মাঝপথে পড়াশোনা ছেড়েছিলেন! মাত্র পঁচিশেই ১০০ কোটির মালিক এই যুবক

পৃথিবীজুড়ে আরও এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে। ফলে জীবনে কিছু করতে চাইলে বয়স কোনও বাধাই নয়।

ছোট থেকে অঙ্কপাগল ছেলেটা জাতীয় স্তরে গণিত প্রতিযোগিতা, কোডিংয়ের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতো। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াকালীন এক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে পুরস্কার হিসেবে জিতেও নিয়েছিলেন ডিজনিল্যান্ড যাওয়ার টিকিট। এমন ছেলের যে ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল, একথা আঁচ করাই যায়। ঠিক এমনটাই হয়েছে। এই মুহূর্তে ২৫ বছর বয়সি এই যুবক আলেকজান্ডার ওয়াং জায়গা করে নিয়েছেন ফোর্বসের বিলিয়নিয়রের তালিকায়। ওয়াং এই মুহূর্তে বিশ্বের কনিষ্ঠতম স্ব-নির্মিত বিলিয়নিয়র।

ওয়াংয়ের জীবন
নিউ মেক্সিকোর লস অ্যালমোসে সেনা পরিবারেই বেড়ে ওঠেন ওয়াং। মা-বাবা দু'জনেই পদার্থবিদ এবং সেনাবাহিনীর অস্ত্র তৈরির সঙ্গে যুক্ত। লস অ্যালমোস আমেরিকার গোপনতম জায়গাগুলির মধ্যে অন্যতম। ফোর্বসের মতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন লস অ্যালমোসেই পারমাণবিক বোমা তৈরি করা হয়েছিল। ওয়াং ছোট থেকেই অঙ্কে তুখড়। ফোর্বসকে দেওয়া ইন্টারভিউতে ওয়াং নিজেই বলেছেন, "তখন 'ম্যাথকাউন্টস' নামে জাতীয় স্তরে একটি প্রতিযোগিতা হতো। আমি ছোটবেলায় ঘুরতে যাওয়ার খুব বেশি সুযোগ পাইনি। যখন শুনেছি, পুরস্কার হিসেবে ডিজনিল্যান্ড যাওয়ার টিকিট পাওয়া যাবে, তখন আরও মরিয়া হয়ে খেলেছিলাম।"

খুব অল্প বয়সেই পা রাখেন কর্মজীবনে। মাত্র ১৭ বছর বয়সে প্রশ্নোত্তর ওয়েবসাইট কোরা-তে (Quora) কোডিংয়ের কাজ করতেন এই তরুণ। ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি-তে মেশিন লার্নিং কোর্সে ভর্তি হলেও মাঝপথেই ছেড়ে দেন সেই পড়া। এই প্রসঙ্গে ওয়াং নিজেই ফোর্বসকে বলেছেন, "গ্রীষ্মকালীন ইন্টার্নশিপের জন্য ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম। বেশ কিছু জায়গা থেকে কাজের সুযোগও আসে। এর কিছুদিন পরেই সব ছেড়ে নিজের মতো করে কাজ শুরুর কথা ভাবি।"

আরও পড়ুন: এমবিএ করে চায়ের দোকান! এই ‘চা-ওয়ালা’ এখন দেশের অনুপ্রেরণা

সব ছেড়ে মাত্র ১৯ বছর বয়সেই বন্ধু লুসি গুওয়ের সঙ্গে ২০১৬ সালে শুরু করেন নতুন কোম্পানি 'স্কেল এআই'। কোরা-য় কাজ করার সময় লুসির সঙ্গে আলাপ হয় ওয়াংয়ের। আজ স্কেল এআই কোম্পানির বাজারদর ৭.৩ বিলিয়ন। ওয়াই কম্বিনেটর নামক সংস্থা প্রথম এই সংস্থায় বিনিয়োগ করে। বর্তমানে এই কোম্পানিতে ওয়াংয়ের ১৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে, যার বর্তমান মূল্য এক বিলিয়ন ডলার।

