তিন দশকে সবথেকে ভয়াবহ বন্যা, জলবায়ু পরিবর্তনে যেভাবে বিপর্যস্ত পঞ্জাব
Punjab Flood: বর্ষা ও নিম্নচাপ মিলে তৈরি করছে 'অ্যাটমোস্ফিয়ারিক ট্যাঙ্গো' বা অশান্ত অবস্থা। এ'বছর জেট স্ট্রিম বৃদ্ধি পাওয়ায় ভারতীয় উপমহাদেশে নিম্নচাপ বেড়েছে। ফলে দেশের প্রতিটি অংশেই স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বৃষ্টিপাত...
ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত পঞ্জাব। ইরাবতী, বিয়াস, সতলজের জলের তোড়ে ভেসে গেছে প্রায় ১৪০০ গ্ৰাম। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ৩৭ বছরে পঞ্জাব এমন ভয়ংকর বন্যা দেখেনি। একটানা অতি ভারী বৃষ্টির জেরে জলের তলায় ভারত পাক সীমান্তের প্রায় ৩০ কিমি কাঁটাতার। উদ্ধার কাজে নেমেছে দেশের তিন সুরক্ষাবাহিনী। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ২৩টি দল উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে পঞ্জাবে।

বন্যায় বিপর্যস্ত পঞ্জাব (ছবিসূত্র: এক্স হ্যান্ডেল)
সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী, বন্যার জেরে ক্ষতিগ্ৰস্ত পঞ্জাবের ২৩টি জেলা। ২০ হাজার মানুষকে এখনও পর্যন্ত উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৫০০০ জনকে পাঠানো হয়েছে ত্রাণ শিবিরে। এই বিপর্যয় পরিস্থিতিতে পঞ্জাবকে 'বিপর্যস্ত রাজ্য' হিসেবে ঘোষণা করেছে আম আদমি পাৰ্টির সরকার। বন্যায় প্রায় ৩.৭৫ লাখ হেক্টর কৃষিজমি ডুবে গেছে, নষ্ট হয়েছে ১.৪৮ লাখ হেক্টরেরও বেশি ফসল। বহু গবাদি পশু বন্যার জলে ভেসে যাওয়ায় দুধ উৎপাদন ও পশুপালনেও কোপ পড়েছে।

বন্যায় বিপর্যস্ত পঞ্জাব (ছবিসূত্র: এক্স হ্যান্ডেল)
বন্যার কারণ?
একটানা ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি, হিমাচল প্ৰদেশ ও জম্মু কাশ্মীরের উঁচু অঞ্চলে ভারী বৃষ্টির কারণে কম ঢালু পঞ্জাবে জল নেমে আসে। নদীর জলস্তর বেড়ে গিয়ে জল ছুটে আসে অভিকর্ষের টানে। এছাড়াও বিভিন্ন বাঁধগুলি যেমন ভাঁকরা নাঙ্গাল, পং, রণজিৎ সাগর থেকে অনিয়ন্ত্ৰিত জল ছাড়া বন্যা ডেকে আনে। অন্যদিকে ২০২৪ সালের বন্যা পরিস্থিতি নির্দেশিকা তৈরি হলেও তা কার্যকর হয়নি। ফলে খাল পরিষ্কার, নদীর পাড় শক্ত করা— এই কাজগুলো অসম্পূর্ণ থেকে যায়।

বন্যায় বিপর্যস্ত পঞ্জাব (ছবিসূত্র: এক্স হ্যান্ডেল)
এর পাশাপাশি নদীর পাড় জুড়ে চলছিল অনিয়ন্ত্ৰিত নির্মাণ কাজ। গাছ কেটে ঘর-বাড়ি কিংবা বহুতল বানানোও বন্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। লুধিয়ানায় বুদ্ধ দারিয়া নদীতে দূষণের মাত্ৰা ছাড়িয়েছে। শিল্পের বর্জ্য বন্যার জলে মিশে তৈরি করেছে 'ব্ল্যাক ফ্লাড' যা বন্যা পরিস্থিতিকে করে তুলেছে আরও ভয়াবহ।

বন্যায় বিপর্যস্ত পঞ্জাব (ছবিসূত্র: এক্স হ্যান্ডেল)
জলবায়ু পরিবর্তন
ভারতের 'শস্যের বাটি' বলা হয় পঞ্জাবকে। কিন্তু বন্যায় প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে পঞ্জাবে। একদিকে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি, অপরদিকে বুজে যাওয়া খাল, খারাপ নিকাশি ব্যবস্থা ডেকে এনেছে ভয়াবহ বন্যা। অনিয়ন্ত্ৰিত নিৰ্মাণ, গাছ কাটা বাড়িয়ে তুলেছে বিপদ। এর আগেও ২০২৩, ২০১৯, ২০১৩, ২০১০, ২০০৮ এবং ২০০৪ সালেও দেখা দিয়েছিল বন্যা। কিন্তু ভয়াবহতা এরূপ ধারণ করেনি।

বন্যায় বিপর্যস্ত পঞ্জাব (ছবিসূত্র: এক্স হ্যান্ডেল)
প্ৰত্যেক বর্ষায় যখন বছরের ৭৫ শতাংশ বৃষ্টিপাত হয়, ফসলের ক্ষতি হয়ে থাকে অল্প বিস্তর। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য প্রতি বছর বৃষ্টির পরিমাণ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। ২০২৪-এ কম বৃষ্টি হওয়ায় এ'বছর বন্যা নির্দেশিকা মানা হয়নি। ফলে বুজে যাওয়া খাল ও নালা নর্দমাগুলো ভেসে যায় অতি বৃষ্টিতে। এর সাথে বেআইনি ভাবে গাছ কেটে ফেলায় বাড়ছে গরম। যা সরাসরি প্রভাব ফেলছে বৃষ্টিপাতে।
আরও পড়ুন - জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়ঙ্কর প্রভাব, আকাশে আর দেখা যাবে না রংধনু?
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গত এক দশকে পঞ্জাবে বৃষ্টিপাত হয়েছে অনিয়মিত। আরব সাগরে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ক্রমেই জলীয় বাষ্প বাড়ছে। তা ছুটে আসছে স্থলভাগে। ফলে পরিস্থিতি হচ্ছে অস্বাভাবিক। পরিবর্তন হচ্ছে বৃষ্টিপাতের ধরনে। অল্প জায়গা জুড়ে বেশি মাত্রায় বৃষ্টি হচ্ছে। পাহাড়ি এলাকায় বাতাসে জলীয় বাষ্প বাড়ছে। একেই বর্ষা, তার ওপরে নিম্নচাপের জেরে একটানা ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বর্ষা ও নিম্নচাপ, দুইয়ে মিলে তৈরি করছে 'অ্যাটমোস্ফিয়ারিক ট্যাঙ্গো' বা অশান্ত অবস্থা। এ'বছর জেট স্ট্রিম বৃদ্ধি পাওয়ায় ভারতীয় উপমহাদেশে নিম্নচাপ বেড়েছে। ফলে দেশের প্রতিটি অংশেই স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। একদিকে মাত্ৰা ছাড়ানো দূষণ, অন্যদিকে নির্দেশিকা না মানা, পরিবেশের ওপর চাপ সৃষ্টি— সবই জলবায়ু পরিবর্তন ডেকে আনছে। সাথে ডেকে আনছে চরম বিপর্যয়। পঞ্জাবের ভয়াবহ বন্যা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে প্রকৃতির ওপর জোর-জুলুম চালালে ফল হতে পারে মারাত্মক।
Whatsapp
