ভারত-চিন নতুন সমীকরণ! বিশ্বগুরু ইমেজে ধাক্কা?
The China-India Relationship: চিনের সঙ্গে ভারতের নতুন সমীকরণ খোদ সংঘ পরিবারের মধ্যেও সংশয় তৈরি করছে। দু-মাস আগেও যে দেশের নাম উচ্চারণ ছিল দেশদ্রোহের সমতুল।
চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট মোদি ভক্ত ও গোদি মিডিয়ার জন্য নিত্যনতুন প্রতিকূলতা তৈরি করছে। ভারতের বিদেশ নীতির ক্ষেত্রেও সেই প্রভাব পড়ছেই। ওয়াকিবহাল মহল জানে, ২০১৪ পরবর্তী সময় থেকে যে শক্তিশালী রাষ্ট্রের তত্ত্ব, সংঘ পরিবার ফেরি করে তার অন্যতম উপাদান ছিল নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদির 'বিশ্বগুরু' ইমেজ। সত্যি কথা হল, ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে নরেন্দ্র মোদিকে কখনও আজকের মতো দুর্বল দেখা যায়নি। পরিস্থিতি আজ এতটাই জটিল যে বচনবাগীশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের প্রোঅ্যাকটিভ বিবৃতিগুলো হালে পানি পাচ্ছে না। এর প্রধান কারণ চিনের সঙ্গে ভারতের নতুন সমীকরণ যা খোদ সংঘ পরিবারের মধ্যে সংশয় তৈরি করছে। দু-মাস আগেও যে দেশের নাম উচ্চারণ ছিল দেশদ্রোহের সমতুল, সেই দেশকে আজ পরমমিত্র বানাবার নিদান অজস্র প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।
প্রথমে বলে নেওয়া ভাল, ভারত-চিনের মধ্যে সহযোগিতা ও অবৈরিতামূলক সম্পর্ক দুটো দেশের ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয় এবং সময়ের দাবি। জনসংখ্যার বিচারে পৃথিবীর এই দুটো দেশই পৃথিবীর মধ্যে বৃহত্তম এবং সবচেয়ে বড় বাজার। একটা সময় ভারত ও চিনের মধ্যে সম্পর্কের ভিত্তি ছিল পঞ্চশীল নীতি। 'হিন্দি- চিনি ভাই ভাই' ছিল এক জনপ্রিয় শ্লোগান। কিন্তু ষাটের দশকে ভারত-চিন সংঘর্ষের পরবর্তী সময়ে গঙ্গা ও হোয়াং- হোর মধ্যে দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গেছে, পৃথিবীর ভূ-রাজনৈতিক সম্পর্কের অনেক পরিবর্তন হয়েছে এবং বাস্তবত চিন-ভারত সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। বিশেষ করে নরেন্দ্র মোদি সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর সংঘ পরিবারের সৌজন্যে চিনকে গণশত্রু এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্যে ভারত চিনকে অতিক্রম করে এক বৃহৎ শক্তি হয়ে উঠবে- এই ন্যারেটিভ এক জাতীয় ন্যারেটিভের আকার নিয়েছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
এশিয়ায় তথা পৃথিবীতে চিনের ক্রম উত্থানকে নিয়ন্ত্রণ করতে দু-বছর আগেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে তাদের 'স্বাভাবিক মিত্র' ঘোষণা করেছিল। কিন্তু আজ ভারতীয় পণ্যের উপর ট্রাম্প ৫০% শুল্ক চাপানোর পরে রাতারাতি নরেন্দ্র মোদির চিনকে দীর্ঘস্থায়ী বন্ধু হিসাবে ঘোষণা এবং সাংহাই কর্পোরেশন সম্মেলনে সদলবলে যোগদান ভারতের বিদেশ নীতির ভঙ্গুরতাকে সামনে নিয়ে এসেছে। অর্থনীতিতে 'distress selling' বলে একটা কথা আছে যার অর্থ- বিক্রেতা যদি কোনো বিপদে পড়ে টাকার জন্য তাড়াহুড়ো করে তার পণ্য বিক্রি করতে চায়, তাহলে ক্রেতা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কম দাম দেয়। আজ ভারত-চিন সম্পর্কে আমাদের অবস্থা সেই বিক্রেতার মতো। এটা চিনের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো স্বাভাবিক প্রক্রিয়া নয় তাই এই নতুন বন্ধুত্বের পরিণাম নিয়ে অনেক প্রশ্ন থাকছে।
আরও পড়ুন- ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধ! কীভাবে সংকট কাটাবে ভারত?
