'সুযোগসন্ধানী নাটক'! মেয়েদের রাত দখল নিয়ে কী বলছেন কুণাল ঘোষ?
Kunal Ghosh on RG Kar Protest: এই আন্দোলন ধর্ষণের বিচার চেয়ে হলেও কুণাল তাতে রাজনীতি টেনেই এনেছেন। টেনে এনেছেন কোন শাসকের কোন জমানায় কে কে ধর্ষিতা হয়েছেন সেই তালিকা।
সদ্য বাংলাদেশে আন্দোলনের জেরে হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই, আরজি কর হাসপাতালে ধর্ষণ এবং খুন হয়েছেন তরুণী চিকিৎসক। এই মর্মান্তিক ঘটনার বিচার চেয়ে ক্ষোভে উত্তাল সারা বাংলা। আরজি কর কাণ্ডের বিচার চেয়ে মধ্যরাতে শুধুমাত্র নাগরিকদের ডাকে পথে নামছেন মেয়েরা। আন্দোলন আর সীমাবদ্ধ নেই কলকাতায়। ইতিমধ্যেই, বাংলাদেশের মতোই দেখা গেছে পোস্টার, ১ দফা দাবি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ। স্বাভাবিকভাবেই এই ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে শাসক তৃণমূলের গায়ে আঁচ এসে লেগেছে। আরজি করের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বদলি থেকেই আঙুল উঠতে থাকে প্রশাসনের দিকে। তৃণমূলের প্রথম সারির নেতারা কেউই সেভাবে সরব হননি। তারকা মুখদের মধ্যে দেব নিজের সিনেমার ট্রেলার প্রকাশ স্থগিত করে দিয়েছেন ঠিকই কিন্তু বাকিরা চুপ। তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় এরই মধ্যে জানিয়ে দেন বুধবার মধ্যরাতের আন্দোলনে যোগ দেবেন তিনি। তৃণমূলের বড় কোনও নেতা এই আন্দোলন নিয়ে সরাসরি কিছু না বললেও মাঠে নেমে পড়েছেন কুণাল ঘোষ। কেন?
একের পর এক টুইট করেই চলেছেন কুণাল। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টা থেকে বুধবার দুপুর অবধি এক্স-এ তিনি টুইট করে চলেছেন বিচিত্র সব বার্তা লিখে। আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে বুধবার অর্থাৎ ১৪ অগাস্ট রাজ্যজুড়ে রাত দখলের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। প্রথম দিকে যাদবপুর, আকাদেমি ও কলেজস্ট্রিট চত্বরে জমায়েতের ডাক দেওয়া হয়েছিল ঠিকই কিন্তু পরে এই ডাক ছড়িয়ে পড়ে সারা বাংলায়, আসানসোল, চুঁচুড়া, জলপাইগুড়ি, কৃষ্ণনগর, রানিগঞ্জ, মুর্শিদাবাদ, বোলপুর সর্বত্রই প্রাক-স্বাধীনতার রাতে পথে নামছেন মেয়েরা। এই ডাক কোনও রাজনৈতিক দলের ব্যানারে ডাকা হয়নি। তা সত্ত্বেও এর ব্যাপকতা চমকে দেওয়ার মতোই। কুণাল ঘোষ মনে করছেন, মোটেও অরাজনৈতিক না। এ খুব পরিকল্পিত ছক সিপিএম এবং বিজেপির। এই আন্দোলন ধর্ষণের বিচার চেয়ে হলেও কুণাল তাতে রাজনীতি টেনেই এনেছেন। টেনে এনেছেন কোন শাসকের কোন জমানায় কে কে ধর্ষিতা হয়েছেন সেই তালিকা। কুণাল বলছেন, ‘রাম-বামের’ জমানায় বহু ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার নজির রয়েছে। সেই নেতারাই আরজি কর-কাণ্ডে ঘোলাজলে মাছ ধরতে নেমে পড়েছেন।
আরও পড়ুন- ৫১ বছর আগে ধর্ষণ করে কুকুরের চেন দিয়ে শ্বাসরোধ! মনে পড়ে নার্স অরুণা শানবাগকে?
