'দুষ্টু লোক' বলে ইন্টারভিউ দিলেন না সুচিত্রা সেন
সুচিত্রা তেমনভাবে শরীর দেখাননি কখনও। তাঁর ছিল ঢাকা না-ঢাকার খেলা। এই খেলার তিনি দেবী। কামকলা তাঁর শরীরে বইছে নদীর মতো। এই নিরন্তর বহতা নিয়ে তিনি তাঁর বাড়ির দীর্ঘ বারান্দা পেরিয়ে আমার কাছে, একেবারে সামনে, এসে দাঁড়ালেন...
সুচিত্রা সেনকে অনেকবার সামনাসামনি দেখেছি। কথাও বলেছি। এসব ঘটনা ঘটেছে ১৯৬০ সাল থেকে ১৯৭০-এর মধ্যে। আমার বয়স তখন বিশ থেকে তিরিশের ভেতর। পিছন ফিরে তাকিয়ে একটা সত্যি কথা বলে রাখি। সুচিত্রার মত মনোহর সুন্দরী, এবং অমোঘ যৌন আবেদনের বাঙালি মেয়ে আর একটিও দেখিনি। সুচিত্রা আমার অতীতের অবসেশন নয়। বর্তমানেও সুচিত্রা আমার সেক্স-স্বপ্ন।
সুচিত্রা তেমনভাবে শরীর দেখাননি কখনও। তাঁর ছিল ঢাকা না-ঢাকার খেলা। এই খেলার তিনি দেবী। কামকলা তাঁর শরীরে বইছে নদীর মতো। এই নিরন্তর বহতা নিয়ে তিনি তাঁর বাড়ির দীর্ঘ বারান্দা পেরিয়ে আমার কাছে, একেবারে সামনে, এসে দাঁড়ালেন। আমার বয়স পঁচিশ। আমি ডুবে গেলাম, ভেসে গেলাম, পাগল হয়ে গেলাম তাঁর প্রণয়ে। সুচিত্রার সঙ্গে আমার প্রেম সারাজীবনের ডুবসাঁতার!
সুচিত্রা আমাকে কোনওদিন কোনও সাক্ষাৎকার দেননি। বেশ করেছেন দেননি। ঠিক করেছেন। উত্তমকুমার আমাকে বারবার ইন্টারভিউ দিয়েছেন। সুচিত্রা আমার মরীচিকা চিরন্তনী!
আরও পড়ুন: ‘পুরুষের থেকে অনেক বেশি কষ্ট সহ্য করে মেয়েরা’, সত্যজিৎ বলেছিলেন সেদিন
আমি প্রতিশোধ নিতে ছাড়িনি। প্রতিদিন প্রেমপত্র লিখেছি সুচিত্রা মায়াবিনিকে। প্রতিদিন চিঠির সঙ্গে ফুলের স্তবক। চিঠির গায়ে মিশিয়েছি ফরাসি পারফিউম। সাতদিনে সাতটি প্রণয়পত্র। সাতটি স্তবক। দরজায় রেখে এসেছি। কোনও উত্তর আসেনি। আমার সুচিত্রাকে আরও ভালো লেগেছে। উত্তর না দেওয়ার অধিকার সুচিত্রার আছে। যেমন আমার আছে পাগলের মতো তাঁর প্রেমে পড়ার অধিকার। এবং তাঁকে সেই প্রণয় জানানোর অধিকার।
মুনমুন আমাকে একদিন ফোন করল। তখন কিন্তু ল্যান্ডলাইনের যুগ। বাবা ফোন ধরে বললেন, মুনমুন ফোন করেছে তোকে। মুনমুন আমার খুব বন্ধু। তখন। এবং এখনও।
মুনমুন বলল, মা-র সঙ্গে তুমি কী করছ বলো তো?
আমি বললাম, প্রেম।
মুনমুন বলল, তাহলে আমার সঙ্গে কী করছ?
বললাম, প্রেম।
মুনমুন হেসে বলল, মা আমাকে বলেছে তোমাকে জানিয়ে দিতে, মা তোমাকে কোনওদিন ইন্টারভিউ দেবে না।
আমি বললাম, কেন?
মুনমুন বলল, মা বলেছে তুমি খুব দুষ্টু লোক, তাই।
আমি সুচিত্রার প্রেমে আরও পাগল হলাম। এবং বুঝলাম, সুচিত্রাকে নিয়ে আমার পাগল হওয়ার কোনও শেষ নেই। আজও সুচিত্রাকে নিয়ে আমার দুষ্টু-মিষ্টি খোয়াব অন্তহীন, বিপজ্জনক!
সেইসব গোপন-গহন ইচ্ছের দাগ লেগে আছে আমার সুচিত্রাকে নিয়ে লেখা অসংখ্য লেখায়। আমার বাসনার বাসা সুচিত্রাকে লেখা আমার পত্রগুচ্ছ। আর আমার দু'টি বই। একটির নাম 'সুচিত্রা ও অন্যান্য'। অন্য বইটি 'গাংচিল' প্রকাশিত, 'সুচিত্রা: অন্তরাল ও নির্বাসন'। এটি সুচিত্রা সেনকে নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস, যার নায়ক উত্তমকুমার।
'সুচিত্রা ও অন্যান্য' উদ্বোধন হয়েছিল পার্ক হোটেলের ব্যাঙ্কোয়েটে। উদ্বোধন করেছিল মুনমুন। এবং দু'টি বইই বেরিয়েছে সুচিত্রার জীবনকালে। দু'টি বইই আমার সুচিত্রা অবসেশনের প্রবুদ্ধ ফসল!
'সুচিত্রা ও অন্যান্য'-তে প্রকাশিত হয়েছে আমার সুচিত্রাকে লেখা প্রেমপত্রগুচ্ছের একটি চিঠি। তার কিছুটা এইরকম: অলক্ষ্য অলকাপুরী নিবাসিনী সমীপে, তুমি যে সাংবাদিকদের বিশ্বাস করো না, খবরের কাগজের লোকজনদের ওপর তোমার যে শ্রদ্ধা-ভক্তি নেই, এই বিষয়ে তোমার মতো আমিও নিশ্চিত। তোমার ব্যক্তিগত জীবন একান্ত তোমারই। অস্কার ওয়াইল্ডের দৈত্যের মতো তুমি দেওয়াল তুলে দিয়েছ তোমার একান্ত নিজস্বকে আগলে। তবু তোমাকে খুব ভালবাসি বলে জানতে ইচ্ছে হয়, কী খেতে ভালবাসো তুমি? বাড়িতে শাড়ি না হাউজকোট? না কি খোলামেলা আরামের অন্য কিছু? কী রঙের লিপস্টিক তোমার পছন্দের? কোন কোন মুডে বা দিনরাতের কোন কোন সময়ে আবেদনের কোন রং ঠোঁটে? আচ্ছা, কেমন ছিল তোমার সঙ্গে তোমার স্বামীর সম্পর্ক? মুনমুন সিনেমায় নামছে। তাতে তোমার কষ্ট না খুশি? কী করো তুমি সারাদিন? পুজো? বই? একলা ঘরে মনকেমন? আর উত্তম? তোমার উতু? মন কেমনের কষ্ট নেই? তুমি কিন্তু থেকেই গেলে আমার প্লাবন। আমার পাগলামি। আমার অবসেশন। যতদিন বাঁচব, লিখব তোমাকে নিয়ে।