কিনা একটি পরিবেশবান্ধব যাতায়াত মাধ্যম ব্যবহার করে অথচ সবথেকে বেশি বায়ুদূষণের সম্মুখীনও তাকেই হতে হয়।
সম্প্রতি পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সংস্থা ক্লাইমেট থিঙ্কার, কলকাতার অলিতে গলিতে বায়ুদূষণের মাত্রা কী রকম তা মেপেছে এবং তার পাশাপাশিই বেশ কিছু মানুষের সমীক্ষা করেছে যারা স্রেফ বাস এবং অটোর ভাড়া বাঁচাবার জন্য সাইকেল চড়েন। ৯ জন বাইসাইকেল আরোহী, প্রায় আট মাস ধরে শহরের আনাছে কানাচে ঘুরে বেরিয়েছেন তাদের সাইকেলে বায়ুদূষণ মনিটর সঙ্গে নিয়ে। তাতে কী পাওয়া গেছে? আমাদের এতদিন ধারণা ছিল যে, বড় রাস্তাতে সব থেকে বেশি বায়ুদূষণ হয় কারণ অনেক গাড়ি থাকে, বড় রাস্তা থেকে যত ছোট ছোট গলিতে ঢোকা যায় তত দূষণের পরিমাণ কমে যেতে থাকে। কিন্তু এই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেছে এই নতুন সমীক্ষা। এই সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, মাঝারি এবং ছোট রাস্তা দূষণের নিরিখে পাল্লা দিতে পারে বড় রাস্তাগুলিকে। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত, সব ঋতুতেই এই একই প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে।
আরও পড়ুন- শহুরে পরিবেশবিদের ডায়েরি : অরিন্দম রায়
এর কারণ মূলত দুটো, প্রথমত রাস্তা যত ছোট হয় এবং তার সঙ্গে দু'পাশে বাড়ির উচ্চতা, ততই বাতাস চলাচল কমে যায়। ফলে একটা ছোট্ট রাস্তা দিয়ে হয়তো একটা গাড়ি গেছে বা দুটো মোটরবাইক গেছে কিন্তু সেই ধোঁয়াই পাক খেতে খেতে ওই জায়গাতে রয়ে যায়। দ্বিতীয় কারণ হলো, রাস্তার কাজ। বর্ষার পর থেকে কলকাতার অলিতে গলিতে রাস্তা খুঁড়ে জল এবং বিদ্যুতের লাইনের কাজ চলেছে। কাজ হয়ে যাওয়ার পরে রাস্তাগুলিতে কোনওরকমে মাটি বা বালি চাপা দেওয়া হয়েছে। এর ওপর দিয়ে গাড়ি যাচ্ছে যখন সেই ধুলো বায়ুদূষণ বাড়াচ্ছে। একইসঙ্গে খোঁড়া রাস্তাতে জ্যাম হচ্ছে অনেক বেশি। ফলে দূষণ বাড়ছে।
এরপরে একই রাস্তায় একইসঙ্গে এসি গাড়ি, পথচারী মানুষ এবং বাইসাইক্লিস্টের উপর কতটা বায়ুদূষণের প্রভাব পড়ছে তা জানার জন্য একটি পরীক্ষা করা হয়। সেখানে একইসঙ্গে এসি গাড়ির মধ্যে, পথচারী মানুষ এবং বাইসাইকেলে বায়ুদূষণ মাপার যন্ত্র বসিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। দেখা যায়, বাইসাইকেল আরোহী এসি গাড়িতে বসা মানুষের তুলনায় প্রায় চার গুণ বেশি বায়ুদূষণের সম্মুখীন হচ্ছেন।
আরও পড়ুন- বাড়িতে নিয়মিতই আসে ২০ লিটারের জলের জার? ভয়াবহ রোগের মুখে দাঁড়িয়ে আপনি
আমরা কথা বলেছি প্রায় ২০০ জন সাইকেল আরোহীর সঙ্গে। তাদের মধ্যে কিছু জন হলেন রিক্রিয়েশনাল সাইক্লিস্ট আর কিছু জন হলেন লাইভলিহুড সাইক্লিস্ট। অর্থাৎ কিছু মানুষ শরীর সুস্থ রাখার জন্য বা খেলা হিসেবে সাইকেল চালান আর কিছু মানুষ গণপরিবহণের টাকা বাঁচানোর জন্য সাইকেল চালান। আমরা দেখেছি, এই লাইভলিহুড সাইক্লিস্টরা রিক্রিয়েশনাল সাইক্লিস্টের থেকে প্রায় ৭ গুণের ও বেশি বায়ুদূষণের সম্মুখীন হন। কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন এই দূষণের মধ্যে সাইকেল চালিয়ে তাদের শরীর খারাপ হয়ে গেছে।
এই সমীক্ষার তথ্য তুলনা করা হয়েছে ইওরোপের বেশ কিছু দেশের সঙ্গে। সেখানে কিন্তু সাইকেল আরোহীরা অন্যান্য পরিবহণ মাধ্যমের তুলনায় বায়ুদূষণের হাত থেকে রক্ষা পান। তার মূল কারণ হলো, আলাদা বাইসাইকেল লেন এবং রাস্তা এবং সেই বাইসাইকেল লেনের মধ্যের গাছের সারি।
একটা অপ্রিয় প্রশ্ন তাই স্বাভাবিকভাবেই উঠে আসছে। বাইসাইক্লিস্টরা সরাসরি কোনওরকম বায়ুদূষণ করেন না কিন্তু বায়ুদূষণের ফলে তারাই সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এই অসাম্য কেন?
এই কাজটির জন্য আমরা কলকাতা সাইকেল সমাজ এবং শতঞ্জীব গুপ্তর কাছে কৃতজ্ঞ।