সর্বব্যাপী তাপপ্রবাহ, তবে ভিলেনের নাম কংক্রিট
Heat Wave: গঙ্গা এবং সুবৃহৎ জলাভূমি বিপুলভাবে সাহায্য করতে পারে মহানগরীর তাপমাত্রা খানিক নিয়ন্ত্রণে রাখতে। অবশ্যই যদি সঠিক ভাবে এবং কঠোর উদ্যোগের সঙ্গে তা সংরক্ষণ করা যায়।
বিশ্ব উষ্ণায়নের দরুন তাপপ্রবাহের দাপট বেড়েছে। তবে গ্রাম-শহরের পরিসীমার হিসেব মাথায় রেখে তাপপ্রবাহের প্রকোপ পড়ে না। তাপপ্রবাহ যে কেবল কলকাতা মহানগরীর মধ্যে সীমাবদ্ধ, এমনটা নয়। মহানগরীর অনতিদূরের মফসসল আর গ্রামাঞ্চলেও তার প্রভাব পড়ে বৈকি। তাহলে কলকাতায় মতো শহরাঞ্চলের তাপমাত্রা বেশি কেন? তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, মহানগরীর তাপমাত্রা বাড়ার নেপথ্যে দায় কি কেবলই জলবায়ু পরিবর্তনের?
এ শহরে তাপমাত্রার পারদ চড়ার দায় অনেকাংশে বর্তায় এ শহরে জমি কীভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং বাড়িগুলোকে কীভাবে বানানো হচ্ছে, তার উপরেও। যে কোনও বৃহত্তর শহরই কংক্রিটের জঙ্গল। কংক্রিটের কারণেই শহরগুলি পরিণত হচ্ছে আর্বান হিট আইল্যান্ডে। কারণ কংক্রিট প্রচুর পরিমাণে তাপ শোষণ করে সূর্যরশ্মি থেকে এবং বাতাসের তাপমাত্রা থেকেও সে উত্তপ্ত হয়। ফলে যে কোনও কংক্রিটপূর্ণ অঞ্চল, বিশেষ করে বৃহত্তর নগরীগুলো, কংক্রিটের গগনচুম্বী ইমারত যেখানে ভিড় করে জেগে রয়েছে, সেই অঞ্চল যে খুব দ্রুত অত্যধিক উত্তপ্ত হবে, তা সহজেই অনুমেয়। আর কংক্রিটে শোষিত তাপ দীর্ঘসময় ধরে থেকেও যায়। একটু খেয়াল করলেই দেখা যায়, কলকাতা পেরোলে কংক্রিটের ভিড় যেখানে কম, সেখানে গরম তুলনামূলক ভাবে কম। হিট আইল্যান্ড এবং অবশ্যই তাপপ্রবাহের সম্মিলিত প্রবাহে কলকাতার তাপমাত্রা অসহনীয় হয়ে উঠছে। প্রতি বছরই যেন এ শহর সর্বোচ্চ তাপমাত্রার নতুন রেকর্ড গড়ে তুলছে। এদিকে বাতাসে ভাসমান ব্ল্যাক কার্বনও আবার শহরাঞ্চলের তাপমাত্রা তুলনামূলক ভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ।
তাহলে আমাদের উপায় কী? এত কিছুর পরেও পৌরসভা থেকে নির্দ্বিধায় বৃক্ষনিধন চলছে মহাসমারোহে। জলাভূমি বোজানোর মহাযজ্ঞ চলছে নিরন্তর। এমতাবস্থায় নতুন করে গাছ লাগানোর থেকেও জরুরি, পুরনো বড় গাছগুলিকে বাঁচিয়ে রাখা। আবার নতুন করে গাছ লাগানোরও জায়গা ক্রমেই কমে আসছে মহানগরীতে। তবে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সমস্যার সম্মুখীন হলে আমাদের সামনে পড়ে থাকে দু’টি রাস্তা – প্রথমটি হলো পরিবর্তিত অবস্থার সঙ্গে লড়তে কিছু পন্থা অবলম্বন করা। যাকে বলে অ্যাডপ্টেশন। আর দ্বিতীয়টি হলো জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যাকে নির্মূল করা। বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে বলে মিটিগেশন।
কলকাতার এক পরিবেশ বিজ্ঞানীর মতে, “আমরা শহরাঞ্চলে জমি কীভাবে ব্যবহার করছি, বাড়িগুলো কীভাবে বানাচ্ছি, সেগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে শহরাঞ্চলের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে। তা না হলে মহানগরগুলি আর্বান হিট আইল্যান্ডে পরিণত হবে।"
আরও পড়ুন- ১০ মিলিয়ন মানুষ বিপদে! কেন হিমবাহ হ্রদ ফেটে দুর্যোগের আশঙ্কা বাড়ছে ক্রমেই?