ভারতের সঙ্গে চিনের সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রধান জটিলতা হল সীমান্ত সমস্যা, বিশেষ করে অরুনাচল প্রদেশের ক্ষেত্রে চিনের নাছোড় অবস্থান। ১৯৬২ সালের সীমান্ত যুদ্ধের পর নানা চড়াই-উতরাই চললেও পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ হয় ২০২০ সালে গালওয়ান উপত্যকার ঘটনায়। চিন ও ভারতের সেনার হাতে হাতে যুদ্ধে কুড়িজন ভারতীয় সেনার মৃত্যু হয়। এরপর ভারত অ্যাড-হক ভিত্তিতে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে বিদেশি বিনিয়োগে স্থগিতাদেশ দেয়, চিনা পর্যটকদের ভিসা পঞ্চাশ শতাংশ কমানো হয় এবং টিকটক-সহ ৬০টি চাইনিজ অ্যাপ ভারতে নিষিদ্ধ করা হয়। আজ ২০২৫ সালে যখন মোদি চিনে গিয়ে দুটো দেশের আগামী উজ্জ্বল সম্পর্কের ছবি আঁকছেন তখন অবশ্যই সীমান্ত বিরোধ নিয়ে কথাবার্তা কোথায় পৌঁছাল, তা নিয়ে আমাদের প্রশ্ন তোলা দরকার।
সম্পর্ক স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে দু-দেশের মধ্যে ১৭ দফা বৈঠক হয়েছে। তবুও ডেমচক ও ডেসপাক সেক্টরে অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। বরং বিভিন্ন স্যাটেলাইট ইমেজে দেখা যাচ্ছে যে পিপলস লিবারেশন আর্মির দখলে গালওয়ান উপত্যকা-সহ ভারতের ২,০০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা রয়েছে। ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে বিদেশ মন্ত্রী জয়শঙ্কর এক বিবৃতিতে বলেন যে দু-দেশের সীমান্ত পরিস্থিতিতে উত্তেজনা প্রশমিত হয়েছে। কিন্তু পরের দিন সেনা প্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী এই বক্তব্যের বিরোধিতা করে বলেন যখন ২০২০ পূর্ববর্তী অবস্থা ফিরবে তখনই স্বাভাবিক হওয়ার দাবি করা যাবে। এই ঘটনা চোখে আঙ্গুল দিয়ে সেনা ও পররাষ্ট্র দফতরের মধ্যেকার যোগাযোগহীনতাকে স্পষ্ট করে দেয়। এমনকি বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যন স্বামী ও বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর একাধিক অভিযোগ খন্ডন করতে ব্যর্থ হয়েছে মোদি সরকার।
এবার আসা যাক ২২ এপ্রিল পঁহেলগাওতে সন্ত্রাসবাদী হামলায় ২৬ জন পর্যটকের মৃত্যুর পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যে সংঘর্ষ হয় তাকে ভারত অপারেশন সিঁদুর নাম দেওয়া হয়। একথা আজ সবাই মানতে বাধ্য যে এই সংঘর্ষে ভারত সামরিক দিক থেকে বিরাট সাফল্য অর্জন করতে পারেনি এবং যে ভাবে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দৌত্যে সংঘর্ষ বিরতি হয় তা ভারতের বিদেশ নীতির পক্ষে গৌরবজনক হয়নি। একথা আজ দিনের আলোর মতো পরিষ্কার যে পাকিস্তানের অপ্রত্যাশিত প্রতিরোধের প্রধান কারণ চিনের সামরিক সাহায্য। সে সময় যে ভাষায় চিনের বিদেশ মন্ত্রী ওয়াং হি পাকিস্তানের পক্ষে দাঁড়ান তা একবার উল্লেখ করা দরকার:
