বিশ্বের পঞ্চম সবচেয়ে দূষিত দেশ ভারত! আগামীতে শ্বাস নিতে পারবে আমাদের শিশুরা?

World’s Fifth Most Polluted Country India: মেঘালয়ের বাইরনিহাট হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর, এখানে সূক্ষ্ম কণার ঘনত্ব ১২৮.২ µg/m³, WHO নির্দেশিত সীমার ২৫ গুণেরও বেশি।

ভারত ক্রমেই জগতসভায় শ্রেষ্ঠ আসনের দিকে এগোচ্ছে, তবে তা দূষণের নিরিখে। সূক্ষ্ম কণা পদার্থ হচ্ছে দূষণের অন্যতম ভয়াবহ উপাদান। সুইস বায়ু গুণমান প্রযুক্তি সংস্থা IQAIR-এর ২০২৪ সালের ওয়ার্ল্ড এয়ার কোয়ালিটি রিপোর্ট বলছে, এই সূক্ষ্ম কণা পদার্থের পরিমাণ অনুসারে, ভারত বিশ্বের পঞ্চম সবচেয়ে দূষিত দেশ৷ জনসংখ্যার ভিত্তিতে, ভারতের সূক্ষ্ম কণার গড় ঘনত্ব, প্রতি ঘনমিটারে মাইক্রোগ্রামে পরিমাপ করা হয় (μg/m3)। ২০২৪ সালে এই পরিমাপ ছিল ৫০.৬, WHO-এর প্রস্তাবিত বার্ষিক পরিমাপ হচ্ছে ৫ μg/m3! অর্থাৎ ভারত ১০ গুণ বেশি দূষিত!

বায়ুর গুণমান বিষয়ে ভারতের অবস্থা বেশ কয়েক দশকেই খারাপ থেকে খারাপতর হয়েছে। ২০২৪ সালে বিশ্বের ১০০টি সবচেয়ে দূষিত শহরের মধ্যে ৭৪টিই ভারতের। যার মধ্যে আবার প্রথম চারের মধ্যেই রয়েছে এই দেশের তিনটি শহর৷ প্রতিবেদন অনুসারে, মেঘালয়ের বাইরনিহাট হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর, এখানে সূক্ষ্ম কণার ঘনত্ব ১২৮.২ µg/m³, WHO নির্দেশিত সীমার ২৫ গুণেরও বেশি। দ্বিতীয় স্থানেই রয়েছে দিল্লি।

মাত্র সাতটি দেশে সূক্ষ্ম কণার ঘনত্ব WHO-এর সীমারেখার মধ্যে আছে: অস্ট্রেলিয়া, বাহামা, বার্বাডোস, এস্তোনিয়া, গ্রেনাডা, আইসল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ড।

আরও পড়ুন-দরিদ্র দেশের উপর দূষণের অভিশাপ চাপিয়ে দিচ্ছে ধনী দেশ

গত ১১ মার্চ প্রকাশিত, ওয়ার্ল্ড এয়ার কোয়ালিটি রিপোর্ট ২০২৪ সূক্ষ্ম কণা পদার্থের মাত্রা বা PM2.5, অর্থাৎ ২.৫ মাইক্রনের ব্যাসের কম কণার উপরেই গুরুত্ব দিয়েছে। এত সূক্ষ্ম হলেও এই কণাগুলি মারাত্মক। নির্মাণকাজ, শিল্প এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ফলে নির্গত এক অন্যতম ভয়াবহ দূষক হচ্ছে এই পদার্থ। মানুষের স্বাস্থ্যকে নানাভাবে প্রভাবিত করতে পারে এটি যার ফলে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা সহ বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হয়।