মহানগরীর ঘরবাড়ি
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ, কলকাতার পরিবেশ বিজ্ঞানী ডঃ পুণ্যশ্লোক ভাদুড়ির মতে, শহরাঞ্চলের বাড়ির বাইর এবং ভেতরের তাপমাত্রা কমাতে সবুজ ও নীল প্রযুক্তির আশ্রয় আমরা নিতে পারি। সবুজ প্রযুক্তি অর্থাৎ গ্রিন টেকনোলজির অর্থ পরিবেশ-বান্ধব প্রযুক্তির আশ্রয় নেওয়া। যাতে পরিবেশের উপর কার্বন নিঃসরণ এবং সামগ্রিকভাবে শক্তির ব্যবহার কমানো যায়। তিনি ইনস্ক্রিপ্টকে জানাচ্ছেন, কলকাতা শহরে যে বাড়িগুলি রয়েছে, সেখানে সবুজ দেওয়াল বা গ্রিন ওয়াল বানানো যেতে পারে। যেখানে বেড়ে উঠবে সবুজ গাছপালা। এছাড়াও বানানো যেতে পারে গ্রিন রুফ। “বেঙ্গালুরু বা হায়দরাবাদের মতো শহরে কিন্তু গ্রিন ওয়াল বা গ্রিন রুফ বহুলভাবে দেখা যায়। কলকাতায় তা একদমই দেখা যায় না,” জানাচ্ছেন ডঃ ভাদুড়ি।
যদিও নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক পরিবেশবিদের মতে, সবুজ ও নীল প্রযুক্তি ব্যবহার করলেও তাক লাগানোর মতো পরিবর্তন পরিবেশে ঘটবে না। সাময়িকভাবে ফলাফল চোখে পড়লেও, সুফল কতটা দীর্ঘস্থায়ী হবে সে নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তিনি। তাঁর মতে, প্রাকৃতিক পরিবেশে গাছ লাগানো এবং যে গাছগুলি বেঁচে রয়েছে মহানগরীতে তাদের বাঁচিয়ে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মহানগরীর তাপমাত্রা কমাতে।
ডঃ ভাদুড়িও এই বিষয়ে একমত। তিনিও জানাচ্ছেন, কলকাতা এবং গাঙ্গেয় সমভূমির নিজস্ব যে গাছগাছালি, তা বাঁচিয়ে রাখা সর্বাগ্রে জরুরি। তবে ইমারতি আগ্রাসনের কারণে গাছ লাগানোর জায়গা আর নেই বললই চলে। ডঃ ভাদুড়ির মতে, বাড়ি বা বড় টাওয়ারগুলির বাগানে ‘ভেজিটেটিভ গার্ডেন’ তৈরির কথা ভাবা যেতে পারে। “প্রতিটি বাড়ির বারান্দায় গাছ লাগালে সেই অঞ্চলের তাপমাত্রা প্রায় সাড়ে ৩ ডিগ্রি অবধি কমে যেতে পারে, গ্রিন ওয়াল কমিয়ে দিতে পারে সাড়ে ৪ ডিগ্রির কাছাকাছি তাপমাত্রা," মতামত ডঃ ভাদুড়ির।
জলাদর্শ কালেক্টিভের প্রধান এবং গবেষক সায়ন্তনী দত্তের মতে, কলকাতায় লাগাতার নির্মাণকাজে যেমন লাগাম টানা উচিত, পাশাপাশি খেয়াল রাখতে হবে বড় বড় ইমারত যেন শহরের ভেতরেই বাতাস চলাচলে বাধা না সৃষ্টি করে। "অনেক শহরেই খেয়াল রাখা হয়, যে অঞ্চল থেকে ঠান্ডা বাতাস বয়ে আসে, সেই দিকে যাতে খুব বড় ইমারত তৈরি না করা হয়," বলছেন সায়ন্তনী। আলো প্রতিফলনে সক্ষম সাদা আবরণ (হোয়াইট কোটিং) তাপমাত্রা কমাতে ব্যবহার করার নিদান দিয়েছেন অনেক বিশেষজ্ঞই। তবে হোয়াইট কোটিং-এর ক্ষেত্রে নানা গবেষণায় নানারকম ফলাফল পাওয়া গেছে। কিছু গবেষণা দেখাচ্ছে, হোয়াইট কোটিং বা হোয়াইট রুফ বেশ খানিকটা কমিয়েছে বাড়ির তাপমাত্রা। উল্টোদিকে কিছু গবেষণা দেখাচ্ছে, হোয়াইট কোটিং দেওয়া বাড়ির ভেতরে তাপমাত্রা কম হলেও, যেখানে গিয়ে শেষ হচ্ছে এই আবরণ, তার পরিসীমার বাইরে আবার তাপমাত্রা অতিরিক্ত বেশি।
