টানটান যৌবন থেকে লম্বা আয়ু, কোন রহস্য লুকিয়ে জাপানিদের অভ্যাসে?

Lifestyle Tips: স্লিম, ফিট এবং দীর্ঘ আয়ু, এটাই জাপানিদের ক্ষেত্রে সত্যি, এর আসল রহস্য কী? রইল বেশকিছু সহজ কারণ

জাপান, এই দেশটিকে নিয়ে আজও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে জমে রয়েছে অজস্র কৌতূহল। জাপানিদের রুপের নেপথ্যে কোন রহস্য লুকিয়ে রয়েছে সেই প্রশ্নের উত্তর আজও খুঁজছে গোটা বিশ্ব। জাপানের এই সংস্কৃতি বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় একটি বিষয়। আর তাদের এই সামগ্রিক সংস্কৃতি, জীবনযাত্রার সঙ্গেই জড়িয়ে তাঁদের লম্বা আয়ু এবং যৌবন। তাই কীভাবে তারা তাদের সারাদিনের রুটিন সাজান সেই নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা চলে বিভিন্ন মহলে। অনেকেই হয়তো জেনে থাকবেন, গীতা দুনিয়ার নিরিখে জাপানের মানুষের গড় আয়ু সবচেয়ে বেশি। মৃত্যুহারও বেশ কম। আসলে তাঁদের মধ্যে আজও বহাল রয়েছে বেশ কিছু প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী অভ্যাস, যা তাঁদের সুস্থতা এবং যৌবনের আসল চাবিকাঠি। আপনিও চান জাপানিদের মতো লম্বা আয়ু এবং দীর্ঘস্থায়ী যৌবন? আসুন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, জাপানিদের কোন কোন অভ্যাসগুলো নিজের জীবনে প্রয়োগ করলেই হতে পারে মুশকিল আসান!

একদিকে জাপানিরা যেমন কর্মঠ তেমন অন্যদিকে তাদের সুশৃঙ্খল জীবন যাপন। তাদের খাদ্য তালিকাও বেশ চমৎকার এবং নিয়মতান্ত্রিক। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, একজন জাপানী সুস্থ শরীর এবং মজবুত হাড় নিয়ে বেঁচে থাকে প্রায় ৮৪ বছরেরও বেশি সময়। এদের শরীরে মেদের চিহ্নও প্রায় নেই বললেই চলে। কিন্তু কেন? পর্যবেক্ষণে ধরা পড়েছে, জাপানীরা স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে শুধু খাবার নিয়ন্ত্রণ করে, বিষয়টা এমন না। বরং তাদের গোটা জীবনযাপনের নিয়ম কানুন, অভ্যাস সব মিলিয়েই তাদের সুস্বাস্থ্য।

১. প্রতিদিন সকালে উঠে কম বেশি প্রায় সকল জাপানিরাই নির্দিষ্ট সময় ধরে ব্যায়াম করেন, যা তাদের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার মূল চাবিকাঠি। এছাড়াও তারা দৈনন্দিন কাজের ক্ষেত্রে ব্যবহার করেন সাইকেল। সাইকেল জানে না, এমন জাপানি খুঁজে পাওয়া এক প্রকার দুষ্কর। ফলে দেহের মাসলগুলো সবসময় সক্রিয় থাকে জাপানিদের।

২. জাপানিদের মধ্যে একটি বিশেষ অভ্যাস দেখা যায় যে তারা কখনোই শতকরা ১০০ ভাগ পেট ভর্তি করে খাবার খান না, পরিবর্তে ৮০ শতাংশ পেট ভর্তিতেই সন্তুষ্ট থাকেন। তাদের এই ৮০ ভাগ পেট ভরানোর খুব মজাদার একটা নাম আছে। একে তারা বলে হারা হাচি বু। যেন কখনো বেশি খাওয়া না হয়ে যায় সেজন্য তারা খাবার পরিবেশনও করে ছোট পাত্রে। আজকালকার দিনে চিকিৎসকেরাও পরামর্শ দেন বারেবারে অল্প পরিমাণে খাওয়ার বিষয়ে। আর এই অভ্যাসটাই বহু যুগ ধরে মেনে আসছে জাপানিরা।

আরও পড়ুন - হুহু করে ঝরবে মেদ, ছিপছিপে চেহারা পেতে খান চিয়া বীজ! আসলে কী এটি?

৩. রেস্তোরাঁ নয়, বরং ঘরে রান্না করা খাবার জাপানিদের খাদ্যতালিকায় বিশেষ করে স্থান পায়। তারা যে শুধু খাবার ঘরে রান্না করে তা নয়, অনেক ক্ষেত্রে ফল-সবজির উৎপাদনও করে বাড়িতেই। ফলে টাটকা এবং তাজা সবজি ফল খাওয়ার এই অভ্যাস তাদের সুস্বাস্থ্য ধীরে রাখতে সহায়তা করে।

৪. বাদামী হোক বা সাদা, ভাত জাপানিদের অতি প্রিয় একটা খাবার। যেমন বাঙালিদেরও। পুষ্টিবিদরা বলছেন, জাপানিদের মতো নিয়মিত, স্বল্প পরিমাণে ভাত খেলেই তা স্বাস্থ্য ভাল রাখবে। তাই ক্র্যাশ ডায়েটের ফাঁদে পড়ে ভাত একেবারে বাদ দিয়ে দেওয়া কোনও কাজের কথা নয়!

৫. অন্যদিকে মৌসুমী ফল, ‘নরি’ অর্থাৎ শুকনো করা সামুদ্রিক শৈবাল এবং গ্রিন টি জাপানিদের অতি প্রিয়। আর একেবারেই অপছন্দ মিষ্টি। তাই সব সময় নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখে তারা মিষ্টির সঙ্গে। এটিও সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার একটি বড় কারণ। এছাড়াও গাঁজনযুক্ত খাবার প্রচুর পরিমাণে জাপানিরা। সেই তালিকায় রয়েছে মিসো, সয়া সস, টেম্পেই এবং কিমচি। এগুলি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে এবং হজম প্রক্রিয়া সহজ করতে সহায়তা করে। ভেতো বাঙালিও চাইলে এই ধরনের খাবারের বিকল্প পেতে পারেন পান্তা ভাত থেকে সেই জন্যই চিকিৎসকেরা বলে থাকেন পান্তা ভাত সুস্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ অপশন।

৬. সর্বোপরি জাপানিরা ফিট, ছিপছিপে শরীর ভীষণ পছন্দ করে। তাই তারা নিয়মিত দৌড়, জগিং, হাঁটা, যোগ ব্যায়াম ইত্যাদি করে। ফলে সব মিইয়ে এই যে খ্যাদাভাস এবং নিয়মিত শরীরকে সক্রিয় রাখার অভ্যাস, তাই হল জাপানিদের সুস্বাস্থ্যের আসল চাবিকাঠি।

More Articles