অনুব্রতর ফিসচুলায় রক্ত, মেঝেতেই ঘুমোন পার্থ, কেমন আছেন তৃণমূলের পুরাতনীরা?
Anubrata Partha Conditions TMC : তৃণমূলের একদা দোর্দণ্ডপ্রতাপ দুই নেতা এখন আর মাঠে ময়দানে নেই। কেমন আছেন তৃণমূলের পুরনো নেতারা?
সম্প্রতি আরও একটি বিধানসভা উপনির্বাচন দেখল পশ্চিমবঙ্গ। সাগরদিঘি কেন্দ্রে ২০২১ সালে তৃণমূল জিতলেও উপনির্বাচনে শেষরক্ষা হল না। বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী বায়রন বিশ্বাস প্রায় ২৩ হাজার ভোটে হারিয়ে দেয় তৃণমূলকে। এদিকে এবছরই পঞ্চায়েত ভোটের দামামা বাজবে। রাজ্যের প্রতিটি কোণায় চলছে তারই প্রস্তুতি। রাজ্যের শাসকদলও নিজেদের ব্লু প্রিন্ট সাজাতে ব্যস্ত। সমস্ত হাই প্রোফাইল নেতাদের মধ্যে ব্যস্ততা তুঙ্গে।
এমন আবহেই রাজ্যের দুই প্রান্তে আধো অন্ধকার ঘরে বসে রয়েছেন তৃণমূলেরই দুই নেতা। একটা সময় তাঁদের নামে বাঘে-গরুতে এক ঘাটে জল খেত। সর্বত্র তাঁদের প্রতাপ ছিল দেখার মতো। আর এখন? একজন আসানসোলে, আরেকজন কলকাতার প্রেসিডেন্সি সংশোধানাগারে রয়েছেন। কথা হচ্ছে অনুব্রত মণ্ডল ও পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সম্পর্কে। তৃণমূলের একদা দোর্দণ্ডপ্রতাপ দুই নেতা এখন আর মাঠে ময়দানে নেই। তবুও প্রবলভাবে আলোচনায় রয়েছেন তাঁরা। কেমন আছেন তৃণমূলের পুরনো নেতারা?
অনুব্রত মণ্ডল মানেই বীরভূমের বেতাজ বাদশা। তাঁর কথাই শেষ কথা। আর ভোটের বাজারে তাঁর নিত্যনতুন ‘বাণী’ সবসময়ই সংবাদমাধ্যমের হেডলাইন হয়ে যেত। কখনও ‘নকুলদানা’ খাওয়ার প্রস্তাব, কখনও ‘চড়াম চড়াম’ করে শায়েস্তা করার হুঁশিয়ারি। বিজেপির নেতারা ‘পাতাফাতা খায় কিনা’ তা নিয়েও নানা সন্দেহ তাঁর। এই বীরভূমের ‘কেষ্ট’ ২০২২-র আগস্ট মাস থেকে সিবিআইয়ের খপ্পরে। গরুপাচার মামলায় গ্রেফতার হয়ে আপাতত জেলের ঘানি টানছেন তিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদরের ‘কেষ্ট’কে দিল্লি নিয়তে যাওয়ারও তোড়জোড় শুরু হয়েছে। তার মধ্যেই চলছে নানা রকমের হিড়িক। আসানসোলের কারাগারে আপাতত বন্দি অনুব্রত।
আরও পড়ুন : জেলবন্দি, অসহায় পার্থর ভাগ্যের চাকা ঘুরছে কোনদিকে
অন্যদিকে রয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। একদা তৃণমূলের ‘সেকেন্ড-ইন-কমান্ড’, দলের মহাসচিব, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী। আজ সেই দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা-ই গরাদের ওপারে বসে আছেন। কারণ? এই মুহূর্তে রাজ্য রাজনীতি তোলপাড় করে দেওয়া শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি। কলকাতা জুড়ে বিভিন্ন ফ্ল্যাট থেকে কোটি কোটি টাকা বের হচ্ছে, এই দৃশ্য এখনও পুরনো হয়ে যায়নি। বিরোধীদের অভিযোগ, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আমলেই শিক্ষা দফতরে একের পর এক দুর্নীতি হয়েছে। জড়িয়ে পড়েছে পার্থ-ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের নামও। তিনিও আপাতত শ্রীঘরে।
একটা সময় এই দুজনকে ছাড়া তৃণমূল কংগ্রেস অসম্পূর্ণ ছিল। আর আজ? পঞ্চায়েত ভোটের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটা নির্বাচনের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে রাজ্য। বছর পেরলেই ২০২৪ লোকসভা নির্বাচন। সম্প্রতি শেষ হল সাগরদিঘি উপনির্বাচন; সঙ্গে ত্রিপুরা, মেঘালয়, নাগাল্যান্ডের বিধানসভা নির্বাচন। এত কর্মকাণ্ডের মধ্যে কেমন আছেন পার্থ-অনুব্রত?