ডঃ ভাদুড়ির মতে, টেরাকোটার তৈরি বাড়ি যেমন ঘরের অন্দরমহলকেও গরমের দিনে ঠান্ডা রাখবে, তেমন বাইরের তাপও কংক্রিটের মতো বাড়িয়ে তুলবে না। টেরাকোটা আজকের প্রযুক্তি নয়। এটি একটি প্রাচীন প্রযুক্তি, যা বর্তমানে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে আবার ব্যবহার হচ্ছে আধুনিক ঘরবাড়ি, ফ্ল্যাট তৈরির জন্যে।
আরও পড়ুন- বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে হারিয়ে যাচ্ছে ভাষাও! যে ভাবে ধ্বংস ডেকে আনছি আমরা
ইচ্ছে মতো যে কোনও গাছ লাগালেই হবে?
ডঃ ভাদুড়ির মতে, গাঙ্গেয় সমভূমির পরিবেশে এবং মাটিতে যে গাছপালা স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠে, সেই গাছই রোপণ করা দরকার। "কোথায় গাছ রোপণ হবে তার থেকেও জরুরি, কী গাছ রোপণ করা হচ্ছে, সে দিকে নজর দেওয়া," বলছেন তিনি।
আজকাল কলকাতার ওয়ার্ডগুলিতে সৌন্দর্যায়নের জন্যে কিছু পাম গাছ, সাইকাস, দেবদারু, পাইন গাছ, মায় চেরি গাছও রোপণ করতে দেখা যায়। রাস্তার দু'পাশ জুড়ে ল্যান্টানা গাছ। ভরে থাকে রঙিন ফুলে। ডঃ ভাদুড়ির মতে, এগুলি কোনওটাই পশ্চিমবঙ্গের গাছ নয়, “আর পাম গাছের মতো শৌখিন গাছ জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে লড়তে মোটেই বিশেষ উপকারী নয়।"
গাছ অবশ্যই অক্সিজেন দেয়। পরিবেশকে ঠান্ডা রাখে। কিন্তু এছাড়াও তার অনেক গুরুত্ব রয়েছে। এই গাছগুলির উপর নির্ভর করে অন্যান্য গাছ, পতঙ্গ, পশু, পাখির বেঁচে থাকা। তাদের খাদ্যাভাস। স্বাভাবিক গাছপালাগুলিকে উপড়ে বা কেটে, সেখানে বাইরে থেকে আনা দুটো শৌখিন গাছ লাগালে হিতে বিপরীত হয়। জলবায়ু পরিবর্তন আটকাতে কেবল গাছ নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা জীববৈচিত্র্যও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
গঙ্গা ও কলকাতার জলাভূমি
কলকাতা শহরের একটা বড় সুবিধা যে, শহরের পাশ দিয়ে গঙ্গা বয়ে যাচ্ছে। পূর্ব কলকাতা জুড়ে রয়েছে বিস্তীর্ণ জলাভূমি। এমন জলাভূমি পৃথিবীর অন্য কোথাও নেই বললেই চলে। গঙ্গা এবং সুবৃহৎ জলাভূমি বিপুলভাবে সাহায্য করতে পারে মহানগরীর তাপমাত্রা খানিক নিয়ন্ত্রণে রাখতে। অবশ্যই যদি সঠিকভাবে এবং কঠোর উদ্যোগের সঙ্গে তা সংরক্ষণ করা যায়। সায়ন্তনী দত্তের মতে, কলকাতার জলাভূমিগুলি পরিবেশের তাপমাত্রা শোষণ করে নেয়। অথচ জলের নিজস্ব তাপমাত্রা খুব একটা বাড়ে না। “এগুলি অত্যন্ত ভালো হিট সিঙ্ক,” ইনস্ক্রিপ্টকে তিনি জানিয়েছেন।