কুণাল ঘোষ বলছেন, আরজি করের ঘটনায় দোষীদের শাস্তি তৃণমূলও চায়। কিন্তু তিনি বিজেপি ও সিপিএমের এই মিলিত 'নাটকে' নেই। শুধু তাই না, কুণাল এই মধ্যরাতের বিক্ষোভে শামিল হতেও বারণ করছেন। তিনি লিখেছেন, "বাম-রাম মুখোশ পরে রাতে পথনাটিকা করবে। তাতে শামিল হবেন না। ওরা বানতলা, ধানতলা-সহ অসংখ্য ঘটনার ধারক-বাহক।" কুণাল লিখছেন, "যারা বড় বড় কথা বলে লাফাচ্ছে, কোচবিহার, বানতলা, ধানতলা, সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামের ধর্ষণ, খুনের পর কোথায় ছিল? সিপিএম, বিজেপির যৌথ রাতজাগার নাটক। প্রতিবাদ আমরাও করছি। সবাই করছি। কিন্তু ওরা অতীত ভুলিয়ে মুখোশ পরে রাজনীতি করছে। ওদের অতীত মনে করান।"
এর পরের দাবি:
— Kunal Ghosh (@KunalGhoshAgain) August 13, 2024
দিনে ভোট হলে আমরা হারি, তাই রাতে ভোট চাই।
ভোটার, রাত দখল করো।
সৌজন্যে: রাম-বাম।
কুণাল বলছেন, আরজি করের পাশাপাশি কোচবিহার, বানতলা, ধানতলা, সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, উন্নাও, হাথরাস, বিলকিস ধর্ষণকেও রাখতে হবে। বাম জমানায় ধর্ষণ করে খুন-করা স্বাস্থ্য অধিকর্তা অনিতা দেওয়ানের বাড়ির সামনে পোস্টার নিয়ে ধর্না দিতেও বসে পড়েন কুণাল ঘোষ। সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে কুণাল লিখেছেন, সিপিএমের বিপ্লবীরা আগে বর্ণালী দত্ত, ডাঃ অনিতা দেওয়ান, তাপসী মালিক, ধানতলা, নন্দীগ্রামের হিসেব দিক। আর রাতের জমায়েত? রোজ রাত আর ভোরে এই বাংলায় অসংখ্য মা, বোন যাতায়াত করেন। গ্রাম থেকে স্টেশন, রেল ধরে শহর। কতরকম কাজ। দেখুন। বুঝুন। রাত জমায়েতের নাটক দরকার নেই।"
আরও পড়ুন- রাত দখলের পর নিরাপদে ঘরে ফিরবেন তো মেয়েরা? থাকছে ওলা, উবের
এত নিরাপদ শহর হলে কীভাবে আরজি কর হাসপাতালের মধ্যে এক চিকিৎসককে ধর্ষণ করা হলো? সেই বিষয়ে যুক্তি কুণাল ঘোষের কাছে চাওয়া যদিও অন্য বিড়ম্বনা। তাঁর একাধিক পোস্টেই তাঁর বার্তায় যুক্তিসঙ্গত কথা পাওয়া যায়নি। যেমন একটি টুইটে তিনি লিখেছেন, "এর পরের দাবি: দিনে ভোট হলে আমরা হারি, তাই রাতে ভোট চাই। ভোটার, রাত দখল করো। সৌজন্যে: রাম-বাম।" একটি গুরুতর অপরাধ, তাকে ঘিরে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ, মহিলাদের উদ্যোগকে তিনি কেন হাস্যরসাত্মক করে তুলতে চাইছেন তা স্পষ্ট নয়। তৃণমূলের বাকি নেতারা কেউই সরাসরি এই বিক্ষোভের বিরোধিতায় নামেননি। কুণাল ঘোষকে কি বকলমে দল থেকে বিরোধিতার দায়িত্ব দেওয়া হলো? নাকি তিনি প্রচারের আলো টানার কাজটিতে নিজেকে দড় প্রমাণ করতেই ধারাবাহিক টুইটগুচ্ছ প্রকাশ করছেন? নাহলে বুধবার দুপুরে কেনই বা তিনি লিখতে গেলেন, "এরপর থানায় বধূনির্যাতন, বধূহত্যা বা শাশুড়ি নির্যাতনের মামলা এলে পুলিশ সংশ্লিষ্ট শাশুড়ি, ননদ, বউমাকে পুলিশ ধরবে না তো? সবাই তো মহিলা।"
এরপর থানায় বধূনির্যাতন, বধূহত্যা বা শাশুড়ি নির্যাতনের মামলা এলে পুলিশ সংশ্লিষ্ট শাশুড়ি, ননদ, বউমাকে পুলিশ ধরবে না তো?
— Kunal Ghosh (@KunalGhoshAgain) August 14, 2024
সবাই তো মহিলা।
আজ যারা নাটকের ইভেন্টে যাবেন, সেই বিশেষজ্ঞরা কী বলেন?
RGKar. প্রতিবাদ আমাদেরও। দোষীদের শাস্তি আমরাও চাই। তবে রামবামের সুযোগসন্ধানী নাটকে নেই।
রাজনীতিতে সত্যিই ভদ্রজনোচিত আচরণের ইতি যে ঘটেছে কুণাল তাই প্রমাণ করে ফেলছেন না তো?