দেওয়ালে খোদাই রহস্যময় লিপি, আজও এই গুহার ভেতর লুকিয়ে গুপ্তধনের সংকেত

সোন ভান্ডারের গুহা থেকে আজ অবধি কোনও সোনার ভান্ডার খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিশেষজ্ঞরা শঙ্খলিপির পাঠোদ্ধার করতে পারেননি।

 


গুপ্তধনের গল্প মানুষকে যুগ যুগ ধরে আকৃষ্ট করে । সেই আকর্ষণকে উপেক্ষা না করতে পেরে বহু মানুষ পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ছুটে গিয়েছেন। আজ অবধি যত গুপ্তধন খুঁজে পাওয়া গিয়েছে, তার থেকে অনেক বেশি হয়তো এখনও পাওয়া যায়নি। ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন গুপ্তধনের গল্প শোনা যায়। সেইসব জনশ্রুতির মধ্যে অন্যতম সোন ভান্ডার বা স্বর্ণভান্ডার গুহার গুপ্তধনের গল্প।

বিহারের রাজগিরের কাছে অবস্থিত কৃত্রিমভাবে তৈরি দুটো গুহার নাম সোন ভান্ডার অথবা স্বর্ণভান্ডার গুহা। এই দুটো গুহার ঐতিহাসিক মুল্য অনেক। যদিও এই গুহাদুটো তৈরির সময়কাল নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। ব্রিটিশ শাসনামলে আর্কিওলজিক‍্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া-র সদস্য কানিংহ্যাম এই গুহার গবেষণা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে, এই গুহাদু'টি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ ব্যবহার করতেন এবং সম্ভবত এই গুহাদু'টি তৈরির সময়কাল খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় থেকে প্রথম শতকের মধ্যে। যদিও এই মতের বিপরীতে একটি মত রয়েছে। সেই মত অনুযায়ী, এই গুহা তৈরির সময়কাল খ্রিস্টাব্দ শতক থেকে পঞ্চম শতকের মধ্যে। গুহার আকার, আয়তন এবং ধরন দেখে বিশেষজ্ঞরা এই ব্যাপারে একমত যে, গুহাদু'টি কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়েছিল। গুহার মধ্যে বিভিন্ন সময়ের ব্যবহৃত ভাষা খোদাই করা রয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য গুপ্তযুগে ব্যবহৃত ভাষা। সোনভান্ডারের গুহাগুলি ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হলেও এই গুহাদু'টি ঘিরেই রয়েছে এক বিপুল গুপ্তধনের গল্প।

সোন ভান্ডার গুহার গুপ্তধনের গল্পের সূত্র যে দুটো জিনিসে লুকিয়ে আছে, তার মধ্যে একটি হলো গুহা দুটোর নাম। সোন ভান্ডার শব্দের অর্থ সোনার ভান্ডার হওয়া সত্ত্বেও, এই গুহাদু'টি থেকে বিভিন্ন মূল্যবান জিনিস উদ্ধার হলেও, সোনার ভান্ডার বলতে সাধারণ মানুষ যা বুঝবে, সেইরকম কিছুই উদ্ধার হয়নি। বিপুল সোনার অনুপস্থিতিতে পাহাড়ের পাদদেশে তৈরি করা এই গুহাগুলির নাম সোন ভান্ডার হওয়ার কারণ নিয়ে আজও মানুষ ধন্ধে রয়েছে।

আরও পড়ুন: ন্যাশনালন্যাশনাল লাইব্রেরিতে কীসের চোরাকুঠুরি? বাংলার গুপ্তধন নিয়ে রয়েছে যে যে জল্পনা

এই গুহার গুপ্তধনের গল্পের দ্বিতীয় সূত্র লুকিয়ে আছে গুহার ভিতরেই। গুহার ভেতরে একটি দেওয়ালে খুব আবছা একটি দরজার আকৃতি দেখতে পাওয়া যায়। এই আকৃতির পাশেই শঙ্খলিপিতে কিছু অক্ষর খোদাই করা রয়েছে। ব্রাহ্মী লিপি থেকে সৃষ্টি হওয়া এক বিশেষ ধরনের লিপি হলো শঙ্খ লিপি। অক্ষরের আকার শঙ্খের মতো হওয়ার কারণেই বিশেষজ্ঞরা এই লিপির নাম দিয়েছেন শঙ্খ লিপি। আবিষ্কার হওয়ার পর থেকে বর্তমানে সময় অবধি বহু প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কেউ শঙ্খ লিপির পাঠোদ্ধার করতে পারেন নি। এই ধরনের লিপি ভারত ছাড়াও জাভা এবং মায়ানমারে পাওয়া গিয়েছে। সোন ভান্ডারের গুহার দেওয়ালে পাওয়া এই লিপি যে শঙ্খলিপি, সেই ব্যাপারে সংশয় না থাকলেও সেখান খোদাই করা লেখা কেউ পড়তে পারেননি। এই শঙ্খ লিপিতে লুকিয়ে আছে গুপ্তধনের গল্পের দ্বিতীয় সূত্র। কথিত আছে যে, সোন ভান্ডারের গুহার দেওয়ালে দেখতে পাওয়া আবছা দরজার অবয়ব আসলে একটি গুপ্ত দরজা। এই গুপ্ত দরজার পিছনে লুকিয়ে রয়েছে সেই বিপুল পরিমাণ সোনা এবং অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী। দরজার পাশে দেওয়ালে শঙ্খলিপিতে লেখা শব্দ সঠিকভাবে উচ্চারণ করলেই দরজা খুলে যাবে এবং মানুষ খুঁজে পাবে সেই গুপ্তধন, যার কারণে এই গুহাদু'টির নাম হয়েছে সোন ভান্ডার। জনশ্রুতি রয়েছে যে, সোন ভান্ডারের গুপ্তধন আসলে মৌর্য রাজা বিম্বিসারের রাজকোষের সম্পত্তির কিছু অংশ যা তিনি দান করেছিলেন।

সোন ভান্ডারের গুহার ভেতরে এই দরজার আকৃতির ওপরে রয়েছে একটি কালো দাগ। ব্রিটিশ শাসনামলে এই গুহার গুপ্তধন উদ্ধার করার চেষ্টা হয়েছিল। ব্রিটিশরা এই গুপ্তধনের কথা জানতে পেরে প্রথমে শঙ্খলিপির পাঠোদ্ধার করার চেষ্টা করেছিল। লিপির পাঠোদ্ধারে অসমর্থ হয়ে তারা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এই দরজার আকৃতি সম্পন্ন দেওয়াল ধ্বংস করার চেষ্টা করেছিল। এই কালো দাগ সম্ভবত সেই প্রচেষ্টার সময় কামানের গোলা থেকে তৈরি হওয়া দাগ।

সোন ভান্ডারের গুহা থেকে আজ অবধি কোনও সোনার ভান্ডার খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিশেষজ্ঞরা শঙ্খলিপির পাঠোদ্ধার করতে পারেননি। যদি সোন ভান্ডারের গুহার দেওয়ালে দেখতে পাওয়া দরজার মতো আকৃতি আসলেই গুপ্তধনের দরজা খুলে দিতে পারে, তাহলে শঙ্খলিপিতে খোদাই করা শব্দগুলি হলো তার চাবি। সেই শঙ্খলিপির পাঠোদ্ধার করতে পারলেই গুপ্তধনের সত্যতা যাচাই করা যাবে। তাই গুপ্তধনের থেকেও আগে শঙ্খলিপির পাঠোদ্ধার করার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

More Articles