কেউ পড়ুয়া কেউ প্রাক্তনী! স্বপ্নদীপ কাণ্ডে ধৃতদের পরিচয়...

Jadavpur University Student Death: উঁচু ক্লাসের পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে ব়্যাগিংয়ের নামে নানা ধরনের হেনস্থা, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ নতুন নয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে। স্বপ্নদীপের মৃত্যুর ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৯...

ওরা সকলেই কৃতি! পশ্চিমবঙ্গের তো বটেই, দেশের অন্যতম সেরা কলেজের পড়ুয়া, কেউ বা প্রাক্তন শিক্ষার্থী। তবে এসব পরিচয় আপাতত অতীত। বরং সমাজের চোখে এখন তাঁরা অভিযুক্ত। সতেরো বছরের একটি ফুটফুটে ছেলেকে খুনের অভিযোগে আপাতত জেলের অন্ধকারে। যাদবপুরের প্রথমবর্ষের ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় ইতিমধ্যেই রুজু করা হয়েছে খুনের মামলা। দিন কয়েক আগে হস্টেল থেকে পড়ে যায় বাংলা বিভাগের পড়ুয়া স্বপ্নদীপ। হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত্যু হয় তাঁর। স্বপ্নদীপের নগ্ন দেহ, সারা দেহে ক্ষত, কালশিটের দাগ- সব মিলিয়ে রহস্য ঘনীভূত হচ্ছিল ক্রমশ। ঘটনায় উঠে আসে ব়্যাগিংয়ের তত্ত্ব। আর তার পর থেকেই জমতে শুরু করেছে ক্ষোভ। একের পর এক পড়ুয়া ভাগ করে নিয়েছেন তাঁদের অভিজ্ঞতা। ব়্যাগিং নামক জঘন্য অভ্যাসের প্রতি উগরে দিয়েছেন ঘৃণা।

আরও পড়ুন: সিগারেটের ছ্যাঁকা থেকে বেধড়ক মার! ব়্যাগিংয়ের নামে যা চলে দেশের এই কলেজ-হস্টেলে…

যাদবপুরে ব়্যাগিংয়ের ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও হস্টেলের উঁচু ক্লাসের পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে ব়্যাগিংয়ের নামে নানা ধরনের হেনস্থা, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। আর এই ধারা চলে আসছে বহু দিন ধরেই। স্বপ্নদীপের মৃত্যুর ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে সৌরভ চৌধুরী নামে এক হস্টেল আবাসিককে গ্রেফতার করা হয়। স্বপ্নদীপের বাবা রামপ্রসাদ কুণ্ডুর লিখিত অভিযোগে নাম ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী সৌরভের। প্রথমে তাঁকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। বয়ানে অসঙ্গতি মেলায় গ্রেফতার করা হয় সৌরভকে। ২০২২ সালে অঙ্ক নিয়ে এমএসসি পাশ করেন তিনি। তাঁর বাড়ি আদতে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল মহকুমার চন্দ্রকোনা থানার খারুসা এলাকায়। রামপ্রসাদবাবুর দাবি, মৃত স্বপ্নদীপকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল সৌরভই। বারবার তাঁদেরকে আশ্বস্ত করেছিল সৌরভ। পাশ করে যাওয়ার পরেও কেন হস্টেলে থেকে গিয়েছিলেন সৌরভ স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে। যদিও পরিবারের দাবি, আর্থিক অনটনের কারণেই হস্টেলে থেকে গিয়েছিলেন সৌরভ। ছেলেকে ফাঁসানো হয়েছে বলেও দাবি করেন সৌরভের মা-বাবা। আগামী ২২ অগস্ট পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতেই থাকতে হবে সৌরভকে। তেমনটাই নির্দেশ দিয়েছে আলিপুর আদালত।

সৌরভকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্তে বেশ কিছুটা এগিয়েছে পুলিশ। তার পরে পরেই গ্রেফতার করা হয় মনোতোষ ঘোষ ও দীপশেখর দত্ত নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও ২ পড়ুয়াকে। শনিবার আটক করে তাঁদের রাতভর জেরা করে পুলিশ। সেসময় থানায় উপস্থিত ছিলেন কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ)-ও। রবিবার সকালে ওই দুই পড়ুয়াকে গ্রেফতার করা হয়। যতদূর জানা গিয়েছে ধৃত দীপশেখর বাঁকুড়ার বাসিন্দা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র উনিশ বছরের দীপশেখর। অন্যদিকে, বছর কুড়ির মনোতোষ হুগলির আরামবাগের বাসিন্দা। সমাজবিদ্যা বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া তিনি। জানা গিয়েছে, মনোতোষের অতিথি হিসেবেই হস্টেলে ছিলেন স্বপ্নদীপ। নিহতের বাবার অভিযোগে নাম রয়েছে মনোতোষেরও।

কিন্তু এখানেই শেষ নয়। গ্রেফতারি এগিয়েছে আরও অনেক দূর। ধৃতদের জেরা করে ওই ঘটনায় আরও বেশ কয়েকজনের মাম উঠে এসেছে। তার ভিত্তিতেই আরও ৬ জনকে সম্প্রতি গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাতভর বিভিন্ন জেলায় তল্লাশি চালিয়ে ওই ৬ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার মধ্যে তিন প্রাক্তনীও রয়েছেন। পুলিশ সূত্রের খবর, ধৃত মহম্মদ আরিফ জম্মুর বাসিন্দা, মহম্মদ আসিফ আজমল আনসারি থাকেন পশ্চিম বর্ধমানে এবং ধৃত অঙ্কন সর্দারের বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনায়। এরা সকলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পড়ুয়া। তাছাড়া রয়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসিন্দা অসিত সর্দার, ন্দিরবাজারের সুমন নস্কর এবং পূর্ব মেদিনীপুরের এগরার বাসিন্দা সপ্তক কামিল্যা। তাঁরা তিনজনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী। ওই ৬ জনকে আলিপুর আদালতে তোলা হলে তাঁদের আগামী ২৮ অগস্ট পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন: যাদবপুরের র‍্যাগিং সংস্কৃতি: মুখে বিপ্লব বুলি, রাত বাড়লেই শুরু দাদাগিরি

গত মঙ্গলবার ওই তিন প্রাক্তনী হস্টেল ছেড়ে পালিয়ে যান বলে জানিয়েছে পুলিশ। রীতিমতো তল্লাশি করে তাঁদের হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। ধৃতদের মোবাইল ও ল্যাপটপ বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। এ ছাড়াও বিভিন্ন ফরেন্সিক নমুনা ইতিমধ্যেই দুর্ঘটনাস্থল ও হস্টেল থেকে সংগ্রহ করেছে পুলিশ। মিলিয়ে দেখা হচ্ছে পড়ুয়াদের হাতের লেখার নমুনাও। হস্টেলেকর ঘর থেকে তল্লাশিতে এরটি হলুদ ডায়েরি উদ্ধার হয়েছিল। যেখানে মেলে একটি চিঠিও। সেই চিঠির হাতের লেখা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সব মিলিয়ে তদন্তে অনেকটাই এগিয়েছে পুলিশ। ঘটনার পরই বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিহত স্বপ্নদীপের বাবার সঙ্গে ফোনেও কথা বলেন তিনি। স্বপ্নদীপের এই রহস্যজনক মৃত্যুকে ঘিরে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে গোটা শহর। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিত্য আন্দোলন করছেন পড়ুয়ারা। ব়্যাগিং বন্ধের দাবিতে চলছে প্রতিবাদ। সব মিলিয়ে এই মামলা ঘিরে অতিরিক্ত চাপ রয়েইছে পুলিশের কাঁধে। ধৃতদের জেরা করে নতুন কোনও তথ্য উদ্ধার করতে পারে কিনা পুলিশ, সেটাই আপাতত দেখার।

More Articles