আড়াই বছর পার, এখনও অধরা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু রহস্য, ঠিক কী ঘটেছিল সেই দিন?
Sushant Singh Rajput : টেলিভিশনের পর্দা থেকেই অভিনয় শুরু করেন তিনি। ‘পবিত্র রিস্তা’ নামে হিন্দি ধারাবাহিকের হাত ধরে জনপ্রিয়তার শিখর স্পর্শ করেন সুশান্ত সিং রাজপুত
সুশান্ত সিং রাজপুত, আজও জ্বলজ্বল করছে সেই মুখ। ২০২০ সালের ১৪ জুনের ঘটনা। মুম্বাইয়ের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করা হল ৩৪ বছরের তরুণের ঝুলন্ত দেহ। আচমকা আকাশ ভেঙে পড়েছিল সেদিন গোটা দেশে। ঘটনার আকস্মিকতায় হতবাক সকলেই। মানসিক অবসাদ নাকি অন্য কোনও রহস্য, কেন এত কম বয়সে চলে যেতে হল সুশান্ত সিং রাজপুতকে, কেনই বা অমন উজ্জ্বল কেরিয়ারের মায়া নিমেষে ত্যাগ করেছিল সে, এখনও অধরা সেই সব প্রশ্নের উত্তর। এরই মাঝে কেটে গিয়েছে প্রায় আড়াইটা বছর। আজও যেন এক লহমায় চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেই দুর্বিষহ স্মৃতি। বলিউডের এই একটা নাম, একটা মৃত্যু বর্তমান সময়ের একটা অবক্ষয়কে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।
আপাত দৃষ্টিতে আত্মহত্যা, ময়না তদন্তের রিপোর্টও বলেছে সেই কথাই। তবুও অজস্র অসংগতি। এই ঘটনার কারণ কেউ জানে না। গোটা দেশ এই মৃত্যুকে নিছক আত্মহত্যা হিসেবে মানতেও নারাজ। ভরা কেরিয়ার তখন তাঁর অথচ কোনও পিছুটান নেই, এমনকী নিদেনপক্ষে একখানা সুইসাইড নোটও মেলেনি মুম্বাইয়ের ফ্ল্যাট থেকে তাহলে কি সত্যিই এটাকে নিছক আত্মহত্যা হিসেবে মেনে নেওয়া সম্ভব?
আরও পড়ুন - সুশান্ত থেকে কে কে- আমাদের মৃত্যুশোক ভুলিয়ে দেয় মুহূর্তের প্রতিশোধ
এই মৃত্যু নিয়ে অনেক জলঘোলা হয়েছে, পরতে পরতে উঠে এসেছে রহস্য। কোটি কোটি অনুরাগীদের মন ভেঙে দিয়েছিল আকস্মিক খবরটা। শুধু তাই নয়, তাঁর এই মৃত্যু বদলে দেয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির মানচিত্র। অনেক সমীকরণ বদলে যায় ওই দিনের পর থেকে। অথচ সিবিআই আজও সঠিক তথ্য দিতে পারেনি। বারংবার জেরা করেও কোনও আশানুরূপ ফল দিতে পারেনি। এমনকী আজ আড়াই বছর পেরিয়ে এসে সুশান্ত সিং রাজপুতকে নিয়ে ওঠা সেই তুমুল ঝড়ও অনেকটাই শান্ত। খবরের শিরোনাম থেকে নীরবে সরে গিয়েছেন অভিনেতা।
টেলিভিশনের পর্দা থেকেই অভিনয় শুরু করেন তিনি। ‘কিস দেশ মে হ্যায় মেরা দিল’ দিয়ে কাজ শুরু। এরপর ‘পবিত্র রিস্তা’ নামে হিন্দি ধারাবাহিকের হাত ধরে জনপ্রিয়তার শিখর স্পর্শ করেন সুশান্ত সিং রাজপুত। ২০১৩ সালে পা রাখেন বড় পর্দায়। সিনেমার নাম ‘কাই পো চে’। নতুন করে জাত চেনালেন অভিনেতা। অমন দাপুটে অভিনয়, অমন চাউনি, সুশান্ত নামক নেশায় তখন বুঁদ অনুরাগীরা। পাশাপাশি চলছে অভিনয়। ‘শুধ দেশী রোমান্স’, ডিটেকটিভ ব্যোমকেশ বক্সী’, ‘পিকে’, ‘এম.এস ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’, ‘কেদারনাথ’, ‘ছিঁছোড়ে’র মত একটার পর একটা হিট ছবি। কেরিয়ারের গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী। কিন্তু এসবের মধ্যেই আচমকা আত্মহত্যা। আজও তাঁর চলে যাওয়া নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা।
