বদলে যাচ্ছে ধান, গম, কলার আকার! কেন?
Future of crop production: কৃষিনির্ভর এই দেশে তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে প্রধান খাদ্যশস্য ধানের গাছে ফুল ফোঁটা থেকে শুরু করে দানার গঠনও সঠিকভাবে হয় না। সেই সঙ্গে বেড়ে যায় পোকামাকড়ের উপদ্রব।
বিশ্বব্যাপী সস্তা ও পুষ্টিকর ফল কলা। ৪০ কোটিরও বেশি মানুষ তাঁদের দৈনিক ক্যালোরির ১৫ শতাংশ থেকে ২৭ শতাংশ এই ফলের থেকেই পেয়ে থাকেন। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সঙ্কটের মুখে এই ফলও। কলায় ব্ল্যাক সিগাটোকা এবং ট্রপিক্যাল রেস ৪-এর মতো রোগ দেখা দিচ্ছে। এই রোগ কলা-সহ অন্যান্য ফলনেও বাধা সৃষ্টি করছে। ইতিমধ্যে এই রোগ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া এবং পেরুতে দেখা গিয়েছে।
তথ্য অনুযায়ী, গত ৪ বছরে সারা বিশ্বে আগাছা, পোকামাকড় ও রোগের কারণে বার্ষিক গড়ে ১০ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশ ফসলের ক্ষতি হয়েছে, যার জন্য বিগত বছরের থেকে ফলন অনেকটাই কমছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই রোগ আরও ছড়াবে।
ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্বান শ্যাম্পেইনের কৃষি ভোক্তা অর্থনীতির সহকারী অধ্যাপক অ্যান্ড্রু হাল্টগ্রেন বলেছেন, ‘‘খুব গরমের দিনে, এমনকি চাষের মরশুমের শেষের দিকে অল্প সময়ের জন্য হলেও ফলন কমতে পারে।’’ তাঁর আশঙ্কা, "উৎপাদন কম হলে বিশ্বব্যাপী কলার দাম বাড়বে হু হু করে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ফসলে রোগের প্রভাব বেড়ে যাওয়া নিয়ে কৃষি কোম্পানি ফ্রেশ গেল মন্টের চেয়ারপার্সন এবং সিইও মোহাম্মদ আবু গাজালেহ বলেছেন, ‘‘এই প্রভাব বহু বছর ধরে চলে আসছে, এটি রাতারাতি ঘটেনি।’’
আরও পড়ুন- ধূ ধূ মরুভূমিতে শস্য-শ্যামল কৃষিক্ষেত! যেভাবে অসাধ্যসাধন করেছিলেন রাজা গঙ্গা সিং!
পৃথিবী জুড়ে এই জলবায়ু পরিবর্তন এক বিশাল আকার ধারণ করার ফলে ঋতু পরিবর্তনে অস্বাভাবিকতা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে এই সমস্যা আরও মাথাচাড়া দিচ্ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে প্রধান খাদ্যশস্য ধানের গাছে ফুল ফোঁটা থেকে শুরু করে দানার গঠনও সঠিকভাবে হয় না। সেই সঙ্গে বেড়ে যায় পোকামাকড়ের উপদ্রব। তার মধ্যে ব্যাকটেরিয়াল পেনিকেল ব্লাইট এবং টুংরো ভাইরাস উল্লেখযোগ্য।
মানুষ দৈনন্দিন যে ক্যালরি গ্রহণ করে তার দুই-তৃতীয়াংশ এই ধরনের খাদ্য শস্য থেকে আসে। একই ঘটনা ঘটছে গমের ক্ষেত্রেও। গম মূলত ঠান্ডা ও শুষ্ক আবহাওয়ায় ভালো ফলন দেয়। কিন্ত ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় ফলন কমে যায় এবং বেশ কিছু রোগ দেখা দেয়। তার মধ্যে গমের ব্লাস্ট (ছত্রাকজনিত) ও পাতার মরিচা রোগ উল্লেখযোগ্য। একইভাবে দানাজাতীয় শষ্য ভুট্টা তাপ সহ্য করতে পারে, কিন্তু সেই তাপমাত্রা যদি ৩০-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হয়, ভুট্টার ফলনেও ক্ষতি করে। এর ফলে দানার গুণমান ও ফলন দুই-ই কমে যায়। যদি আর্দ্রতা ও উষ্ণতা দুই-ই বেড়ে যায়, ভুট্টা পাতায় ব্লাইট (এই রোগটি ছত্রাক দ্বারা সৃষ্ট)-এর প্রাদুর্ভাব বাড়ে। এ ছাড়াও ভুট্টা গাছে থাকে মারাত্মক ক্ষতিকারক পোকা, যা কচি পাতার ডগা খেয়ে ফেলে, তার নাম ফল আর্মিওয়াম।
উল্লেখ্য, এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রধান কারণ, মানুষের জন্য সৃষ্ট গ্রিনহাউস গ্যাস। যেমন কার্বন ডাই অক্সাইড থেকে শুরু করে মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড এই সবই নির্গত হয় জীবাশ্ম জ্বালানি এবং রাসায়নিক সারের ব্যবহার থেকে। এ ছাড়াও বৃষ্টিপাতের অনিয়ম, বনধ্বংস প্রভৃতি কারণে গাছের কার্বন শোষনের ক্ষমতা কমে যাওয়ায় বাতাসে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ অল্প অল্প করে বাড়ছে। প্রত্যেক দেশে নিজস্ব উদ্যোগে যে হারে কার্বন নিউট্রাল করা দরকার, তা করতে না পারায় তাপমাত্রা দিনের পর দিন বেড়েই চলছে।
Whatsapp
