এপ্রিলের শুরু থেকেই বদলে যাচ্ছে নিয়ম, কোন বড় ধাক্কার মুখে ফোন পে, গুগল পে ব্যবহারকারীরা?

Upi Payment : কথায় কথায় ইউ পি আই করছেন, এপ্রিলের শুরু থেকে যে ধাক্কার মুখে পড়বেন ফোন পে, গুগল পে ব্যবহারকারীরা

ছোট্ট একটা বারকোড, তাতেই কাজ হাসিল। বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে তাই টাকার জায়গায় বেশ জাঁকিয়ে বসেছে ইউ পি আই -এর ব্যবহার। বড়ো কোনও শপিং মল অথবা রেস্তোরাঁ তো বটেই এমনকী পথ চলতি খুচরো দোকানদার থেকে শুরু করে ফুচকাওয়ালা অথবা টোটোচালক সবার হাতে হাতেই ঘুরছে অনলাইন লেনদেনের এই সহজ পন্থা। খুচরো সমস্যার সমাধানেও এর জবাব নেই। ধরুন আপনার ১০ অথবা ১৫ টাকার কিছু জিনিস প্রয়োজন, অথচ একশ টাকার নোট দিলে কিছুতে ভাঙানি দিতে পারছেন না দোকানি, তখনই নজর সরে যাচ্ছে সামনে রাখা স্ক্যানারের দিকে। দোকানদারও হয়তো দেখিয়ে দিয়ে বলছেন, “অনলাইন করে দিন না!”

কিন্তু জানেন কি এবার থেকে এই অনলাইন লেনদেনের ওপরেও বসতে চলেছে কর। হতে মাত্র আর দিন দুয়েক বাকি। চলতি বছরের এপ্রিল মাসের শুরু থেকেই ফোন পে, গুগল পে ইত্যাদি ইউপিআই লেনদেনের ওপর শতকরা ১.১ শতাংশ হারে সুদ গুণতে হবে আমজনতাকে। ন্যাশনাল পেমেন্ট কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার তরফে জারি করা বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা গিয়েছে, ১ এপ্রিলের পর থেকে ২০০০ টাকার উপরে লেনদেনের উপর ১.১ শতাংশ সুদ আরোপ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

আকস্মিক এই নির্দেশে তড়িঘড়ি কপালে হাত পড়েছে অনেকেরই। মূলত মোদি সরকারের আমলে আচমকা নোট বন্দিকে ঘিরেই অনলাইন লেনদেন এতটা ছড়িয়ে পড়ল বাজারে। তাছাড়া আজকাল বড় অঙ্কের নগদ টাকা ব্যয়ে বেড়ানোর অভ্যাসও প্রায় ত্যাগ করেছে মানুষ, এর জেরে অবশ্য অনেক ক্ষেত্রে বড় অঙ্কের টাকা চোট যাওয়ার হাত থেকে অনেকাংশে রেহাই পেয়েছেন ব্যবহারকারীরা। ফলে বর্তমান এই বিজ্ঞপ্তিতে যে, ভালো রকম অসুবিধায় পড়বেন বহু মানুষ তা বলাই বাহুল্য।

আরও পড়ুন - ‘ডিজিটাল’ ভারতেও কোটি কোটি মহিলা বঞ্চিত মোবাইল ব্যবহারে, নয়া সমীক্ষায় বৈষম্য স্পষ্ট

খুচরো টাকা নেওয়া অথবা ফেরত দেওয়ার ঝামেলা নেই, সরাসরি নির্ধারিত মূল্য চলে যাবে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। ডিজিটাল দুনিয়ায় এটাই যেন দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে। জেনে রাখা দরকার এই যে নির্দিষ্ট বার কোডের কথা বলা হচ্ছে সেটি কিন্তু প্রত্যেক ব্যবহারকারীর জন্য পৃথক পৃথক। আর এই অনলাইন লেনদেন সংক্রান্ত অ্যাপ গুনির মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় স্যাও গুলি হল যথাক্রমে, ফোন পে, গুগল পে, পে টি এম ইত্যাদি। বদলে যাওয়া সময় এবং হালফিলের প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ গুগল পে, ফোন পে, পেটিএম-এর মতো অ্যাপের মাধ্যমে ইউপিআই ব্যবহার করে থাকেন। সাম্প্রতিক সমীক্ষায় পাওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, বর্তমানে আমাদের দেশে সর্বাধিক ব্যবহৃত ইউপিআই প্ল্যাটফর্ম হল ফোন পে। এর পর দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে গুগুল পে। তারপর একে একে পে টি এম, আমাজন পে ইত্যাদির নাম আসে।

সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে, গোটা দেশে প্রায় ৬৭ মিলিয়ন অ্যাক্টিভ ইউজার রয়েছে এই ইউপিআই মাধ্যমের। ফলে গোটা দেশেই ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে এই বিজ্ঞপ্তি। তবে একটাই স্বস্তি যে, আপাতত সাধারণ নাগরিককে কোনও চার্জ দিতে হবে না, প্রাথমিকভাবে মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট ইউজার অর্থাৎ বড় ব্যবসায়ীদেরই উপরেই বসতে চলেছে এই চার্জ।

আপনার মুঠোফোনের সাহায্যেই ব্যবহার করা যায় এই UPI। এর পুরো কথা হল Unified Payments Interface। UPI এমন একটি পেমেন্ট সিস্টেম যার সাহায্যে দেশের যে কোনও প্রান্তে বিষয়ে যখন তখন লেনদেন করা সম্ভব। এর জন্য না ব্যাংকে যাওয়া ইথিব লম্বা লাইনে দাঁড়ানোর কোনও প্রয়োজনীয়তা নেই। নির্দিষ্ট বারকোডে ঘরে বসেই টাকা পাঠানো সম্ভব। নগদ অর্থের কোনও প্রয়োজনীয়তা নেই, সরাসরি বৈধ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ওই নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ কেটে নেওয়া হয় এই মাধ্যমে। তবে হ্যাঁ এর জন্য অবশ্যই ইন্টারনেট কানেকশনের প্রয়োজন হয়।

আরও পড়ুন - আবারও কি বড় টাকার ধাক্কা? সময়সীমা তো বাড়ল প্যান আধার লিংকের, জরিমানা কত দিতে হবে?

একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই অন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা চলে যায় এই ফোন পে, গুগল পে ইত্যাদির মাধ্যমে।ইউইপিআই একাউন্ট থেকে অন্য ইউপিআই একাউন্টে টাকা পাঠানো ছাড়াও ইউপিআই আইডি দিয়ে অনলাইনে কেনাকাটা করা, মোবাইল রিচার্জ, ডিটিএইচ রিচার্জ, বীমা কোম্পানির বিল, ইলেকট্রিক অথবা গ্যাসের বিল ইত্যাদি সবই জমা করা যায়।ইউপিআই পরিষেবা শুরু হওয়ার আগে আমাদের দেশে এনপিসিআই (NPCI) পরিষেবা শুরু হয়েছিল। NPCI এর পুরো নাম National Payments Corporation of India.

বর্তমানে ভারতে যে সমস্ত অনলাইন ব্যাংকিং পরিষেবা চালু আছে তাদের যাবতীয় ইউপিআই এটিএম ইত্যাদি সংক্রান্ত নথি সমস্ত কিছুর হিসেব রাখা হয় এই NPCI বা National Payments Corporation of India -এর মাধ্যমে। অনলাইন ওয়ালেট যেমন google pay, phonepe, bhim, Paytm ছাড়াও পৃথক পৃথক ব্যাংকের Atm er মধ্যে সংযোগ স্থাপনের কাজটিও করে এই মাধ্যম।

জানেন Upi কীভাবে ব্যবহার করবেন?

ইউপিআই আইটি ব্যবহার করতে হলে সবার প্রথমে স্মার্টফোনের প্লে স্টোরে গিয়ে নির্দিষ্ট ইউপিআই অ্যাপ যেমন গুগল পে, ফোন পে অথবা পেটিএম ইত্যাদি ডাউনলোড করে নিতে হবে। এপ্লিকেশনটি ডাউনলোড করা হয়ে গেলে সেখানে নির্দিষ্ট মোবাইল নাম্বার দিয়ে সাইনআপ করতে হবে। খেয়াল রাখবেন এই মোবাইল নাম্বারটি কিন্তু অবশ্যই ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে হবে। এরপর একে একে আপনার ভার্চুয়াল ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সব নথি জমা করতে হবে। সঙ্গে পছন্দের upi আইডি। ইউপিআই আইডি হিসেবে আপনি আপনার নাম ফোন নাম্বার অথবা ইমেল আইডি বেছে নিতে পারেন। এখানে ছয় সংখ্যার পিন দিতে হবে। ভারতের কম বেশি সব সরকারি এবং বেসরকারি ব্যাংকেই এই upi পরিষেবা পাওয়া যায়। লেনদেন করার সময় সরাসরি স্ক্যানার ব্যবহার করে টাকা দেওয়া যেতে পারে তাছাড়া, আইএফএসসি কোড এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নথি দিয়ে সরাসরি ব্যাংকেও টাকা পাঠানো যায়।

More Articles