"As an ironclad friend and all -weather strategic cooperative partner, China fullly understands pakistan's legitimate concerns and supports Pakistan in safeguarding its sovereignty and security interests"।
এর আগে কখনও ভারত-পাক সংঘর্ষে চিন এরকম একতরফা অবস্থান নেয়নি। এমনকি অপারেশন সিঁদুর চলাকালীন ভারতীয় মিডিয়ার খবরে আমরা দেখতে পাই যে পাকিস্তান যুদ্ধ লড়েছে চিনের অস্ত্রের জোরে। ডেপুটি চিফ অফ আর্মি স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাহুল আর সিং-এর হিসাব অনুসারে পাকিস্তানের অস্ত্রের আশি শতাংশ চিন থেকে আমদানি করা। এর মধ্যে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রের উল্লেখ করা প্রয়োজন- পিএল- ১৫ মিসাইল (২০০ কিমি রেঞ্জ) যা দিয়ে ভারতের বেশ কিছু সামরিক প্লেন ধ্বংস করা হয়েছে, জে-১০ ফাইটার জেট এবং এইচ কিউ-৯ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম। সংঘর্ষ বিরতির পর ভারত যখন পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু জলচুক্তি বাতিল করে চিন তখন সেদেশ সফররত পাক বিদেশ মন্ত্রী ইশক দারকে পাশে বসিয়ে ইঙ্গিত দেয় যে প্রয়োজনে চিন ভারতকে ব্রহ্মপুত্রের জলের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে। এই প্রেক্ষাপটে যখন জুলাই মাসে (২০২৫) জয়শঙ্কর বলেন যে ভারত-চিনের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে তখন তা নিতান্তই হাস্যকর শোনায়। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় চিনের স্বার্থ জড়িত আছে। এই স্বার্থ সোজা বাংলায় অর্থনৈতিক, বানিজ্যিক ও সামরিক। এজন্য চিন দীর্ঘদিন ধরে প্রস্তুতি নিয়েছে।
মোদি জমানায় আমাদের পররাষ্ট্রনীতির সবচেয়ে বড় বিপর্যয় হল আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে এবং চিনের কূটনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে। চিন-পাকিস্তান-বাংলাদেশ-আফগানিস্তান অক্ষ আজ এক আর্থিক ও সামরিক বাস্তবতা। আমাদের দীর্ঘ দিনের বন্ধু নেপাল, ভুটান ও শ্রীলঙ্কায় ভারত বিরোধিতা ক্রমবর্ধমান। এক্ষেত্রে আঞ্চলিক সহযোগিতা মূলক সংগঠন সার্ক-কে যথাযথ গুরুত্ব আমরা দিইনি। বিশ্বগুরু হওয়ার স্বপ্নে বিভোর মোদি বিমস্টেকে বিকল্প হিসাব গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন কিন্তু বাস্তবত সেটাও মুখ থুবড়ে পড়েছে। সীমান্ত বিরোধ, বিদেশ নীতি, সামরিক শ্রেষ্ঠত্বের চেয়েও ভারত-চিন সম্পর্কে আজকের দিনে সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক হল অর্থনীতিতে ভারতের ক্রমবর্ধমান চিন নির্ভরতা। আমাদের আশঙ্কা এই আর্থিক অসাম্য ভারতকে চিনের প্রতি আত্মসমর্পণ করাতে পারে।
