জল নেই, বিদ্যুৎ নেই, খাদ্যের যোগানে টানাটানি! বছর শেষে কেমন আছে ইউক্রেন?

Russia Ukrainian war : সব কিছুর মধ্যে এখন যে প্রশ্নটা জোরালো হয়ে দাঁড়িয়েছে তা হল এই যুদ্ধের শেষ কবে? কোথায়?

২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ৷ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান ঘোষণা করলেন ৷ তারপরেই কৃষ্ণসাগরের গাঁ ঘেঁষে থাকা ছোট্ট ইউক্রেনে আছড়ে পড়ল বোমা ৷ সেই শুরু যুদ্ধের। তারপর থেকেই গোটা একটা বছর ধরে কেবলই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা। প্রতিপক্ষকে বেসামাল করার জন্য যে যার মতো করে আগ্নেয়াস্ত্র প্রয়োগ করেছে। চলতি বছরের শুরু থেকেই ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হয়ে যায়। মাঝে কয়েকমাস পরিস্থিতি খানিকটা শিথিল হয়ে পড়লেও পাল্টা আঘাত ফিরিয়ে দিতে থাকে ইউক্রেন। গত কয়েক মাসে ইউক্রেন সেনাদের আক্রমণে দক্ষিণের খেরসন, মাইকোলিভ এবং উত্তর পূর্ব দিকে খারকিভ সহ্য বহু জায়গা থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয় রাশিয়া। শুধু তাই নয় এই কয়েক মাসে প্রায় ৮০ হাজার রুশ সেনা মারা গিয়েছেন বলেও জানিয়েছে একটি সমীক্ষা। ফলে ভিতরে ভিতরে আগুন পুষে রেখেছিল রাশিয়া। তারা জানত শীতকাল এলেই জীবনধারণের রসদ ফুরিয়ে আসবে ইউক্রেনে আর সেই সুযোগ নিয়েই পাল্টা হামলা চালায় রাশিয়া।

এরপর শীত একটু পাকাপাকি হতেই আচমকা ড্রোন হামলা চালায় রাশিয়া। বিদ্যুৎ এবং জলের জোগান অনিশ্চিত করে দেওয়া হয়। ইউক্রেনের সাধারণ মানুষের মনবল ভেঙে দিয়ে মোক্ষম প্রতিশোধ নেয় রুশ বাহিনী। সেই যুদ্ধ এখনও চলছে। ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছে ইউক্রেন। হাল ছাড়েননি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের নায়ক ভোলোদিমির জেলেনস্কি। সম্প্রতি আবারও পারমাণবিক হামলা চালায় রাশিয়া। আকাশপথে আক্রমণের জেরে একের পর এক বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে কিভ-সহ ইউক্রেনের একাধিক শহর। কিভ ও আশপাশের এলাকা জুড়ে ১২০টি ধারাবাহিক হামলা হয়েছে বলে সূত্রের দাবি। বহু সাধারণ মানুষ জখম হয়েছেন এই হামলায়।

ইউক্রেন জুড়ে এখন যুদ্ধের দগদগে ঘা। কোণায় কোণায় হাহাকার। কোথাও জল নেই, কোথাও বিদ্যুতের জোগান বন্ধ, প্রচণ্ড বিভীষিকায় দিন কাটাচ্ছে মানুষ। জনবহুল এলাকা লক্ষ্য করেই বারবার মিসাইল হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া। এদিকে অস্ত্রের জোগান ফুরিয়ে আসছে দুই পক্ষেরই। এমনকী চলমান যুদ্দের জেরে শুধু উক্ত দুটি দেশে নয়, গোটা বিশ্বের অর্থনীতিতে টালমাটাল পরিস্থিতি। খাদ্যের যোগান ভয়াবহ আশঙ্কার মুখে। এই অবস্থায় যুদ্ধের শেষ না হলে পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ হতে পারে তা আশঙ্কা করা খুব সহজ।

আরও পড়ুন - ইউক্রেনকে শেষ করতে রাশিয়ার মোক্ষম অস্ত্র শীত, কী বলছে যুদ্ধের পরিস্থিতি

