পুলিশ তো হাতের পুতুল! শঙ্খ ঘোষকেও কটূক্তি করতে ছাড়েননি মমতার স্নেহধন্য কেষ্ট

Anubrata Mondal: সেখানে গিয়ে বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘‘একটা পাগল উপাচার্য। বিশ্বভারতীতে কোনও দিন রাজনীতি হয় না। আমরা ইন্দিরা গান্ধীকে দেখেছি, রাজীব গান্ধীকে দেখেছি। তাঁরা সভা করতে...

চাপের মুখে শেষমেষ ক্ষমা চাইলেন বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল। ক্ষমা চেয়ে চিঠিতে লিখেছেন, "আমার ওই কথাগুলো বলা উচিত হয়নি। আমি দুঃখিত।" সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি অডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়েছিল তাঁর। নিশানায় ছিলেন বোলপুরের আইসি। বুধবার (২৮ মে) রাতে মদ্যপ অবস্থায় অনুব্রত নাম না করে আইসি লিটন দাসকে অশ্রাব্য গালিগালাজ করেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই অডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়ে যায়। যা নিয়ে সর্বত্র শোরগোল পড়ে যায়। কী ঘটেছিল সেদিন রাতে?

আইসির সঙ্গে অনুব্রত মণ্ডলের সংঘাতের কারণ হিসেবে জানা গিয়েছে, গত ২৫ মে তৃণমূলের মহামিছিলের ডাক দেওয়া হয়। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছিল, সেই মিছিলে ১৩ হাজার মানুষের জমায়েত হয়েছিল। তবে অনুব্রত প্রকাশ্যেই দাবি করেছিলেন, ওই মিছিলে কমপক্ষে দু'লক্ষেরও বেশি মানুষ এসেছিলেন। আবার গত বৃহস্পতিবার(২৭ মে) দলীয় কর্মসূচি শেষে অনুব্রত বলেন, "আইসি এফআইআর করতে গেলেও টাকা চান। গত দু'মাস ধরে এই আইসি-কে সরানোর জন্য আমি এসপি, অ্যাডিশনাল এসপি, এমনকি, ডিজি রাজকুমারকেও বলেছি।" তবে ক্ষমা চাওয়ার পাশাপাশি অনুব্রত লিখেছেন, "আপনাদের ভাবতে হবে তিনটে মহাকুমা- বোলপুর, সিউড়ি, রামপুরহাটে মানুষের বিশাল মহামিছিল দেখে কারা ভয় পেলে? বিজেপি কি করে আমার আর আমাদের বোলপুরের আইসির সাথে গালমন্দের ফুটেজ পেল? কে দিল? কোন চক্রান্ত নেই তো?"

এর আগেও অনুব্রত মণ্ডলের মুখে এরম নানা কুৎসিত মন্তব্য শোনা গিয়েছে। তার মধ্যে কিছু ঘটনা নিচে লেখা হল।

২০১৮ সালে অনুব্রত মণ্ডল কবি শঙ্খ ঘোষ সম্পর্কে মন্তব্য করে শোরগোল ফেলে দিয়েছিলেন। সে বছর মে মাসে পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারের সময়  বীরভূমের ৪২টি জেলা পরিষদ আসনের মধ্যে ৪১টিতেই মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি বিরোধীরা। সেই সময়েই কলম ধরেছিলেন শঙ্খ ঘোষ। ‘মুক্ত গণতন্ত্র’ নামের কবিতা লিখেছিলেন। সেই কবিতা প্রকাশিত হওয়ার পরেই অনুব্রত বলেন, ‘‘বড় বড় কথা বলছেন কবি? এ কোন কবি? আমরা তো কবি বলতে জানতাম রবীন্দ্রনাথ-নজরুল। এ কোন নতুন কবি উঠে এসেছেন যে, আমার উন্নয়ন নিয়ে কথা বলছেন!’’ নাম নিয়ে ‘অসম্মাজনক’ বক্তব্যে অনড় থেকে এও বলেছিলেন, ‘‘শঙ্খ একটা পবিত্র জিনিস। সব পবিত্র কাজে শঙ্খ লাগে। তাই শঙ্খ ভুল করলে দেবতাদের অসম্মান হয়। সেই কারণেই বলেছি ওঁর নাম শঙ্খ রাখা উচিত হয়নি।’’

