অসম পুলিশের নজরে সিদ্ধার্থ বরদারজন, করণ থাপার, অপরাধ স্বাধীন সাংবাদিকতা?

Karan Thapar and Siddharth Varadarajan: এই নিয়ে দু'বার 'দ্য ওয়্যার'-এর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা করল অসম পুলিশ। বলাই বাহুল্য, 'দ্য ওয়্যার' কর্তৃপক্ষ এই ঘটনাকে স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের উপর আক্রমণ হিসেবে দেখছে।

দেশের দুই বিখ্যাত প্রবীণ সাংবাদিককে তলব করল অসম পুলিশ। 'দ্য ওয়্যার'-এর সম্পাদক সিদ্ধার্থ বরদারাজন এবং প্রবীণ সাংবাদিক করণ থাপারকে ২২ অগাস্ট গুয়াহাটি পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ দুজনের কাছেই একই নোটিস গিয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, "একটি তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে আপনাদের থেকে কিছু তথ্য আমাদের দরকার।" নোটিসে এও উল্লেখ করা আছে, ২২ অগাস্ট যথা সময়ে পুলিশের কাছে হাজিরা না দিলে এই দুই সাংবাদিককে গ্রেফতারও করা হতে পারে৷ তবে ঠিক কোন মামলায় ডাকা হয়েছে তা নোটিসে উল্লেখ নেই৷ এমনকি দেওয়া হয়নি এফআইআর-এর কপিও। যদিও সমন জারি করলে এফআইআর-এর প্রতিলিপি দেওয়া বাধ্যতামূলক। যথাক্রমে ১৪ এবং ১৮ অগাস্ট দু'টি পৃথক নোটিস পেয়েছেন। এই নিয়ে দু'বার 'দ্য ওয়্যার'-এর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা করল অসম পুলিশ। বলাই বাহুল্য, 'দ্য ওয়্যার' কর্তৃপক্ষ এই ঘটনাকে স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের উপর আক্রমণ হিসেবে দেখছে।

গত ২৮ জুন ভারতীয় বায়ু সেনার ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে লেখা একটি প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে এক বিজেপি নেতা অভিযোগ দায়ের করলেও এই সাম্প্রতিক অভিযোগটি একই বিষয়ে কিনা তা নিয়ে সন্ধিহান 'দ্য ওয়্যার' মনে করাচ্ছেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ এবং কর্ণাটক হাই কোর্টের রায়। যেখানে বলা হচ্ছে, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে এফআইআর জনসমক্ষে আনতে হবে এবং এফআইআর-এর প্রতিলিপি ব্যাতীত এই সমন বৈধ নয়।

ইতোমধ্যেই এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে প্রেস ক্লাব অফ ইন্ডিয়া এবং ইন্ডিয়ান উইমেনস প্রেস কর্পস।

আরও পড়ুন- প্রশ্ন করার সংস্কৃতি সাংবাদিকতা থেকে যে ভাবে হারাল…

ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১৫২, ১৯৬, ১৯৭(১)(ডি)/৩(৬), ৩৫৩, ৪৫ এবং ৬১ ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে৷ এর মধ্যে ১৫২ নম্বর ধারাটি দেশদ্রোহিতার সঙ্গে সম্পর্কিত।

তবে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা এই প্রথম নয়। আগেও বহু সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এই মামলা হয়েছে। এমনকি সাংবাদিকদের গ্রেফতারও করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, উপযুক্ত প্রমাণ ছাড়াই নিউজক্লিক এবং বিবিসি-র মতো সংবাদমাধ্যমে অভিযান চালানোর অভিযোগ উঠেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলির উপর।

গত লোকসভা ভোটের আবহে ফ্রি স্পিচ কালেকটিভ বাকস্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। ২০২৪ সালের মে মাসে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে উঠে এসেছিল, ভারতে ৪ মাসে ১৪৮টি বাকস্বাধীনতা খর্ব হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে রয়েছে, সাংবাদিকদের উপর আক্রমণ, সাংবাদিকদের উপর নির্যাতন, সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে আইন, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ ইত্যাদি। নিউজ ক্লিক-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক প্রবীর পুরকায়স্থকে ২০২৩ সালের ৩ অক্টোবর গ্রেফতার করা হয়েছিল।

ফ্রি স্পিচ কালেকটিভ-এর ওই রিপোর্টে কাশ্মীরের সাংবাদিক আসিফ সুলতানের কথা উল্লেখ ছিল। এই সাংবাদিককে জামিন হওয়ার চার দিন পর পুনরায় গ্রেফতার করা হয়েছিল।

অন্যদিকে আবার ২০২৪ সালের শুরুতে 'The Caravan'-এ প্রকাশিত 'Screams from the army post' শিরোনামের প্রতিদিবেদনটি সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্রের তথ্য এবং সম্প্রচারক মন্ত্রক। এমনকি মোদি সরকারের সমালোচনা করায় 'Bolta Hindustan' নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলকে বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্র, এমনই তথ্য উঠে এসেছিল ফ্রি স্পিচ কালেকটিভ-এর ওই প্রতিবেদনে।

আরও পড়ুন- ঋদ্ধিমান কাণ্ডে ক্রিকেট সাংবাদিকতার মুখোশ ছিঁড়ে বেরিয়ে এসেছে কুৎসিত মুখ

প্রসঙ্গত, ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসা এই দেশদ্রোহিতার আইন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক চলছে৷ প্রাক স্বাধীনতা যুগে ব্রিটিশরা এই আইন এনেছিল যাতে দেশবাসী ইংরেজ শাসনের বিরোধিতা করতে না পারেন। পরাধীন ভারতে ব্রিটিশ সরকার এই আইনের আওতায় বিনা বিচারে ভারতীয়দের জেলে বন্দি করে রাখত। একাধিক স্বাধীনতা সংগ্রামী এই আইনের আওতায় কঠোর সাজাও পেয়েছিলেন৷ ১৮৯১ সালে বঙ্গবাসী পত্রিকার সম্পাদক রামচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাষ্ট্রদ্রোহিতার আইনে গ্রেফতার করা হয়েছিল। স্বাধীনতার পরে এখনও এই আইন থেকে যাওয়া নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

উল্লেখ্য, কয়েকমাস আগে রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধেও দেশদ্রোহিতার মামলা দায়ের হয়েছিল অসমের আদালতে। এখন ফের দুই বিখ্যাত সাংবাদিককে দেশদ্রোহিতার অভিযোগে সমন পাঠানোয় বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধের অভিযোগ উঠছে। সমাজমাধ্যমে একটা অংশ মনে করছে অসম পুলিস গুয়াহাটির অপরাধ দমন শাখার মাধ্যমে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, গঠনমূলক সমালোচনা আর স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্যই কি করণ থাপর এবং সিদ্ধার্থ বরদারাজনের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা?

More Articles