সব্যসাচী ছিলেন অভিনেতা। লিখতে পারতেন দুহাত দিয়েই। ভালোবাসতেন মহাকাশ নিয়ে পড়াশোনা করতে। ফাঁকা সময় পেলেই দূরবীনে চোখ লাগিয়ে তিনি তারাদের সঙ্গে গল্প করতেন সুশান্ত সিং রাজপুত। শোনা যায়, চাঁদে জমি কেনার স্বপ্নও দেখেছিলেন অভিনেতা। অথচ এই এত স্বপ্ন, এত কাজের ইচ্ছে, এর সম্ভাবনা সব কিছুকে ধুলিস্মাৎ করে দিল একটা রাত। চলে গেলেন সুশান্ত সিং রাজপুত। উদ্ধার করা ঝুলন্ত দেহ নিয়ে যাওয়া হল মর্গে। তারপর রিপোর্টে বলা হল নিছক আত্মহত্যা। এই অবধি ছিল রহস্য, সময় যেভাবে বদলে দেয় ঘটনার ঘনঘটা ঠিক সেভাবেই নতুন রহস্য এসে শিরোনাম থেকে দূরে সরিয়ে দে সুশান্ত সিংকে।
আরও পড়ুন - গানের জন্য টাইপরাইটার বিক্রি করেছিলেন, চোখে জল আনবে কেকে-র লড়াইয়ের গল্প
ঘটনার মোড় আবার বদলায় সম্প্রতি। প্রকাশ্যে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। আত্মহত্যা নয় খুন করা হয়েছিল অভিনেতাকে, বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন কুপার হাসপাতালের মর্গের কর্মী। তাও আবার প্রায় আড়াই বছর পর। তিনি আরও বলেন, ঘাড়ে কাঁধে আঘাতের চিহ্ন ছিল অভিনেতার কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্তপক্ষকে সেকথা বলা সত্ত্বেও ভ্রুক্ষেপ করেনি তাঁরা, উপরন্তু বেশি জলঘোলা করতে বাধা দেওয়া হয় কার্যত। এর আগে অবশ্য প্রেমিকা রিয়া চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনেছিল সুশান্তের পরিবারের সদস্যরা। সেই সময় সামনে আসে অভিনেত্রীর অন্য রহস্য, মাদক মামলায় গ্রেফতার হন রিয়া, হয় হাজতবাসও। কিন্তু তাতেও কিনারা হয় না তরুণ অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু রহস্যের। ফলে সাম্প্রতিক এই তথ্য নতুন মোড় আনবে তা বলাই বাহুল্য।
আজ জন্মদিন অভিনেতার। ১৯৮৬ সালে জন্ম হয় তাঁর। পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্য তাই ছিলেন খুব আদুরে। ছোটবেলায় মাকে হারান সুশান্ত। পড়াশোনায় খুব ভালো ছিলেন তিনি। উচ্চমাধ্যমিকের পর AIEEE-এর মতো ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষায় সর্বভারতীয় স্তরে সপ্তম স্থান গ্রহণ করেন। মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগ দেন কাজে, পাশাপাশি অভিনয় এবং নাচেও ঝোঁক ছিল তাঁর। আরও অনেক কিছুতেই পারদর্শী ছিলেন, জানতেন মার্শাল আর্ট। বিমান চালাতেও পারতেন অভিনেতা। ফিকিক্সে অলিম্পিয়াড বিজয়ী। সব দিক দিয়েই তুখড়। হাত দিতেই সোনা ফলিয়েছেন সর্বত্র। অথচ এই সব কিছুর শেষ কত তাড়াতাড়ি, কত আচমকা। এমন একজন উজ্জ্বল মানুষও কি মৃত্যুর কাছে হারতে পারেন? প্রশ্নের উত্তর মেলে না। ভিনদেশী তারাদের ভিড়ে হারিয়ে যায় সুশান্তরা।