বীরভূমের কেষ্ট-র শরীর যে খুব একটা ভালো নয়, সেটা আগেই জানা গিয়েছিল। শ্বাসকষ্ট, ফিসচুলার সমস্যা – সেসবও তাঁর ঢাল হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। আপাতত সেই রোগ নিয়েই জেলে রয়েছেন তিনি। শুক্রবার আসানসোলের সিবিআই আদালতে ভার্চুয়ালি তাঁকে পেশ করা হলে সেই রোগের কথাই বলেন অনুব্রত। ফিসচুলার সমস্যা নাকি বেড়েছে আগের থেকে। ফিসচুলা ফেটে রক্ত বেরোচ্ছে। সেইসঙ্গে অন্যান্য শারীরিক সমস্যা রয়েছে। বিচারকও তাঁর শরীরের দেখভাল করার কথা বলেছেন। কিন্তু রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, অনুব্রতর সবচেয়ে বড় শক্তি হল তাঁর দল। তৃণমূল নেতৃত্ব এখনও অনুব্রতের পাশ থেকে সরে যায়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে ফিরহাদ হাকিম, প্রায় প্রত্যেকেই অনুব্রতের কাঁধে হাত রেখেছেন। বীরভূমের নেতৃত্বও কেষ্ট মণ্ডলের পাশে।
আরও পড়ুন : সাজতেন অনুব্রতর ৫৭০ ভরি সোনায়, কেষ্টর গরু পাচারের দুর্নাম ঘোচাবেন কালীই!
এই পরিস্থিতি থেকেই বঞ্চিত হচ্ছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। একসময় এলাহি আয়োজন হতো তাঁর জন্য। দামি পাঞ্জাবি, মুখে জল আনা খাবার, ঠাণ্ডা এসির মধ্যে নিদ্রাযাপন – সেসব এখন অতীত। এখন প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে অন্ধকার আর গরমের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি। দল তাঁর পাশে নেই, সেটা জেনে গিয়েছেন তিনি। বিলাসবহুল, নরন গদির বিছানা নয়, মাটিতেই চাদর পেতে শুতে হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে। কখনও আশেপাশের রক্ষী, বন্দিদের সঙ্গে কথা বলছেন, কখনও আবার চটিতে পা জড়িয়ে পড়ে যাচ্ছেন। শরীরটা যে আর ভালো যাচ্ছে না, আকারে ইঙ্গিতে বারবার বলার চেষ্টা করছেন।
সেইসঙ্গে রয়েছে মানসিক অবসাদ। আগেকার মতো আর কথা বলেন না পার্থ চট্টোপাধ্যায়। চুপচাপ বসে থাকেন নিজের কারাগারে। তাঁর জন্য মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আনার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। আপাতত তাঁর চিন্তা গ্রীষ্মের গরম। রাজ্যের দুই প্রান্তে দুই তৃণমূল নেতার এই ছবিগুলিই এখন রাজনীতির অঙ্গও বটে।