বকেয়া ৭০,৩২০ কোটি টাকা! ভোডাফোন আইডিয়া-কে কি পাততাড়ি গোটাতে হবে?
Vodafone Idea: শীর্ষ আদালতের রায়ের পর বিশেষ সঙ্কটে পড়েছে ভোডাফোন-আইডিয়া। বেসরকারি টেলিকম সংস্থাগুলির থেকে অ্যাডজাস্ট গ্রস রেভেনিউ (এজিআর) বাবদ বকেয়া, সুদ, জরিমানা এবং জরিমানার উপরে সুদ সব মিলিয়ে প্রায় ১.৪৭ লক্ষ কোট...
ভারতের অন্যতম বড় মোবাইল পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা ভোডাফোন-আইডিয়া এবং ভারতী এয়ারটেল-এর কাছে অ্যাডজাস্ট গ্রস রেভেনিউ (এজিআর) বাবদ প্রায় ১.৪৭ লক্ষ কোটি টাকা পায় কেন্দ্র। সংস্থাগুলি আগেই দাবি করেছিল, কেন্দ্রের টেলিকম বিভাগের হিসাবে ত্রুটি রয়েছে। এজিআর বকেয়ার হিসেব নতুন করে গণনা করার দাবি জানিয়েছিল এই মোবাইল পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলি। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে, এজিআর বকেয়ার হিসেবে কোনও ত্রুটি নেই। শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতির ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ টেলিকম সংস্থাগুলির দাবি খারিজ করেছে।
শীর্ষ আদালতের রায়ের পর বিশেষ সঙ্কটে পড়েছে ভোডাফোন-আইডিয়া। বেসরকারি টেলিকম সংস্থাগুলির থেকে অ্যাডজাস্ট গ্রস রেভেনিউ (এজিআর) বাবদ বকেয়া, সুদ, জরিমানা এবং জরিমানার উপরে সুদ সব মিলিয়ে প্রায় ১.৪৭ লক্ষ কোটি টাকা পায় কেন্দ্র। এর মধ্যে ভোডাফোন-আইডিয়া (ভি)-র একারই ৭০,৩২০ কোটি টাকার বকেয়া রয়েছে। এর জেরে সংস্থার অস্তিত্ব নিয়েই আশঙ্কা তৈরি হল। যদিও ২০১৯ সালের জানুয়ারিতেই শীর্ষ আদালত জানিয়েছিল টেলিকম দফতরের হিসেব ত্রুটিহীন। এই বিপুল অর্থ দিতে হলে সংস্থাগুলি মন্দার মুখে পড়বে। উল্লেখ্য, সেই সময় থেকেই রিলায়েন্স জিও-র বকেয়া কম ছিল।
আরও পড়ুন: যে কোনও যোগাযোগই রাষ্ট্রের হাতে? যে ভয়াবহ টেলিকম আইন ২০২৩ চালু হচ্ছে দেশে
রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, টেলিকম দফতর ভোডাফোন-আইডিয়া এবং ভারতী এয়ারটেলের মতো টেলিকম সংস্থাগুলিকে পাওনা ১ লক্ষ কোটি টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, এয়ারটেলের বকেয়া অর্থের পরিমাণ ৪৩,৯৮০ কোটি টাকা এবং ভোডাফোনের বকেয়া অর্থের পরিমাণ প্রায় ৫৮ হাজার ২৫৪ টাকা। কিন্তু এয়ারটেল টেলিকম সংস্থার দাবি, তাদের নাকি মাত্র ১৩ হাজার কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। অন্যদিকে, ভোডাফোনও দাবি করেছে তাদের ২১ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকা বাকি। এই টেলিকম সংস্থাগুলি অভিযোগ তুলছে, আদালত সংস্থার বিরুদ্ধে বিপুল অর্থের জরিমানা চাপিয়ে দিয়েছে।
২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে একাধিক টেলিকম সংস্থাকে তিন মাসের মধ্যে ৯২,০০০ কোটি টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ২০২০ সালে নির্দেশ দেওয়া হয় অ্যাডজাস্ট গ্রস রেভেনিউ (এজিআর) যদি ১০ বছর বা তারও বেশি সময় বকেয়া থাকে, তবে সংস্থাগুলিকে প্রতি বছরের ৩১ মার্চের পর সেই অর্থের উপর ১০% জরিমানা অর্থ দিতে হবে। ২০২৩ সালের শেষের দিকে টেলিকম সংস্থাগুলি জানায়, তারা লাইসেন্স ফি নিয়ে কোনও আর্জি জানাচ্ছে না। তবে এজিআর-এর বকেয়া হিসেবে নতুন করে গণনার দাবি জানাচ্ছে।
অ্যাডজাস্ট গ্রস রেভেনিউ (এজিআর) হল সরকার এবং টেলিকম সংস্থার মধ্যে রাজস্বের হিসাব। টেলিকম সংস্থাগুলিকে লাইসেন্স দেওয়া এবং স্প্রেকটাম ব্যবহারের জন্য সরকারকে টাকা দিতে হয়। দীর্ঘদিন ধরেই এই হিসেব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। টেলিকম সংস্থাগুলি হিসাবে কোর রেভেনিউ-কে যোগ করার দাবি করছে। ২০১৯ সালেও এই মামলায় শীর্ষ আদালত সরকারের পক্ষে রায় দিয়েছিল। তখন সংস্থাগুলিকে ৩ মাসের মধ্যে ৯২ হাজার কোটি টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
আরও পড়ুন:কেন আদানির বিরুদ্ধে তদন্ত হয় না? সেবির প্রধানের সত্য ফাঁস হিন্ডেনবার্গের নতুন রিপোর্টে
উল্লেখ্য, রিপোর্ট অনুযায়ী এয়ারটেলের বকেয়া রয়েছে প্রায় ৪৪ হাজার কোটি টাকা। এই সংস্থার অস্তিত্ব সংকটের প্রশ্ন এখনই নেই। কারণ, ভিআই-এর তুলনায় এই সংস্থার অবস্থা তুলনামূলক ভালো। শীর্ষ আদালতের রায়ের পর এই টালমাটাল পরিস্থিতিতে শেয়ার দরও প্রায় ২০% পড়ে গিয়েছে। ইন্দাস টাওয়ার্স-এর শেয়ার দর অনেকটাই পড়েছে। টেলিকম সংস্থাগুলি ব্যাখ্যা দিয়েছে, ভিআই বকেয়া টাকা কী ভাবে শোধ করবে তা এখনও স্পট নয়। ভিআই-র পক্ষে বকেয়া মেটানো কঠিন তো বটেই, এই আর্থিক সংকটের পরিস্থিতে তাদের ৫জি পরিষেবা কবে শুরু হবে সেই নিয়েও সন্দেহ থাকছেই। এই পরিস্থিতিতে টেলিকম সংস্থাগুলি ঠিক কী পদক্ষেপ নেয়, আপাতত সেটাই দেখার।