ডঃ ভাদুড়ি জানাচ্ছেন, কলকাতার প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে যদি একটি করেও পুকুর থাকে এবং সেই পুকুরগুলিকে আমরা যদি যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে পারি তাহলেও কিন্তু সেই অঞ্চল বেশ খানিকটা ঠান্ডা হতে পারে। ভালো খবরের মধ্যে, দ্য অটল মিশন ফর রিজুভিনেশন এবং আর্বান ট্রান্সফর্মেশনের অধীনে তাঁরা কলকাতা মেট্রোপলিটন অঞ্চল মধ্যস্থ (পূর্ব কলকাতা জলাভূমি অঞ্চল বাদে) ৪৫ হেক্টর জলাভূমি পুনঃরুদ্ধার করেছেন কেবল সবুজ ও নীল প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে, যা পরবর্তী সময়ে কলকাতার তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে জরুরি ভূমিকা পালন করবে। শুধু গঙ্গা নয়, কলকাতা জুড়ে রয়েছে একাধিক ক্যানেল। যেগুলি সংরক্ষণের অভাবে পূতিগন্ধময় নালায় পরিণত হয়েছে। এই বদ্ধ হাজামজাগুলি থেকেও যথেচ্ছ কার্বন নির্গত হয়, যা প্রকারান্তরে বাতাসের তাপমাত্রা বাড়িয়ে তোলে। এ শহরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে গঙ্গা ও কলকাতার সমস্ত জলাভূমির রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি, ডঃ ভাদুড়ি নজর দিচ্ছেন বৃষ্টির জল সংরক্ষণের উপর। “যদি ভালো করে ভেবে দেখা যায়, কলকাতা শহরে বৃষ্টির জল সংরক্ষণের কোনও উদ্যোগই প্রায় দেখা যায় না। সেই জলটুকুও যদি সংরক্ষণ করি ভূ-মধ্যস্থ জলতল বৃদ্ধি পাবে। বৃষ্টির হারও স্বাভাবিক হবে বেশ খানিকটা। যদি স্কুলের বইতে পড়া জলচক্রের ছবিটা মাথায় আনি, আমরা মনে করতে পারব কীভাবে আকাশের মেঘ আর মাটির নীচের জলস্তর একই সুতোয় বাঁধা," বলছেন ডঃ ভাদুড়ি।
আরও পড়ুন- উষ্ণতম দিনে যেভাবে প্রাণ জুড়োতে পারে সাধের তিলোত্তমা
সরকারের দায়িত্ব
যদি আমরা এই রকম পরিবেশে নিজেদের খাপ খাওয়াতে চাই, সে ক্ষেত্রে পরিবেশবিদদের মতে আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম চালু করা উচিৎ। যেমন তাপপ্রবাহ বেশি হবে কোন কোন দিন, বা দিনের কোন কোন সময়ে, সেই সময়ে যাতে বাইরে কাজে না যেতে হয় মানুষদের, সেই রকম ব্যবস্থার দিকে নজর দেওয়া। এরকম আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম ভারতীয় আবহাওয়া দফতরের থাকলেও, তা সব সময় সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছয় না। কিংবা পৌঁছলেও তা কঠোরভাবে আরোপ করা হয় না।