এখন দেখা যাক, কীভাবে ২০২০ সালে বহু বিজ্ঞাপিত 'বয়কট চিন' নীতি ট্রাম্পের শুল্ক বৃদ্ধির আগেই ভারত পরিত্যাগ করেছে। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে মোদি সরকারের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ভি অনন্ত নাগেশ্বরম বার্ষিক ইকনমিক সার্ভেতে বলেন ভারতের জন্য চিনের প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ কার্যকরী সাব্যস্ত হবে। পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মতো ভারতও চিনা বিনিয়োগকে ব্যবহার করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেশি করে পণ্য রফতানি বৃদ্ধি করতে পারবে। এই সার্ভেতে এও বলা হয় চিনের থেকে মালপত্র এনে তাতে ভ্যালু অ্যাড করে পুনরায় আমেরিকাতে রফতানি করলে ভারতীয় ফার্মগুলো লাভবান হবে।চিনের বিনিয়োগের জন্য আমাদের এই আকুলি-বিকুলির কারণ অন্যান্য দেশগুলো থেকে বিশেষ করে ভারতে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) কমছে। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের হিসাব অনুসারে, ২০০৮-০৯ জিডিপির ৩.৫০% ছিল এফডিআই, যা ২০২২-২৩ সালে কমে হয় ১.২৫%। আর তাই চিন থেকে যদি বিদেশি বিনিয়োগ না আসে তবে মোদির স্বপ্নের 'মেক ইন ইন্ডিয়া' প্রকল্পের সলিল সমাধি ঘটে যাবে এবং বেকারির ভূত মোদি সরকারকে তাড়া করে বেড়াবে। কী ধরণের বাধ্যতা কাজ করেছিল চিনের পুঁজি আহ্বান করতে তা বাণিজ্য মন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের একটি মন্তব্যে পরিষ্কার :
"To boost Indian manufacturing and plug India into the global supply chain, it is inevitable that India plugs itself into China's supply chain. Whether we do so by relying solely on imports or partially through chinese investments is a choice that India has to make"।
এরপর থেকে পুরোটাই চিনের আর্থিক শক্তির আধিপত্যের গল্প। চাইনিজ ব্যাটারি কোম্পানিগুলোকে ভারতে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য লিথিয়াম, নিকেল, কোবাল্ট ও ভ্যানাডিয়াম খনিজের ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক শূন্য করা হয়। মোবাইল ফোনের যন্ত্রপাতি আমদানি শুল্কের হার ২০% থেকে কমিয়ে ১৫% করা হয়। ২০২৪ সালে ভারতের সঙ্গে চিনের বাণিজ্যের পরিমাণ হয় ১১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ফলত আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রকে অতিক্রম করে চিন হয় ভারতের সবচেয়ে বানিজ্য সহযোগী। কিন্তু আসল অঙ্কটা হল ভারতের চিনের সঙ্গে বানিজ্য ঘাটতি। ২০১৯-২০ সালে যা ছিল ৮৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা ২০২৪-২৫ সালে বেড়ে হল ৯৯.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২৪- ২৫ সালে আমরা চিনে রফতানি করেছি মাত্র ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য যার মধ্যে বেশিটাই লৌহ আকরিক ও ভোজ্যতেল।
আরও পড়ুন- ট্রাম্প হত্যার চেষ্টা ব্যর্থ হতেই টার্গেট তাঁর বন্ধু! ফল কী হবে?