আবার ২০২৫ সালে ২৫ অগস্ট, বিশ্বভারতীর অধ্যাপকদের নিয়ে গঠিত সংগঠন ভিবিইউএফএ (বিশ্বভারতী ইউনিভার্সিটি ফ্যাকাল্টি অ্যাসোসিয়েশন)-র সদস্যরা অনুব্রতের বাড়িতে যান। তাঁরা অনুব্রতের কাছে বিশ্বভারতীর উপাচার্যের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। সংগঠনের সদস্যরা উপাচার্যের ‘স্বৈরাচারী’ মনোভাবের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার কথা জানান অনুব্রতকে। তখন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে উপাচার্যের ‘পাগলামি’ সারাতে সরাসরি তাঁর বাড়ি তিন দিন ধরে ঘেরাও করে রাখার হুঙ্কার দিয়েছিলেন অনুব্রত। ভিবিইউএফএ-এর আন্দোলনে পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘‘ভিসি-কে বাড়িতে ঘেরাও করবে। তৃণমূল কংগ্রেস পুরো সাপোর্ট করবে।’’ অনুব্রতর মতে, ‘‘উনি (বিশ্বভারতীর উপাচার্য) যে ভাবে আরম্ভ করেছেন, বিশ্বভারতী বন্ধ রেখে একেবারে জঞ্জালে ভর্তি হয়ে গিয়েছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নয়।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘পাগল ভিসি তো। ওঁর পাগলামিটা ছাড়াতে হবে। কী ভাবে ছাড়াতে হয় সেটা আমরা জানি।’’

২০২১ সালের ৫ অক্টোবর, বীরভূমের বোলপুরে, রাজ্যের কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের একটি সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন অনুব্রত। সেখানে তিনি বিশ্বভারতীর প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘‘অধ্যাপকরা যে ভাবে পথ দেখাবেন সে ভাবেই পড়ুয়ারা চলবে। আজ সকালেই দু’টো অভিযোগ পেলাম। বিশ্বভারতীতে নাকি এত নেশাখোর হয়ে গিয়েছে, পাতা না কি সেটা ছেলেরা খাচ্ছে। সেটা না কি মেয়েরাও খাচ্ছে! আমি ভাবলাম, হায় রে দুর্ভাগ্য! রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকলে বোধ হয় সুইসাইড করতেন। এটা দেখতে হবে প্রশাসনিক স্তর থেকে।’’

২০২১ সালের ৯ নভেম্বর, দেউচা পাঁচামি প্রকল্পে জমিদাতাদের প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর সেই প্যাকেজ নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে তৃণমূলের প্রাক্তন বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বলেন, এমন প্যাকেজ কেন্দ্রীয় সরকারও দিতে পারবে না।   

২০২১ সালের ১১ নভেম্বর, অভিনেত্রী শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায় বিজেপি ছাড়ার কথা ঘোষণা করার পরেই পদ্ম-শিবিরকে খোঁচা দিয়েছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘দলটা (বিজেপি) তো জঞ্জাল। ওই দলে থাকা মুশকিল। তার উপর শ্রাবন্তী মহিলা। তাঁর পক্ষে থাকাই সম্ভব নয়। নোংরা জায়গায় থাকা যায় না।" বিজেপি-র অন্দরের পরিস্থিতি ‘ব্যাখ্যা’ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘দেখেন না, কুকুরও নোংরা জায়গায় শোয় না। মানুষ কী করে থাকবে!’’

উল্লেখ্য, কিন্তু এই সব কুৎসিৎ ভাষায় আক্রমণের পরও অনুব্রতর বিরুদ্ধে কখনই তেমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

More Articles