কিন্তু আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম থাকলেও যাদের বাড়ির বাইরে কাজ করতেই হয়, যেমন দিনমজুর, শ্রমিক, রাস্তায় বসা অস্থায়ী দোকানদার, ডেলিভারি কর্মী তাঁদের সুরাহা কী করে হবে, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। শহরে যাদের রাস্তার উপর বা বস্তি অঞ্চলে বসবাস তাদের কী হবে? জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে আর্থ-সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষদের উপর এবং তাঁদের মধ্যেই সব থেকে বেশি ভুক্তোভোগী বয়স্ক মানুষ, মহিলা এবং শিশুরা। গবেষক সায়ন্তনী দত্তের মতে, তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে এ দেশে যে হারে মৃত্যু হয়, সেই তথ্যের যাথাযথ নথিকরণের অভাব রয়েছে। “এই তথ্যের সাহায্যে বুঝতে সুবিধে হবে প্রকৃতি এবং জলবায়ু পরিবর্তন কীভাবে মানুষের উপর প্রভাব বিস্তার করছে”, জানাচ্ছেন তিনি। তবে তাঁর মতে শুধু মানুষ নয়, খেয়াল রাখতে হবে শহরের রাস্তার প্রাণীদেরও। “মানুষ ও প্রাণী দুইয়ের জন্যই গরমে আশ্রয় নেওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে," বলছেন সায়ন্তনী। কলকাতার গিগশ্রমিক যারা, অর্থাৎ জেপ্টো, জোম্যাটো, সুইগি, ব্লিঙ্কিট প্রভৃতি সংস্থার ডেলিভারি কর্মীদের গরমে সাবধানতা অবলম্বন করার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসের জোগানের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন বলে জানাচ্ছেন সায়ন্তনী দত্ত।
ডঃ ভাদুড়ি জানাচ্ছেন, "কলকাতা শহরের কর্মপন্থা যারা তৈরি করেন অর্থাৎ পলিসি মেকার যারা, শহরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যে তাঁদের উচিৎ হিট ইনভেন্টরি নির্মাণ করা।" সায়ন্তনী দত্তের মতে, কর্পোরেশনের দায়িত্ব পর্যাপ্ত ‘হিট অ্যাকশন প্ল্যান’ তৈরি করা এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে সেই নিয়ে চেতনা বাড়ানো। তাঁর মতে কলকাতা জুড়ে এখনও অনেক সুযোগ রয়েছে সবুজ এবং নীল প্রযুক্তিকে কাজে লাগানোর। তা পুকুর সংরক্ষণ করেই হোক, কিংবা সামান্য জমিতে উপযুক্ত গাছ রোপণ করে। কিন্তু আমরা সেই সুযোগ ঠিক মতো কাজে লাগাচ্ছি না বলেও আক্ষেপ তাঁর। এই সুযোগগুলিকে কাজে লাগিয়ে যদি মহানগরীর তাপমাত্রা খানিক কমিয়ে ফেলা যায়, তাহলে কৃত্রিমভাবে ঘর ঠান্ডা করার খরচও কমবে বহুলভাবে। তাতে কমবে কার্বন নিঃসরণের হার এবং এসি থেকে নির্গত গরম হাওয়া। সায়ন্তনী দত্ত আফশোসের সুরেই বলছেন, “আমরা কলকাতা জলাভূমি সংরক্ষণের জন্যে বহুদিন থেকেই সরকারকে আর্জি জানাচ্ছি। অথচ এত বছর পরেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনও হেলদোলই নেই।"