অন্যদিকে, চিন থেকে আমরা আমদানি করেছি ১২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য যার মধ্যে রয়েছে মেশিন টুলস, কম্পিউটার, অর্গানিক কেমিক্যালস, ইন্টিগ্রিটেড সার্কিট ও প্লাস্টিক। আমরা যদি আমদানিকৃত পণ্যের ধরণটা আলোচনা করি তাহলে দেখতে পাব মাত্র ৬.৮% ফিনিশড প্রোডাক্ট, ৭০.৯% মধ্যবর্তী পর্যায়ের পণ্য এবং ২২.৩% ক্যাপিটেল গুডস। মোদ্দা কথা হল, চিন থেকে এগুলো আমদানি করে ভারতীয় শিল্পসংস্থাগুলো পণ্য তৈরি করছে দেশের জন্য ও বিদেশে রফতানির জন্য। এর অর্থ ভারতের ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রির অস্তিত্ব আজ বহুলাংশে চিনের উপর নির্ভরশীল। বিষয়টা বোঝার সুবিধার জন্য দু-একটা উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। প্রথমটি হল, ইলেকট্রনিকস। আমরা জানি এক্ষেত্রে ভারতের প্রধান রফতানিকৃত পণ্য হল স্মার্টফোন, যার মধ্যে আবার ৭০% আই ফোন। এখন এই স্মার্টফোন তৈরির উপাদানের ৯৫% চিন থেকে আমদানি হয় কারণ স্থানীয় সাপ্লাই চেন নেই। ২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী, ভারত চিন থেকে ৩২.১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ইলেকট্রনিকস যন্ত্রপাতি কিনেছে। দ্বিতীয়টি হল, ফার্মা (ওষুধ) সেক্টর। ভারতকে বলা হয় 'The world's Pharmacy'। ভারতের ফার্মা কোম্পানিগুলোর জেনেরিক ওষুধের ব্যবসার পরিমাণ বছরে ৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যার মধ্যে ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আসে বৈদেশিক রপ্তানি থেকে। এখন এই ওষুধ তৈরির উপাদান গুলির দুই তৃতীয়াংশ আসে চিন থেকে। ব্লুমবার্গের রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, জেনেরিক ওষুধের অগ্রগণ্য রফতানিকারক অরবিন্দ ফার্মার কারখানার কাঁচামালের ৫৫% আসে চিন থেকে। চিন কী ভাবে ভারতের শিল্পের গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ করে তার উদাহরণ হল, রেয়ার আর্থ দেওয়ার ক্ষেত্রে চিনের নীতি ভারতীয় গাড়ি উৎপাদক সংস্থাগুলোকে বিপদে ফেলে দিয়েছে। একই ভাবে রাসায়ানিক সারের ক্ষেত্রে চিনের নিষেধাজ্ঞা ভারতের ফল ও সবজি চাষে ধ্বংসাত্মক প্রভাব ডেকে এনেছে।
আমরা যদি তথ্যের দিকে চোখ ফেরাই তাহলে দেখতে পাব জয়শঙ্করের ১৪ জুলাই (২০২৫) বেজিং সফর, ওয়াং হির ১৮ আগস্ট দিল্লি সফর ভারত-চিনের যে বন্ধুত্বের সূচনা করেছে এবং চিনের নেতৃত্বে চলা সাংহাই সম্মেলনে নরেন্দ্র মোদি যে চিনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ডাক দিয়েছেন, সেক্ষেত্রে পাল্লা ভারি চিনের দিকে। ইতিহাসে একটি প্রচলিত প্রবাদ হল প্রতিটি সম্পাদিত সন্ধিতে একপক্ষ ঘোড়া ও অপরপক্ষ ঘোড়সওয়ারের ভূমিকা পালন করে। এই মুহূর্তে আর্থিক, সামরিক ও কূটনৈতিক শক্তির বিচারে চিন ঘোড়সওয়ারের ভূমিকায়। ভারতকে পরিস্থিতির বদল ঘটাতে হলে কখনও আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র বা কখনও রাশিয়া-চিন জোটের দিকে হেলে পড়লে চলবে না। পরের ভরসায় বিশ্বগুরুর খোয়াব দেখার পরিণতি ট্রাম্প আমাদের দেখিয়ে গেছেন। আমরা যেন চিনের ক্ষেত্রে একই ভুলের পুনরাবৃত্তি না করি।

Whatsapp
