মহুয়ার বনে দেখা মিলবে নেকড়েদের! ঝাড়খণ্ডের এই জঙ্গলে কেন আসতেই হবে

Jharkhand: অরণ্য সংরক্ষণে ঝাড়খণ্ড যা ভাবতে পারছে, তা দক্ষিণবঙ্গ পারবে না কেন?

জঙ্গল বলতেই বাঙালি বোঝে উত্তরবঙ্গ। কিন্তু দক্ষিণে সুন্দরবন ছাড়া আর কোনও অভয়ারণ্য সে অর্থে তৈরি হয়নি কখনওই। কিন্তু ঝাড়খণ্ডের একটি উদ্যোগ পথ দেখাচ্ছে দক্ষিণবঙ্গকেও। কীভাবে দক্ষিণবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ড জুড়ল অরণ‍্যভাবনায়, তার প্রেক্ষাপটটা একটু বলা প্রয়োজন।

প্রতি বছর মার্চ মাসে পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গলে আগুন লাগছে নিয়ম করে! বাঁকুড়া থেকে মেদিনীপুরের জঙ্গলমহল, ডুয়ার্সের একাংশ থেকে বিভিন্ন প্রান্তে জঙ্গলে এই হঠাৎ দাবানলের প্রকোপ কেন, তা নিয়ে চিন্তিত পরিবেশপ্রেমীরাও। মূলত আবহাওয়ার তারতম্যের সঙ্গে এর সম্পর্ক থাকার কথাই উঠে এসেছে, সঙ্গে উঠে এসেছে বেআইনি কাঠপাচারকারী, চোরাকারবারীদের চক্রান্তের কথাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ২০২২-এ যেমন বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন জায়গায়, তারপর উত্তরবঙ্গে ডুয়ার্সের মুকুট বক্সাপাহাড় হয়ে নানা জঙ্গলে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল জঙ্গলের এই আগুন। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অল বেঙ্গল গ্রিন ক্লাব সোসাইটি ও দক্ষিণবঙ্গের গ্রিন প্ল্যাটু সংগঠন এই বিষয়ে একত্রে উদ‍্যোগী হয় তখন।

আরও পড়ুন: বনবিভাগ নয়, বিষ্ণুপুরের দাবানল রুখতে ভরসা এই মানুষটি

বিষ্ণুপুরে 'ইউনাইটেড নেশনস'-এর ইকোসিস্টেম রেস্টোরেশন ২০২২-'৩০ কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত একটি সচেতনতা শিবির এবং আলোচনাসভা 'প্রকৃতি পার্লামেন্ট'-এর আয়োজন করে এই দুই সংগঠন যৌথভাবে। সেখানেই নানা আলোচনায় উঠে এসেছিল দক্ষিণবঙ্গের বিপুল বন্যপ্রাণী-বৈচিত্র্য আজও বিপন্ন। নেকড়ে, হায়না, ভাল্লুক, সজারু, বিভিন্ন ধরনের বনবিড়ালের অস্তিত্ব আজ সংকটে। এর মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছিল, অভয়ারণ্য বা স্যাংচুয়ারি না হয়ে দক্ষিণবঙ্গের জঙ্গলগুলো একেবারেই উন্মুক্ত এবং এখানে সক্রিয় বনকর্মীর অভাব, অভাব সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার।

ডালটনগঞ্জের সৈকত চট্টোপাধ্যায় ঠিক এই সময়েই সন্ধান দেন এশিয়ার প্রথম নেকড়ে অভয়ারণ্যর। নেকড়ে সংরক্ষণে পালামৌ-এর ডিএফও-র উদ্যোগের কথা তিনি জানান একটি প্রতিবেদনে। তার সূত্র ধরেই দক্ষিণবঙ্গের বেশ কিছু পরিবেশকর্মী রওনা দেন ডালটনগঞ্জের উদ্দেশ্যে। ডালটনগঞ্জ হয়ে যেতে হবে মহুয়াডাঁড়। আগে তুলে নিতে হবে পর্যাপ্ত রেশন, কারণ নেকড়ে অভয়ারণ‍্যের আশপাশে নিত‍্যপ্রয়োজনীয় পণ‍্য পাওয়া মুশকিল। মহুয়াডাঁড় থেকেই পৌঁছে যাওয়া সম্ভব সারনাডিহি ফরেস্ট রেস্টহাউসে। এখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ বলতে সোলার, বেশ কিছু অব্যবস্থা থাকলেও তিনজন বনকর্মীর সহযোগিতায় পর্যটকরা নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন। পালামৌ সাউথ ডিভিশনের সারনাডিহি-তে এখনও পরিকাঠামো তেমন তৈরি হয়নি, তবে ধীরে ধীরে হচ্ছে।

নেকড়ে দেখার জন্য দু'বেলায় বেছে নিতে হবে গুহায় ট্র্যাপ ক্যামেরা লাগানো এবং খোলার সময়টাকে। চারধারে মহুয়া গাছের বন, আদিবাসী মহিলারা মহুয়ার ফুল কোড়ান এখানে। মনোরম জঙ্গল ও জঙ্গল-সংলগ্ন বনবস্তির সৌন্দর্য এখানে নজর কাড়বেই।

ঝাড়খণ্ডের বনদফতর এক্ষেত্রে যদি একটু নজর দেয়, তবে এই অভয়ারণ‍্য বেতলা, নেতারহাট, পালামৌ ট্যুরিস্ট সার্কিটের একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্পট হতে পারে। মহুয়াডাঁড়ে গেলে যেন 'অরণ্যের দিনরাত্রি'-র আবহে পৌঁছে যাওয়া যায় এক লহমায়।

যাঁরা মহুয়া সংগ্রহ করেন, তাঁদের এবং আদিবাসী বনকর্মীদের প্রশ্ন করা হয়েছিল, ওখানে শিকার উৎসব হয় না কিংবা জঙ্গলে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটে না? তাঁরা জানান, শিকার উৎসবের নামে বন্যপ্রাণী হত্যা হয় না, তবে মহুয়া সংগ্রহ করতে যারা জঙ্গলে যায় তারা আগুন লাগায় কেউ কেউ, কিন্তু ওই বনকর্মীরাই অত্যন্ত সক্রিয় গ্রামের মানুষকে সচেতন করার চেষ্টায়।

অরণ্য সংরক্ষণে ঝাড়খণ্ড যা ভাবতে পারছে, তা দক্ষিণবঙ্গ পারবে না কেন? সেই ভাবনা থেকেই এই নেকড়ে অভয়ারণ্যকে আদর্শ হিসেবে দক্ষিণবঙ্গের সামনে তুলে ধরতে চান পরিবেশকর্মীরা। বাঁকুড়া-পুরুলিয়ার অরণ‍্যে পর্যটন এবং সংরক্ষণের এর চেয়ে ভাল পন্থা আর হয় না।

More Articles