একটা সময় ইউক্রেন চেয়েছিল আলোচনায় বসতে, তখন রাশিয়া প্রত্যাখ্যান করেছে। পরে রাশিয়া যখন আলোচনা চেয়েছে তখন তাতে বাধ সেধেছে ইউক্রেন। ফলত দুই পক্ষই ক্ষেপণাস্ত্রকে বেছে নিয়েছে। একদিকে করোনা মহামারির জেরে ইতিমধ্যেই বিদ্ধস্ত বৈশ্বিক পরিস্থিতি, তার মধ্যেই এই বছরব্যাপী সীমাহীন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ খাদ্যবিপর্যয়কে আরও ত্বরান্বিত করেছে। ইউক্রেন ও রাশিয়া বিশ্বের মোট চাহিদার ১২ শতাংশ ক্যালরি সরবরাহ করে থাকে। বিশ্বজুড়ে মোট গমের ২৮ শতাংশ, বার্লির ২৯ শতাংশ, ভুট্টার ১৫ শতাংশ এবং সূর্যমুখী তেলের ৭৫ শতাংশ সরবরাহ করে থাকে দেশ দুটি। শুধু ইউক্রেনই বিশ্বের প্রায় ৪০ কোটি মানুষের খাবারের ক্যালরির জোগান দেয়। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সেই সব ইতিমধ্যেই ব্যাহত হয়েছে।

অন্যদিকে, চলতি বছরের নভেম্বরে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে আয়োজিত G20-র সম্মেলনে ‘শান্তি সমঝোতার’ একটি রূপরেখা তৈরির চেষ্টা করা হয়। ১০ দফার একটি ফর্মুলা রাখা হয় মঞ্চে। বিকিরণ এবং পারমাণবিক নিরাপত্তা, খাদ্য নিরাপত্তা, জ্বালানি নিরাপত্তা, রাশিয়া থেকে সমস্ত বন্দি এবং নির্বাসিতদের মুক্তি, রাষ্ট্রসঙ্ঘের সনদ বাস্তবায়ন এবং ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পুনরুদ্ধার, রুশ সেনা প্রত্যাহার এবং শত্রুতার অবসান, ন্যায়বিচার, যুদ্ধের সমাপ্তির নিশ্চিত করার মতো বিষয় তুলে ধরা হয়েছিল সেখানে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্পষ্টই জানিয়ে দেন, পারমাণবিক যুদ্ধ কোনও সমাধান হতে পারে না, বরং কূটনৈতিক আলোচনায় যুদ্ধে ইতি টানা প্রয়োজন। অথচ কোনও কিছুতেই ঠেকানো যায়নি পরিস্থিতি। এখনও যুদ্ধের দামামা ইউক্রেনে।

রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন বহু ইউক্রেনীয়। গোটা ইউক্রেন জুড়ে এখন শুধুই স্বজন হারানোর হাহাকার। বাতাসে আজ বারুদের গন্ধ, পাখির ডাক নয়, বোমার আওয়াজেই আজ ঘুম ভাঙে সেদেশের মানুষের। বাদ যায়নি শিশুরাও। একটা গোটা প্রজন্ম আজ শৈশবহারা। দেশ ছেড়ে পরভূমে আশ্রয় নিয়েছেন বহু ইউক্রেনীয়। ভিটেমাটি ছাড়া বহু ইউক্রেনীয়র ঠিকানা এখন পোল্যান্ডের উদ্বাস্তু শিবির। কিন্তু সব কিছুর মধ্যে এখন যে প্রশ্নটা জোরালো হয়ে দাঁড়িয়েছে তা হল এই যুদ্ধের শেষ কবে? কোথায়? উত্তর অবশ্য দিনদিন একটা ধাঁধার মতো ঠেকছে! এদিকে এর মধ্যেই আজ একটা পুরনো বছরের ইতি, আগামীকাল থেকে সম্পূর্ণ আনকোরা একটা নতুন বছর, অথচ সেখানেও যুদ্ধের অন্ধকার নিয়ে শুরু হবে দুটি দেশের যাত্রা!

More Articles