স্কেল এআই (AI) সংস্থার কাজ কী?
ওয়াংয়ের তৈরি স্কেল এআই সংস্থার কাজ হলো উপগ্রহ চিত্রকে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের মাধ্যমে বিশ্লেষণ এবং প্রসেস করা। ফলস্বরূপ, যে কোনও মানুষের তুলনায় এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অনেক আগেই নির্ভুলভাবে বিশ্লেষণ করে উপগ্রহ চিত্রকে। ছয় বছর বয়সি এই কোম্পানির সঙ্গে এই মুহূর্তে আমেরিকান সেনার তিনটি চুক্তি রয়েছে। এগুলির প্রত্যেকটি প্রায় ১১০ মিলিয়ন ডলারের। মা-বাবার পথেই মার্কিন সেনাবাহিনীর ভরসা হয়ে উঠেছে ওয়াং।

মার্কিন সেনা ছাড়াও আজ লিফ্ট, এয়ারবিএনবির মতো প্রায় ৩০০টি কোম্পানির হয়ে কাজ করে ওয়াংয়ের এই কোম্পানি। রুশ বাহিনীর বোম কতখানি আঘাত করেছে ইউক্রেনকে, তা বিশ্লেষণ করে দেখতে সাহায্য করেছে স্কেল এআই।
তরুণ বিলিয়নিয়র ওয়াংয়ের কথায়, "প্রতিটি কোম্পানি তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই গড়ে ওঠে। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো, কোম্পানির জন্য প্রয়োজনীয় ডেটা তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া, যাতে ব্যবসার আরও উন্নতি হয়।" এ-প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ফোর্বস-এর তৈরি অনূর্ধ্ব ৩০ বিলিয়নিয়রের তালিকায় ছিল ওয়াংয়ের নাম। ওয়াংয়ের পরেই ২৫ বছর বয়সি ব্রাজিলের ক্রেডিট কার্ড সংস্থার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ব্রেক্স রয়েছেন ফোর্বস-এর তালিকায়।

তবে শুধু ওয়াং নয়, আজ যাঁরা কয়েক বিলিয়ন ডলারের মালিক, তাঁদের অনেকেই খুব কমবয়সেই জায়গা করে নিয়েছিলেন এই তালিকায়। ১৯৮৭ সালে বিল গেটস যখন বিলিয়নিয়র হলেন, তখন তাঁর বয়স মাত্র ৩১। সে সময় বিল গেটসই ছিলেন বিশ্বের কনিষ্ঠতম বিলিয়নিয়র। ২০০৮ সালে কনিষ্ঠতম বিলিয়নিয়রের জায়গা দখল করে নিলেন ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গ। বিলিয়নিয়র হওয়ার সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ২৩। স্নাপচ্যাট অ্যাপের মালিক ইভান স্পাইগেল ২০১৫ সালে মাত্র ২৫ বছর বয়সে বিলিয়নিয়র হন। আবার কাইলি জেনার, হলিউড তারকা এবং কসমেটিক কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা মাত্র ২১ বছর বয়সে বিলিয়নিয়র হন। তিনিও স্ব-নির্মিত একজন বিলিয়নিয়র।

পৃথিবীজুড়ে আরও এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে। ফলে জীবনে কিছু করতে চাইলে বয়স কোনও বাধাই নয়। অল্প বয়সে বিলিয়নিয়র যেমন হয়েছেন, আবার অনেকে বেশি বয়সে এসেও জীবনে সাফল্য পেয়েছেন কেউ কেউ। জায়গা করে নিয়েছেন ফোর্বসের বিলিয়নিয়র তালিকায়। তাই লক্ষ্য স্থির রেখে নিজের পছন্দ করা পথে হেঁটে গেলেই সাফল্য আসতে বাধ্য।

 

More Articles