কেবলমাত্র ২০২১ সালেই মোট, ৮.১ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়েছিল বায়ু দূষণের জন্য, যার মধ্যে ৫৮% মানুষের মৃত্যুর নেপথ্যে আছে এই সূক্ষ্ম দূষক কণা। ওয়ার্ল্ড এয়ার কোয়ালিটি রিপোর্ট ২০২৪ সারা বিশ্বের ১৩৮টি দেশ এবং অঞ্চলের ৮,৯৫৪টি জায়গা জুড়ে ৪০,০০০টিরও বেশি বায়ু গুণমান পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে। তারপরে দেশের জনসংখ্যার মতো কিছু বিষয়কে মাথায় রেখে PM2.5-এর তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন গবেষকরা।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাহামা হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে কম দূষিত দেশ, সেখানে সূক্ষ্ম কণার গড় ঘনত্ব ২.৩ µg/m3। আর ওশিয়ানিয়া হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন অঞ্চল, যেখানে সূক্ষ্ম কণার গড় ঘনত্ব ৫ µg/m3। পুয়ের্তো রিকোর একটি শহর মায়াগুয়েজ হচ্ছে সবচেয়ে পরিষ্কার মেট্রোপলিটন এলাকা, যেখানে বার্ষিক সূক্ষ্ম কণার গড়ঘনত্ব মাত্র ১.১ µg/m3।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বিশ্বের সমস্ত শহরের মধ্যে মাত্র ১৭% WHO-এর বায়ু দূষণ নির্দেশিকা পূরণ করতে পেরেছে। বায়ুর সবচেয়ে খারাপ গুণমান আছে এমন শীর্ষ পাঁচটি দেশের তালিকায় ছিল চাদ (সূক্ষ্ম কণা পদার্থের বার্ষিক গড় ঘনত্ব ৯১.৮ µg/m3), বাংলাদেশ, পাকিস্তান, কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র এবং ভারত।

আরও পড়ুন-গঙ্গার পবিত্র উৎসমুখে এবার মানববর্জ্য! গঙ্গোত্রীতে যে ভাবে ছড়াচ্ছে দূষণ

প্রতিবেদন অনুসারে, ভারতের বার্ষিক সূক্ষ্ম কণার গড় ঘনত্ব ৫০.৬ µg/m3 যা WHO নির্ধারিত অনুমোদিত সীমার ১০ গুণেরও বেশি। ভারতের নিজস্ব জাতীয় নির্দেশিকা অবশ্য WHO-এর নির্দেশিকা থেকে আলাদা এবং আরও অনেক শিথিল। ২০১৯ সালের ভারতের ন্যাশনাল অ্যাম্বিয়েন্ট এয়ার কোয়ালিটি স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী, ২৫ ঘণ্টা সময়ের জন্য সূক্ষ্ম কণার অনুমোদিত ঘনত্ব এখানে ৬০ µg/m3 এবং বার্ষিক ঘনত্ব ৪০ µg/m3।

২০২৩ সালের তুলনায় ভারতে ২০২৪ সালে সূক্ষ্ম কণা পদার্থের ঘনত্ব ৭% হ্রাস পেয়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে, রাজধানী দিল্লিতে সূক্ষ্ম কণার ঘনত্ব ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে ৬% বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতের ৩৫% শহরে সূক্ষ্ম কণার মাত্রা WHO-নির্ধারিত বায়ু দূষণ সীমার দশ গুণেরও বেশি।

মনে রাখতে হবে, বায়ু দূষণের আগামী প্রজন্ম সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়তে চলেছে। এই সময়ে সরকার এবং নাগরিকের ব্যর্থতা হাড়ে হাড়ে টের পাবে ভবিষ্যত প্রজন্ম। অকাতরে কয়লা পোড়ানো এবং বন ধ্বংসের মতো প্রকৃতি বিনষ্টকারী কাজ বায়ুর গুণমান ক্রমেই বিষিয়ে দিচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তন রোখা আমাদের নাগালের বাইরে। এই বিশ্বকে শিশুদের বাসযোগ্য করা তো দূর অস্ত, ক্রমেই শিশুদের জন্য মরণফাঁদ পেতে যাচ্ছি আমরা, অভিভাবক প্রজন্মের মানুষরা।

More Articles